ঢাকা ১০ আষাঢ় ১৪৩১, সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪

খাতুনগঞ্জে আদা কেজিতে বাড়ল ৮০ টাকা

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৪, ১১:৩১ এএম
আপডেট: ১৬ জুন ২০২৪, ১১:৪৯ এএম
খাতুনগঞ্জে আদা কেজিতে বাড়ল ৮০ টাকা
ছবি: খবরের কাগজ

পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি চায়না আদার দাম বেড়েছে ৮০ টাকা। এ ছাড়া চার দিনের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা। অন্যদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা। 

ব্যবসায়ীরা জানান, এক মাস আগে চায়না আদা ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। কারণ ওই আদা আমদানিতে টনপ্রতি বুকিং রেট পড়েছিল ১ হাজার ৪৫০ ডলার। তবে দুই মাস আগে পণ্যটি আমদানিতে বুকিং রেট বেড়ে যায়। দুই মাস আগে প্রতি টন আদা আমদানিতে বুকিং রেট ছিল ১ হাজার ৬৫০ ডলার। ওসব আদা এখন ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ বর্তমানে চায়না আদা প্রতি কেজি ২২০ টাকায় কিনে পাইকারিতে ২৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। মূলত আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় আদার দামটা আগের চেয়ে বেড়েছে। পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়ার আদা কেজিপ্রতি পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৮৫ টাকা।

এদিকে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন কৃষকরা। বর্তমানে প্রতি মণ পেঁয়াজ তারা বিক্রি করছেন ৩ হাজার ১০০ টাকায়। তাই দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। অর্থাৎ গত ১০ জুন খাতুনগঞ্জে আকারভেদে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭০-৭৮ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে পাইকারিতে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮২ টাকা। এদিকে চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কম থাকায় ভারতীয় পেঁয়াজও বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। বর্তমানে পাইকারিতে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজে দাম ঠেকেছে ৮০-৮৫ টাকা।

খাতুনগঞ্জে হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস খবরের কাগজকে বলেন, ‘চায়না থেকে আদা আমদানিতে খরচ বেড়ে গেছে। তাই আমদানিকারকরা বাড়তি দরে পণ্যটি বিক্রি করছেন। অন্যদিকে কৃষক পর্যায়ে দাম বাড়ায় দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। আর বর্তমানে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে রেখেছে। অধিকাংশ আমদানিকারক পেঁয়াজ আনছেন না। আর যারা সীমিত পরিমাণে আমদানি করছেন তাদের আমদানি খরচ বেশি পড়ছে। তাই এর প্রভাব পাইকারি বাজারেও পড়েছে।’ 

নগরের ঈদগাহ এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুর রহিম খবরের কাগজকে বলেন, ‘এক মাস আগেও খুচরা দোকান থেকে প্রতি কেজি চায়না আদা ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় কিনেছি। বর্তমানে খুচরা বাজারে পণ্যটি প্রতি কেজি ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের দামও বাড়তি। কোরবানি ঘনিয়ে আসায় ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে প্রয়োজনীয় মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমাদের আয়-রোজগার ভোগ্যপণ্যের দামের মতো হঠাৎ করে তো বেড়ে যায় না। আমরা সাধারণ মানুষ, বাড়তি দাম দিয়ে পণ্য কিনতে কষ্ট হয়।’ 

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা রোজার সময় দেখেছি নানা অজুহাতে ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছেন। আমরা সব সময় দেখেছি, কোনো ধর্মীয় উৎসবের সময় ঘনিয়ে এলে নানা অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হয়। ব্যবসায়ীরা সারা বছরের লাভ এ সময়টায় করতে চান। কিন্তু সাধারণ মানুষের দিকটাও তো বিবেচনা করতে হবে। ম্যাজিস্ট্রেট বা ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা অভিযানে গেলে তো ব্যবসায়ীদের নানা অপরাধ প্রমাণ হয়। এলাচের ক্ষেত্রে আমরা ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা করতে দেখেছি। কাজেই আমরা বলব, ব্যবসায়ী কত টাকায় পণ্যটা আমদানি করছেন, পাইকারি ব্যবসায়ী তা কত টাকায় কিনে কত টাকায় বিক্রি করছেন। পাশাপাশি খুচরা পর্যায়েও তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। তাহলে কোনো প্রকার অসংগতি থাকলে তা ধরা পড়বে।’
 
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা নিয়মিত বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করছি। মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করা, বেশি দামে পণ্য বিক্রি, ক্রয়-বিক্রয় রসিদ সংরক্ষণ না করাসহ নানা অসংগতি পাচ্ছি। আমরা ব্যবসায়ীদের সতর্ক করার পাশাপাশি অপরাধ প্রমাণ পেলে বিধি মোতাবেক শাস্তির আওতায় আনছি। লাভের জন্যই তো ব্যবসা। কিন্তু ব্যবসায়ীদেরও নীতিনৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। আর আমাদের ভোক্তারা যদি প্রতারণা বা হয়রানির শিকার হলে আমাদের জানালে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

সম্পদ বৈধ: বেনজীরের সাফাই

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ০১:৩০ পিএম
আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ০২:৪০ পিএম
সম্পদ বৈধ: বেনজীরের সাফাই

