![শাহজালালে থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং : সিদ্ধান্ত জাপানের](uploads/2024/04/05/1712300664.hazrat_Shahjalal_3rd_Termin.jpg)
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের কাজ ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর শুরু হয়। ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে এতে। অর্থায়নের একটি বড় অংশের জোগান দিয়েছে জাপানি আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা। গত ৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থার্ড টার্মিনালটির আংশিক উদ্বোধন করেন। এটি যাত্রীদের ব্যবহার উপযোগী হতে আরও কিছু সময় লাগবে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এর আশা, এ বছরের শেষনাগাদ যাত্রীরা টার্মিনালটি থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে পারবেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, থার্ড টার্মিনাল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব যাচ্ছে জাপানের হাতে। আগামী জুলাই-আগস্ট মাসে এ সংক্রান্ত চুক্তি সই হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান।
তিনি জানান, এই টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কাছে থাকবে কি না, সে সিদ্ধান্তও নেবে জাপান। তবে অনেকদিন থেকেই আলোচনা আছে থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং নিজের হাতে রাখতে চায় বাংলাদেশ বিমান।
বেবিচক চেয়ারম্যান খবরের কাগজকে বলেন, ‘জাপানকে সম্পূর্ণ দায়িত্বই দেওয়া হচ্ছে। অপারেশনস অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স অব টার্মিনাল থ্রি, অর্থাৎ টার্মিনাল থ্রির যে অপারেশন হবে মানে প্লেন আসবে, যাত্রীদের ব্যবস্থাপনাসহ সবকিছুতেই জাপানিরা করবে। আমরা শুধু নিরাপত্তা, এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ আর কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনের দায়িত্বে থাকব। বাকি সব কাজ জাপানিরা করবে।’
বেবিচক সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোকে এককভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিয়ে আসছে বিমান। এই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং থেকে বিমানের আয়ের একটি বড় অংশ আসে, যা বছরে গড়ে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি। তবে নির্ধারিত সময়ে মালামাল বুঝে না পাওয়া, লাগেজ ভাঙা, মালামাল হারানোসহ বিমানবন্দরে নানা রকম হয়রানির অভিযোগ রয়েছে এই ব্যবস্থাপনা নিয়ে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় বিমানের সেবার মান নিয়ে অভিযোগ থাকার পরও তারাই এর দায়িত্বে বহাল আছে।
বিভিন্ন সময় বিমানকে বাদ দিয়ে বেবিচক গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এজেন্ট নিয়োগ দিতে চাইলেও কখনোই সফল হতে পারেনি। এমনকি বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা নিয়ে অন্য ধরনের বিপত্তিতেও অতীতে পড়তে হয়েছে। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে বিমানের একটি সংগঠনের ধর্মঘটে শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ ছিল প্রায় ৫ ঘণ্টা। এ জন্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের ২৪টি ফ্লাইটের প্রায় ৪ হাজার যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েন। সে সময় এ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজে বিকল্প এজেন্টের প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল বেবিচক। এ ঘটনার পর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজে আধুনিকতা আনতে বিদেশি অংশীদার খুঁজতে শুরু করে বিমান। তবে সে প্রক্রিয়াও আর বেশি দূর এগোতে পারেনি বিমানের কর্মীদের আরেকটি আন্দোলনের কারণে। তারও আগে, ২০০৬ সালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য একটি স্বতন্ত্র কোম্পানি গঠনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যার ওপর বিমানের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার অনুমোদন মেলেনি।
প্রতিটি এয়ারলাইনসের যাত্রীদের চেক-ইন কাউন্টার সামলানো, উড়োজাহাজে মালামাল ওঠানো-নামানোসহ বিভিন্ন যাত্রীসেবাই মূলত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত। বিমানবন্দরের যাত্রীসেবা শতভাগ নিশ্চিত হয় মূলত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে।
বেবিচক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান বলেন, ‘এটি বিমানের হাতে থাকুক, তা আমরা চাই। কিন্তু এটা জাপানিদের ইচ্ছা, এখানে তারা আর কাকে কাকে নিতে চায়। এখন এটা জাপানের ওপর, যে এই কাজটা তারা বিমানকে দিয়ে করাবে, নাকি যৌথভাবে করবে, না বিমানকে আলাদা রেখে অন্য কারও সঙ্গে করবে। পুরোটাই নির্ভর করবে জাপানিদের ওপর।’
এ ব্যাপারে বিমান কতটা প্রস্তুত জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও মো. শফিউল আজিম খবরের কাগজকে বলেন, ‘এত বছর ধরে তো বিমানই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করে আসছে। এখন পর্যন্ত ২০০ ফ্লাইট পরিচালনা করার সক্ষমতা রয়েছে। থার্ড টার্মিনাল চালু হলে বাড়তি যে কাজ আসবে, তার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে আমরাও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করতে পারব। সুতরাং এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।’
কবে নাগাদ টার্মিনালটি যাত্রীদের ব্যবহার উপযোগী হবে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা এপ্রিল মাসে ঠিকাদারের কাছ থেকে টার্মিনাল সম্পূর্ণ বুঝে নেব। আমরা প্রস্তুত আছি, আশা করি অক্টোবর থেকে চালু করতে পারব। তবে যদি জাপানিদের হাতেই শুরু করার কথা বলা হয়, তাহলে একটু সময় লাগবে। কারণ, তারা আমাদের সঙ্গে পিপিপি চুক্তি করবে জুলাই-আগস্ট মাসে। এরপর সবকিছু বুঝে নিয়ে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের পর তাদের চালু করতে আরও কিছু সময় লাগবে।’
থার্ড টার্মিনালে সক্ষমতা
একটি সূত্রে জানা গেছে, বেবিচকের অনুরোধে দুটি বিদেশি সংস্থা সম্ভাব্যতা যাচাই করার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। তাদের কাছ থেকে দুটি প্রস্তাবও পাওয়া গেছে। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অরগানাইজেশন (আইকাও) সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ৭ লাখ ৫১ হাজার ৩০০ ডলার ও এসিআই আড়াই থেকে সাড়ে ৩ লাখ ডলার বাজেটের পৃথক প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
শাহজালাল বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক মানের নতুন এই টার্মিনালটির আয়তন ২২ দশমিক ৫ লাখ বর্গফুট। বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দর দুটি টার্মিনালে ১০ লাখ বর্গফুট স্পেস রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বিমানবন্দরের বর্তমান যাত্রী ধারণক্ষমতা ৮০ লাখ থেকে বেড়ে ২ কোটি হবে এবং কার্গো ক্যাপাসিটি বর্তমান দুই লাখ টন থেকে বেড়ে পাঁচ লাখ টন হবে। তিন তলা টার্মিনাল ভবনটির আয়তন ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। তৃতীয় টার্মিনালে ২৪টি বোর্ডিং ব্রিজের ব্যবস্থা থাকলেও প্রকল্পের প্রথম ধাপে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ চালু করা হবে। বহির্গমনের জন্য ১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক ইন কাউন্টারসহ ১১৫টি চেক ইন কাউন্টার থাকবে। ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে। টার্মিনালের পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার জন্য ৬ হাজার দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য প্রায় ৪ হাজার কর্মীর প্রয়োজন হবে।
এই টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ রাখা যাবে। রানওয়েতে উড়োজাহাজের অপেক্ষা কমাতে নির্মাণ করা হয়েছে দুটি হাইস্পিড ট্যাক্সিওয়ে। এতে আরও বেশি বিমান ওঠানামা করা যাবে বলেও আশা করছেন বিশ্লেষকরা।