![চুরির ভয়ে পানিতেই বসবাস!](uploads/2024/06/21/Bonna-1718943609.jpg)
নিম্নআয়ের মানুষের শোকেস, আলনা আর খাটের মধ্যে থাকে তাদের শ্রম-ঘামের গল্প। ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে চুরি হয়ে যাবে শত কষ্টে কেনা আসবাবপত্রসহ অন্য সামগ্রী। তাই চলমান বন্যায় ঘরে ঊরুসমান পানির মধ্যে দুই সন্তান ও স্বামীসহ বসবাস করছেন সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শিমুলতলা গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা কমলা বেগম। তবে নিজেরা পানির মধ্যে কষ্ট করে থাকলেও তাদের গরুগুলোকে পাঠিয়েছেন উঁচু নিরাপদ স্থানে।
কমলা বেগম বলেন, ‘নিরাপদ জায়গায় গেছি না, কারণ গেলে ঘরের জিনিসপত্র সব চোর নিয়ে যায়।’
জীবনের চেয়ে কি জিনিসপত্রের দাম বেশি? এ প্রশ্নের তাৎক্ষণিক জবাব দিলেন কমলা। বললেন, ‘দাম নানি। গরিব মানুষ আমরা। চুরি হইয়া গেলে চাইলেও আর একটি জিনিস কিনতে পারতাম না। তাই ঘর ছাইড়া গেছি না। গরুগুলো পানির মধ্যে থাকতে পারত না। এর লাগি গরুগুলোরে পাশের বালুর ডিবিতে (বালুর স্তূপ) রাইক্কা আইছি।’
কমলা বেগমের মতো এই গল্প সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শিমুলতলা গুচ্ছগ্রামের প্রতিটি ঘরের। এ গ্রামে প্রায় ২০০টি পরিবার বাস করে। প্রতিটি বাড়ির সামনে রয়েছে কোমর পানি। আর ঘরের মধ্যে রয়েছে ঊরুসমান পানি।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, গুচ্ছগ্রামের পরিবারগুলোর মধ্যে প্রায় অর্ধেক চলে গেছে আশ্রয়কেন্দ্রে। ২০টি পরিবার গ্রামের পাশে রাখা একটি বালুর স্তূপে আশ্রয় নিয়েছে। অবশিষ্ট ৩০টি পরিবার এখনো পানির মধ্যে বসবাস করছে।
এই গ্রামের অন্য মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বন্যার পানিতে এই ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস তাদের জন্য নতুন কিছু নয়। কারণ বছরখানেক পর পর তাদের বন্যায় প্লাবিত হতে হয়। আর ঘর ছেড়ে গেলেই চুরি হয়ে যায় সব আসবাবপত্র ও ধান। নিম্নআয়ের মানুষের সম্পদ বলতে এসবই। তাই নিজের সন্তানের মতো ঘরের আসবাবপত্রকে আগলে রেখে পানির মধ্যেই থাকছেন তারা।
স্ত্রী, পাঁচ সন্তান, তিন নাতিসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে বন্যা শুরুর পর থেকেই পানির মধ্যে বসবাস করছেন ঈদু মিয়া। তিনি বলেন, গত বুধবার সাবেক চেয়ারম্যান জামাল ভাই নৌকা নিয়ে আমাদের ঘরে আসেন। তিনি আমার পরিবারের অন্যদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে গেলেও আমি ঘরে রয়ে গেছি। কারণ এই বছর কিছু ধান পাইছি। এই ধানের কথা আর কী বলব। আমার ৩০ কাঠা ধান এখনো পানির নিচে। এখন ঘর খালি রেখে গেলে ধানগুলো চুরি হয়ে যাবে।
গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠাকালে ভূমিকা রেখেছিলেন বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বলতে গ্রামবাসী ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন কলাগাছের ভেলায় করে এসে গুচ্ছগ্রামের মানুষজনের খোঁজখবর নিচ্ছিলেন।
ওই সময় তিনি খবরের কাগজকে বলেন, এই গ্রামের অনেক মানুষ এখনো পানির মধ্যেই বসবাস করছেন। কারণ ঘর ছেড়ে গেলেই ঘরের মালামাল, ধান চুরি হয়ে যায়। এরা সবাই গরিব মানুষ। অনেক কষ্ট করে ঘরের আসবাবপত্র কিনেন তারা। তাই এসবের মায়া ছাড়তে পারেন না। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন, তারা ত্রাণসামগ্রী পাচ্ছেন। কিন্তু এই মানুষগুলো কিছুই পাচ্ছে না। এই মানুষগুলোর জন্য শুকনো খাবার ও শিশুখাদ্য প্রয়োজন। সরকারের বরাদ্দও আছে কিন্তু এই বরাদ্দের ত্রাণসামগ্রী দ্রুত পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।