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) শেষ দিনেও হাজির হননি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। তবে তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে দুদকে বক্তব্য পাঠিয়েছেন। এতে তার নিজের এবং স্ত্রী-সন্তানদের অর্জিত অর্থ-সম্পদ বৈধ বলে দাবি করেছেন। তার স্ত্রী-সন্তানদের আয় দেখানো হয়েছে ব্যবসা থেকে। নিজের আয় দেখানো হয়েছে বেতন-ভাতা, ঋণ, বিয়েবার্ষিকী, জন্মদিনে পাওয়া উপহার। লিখিত বক্তব্যে প্রতিটি সম্পদের উৎস তাদের আয়কর নথির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তুলে ধরা হয়েছে। 

এদিকে সর্বশেষ তলবেও বেনজীর আহমেদ হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন। 

তিনি রবিবার (২৩ জুন) সাংবাদিকদের বলেন, ‘বেনজীর আহমেদ গত বৃহস্পতিবার দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত বক্তব্য পাঠিয়েছেন। এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য কি না, তা অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা বিবেচনা করবেন।’

দুদক সূত্র জানিয়েছে, ইমতিয়াজ ফারুক অ্যাসোসিয়েটের ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ ফারুক ও অ্যাডভোকেট সাইদুল ইসলাম অন্তরের স্বাক্ষর করা বেশ কিছু কাগজ বৃহস্পতিবার দুদকে জমা দেওয়া হয়েছে। এতে বেনজীরের বক্তব্যও ছিল। বক্তব্যে মূলত তার নিজের এবং স্ত্রী-সন্তানদের অর্জিত অর্থ-সম্পদ বৈধ বলে দাবি করা হয়েছে। তার স্ত্রী-সন্তানদের আয় দেখানো হয়েছে ব্যবসা থেকে। নিজের আয় দেখানো হয়েছে বেতন-ভাতা, ঋণ, বিয়েবার্ষিকী, জন্মদিনে পাওয়া উপহার। লিখিত বক্তব্যে প্রতিটি সম্পদের উৎস তাদের আয়কর নথির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তুলে ধরা হয়েছে। বক্তব্যের পাশাপাশি বেনজীরের অর্থ-সম্পদ সম্পর্কিত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ল ফার্ম ‘ইমতিয়াজ ফারুক অ্যাসোসিয়েট’-এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পত্রপত্রিকায় পাঠানো প্রতিবাদলিপি ও লিগ্যাল নোটিশগুলো দুদকে জমা দেওয়া হয়েছে। ওই সব লিগ্যাল নোটিশ ও প্রতিবাদলিপিই মূলত দুদকের অনুসন্ধানে বেনজীর আহমেদের বক্তব্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ ফারুক খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রায় দুই মাস আগে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর তার পক্ষে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। এরপর আর কিছু জানি না। তার সঙ্গে (বেনজীর) যোগাযোগও নেই। সেই লিগ্যাল নোটিশগুলোই অন্য কেউ দুদকে জমা দিয়ে থাকতে পারে।’  

সোমবার (২৪ জুন) বেনজীরের স্ত্রী ও দুই মেয়ের হাজিরা নির্ধারিত আছে। এ বিষয়ে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা হাজির না হলে অনুসন্ধান কর্মকর্তারা পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করবেন। 

সহসা ফিরছেন না বেনজীর
গত ৩১ মার্চ গণমাধ্যমে বেনজীরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি ফেসবুক লাইভে এসে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে তা অতিরঞ্জিত বলে আখ্যায়িত করেন। তবে তিনি কোনো নির্দিষ্ট গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেননি। এরপরই তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান। 

গুজব ওঠে তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। পরে জানা গেছে, গত ৪ মে রাত পৌনে ১০টার দিকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে একটি ফ্লাইটে করে সিঙ্গাপুরে চলে যান। সিঙ্গাপুরে তিনি এবং তার পরিবারের চিকিৎসা শেষে দুবাই চলে গেছেন। বর্তমানে দুবাইয়ে তিনি অবস্থান করছেন। দুদক তার সম্পদের হিসাবের জন্য ডাকলেও তিনি গতকাল হাজির হননি। বেনজীরের ঘনিষ্ঠ ঢাকা মহানগর পুলিশের এক ডিসি জানান, তিনি সহসাই দেশে ফিরবেন না।

বিশ্লেষক অভিমত: সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামাতে হবে, তিস্তার ফয়সালা দরকার

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ১১:৫৩ এএম
আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ১২:১০ পিএম
বিশ্লেষক অভিমত: সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামাতে হবে, তিস্তার ফয়সালা দরকার
ছবি : সংগৃহীত

সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বাংলাদেশিদের নিয়মিত হতাহতের ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামানোর সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দরকার। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তা নদীর পানিবণ্টনের মতো ইস্যুরও সুরাহা হওয়া দরকার। এসব বিষয়ে যদি প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি পাওয়া হয়ে থাকে, তাহলে সফরটিকে সফল বলা যাবে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদ্যসমাপ্ত ভারত সফরকে এভাবেই মূল্যায়ন করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। এই সফরকালে মোট ১০ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, যার মধ্যে তিনটি নবায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া সফরে ১৩টি ঘোষণাও এসেছে। 

এ প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে যা কিছুই ঘটুক না কেন, আমাদের লক্ষ রাখতে হবে বাংলাদেশের স্বার্থ যাতে রক্ষিত হয়।’

সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোঠায় নামানোর ভারতীয় প্রতিশ্রুতি দরকার
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলছে, গত সাত বছরে সীমান্তে বিএসএফের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন ২০১ জন বাংলাদেশি। এ ছাড়া সীমান্ত থেকে বাংলাদেশিদের ধরে নিয়ে যাওয়াসহ নানা ধরনের নির্যাতনের মতো ঘটনা তো ঘটেছেই। 

প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানান, সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে আলোচনা হয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে ভারতের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে কি না তা জানাননি তিনি।

এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে চীন-পাকিস্তানের যে সম্পর্ক, আমাদের সম্পর্ক কিন্তু তেমন নয়। আমরা তো বন্ধুরাষ্ট্র। অথচ সীমান্ত হত্যা দেখলে মনে হয় আমরা যেন বৈরী রাষ্ট্র। সীমান্তের দুই কিলোমিটারের মধ্যে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে না, ভারতের এমন চুক্তি আছে চীনের সঙ্গে। আমাদের সঙ্গেও এমন চুক্তি দরকার।’

সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি এম হুমায়ুন কবির বলছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন করে তৈরির কিছু নেই। চলমান সম্পর্কই শক্তিশালী করার চেষ্টা থাকে। দুই দেশের মধ্যে যেসব সম্ভাবনার জায়গা আছে, যেমন সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামানো ও ঝুলে থাকা তিস্তার পানিবণ্টনের সুরাহা হওয়ার মতো প্রতিশ্রুতি থাকে তাহলে প্রধানমন্ত্রীর সফরকে সফল বলা যায়। 

তিস্তা নদীর পানিবণ্টন ইস্যুর সমাধান দরকার
২০১১ সালে চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত ভারতের অনীহার কারণে সম্ভব হয়নি। ভারত বরাবর অভ্যন্তরীণ রাজনীতির দোহাই দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান না তাই চুক্তি হচ্ছে না বলে যুক্তি দিচ্ছে। 

ফলে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে। উত্তরাঞ্চলের বিশাল এলাকা মরুভূমির রূপ নিয়েছে। ফসল হয় না এবং বন্যার সময় ভারত পানি ছেড়ে দেওয়ায় বাংলাদেশের ওই এলাকাগুলো প্লাবিত হয়। 

১৯৮২ সালে বাংলাদেশের ১০০ কিলোমিটার উজানে জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবায় তিস্তা নদীতে বাঁধ দিয়ে ভারত একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে। ফলে বাংলাদেশে তিস্তার স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়।

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ভারতের পক্ষ থেকে যে উদ্বেগগুলো ছিল, সেসব বাংলাদেশ দূর করেছে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে উদ্বেগগুলো ছিল, যেমন তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি বা সীমান্ত হত্যার মতো বিষয়গুলো আগের মতোই রয়েছে।’

পানিবণ্টন চুক্তি নয়, ভারতের আগ্রহ এখন তিস্তা প্রকল্পে
সরকারের সংশ্লিষ্টরা জানান, তিস্তার পানি না পেয়ে বাংলাদেশ বর্ষা মৌসুমের পানি ধরে সারা বছর ব্যবহার করা সংক্রান্ত একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চাইছে। প্রথম দিকে ‘তিস্তা নদী সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা এবং পুনরুদ্ধার প্রকল্প’ নামে প্রকল্পটি চীনকে দিয়ে বাস্তবায়নের কথা ছিল। এই ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’য় ভারত হঠাৎ বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ফলে ১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের এই প্রকল্প আসলে বেইজিং না নয়াদিল্লি বাস্তবায়ন করবে, সেটি এখনো ঢাকার পক্ষ থেকে পরিষ্কার করা হয়নি। 

তিস্তা প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশের পর ঝুলে যাওয়া তিস্তা চুক্তি নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না নয়াদিল্লি। এখন তাদের সব আগ্রহ তিস্তা প্রকল্প নিয়ে। গত শনিবার দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক শেষে নরেন্দ্র মোদি জানান, পানিবণ্টন চুক্তি নয়, তিস্তার পানি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় একটি মহাপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে শিগগিরই বাংলাদেশ যাবে একটি কারিগরি দল।

আরও তিন জেলায় মতিউরের সাম্রাজ্য

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ১১:২৮ এএম
আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ১১:৩৬ এএম
আরও তিন জেলায় মতিউরের সাম্রাজ্য
এলাকায় পিন্টু নামে পরিচিত মতিউর

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্য সাবেক সদস্য ড. মতিউর রহমানের গ্রামের বাড়ি বরিশালের মুলাদী উপজেলার কাজীর চর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আলহাজ আব্দুল হাকিম হাওলাদারের ছেলে।

এলাকার বেশির ভাগ মানুষের কাছে তিনি পিন্টু নামে পরিচিত। স্কুলজীবন থেকেই মতিউর রহমান মুলাদীর পার্শ্ববর্তী উপজেলা বাবুগঞ্জের খালার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করেছেন। বাবুগঞ্জ থেকেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্স বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স করার পর এমবিএ করেন। গ্রামের বাড়িতে খুব একটা যাতায়াত না থাকলেও ওই এলাকায় দানবীর হিসেবে পরিচিত মতিউর রহমান। 

