![বালুর বাণিজ্যে সড়কে মৃত্যুফাঁদ](uploads/2024/03/03/1709446307.Mymensing-Sand-Story.jpg)
ময়মনসিংহে কিছুদিন পরপরই সড়ক দুর্ঘটনায় যাত্রী, চালক কিংবা পথচারীদের মৃত্যু হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে। আতঙ্কের এই মহাসড়ক এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। এর অন্যতম কারণ মহাসড়কের দুই পাশের অন্তত পাঁচ জায়গায় দখল করে গড়ে তোলা বালুর বাণিজ্য। স্থানীয়রা আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করলেও চুপ রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন!
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সোমেশ্বরী নদীতে প্রতিদিন অন্তত এক হাজার ট্রাক বালু বিক্রি হয়। ওই বালু ট্রাকের চালকরা মালিকের চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমাণে নিয়ে আসেন। পরে গন্তব্যে যাওয়ার পথে অতিরিক্ত বালু এই মহাড়কের পাশে বিভিন্ন জায়গায় স্তূপ করে রেখে যান। পরে ওই স্তূপের বালু আবার বিক্রি করা হয় নানা জায়গায়। এভাবেই গড়ে উঠেছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে অবৈধ বালু ব্যবসা।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর বাইপাস থেকে ভালুকা পর্যন্ত ৫৬ কিলোমিটার অংশের বিভিন্ন জায়গায় অতিরিক্ত বালু বোঝাই করা ট্রাকগুলো মহাসড়কের পাশে থামানো হচ্ছে। চার লেনের এই সড়কে বালুর ওপর দিয়েই বিভিন্ন যানবাহন দ্রুতগতিতে ছুটে চললেও মোটরসাইকেল চলছে ধীরগতিতে। কারণ দুই চাকার এই যানের স্লিপ করার শঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই ট্রাক ভর্তি করে বালু এনে মহাসড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের ভাগ্য বদলে দিলেও ভোগান্তিতে পড়েছেন চালক ও যাত্রীরা। এই সড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রশাসনের টনক নড়ছে না।
ত্রিশাল উপজেলার বৈলর এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘ট্রাকচালক ও মালিকরাই মূলত এ ব্যবসা করছেন। তবে মহাসড়কের কিছু অংশে বালু রাখতে গেলে মাঝেমধ্যে স্থানীয় নেতাদের বাধার মুখেও পড়তে হয়। তখন তাদের কিছু চাঁদা দিয়ে বালু ফেলতে হয়।’
আজিমুল হক নামে আরেকজন বলেন, ‘সড়কের পাশে বড় বড় স্তূপ করে বালু ব্যবসা করা হচ্ছে। এতে যানবাহন চলাচলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, বাড়ছে দুর্ঘটনা। স্তূপ থেকে মহাসড়কের দুই পাশে বালু ছড়িয়ে পড়ে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে মোটরসাইকেল চলাচল। দুই চাকার যান হওয়ার কারণে মাঝে মধ্যেই মোটরসাইকেল সড়কে পিছলে পড়ে যায়।’
‘নিরাপদ সড়ক চাই’ ময়মনসিংহের সভাপতি আব্দুল কাদের খবরের কাগজকে বলেন, প্রশাসনের উচিত অভিযান চালিয়ে মহাসড়ক দখলমুক্ত করে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা। কিন্তু তা করা হচ্ছে। মহাসড়কে বালুবাণিজ্য বন্ধ করা না হলে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় হাইওয়ে থানা-পুলিশের এক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, ‘ময়মনসিংহের বিভিন্ন সড়কে গত বছর ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা পর্যন্ত অংশে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরের শুরু থেকেও প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। আহত হচ্ছেন অনেক মানুষ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী কে বি এম সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘একাধিকবার প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালিয়েও মহাসড়কে বালুব্যবসা বন্ধ করা যাচ্ছে না। অভিযান শেষ হওয়ার পরপরই আবারও বালু ব্যবসা শুরু হয়। এবার জোরালো অভিযান চালিয়ে মহাসড়ক দখলমুক্ত করা হবে।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘মহাসড়ক দখল করে বালু ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। দ্রুত ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালাবে। জরিমানার পাশাপাশি প্রয়োজনে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’