![পুরোনো বাজারেই নির্ভরতা, বাড়ছে না নতুন শ্রমবাজার](uploads/2024/06/22/labourmarket-1719039049.jpg)
বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানি করছে ১৯৭৬ সাল থেকে। প্রায় ৪৮ বছর পরও জনশক্তি রপ্তানি মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক। এর বাইরে মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুরের মতো কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের বড় শ্রমবাজার। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার নতুন বাজার সৃষ্টির কথা বলা হলেও কার্যত তেমন বাজার তৈরি হয়নি। পুরোনো বাজারগুলোও খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই। সব মিলিয়ে ঘুরেফিরে পুরোনো বাজারগুলোতেই ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি।
গত বছরের শেষ দিকে ওমান ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। সম্প্রতি সেটি তুলে নেওয়া হলেও কর্মী পাঠানোর বিষয়টির ফয়সালা হয়নি। ঢাকার ওমান দূতাবাসকে উদ্ধৃত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভিসা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলেও কর্মী প্রেরণের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে দুই দেশ।
ইউরোপের বাজারে জনশক্তি রপ্তানি করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে পরিসংখ্যান বলছে অন্য কথা। চেষ্টা অনুযায়ী পর্যাপ্ত জনশক্তি রপ্তানি হচ্ছে না ইউরোপসহ নতুন বাজারগুলোতে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে সৌদি আরবে গেছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৬৭ জন কর্মী। এ ছাড়া আরব আমিরাতে গেছেন ২৬ হাজার ১৯২ জন, কাতারে ২৪ হাজার ৯৩৬, মালয়েশিয়ায় ৪৪ হাজার ৭২৭ জন। অন্যদিকে নতুন বাজার বলা হচ্ছে সেসব দেশকে; সেগুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় ১ হাজার ৩ জন, যুক্তরাজ্যে ১ হাজার ৭৪৯, ইতালি ২৮৪ জন এবং জাপানে গেছেন মাত্র ২৫৬ জন কর্মী।
আগের বছরগুলোর পরিসংখ্যানও একই রকম ইঙ্গিত দেয়। ২০২৩ সালে সৌদি আরবে গেছেন ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৪ জন কর্মী। এ ছাড়া আরব আমিরাতে গেছেন ৯৮ হাজার ৪২২ জন, ওমানে ১ লাখ ২৭ হাজার ৮৮৩, কাতারে ৫৬ হাজার ১৪৬, মালয়েশিয়ায় ৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৩ জন। অন্যদিকে নতুন বাজার বলা হচ্ছে সেসব দেশকে; সেগুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪ হাজার ৯৯৬ জন, যুক্তরাজ্যে ১০ হাজার ৩৮৩, ইতালি ১৬ হাজার ৮৮৯ এবং জাপানে গেছেন মাত্র ৯৬৭ জন কর্মী।
এ প্রসঙ্গে অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর খবরের কাগজকে বলেন, ‘পুরোনো বাজারগুলোতে নির্ভরতা কমাতে হবে। এসব বাজারে নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। আমরা সেই সব সমস্যার সমাধানে ব্যস্ত সময় পার করি। এর পাশাপাশি নতুন বাজারগুলোতে তেমন মনোযোগ দিই না। অথবা স্মার্ট অভিবাসন নীতিতে দক্ষ শ্রমিকের বিষয়টির প্রাধান্য দেওয়া উচিত ছিল।’
বিএমইটি ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, বৈদেশিক কর্মসংস্থানের তালিকায় ১৬৮টি দেশের নাম রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে কর্মী গেছেন মূলত মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে। কর্মীদেরও ৯৫ শতাংশই গেছেন সৌদি আরব, ওমান, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, কাতার, কুয়েত ও জর্ডানে।
পুরোনো বাজারগুলোতেও নানা সমস্যা
নতুন বাজার তো তৈরি করাই যায়নি, পুরোনো বাজারগুলোও মাঝে মাঝেই বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৮ সালে বাংলাদেশি মুয়াজ্জিনের হাতে একজন নাগরিক খুন হওয়ার পর থেকে বাহরাইনে কর্মী নেওয়া বন্ধ রয়েছে। দেশটিতে গত তিন বছরে গেছেন মাত্র ১১ জন কর্মী। তৃতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার ওমানে কর্মী যাওয়া বন্ধ। সর্বশেষ ভিসা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা এলেও কর্মী যাওয়ার বিষয়টির সুরাহা হয়নি।
মালয়েশিয়াতেও ৩১ মের পর থেকে কর্মী যাওয়া বন্ধ রয়েছে। কর্মী নেওয়া বন্ধ রয়েছে মালদ্বীপেও। সংখ্যা কমেছে সিঙ্গাপুরে।
বিএমইটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (কর্মসংস্থান) শাহ আব্দুল তারিক খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী এখন দক্ষ ও আধা দক্ষ কর্মীর চাহিদা। বাংলাদেশের অধিকাংশ কর্মী অদক্ষ। অদক্ষ কর্মীর কর্মসংস্থান কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’