তার মেজো ভাই আরেক ধনকুবের কাইয়ুম হাওলাদারের সঙ্গে এলাকার মানুষের সখ্য বেশি। মূলত তিনিই মতিউর রহমানের পক্ষে এলাকায় দান সদকাহ করেন। ৩ ভাই আর ২ বোনের মধ্যে মতিউর রহমান সবার বড়। ছোট নুরুল হুদাও থাকেন বাড়িতে। দেখাশোনা করেন অন্য দুই ভাইয়ের সহায় সম্পদ। 

গ্রামের বাড়িতে খুব একটা যাতায়াত না থাকলেও পৈতৃক ভিটায় নির্মাণ করেছেন দৃষ্টিনন্দন আলিশান বাড়ি। দ্বিতল ভবনের ওই বাড়িটি বছরের অধিকাংশ সময় থাকে তালাবদ্ধ। পৈতৃক বাড়ির পাশে রয়েছে বিশালাকৃতির একটি মাছের ঘের। বাড়ির সামনে প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি মসজিদ, কওমি মাদ্রাসা এবং বাহাদুরপুর রহমানিয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ৫/৬ বছর ধরে তিনি তার গ্রামের বাড়ি মুলাদীর কাজীর চার ইউনিয়নের কৃষ্ণবধু, বাহদুপুর, চরকমল এবং ডিগ্রির চর গ্রামের বিভিন্ন ফসলি জমি কিনেছেন।

স্থায়ী বাসিন্দা আবদুল সালেক ব্যাপারী বলেন, গত ৫/৬ বছরে মতিউর রহমান ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু জমি কিনেছেন। কি পরিমাণ জমি কিনেছেন তা সঠিক করে বলতে পারব না। তা শত বিঘার বেশি হবে বলে অনুমান করা যায়। তার কেনা জমিগুলো সব পিলার দিয়ে সীমানা চিহ্নিত করা আছে। 

সালেক ব্যাপারী জানান, কারও কাছ থেকে জোর করে কিংবা ভয়ভীতি দেখিয়ে কারও জমি কিনেছেন বলে জানা নেই। জমি কেনা নিয়ে কারও সঙ্গে তার কোন ঝামেলা হয়েছে বলে শুনিনি। বর্তমানে মতিউর পরিবারের দখলে আছে বাড়ির দুই একরের বেশি সম্পত্তি। 

তারা জানান, মতিউর রহমান বাড়ির পেছনে জোয়ার-ভাটায় প্রবহমান খালটির দুইদিকে বাঁধ দিয়ে আটকে লেক বানিয়ে পৈতৃক ভিটার সৌন্দর্য বাড়িয়েছেন। প্রভাব ও ক্ষমতার দাপটের কারণে কেউই তখন বাধা দেওয়ার সাহস পাননি। শুকনো মৌসুমে ফসলি জমিতে সেচ দিতে দুর্ভোগে পড়েন কৃষকরা। অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে সেচের ব্যবস্থা করতে হয় কয়েকশ একর জমিতে। 

বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দারা জানান, মতিউরের ক্ষমতার দাপটে বিত্তশালী হয়েছেন তার ভাই কাইয়ুম হাওলাদার। তারও ঢাকা ও গাজীপুরে পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা রয়েছে। বড় ভাই মতিউরের সহযোগিতায় তিনি এসব প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। 

গ্রামের বাড়িতে বড় ভাই মতিউর রহমানে চেয়ে মেজ ভাই কাইয়ুমের সম্পদের পরিমাণ কয়েকগুণ বেশি। গ্রামের বাড়িতে তিনি একরের পর একর জমি কিনেছেন। মুলাদী পৌর শহরে থানার উত্তর পাশে তার একটি আলিশান বাড়ি রয়েছে। বছর দুয়েক আগে প্রায় ২ কোটি টাকায় তা কিনেন কাইয়ুম। 

মতিউরের প্রথম স্ত্রী গড়েছেন সম্পদের পাহাড়

মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকী নরসিংদীতে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। তার নামে-বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পদ। স্বামীর বদৌলতে সরকারি কলেজের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হয়ে এত সম্পদ গড়েছেন। তিনি রায়পুরা উপজেলা পরিষদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার তৌফিকুর রহমান অর্ণব ও ফারজানা রহমান ইপসিতা নামে দুই সন্তান রয়েছে। 

লায়লা কানিজ লাকী ছিলেন রাজধানীর তিতুমীর সরকারি কলেজের বাংলা বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক। শিক্ষকতার পাশাপাশি রায়পুরা উপজেলার মরজালে নিজ এলাকায় প্রায় দেড় একর জমিতে ওয়ান্ডার পার্ক ও ইকো রিসোর্ট নামের একটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন। 

২০১৮ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী রাজীউদ্দিন আহমেদ রাজুর সঙ্গে পরিচয় হয়। ২০২৩ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান সাদেকুর রহমান মারা গেলে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে উপনির্বাচনে প্রার্থী হন এবং সংসদ সদস্যের প্রভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হন লায়লা কানিজ লাকী। তবে ঈদের পর তিনি তার কর্মস্থলে যাননি। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির দুর্যোগ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক। 

তার নির্বাচনি হলফনামা উল্লেখ আছে, বাৎসরিক আয় বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট-দোকান ও অন্যান্য ভাড়া থেকে ৯ লাখ ৯০ হাজার, কৃষি খাত থেকে ১৮ লাখ টাকা, শেয়ার-সঞ্চয়পত্র-ব্যাংক আমানতের লভ্যাংশ থেকে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকা, উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্মানী বাবদ ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৭৫ টাকা, ব্যাংক সুদ থেকে ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৩৯ টাকা। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার জমা রয়েছে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। তার কৃষিজমির পরিমাণ ১৫৪ শতাংশ, তার অকৃষি জমির মধ্যে রয়েছে রাজউকে পাঁচ কাঠা, সাভারে সাড়ে ৮ কাঠা, গাজীপুরে ৫ কাঠা, গাজীপুরের পুবাইলে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ ও ২ দশমিক ৯০ শতাংশ, গাজীপুরের খিলগাঁওয়ে ৫ শতাংশ ও ৩৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ, গাজীপুরের বাহাদুরপুরে ২৭ শতাংশ, গাজীপুরের মেঘদুবীতে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ, গাজীপুরের ধোপাপাড়ায় ১৭ শতাংশ, রায়পুরায় ৩৫ শতাংশ, ৩৫ শতাংশ ও ৩৩ শতাংশ, রায়পুরার মরজালে ১৩৩ শতাংশ, সোয়া ৫ শতাংশ, ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ ও ৪৫ শতাংশ, শিবপুরে ২৭ শতাংশ ও ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ, শিবপুরের যোশরে সাড়ে ৪৪ শতাংশ ও নাটোরের সিংড়ায় ১ একর ৬৬ শতাংশ জমি।

রায়পুরা উপজেলায় মরজাল বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ও লায়লা কানিজ লাকী দম্পতির বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি। 

এ ছাড়া তাদের রয়েছে, ওয়ান্ডার পার্ক ও ইকো রিসোর্ট। দেড় একরের বেশি আয়তনজুড়ে পার্কটির ভেতরে রয়েছে বিলাসবহুল একাধিক কটেজ। নির্ধারিত টাকায় এ কটেজে রাত্রিযাপন করা যায় বলেও জানান পার্কের গেটে থাকা আবু সাঈদ নামে একজন। পার্কে রয়েছে বিভিন্ন বয়সীদের জন্য বেশকিছু রাইড। পুরো পার্কজুড়ে বিভিন্ন ভাস্কর্য ও স্থাপনা এবং বিশাল আয়তনের একটি লেক। 

স্থানীয়রা বলছেন, লায়লা কানিজের বাবা কফিল উদ্দিন আহম্মদ ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। চার মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে লায়লা কানিজ সবার বড়। সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করলেও মতিউর রহমানের সঙ্গে বিয়ের পর তার ভাগ্য খুলে যায়। গত ১৫ বছরে তার সম্পদ লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে।

লাকীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে অনেকের জমি জোর করে দখল করার। এদের মধ্যে একজন বিমানবাহিনীর সাবেক ওয়ারেন্ট অফিসার মো. নজরুল ইসলাম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তার কাছ থেকে জমি কেনার কথা বলে কিছু টাকা দিয়ে জমি দখলে নেন। বাকি টাকা দেওয়ার পর রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হবে বলে কথা থাকলেও তিনি আর কোনো টাকা দেননি। 

এ ব্যাপারে মরজাল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সানজিদা সুলতানা নাসিমা সাংবাদিকদের বলেন, উনি সরকারি চাকরি করেছেন, উনি সম্মানিত একজন টিচার, এমন অবস্থায় এত সম্পদের মালিক নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠবে এটাই স্বাভাবিক। 

রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসাইন বলেন, লায়লা কানিজ টাকার পাহাড় গড়েছেন। রায়পুরার এমপি রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু প্রভাব খাটিয়ে তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান বানিয়েছেন, এখন টাকার কাছে সব নীরব।

তবে রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়া একটি চক্রের সদস্যরা বিভিন্নভাবে মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করছেন বলে দাবি করেন লায়লা কানিজ লাকী।

ফেনীতে শাশুড়িকে ডুপ্লেক্স বাড়ি উপহার দেওয়ার তথ্য অস্বীকার

মতিউর রহমান ১০ বছর আগে ফেনীর সোনাগাজীতে ডুপ্লেক্স বাড়ি বানিয়ে তার দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতারের মা অর্থাৎ শাশুড়িকে উপহার দিয়েছেন বলে গত কয়েকদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে শাম্মী আখতারের দুই ভাই ও একাধিক আত্মীয় এ খবরের সত্যতা অস্বীকার করেছেন।

শাম্মীর চাচাতো ভাই দিদারুল হাসান জানান, আমরা বংশপরম্পরায় সম্ভ্রান্ত ও জমিদার পরিবার। আমাদের অন্তত পাঁচটি ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে। আমার মিল্লাত চাচা (শাম্মী আখতারের বাবা) ব্যাংক কর্মকর্তা ছিলেন। তাদের জায়গা জমিসহ অঢেল সম্পদ রয়েছে। মেয়ের জামাইয়ের কাছ থেকে ডুপ্লেক্স বাড়ি নিতে হবে এরকম কিছু না। এটা ডাহা মিথ্যা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট তথ্য। যে কেউ অসৎ উদ্দেশ্যে এসব বানোয়াট তথ্য প্রচার করছে।

পশ্চিম সোনাপুর সমাজ উন্নয়ন পরিষদের সহ-সভাপতি আমিনুল হক হারুন জানান, মতিউর রহমান আমাদের মেয়ের জামাই। তিনি একবার এলাকায় এসেছেন বলে শুনেছি। তবে তার সঙ্গে কখনো দেখা হয়নি। মিয়া বাড়ির লোকদেরকে অন্য কেউ এসে ঘর করে দেওয়ার দরকার নাই। আর তাদের বিশাল জমি-জমা সম্পত্তিও রয়েছে। এখানে অন্য কেউ এসে জমি কিনে দেওয়ার তথ্য অবান্তর।

মতিউর রহমানের শ্বশুরবাড়ি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর এলাকায়। তবে স্থানীয়রা বাড়িটিকে মিয়া বাড়ি হিসেবে চিনেন।

‘টেকা যা দিছ, আর দেওনের কাম নাই’

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ১০:১১ এএম
আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ১০:১৫ এএম
‘টেকা যা দিছ, আর দেওনের কাম নাই’
ছবি : খবরের কাগজ

‘স্যার, আমার জামিন করায়ে দেন না।’
‘তোমার মা-বাবাকে বলো আমার সঙ্গে কথা বলতে। তোমার কী মামলা?’
‘গাঁজার মামলা।’
‘আরে না, গাঁজার মামলায় তো এমনিই জামিন হয়ে যাবে কদিন পর। মার্ডার কেসের কেউ লাগলে (মামলায় আইনি সহযোগিতা) যোগাযোগ কইরেন।’

রবিবার (২৩ জুন) ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে এক কিশোরের সঙ্গে এক আইনজীবীর সহকারীর এই কথোপকথন হয়। বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত কিশোরদের নিয়ে আসা গাড়িতে বসেছিল রজব নামের এই কিশোর।
 
একই গাড়িতে অপেক্ষমাণ আরেক কিশোর ও তার অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলা শেষে আইনজীবীর সহকারী রফিকুল ইসলাম জাহাঙ্গীরের কাছে এই আকুতি জানায় রজব।

গাড়িটি ঘিরে জটলার মধ্য থেকে এক নারী আরেক অভিভাবক মাকে পরামর্শ দিয়ে বললেন, ‘ভিক্ষার জামিন অইবো তুমার পোলার। উকিলরে টাকা যা দিছ, আর দেওনের কাম নাই। চুপ মাইরা থাক।’ 

পরামর্শ দেওয়া নারী জাহেদা খাতুন ওই মা তাফিরুন্নেসার কথার সূত্র ধরেই তাকে বলেন, ‘তুমার পোলা তো মূল আসামি না। মূল আসামিরই এখনো জামিন অয় নাই। তার জামিন অইলে পরে তুমার উকিল গিয়া আদালতে কইবো, মূল আসামির জামিন অইয়া গেছে, আমার মোয়াক্কেল তো মূল আসামি না, এতদিন উকিল নিয়োগ দিতে পারে নাই, তারা গরিব মানুষ, তার জামিন দেওয়া হোক।’

পরামর্শ দেওয়া নারী জাহেদা খাতুন খবরের কাগজকে বলেন, ৮-৯ বছর ধরে তিনি আদালতে আসা-যাওয়া করছেন। একটি হত্যা মামলায় তার ছেলে আসামি। ঘটনার সময় তার ছেলের বয়স ছিল ১২ বছর। তার বিচার হচ্ছে শিশু আইনে। 

এতদিনে আইন-আদালত নিয়ে তার অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে জানিয়ে বলেন, তাফিরুন্নেসার ছেলের জামিনের জন্য উকিল ৩০ হাজার টাকা চেয়েছেন। এযাবৎ ১০ হাজার টাকা নিয়েছেনও। কিন্তু উকিল জামিনের জন্য কোনো চেষ্টাই করছেন না। আসলে তিনি মূল আসামির জামিনের জন্য অপেক্ষা করছেন। কারণ টাকাপয়সা খরচ করে মূল আসামি যখন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী নিয়োগ করে জামিন নিয়ে নেবেন, তখন অন্যান্য আসামির জামিন সহজ হয়ে যায়। তখন অন্যান্য আসামির পক্ষে আদালতে আবেদন করলেই আদালত সহানূভূতির দৃষ্টিতে দেখেন।

জাহেদা খাতুনের ভাষায় যা ‘ভিক্ষার জামিন’ বা বিনা খরচের জামিন। এর মধ্যে উকিল যা পারে, তাদের কাছ থেকে টাকাপয়সা নিতে থাকবে, তাই এখন উকিলকে আর টাকা না দেওয়াই ভালো।

কিশোরদের নিয়ে আসা গাড়িটিকে কেন্দ্র করে জমে ওঠা জটলার মধ্যেও ছিল ৮-১০ কিশোর। কথা বলে জানা গেল, তারা ভ্যানের ভেতরে থাকা কিশোরদের বন্ধু-স্বজন। জটলার মধ্যে থাকা উৎসুকদের কয়েকজন ভেতরে-বাইরে থাকা কিশোরদের দিকে ইঙ্গিত করে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলেন যে, এরা ‘কিশোর গ্যাং’। 

এ সময় তারা ভেতরে থাকা কিশোরদের হাঁটিয়ে আদালত ভবনে নেওয়ার সময় বাইরে থাকা কিশোরদের হাত থেকে নিয়ে সিগারেট ফুঁকার উদাহরণও দেন। বাবার বয়সী পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে যেতে যেতেই অবলীলায় নিজেদের মধ্যে জ্বলন্ত সিগারেট দেওয়া-নেওয়া করাকে গর্হিত কাজ বলেই উল্লেখ করেন তারা।

গাড়ির ভেতর থেকে বাইরে অপেক্ষমাণ মায়ের হাত ধরে কান্নাকাটি করতে থাকা এক কিশোরকে দেখে উৎসুকদের কেউ কেউ অবশ্য বলে উঠলেন, আহারে, ছেলেটা মনে হয় অপরাধ করে নাই। বিনা দোষে ফেঁসে গেছে। কিশোরের মা-ও চোখ মুছতে মুছতে ছেলেকে শিগগিরই জামিনে বের করে আনার আশ্বাস দেন।

রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভ্যানের ভেতরে থাকা এক কিশোর ও তার অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলেন আইনজীবীর সহকারী পরিচয় দেওয়া রফিকুল ইসলাম জাহাঙ্গীর। তাদের জানালেন, এখানে জামিন হবে না, হাইকোর্টে যেতে হবে।

জটলার মধ্যে থাকা দম্পতি মজিবর রহমান ও শাহিনুর আক্তার আদালতে এসেছেন ভ্যানের ভেতরে থাকা তাদের সন্তান মো. জাহিদকে (১৪) দেখতে। বললেন, ঈদের আগেই ছেলের জামিন হয়েছিল। তবে পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় এখনো মুক্ত হতে পারেনি। আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করে পেশায় দর্জি মজিবর আরও টাকাপয়সা দিয়েছেন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য। কয়েক দিনের মধ্যেই ছেলে মুক্ত হবে বলে তাদের আশা। আগে-পরে এলেও হতো। কিন্তু আজ (রবিবার) ছেলেকে আদালতে আনা হবে, তাই আজ এলে ছেলের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হবে, আবার আইনজীবীর সঙ্গেও কথা হবে, তাই এসেছেন।

গত ৮ মার্চ রাজধানীর শ্যামপুর দোলাইরপাড়ে ছুরিকাঘাতে শান্ত (১৮) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। ওই ঘটনায় করা মামলায় তাদের ছেলেকে আসামি করা হয় বলে জানান তারা।

সব হারালেন মতিউর

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ০৯:২৬ এএম
আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ০৯:৩০ এএম
সব হারালেন মতিউর
কানাডায় প্রথম স্ত্রী ও সেই ঘরের সন্তানদের সঙ্গে মতিউর রহমান (বায়ে), দ্বিতীয় স্ত্রী ও দুই সন্তান (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা মতিউর রহমানের দুর্নীতির অভিযোগে পঞ্চম দফায় অনুসন্ধান শুরু করল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর আগে গত ২০ বছরে চারবার অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েও তাকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি তার ছেলের ছাগলকাণ্ডে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার প্রেক্ষাপটে অনুসন্ধানকাজ বেশ জোরেশোরেই শুরু করা হয়েছে। তার আর্থিক দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ খুঁজতে আজ সোমবার থেকেই মাঠে নামছে দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান টিম। 

অনুসন্ধান শুরুর বিষয়ে রবিবার (২৩ জুন) ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মতিউরের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ জুন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। সেই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে রবিবার তিন সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে। টিমের সদস্যরা ইতোমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছেন।’

দুদক সূত্র জানায়, রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউরের অবৈধ সম্পদের তথ্য-উপাত্ত গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার আগেই তার বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে অবৈধ সম্পদ, হুন্ডি, আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৪ জুন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তের প্রায় ২০ দিন পর উপপরিচালক আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করা হলো। টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক মাহমুদ হোসেন ও উপসহকারী পরিচালক সাবিকুন নাহার। কমিটি গঠনের চিঠি পেয়েই মতিউরের অর্থ-সম্পদের তথ্য চেয়ে সারা দেশে ভূমি অফিস ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে চিঠি তৈরি করেছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। আজ সোমবার এই চিঠি পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।

এনবিআর থেকে সরানো হয়েছে: 
মতিউর রহমানকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। গতকাল এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তবে কেন এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়নি। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘জনস্বার্থে জারি করা এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।’ ধারণা করা হচ্ছে, মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সোনালী ব্যাংক থেকেও সরানোর প্রক্রিয়া শুরু:
এনবিআরের সদস্যের পাশাপাশি মতিউর রহমান ছিলেন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের পরিচালক। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় এনবিআর থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর এখন সোনালী ব্যাংক থেকেও সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গতকাল সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পূর্বনির্ধারিত ওই বৈঠকে মতিউর রহমানকে যোগ দিতে আগেই মৌখিকভাবে নিষেধ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে মতিঝিলে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে পর্ষদ সভা শেষে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম। 

তারা দুজনেই জানান, পরিচালনা পর্ষদের সভায় মতিউর রহমান যোগ দেননি। 

এ বিষয়ে জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, ‘মতিউর রহমান আর কখনো সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সভায় আসবেন না। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে মতিউর রহমানকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে দেওয়া সার্কুলার অনুযায়ী ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মতিউর রহমানকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদে তিন বছরের মেয়াদে নিয়োগ দেওয়া হয়। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। 

মতিউরের যত সম্পদ: 
নিজের নামে অঢেল সম্পদের পাশাপাশি স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের নামে গড়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ। এর মধ্যে দেশেই অন্তত ৫০০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট ও জমি রয়েছে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নামে আছে এফডিআর ও শেয়ারবাজারে শতকোটি টাকার বিনিয়োগ। নিজ নামে নগদ ব্যাংকে জমা আছে কমপক্ষে অর্ধশত কোটি টাকা। 

ছাগলকাণ্ডের জন্য আলোচিত তার ছেলেকেও কিনে দিয়েছিলেন প্রাডো, প্রিমিও ও ক্রাউনের মতো চারটি বিলাসবহুল গাড়ি। এসব গাড়ি তার বিভিন্ন কোম্পানির নামে রেজিস্ট্রেশন করা। কিনে দিয়েছেন দামি দামি পাখিও। 

মতিউর রহমানের স্ত্রী-সন্তান ও ঘনিষ্ঠদের নামে ঢাকাতেই অন্তত ২৪টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে। বসুন্ধরার ডি-ব্লকের ৭/এ রোডের ৩৮৪ নম্বর ভবনের মালিক তিনি। সাততলা ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় প্রথম স্ত্রী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চেয়ারম্যান লায়লা কানিজকে নিয়ে সপরিবারে বাস করেন।

গুলশানের সাহাবুদ্দিন পার্কের পাশে ৮৩ নম্বর রোডের ১১ নম্বর প্লটে আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের বেগ পার্ক ভিউতে রয়েছে চারটি ফ্ল্যাট। দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার থাকেন লালমাটিয়ার ৮ নম্বর রোডের ৪১/২ ইম্পেরিয়াল ভবনে। কাকরাইলেও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে ছোট স্ত্রীর নামে। ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ছাগলকাণ্ডে ভাইরাল হওয়ার পর তারা বর্তমানে কাকরাইলের ওই ফ্ল্যাটে অবস্থান করছেন। 

এ ছাড়া ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট। বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ডেভেলপার কোম্পানি শান্তা ডেভেলপারের করা বিভিন্ন ভবনে তার আটটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এসব ফ্ল্যাট প্রথম স্ত্রীর সন্তান ফারজানা রহমান ইপ্সিতা ও ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে কেনা হয়েছে।

টঙ্গীতে ৪০ হাজার বর্গফুটের এসকে ট্রিমস নামে ব্যাগ ম্যানুফ্যাকচারিং ও অ্যাকসেসরিজ কারখানা আছে তার। যদিও কাগজে-কলমে কারখানার মালিক তার ভাই এম এ কাইয়ুম হাওলাদার। 

ময়মনসিংহের ভালুকায় ৩০০ বিঘা জমিতে ও বরিশালের গ্লোবাল সুজ নামে দুটি জুতা তৈরির কারখানা আছে। নরসিংদীর রায়পুরায় ওয়ান্ডার পার্ক অ্যান্ড ইকো রিসোর্ট রয়েছে। এসব রিসোর্টের মালিকানায় আছে তার ছেলে ও মেয়ে। পূর্বাচলে আপন ভুবন পিকনিক অ্যান্ড শুটিং স্পটের মালিক তিনি। 

দেশের নামকরা ডেভেলপার কোম্পানিতে তার মালিকানা রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আই-ব্লকে সোবহান অ্যাভিনিউর ৯-১০ নম্বর রোডের ৬৫৭ এ, ৬৫৭ বি এবং ৭১৬ নম্বর প্লটে বাণিজ্যিক ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। 

গাজীপুর সদর এলাকায় ১৭১ নম্বর এসএ দাগে ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ, ১৭২ নম্বর এসএ দাগে ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ, ১৬৩ নম্বর এসএ দাগে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, ১৬৩ নম্বর এসএ দাগে ৬ শতাংশ, ১৭০ নম্বর এসএ দাগে ৬ শতাংশ, ১৬৩ নম্বর এসএ দাগে ৭ শতাংশ, ১৭০ নম্বর দাগে ৬ শতাংশ জমি রয়েছে। 

এ ছাড়া সাভার থানার বিলামালিয়া মৌজায় ১৩০৩৫, ১৭৬৩ ও ১৭৬২ নম্বর দাগে ১২ দশমিক ৫৮ শতাংশ জমির খোঁজ পাওয়া গেছে। এ আটটি খতিয়ানে ৬০ শতাংশ জমি রয়েছে। স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে সাভার থানার বিলামালিয়া মৌজায় ১৩৬৯৬ নম্বর এসএ দাগে ১৪ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ, গাজীপুরে ৪৮ দশমিক ১৬ শতাংশ, ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব ও লায়লা কানিজের নামে দশমিক ৪৫১৬২৫ একর জমি রয়েছে।

দুদকের চার দফা অনুসন্ধানে দায়মুক্তি: 
গত ২০ বছরে দুদকের অনুসন্ধান থেকে দায়মুক্তি পেয়েছেন মতিউর। ২০০৪, ২০০৮, ২০১৩ ও ২০২১ সালে এই চারটি অনুসন্ধান হয়। তবে এই চার দফা অনুসন্ধানের পর দায়মুক্তি দেয় দুদক। পুরোনো এসব নথি খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। নথি পাওয়া গেলে সেসব অভিযোগও খতিয়ে দেখা হবে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।