![লাল-সবুজের জয়ে সুরভিত সিলেট](uploads/2023/12/03/1701580192.1st Page-BD-NZ-1st Partha=OK.jpg)
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। চা-বাগান পরিবেষ্টিত। যে দিকে দৃষ্টি যায়, নয়ন জুড়িয়ে যাবে। সেই নয়ন জুড়ানো সবুজের সমারোহে গতকাল শনিবার রচিত হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে এক অমর কাব্য। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের দ্বিতীয় দিনই বাংলার দামাল ছেলেরা নিজেদের খর্বশক্তি নিয়ে মহাপরাক্রমশালী নিউজিল্যান্ডকে সাদাপোশাকের ক্রিকেটে হারিয়েছে ১৫০ রানের বিশাল ব্যবধানে।
চতুর্থ দিনের শেষ বিকেলে সিলেটের দর্শকদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল উচ্ছ্বাস। হাসিমুখে মাঠ থেকে বের হচ্ছিলেন টাইগার-সমর্থকরা। কারণ চতুর্থ দিনের শেষ বিকেলেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেটের মাঠে টেস্ট জিততে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পঞ্চম দিনের প্রথম সেশনেই শেষ হবে খেলা। হয়েছেও তাই। ঘরের মাঠে বাংলাদেশ এই প্রথম হারাল নিউজিল্যান্ডকে। সব মিলিয়ে কিউইদের বিপক্ষে টাইগারদের এটি দ্বিতীয় জয়। গত বছর জানুয়ারিতে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ৮ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ। সিলেটে ১৫০ রানের জয়ে সপ্তম বারের মতো ১৫০ কিংবা তার চেয়ে বেশি রানের ব্যবধানে ম্যাচ জয়ের কীর্তিও টাইগারদের। এই জয় দিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করল। ১২ পয়েন্ট নিয়ে তারা পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে অবস্থান করছে। ২ ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে পাকিস্তান।
সিলেটের উইকেটে প্রথম দুই দিনে স্পিনারদের দাপট কিছুটা কম ছিল। সময় যত এগিয়েছে, তত বেড়েছে স্পিন দাপট। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডকে তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে অল্প রানে গুটিয়ে দেওয়ার বড় নায়ক তাইজুল ইসলাম। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট শিকারের পর দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি নেন ৬ উইকেট। এর জন্য তার খরচ ৭৫ রান। দুই ইনিংস মিলিয়ে তাইজুল নেন ১০ উইকেট। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো ১০ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন। বাংলাদেশের হয়ে তাইজুল ছাড়া দুইবার করে ম্যাচে ১০ উইকেট শিকারের কীর্তি আছে সাকিব আল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজের। তাইজুল ইসলামের পাশাপাশি নাঈম হাসান, মেহেদি হাসান মিরাজও করেছেন নিজেদের সেরা বোলিং।
প্রতিপক্ষের রান আটকানোর কাজটিও ঠিকঠাক করেছেন তারা। প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের জন্য ত্রাসের আরেক নাম ছিলেন মুমিনুল হক। প্রথম ইনিংসে দলকে দারুণ ব্রেক থ্রু এনে দেওয়া মুমিনুলের শিকার ছিল তিন উইকেট। ব্যাট হাতে দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেন ৪০ রানের ইনিংস।
চতুর্থ দিনই স্বাগতিকদের জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরও পঞ্চম দিন সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ছিল না সমর্থকের ঢল। টাইগারদের নিশ্চিত জয় দেখতে মাঠে উপস্থিত হয়েছিলেন গুটিকয়েক দর্শক। আগের দিনে ১১৩ রানে ৭ উইকেটে দিন শেষ করা নিউজিল্যান্ড পঞ্চম দিনের সকালে কতক্ষণ টিকতে পারে, সেটাই ছিল দেখার বিষয়। ধারণা করা হয়েছিল সফরকারীরা খুব বেশি সময় টিকতে পারবে না। কিন্তু তার পরও তারা দিনের প্রথম সেশন প্রায় পার করে দিচ্ছিলেন। তাদের অলআউট করতে বাংলাদেশের বোলারাদের বোলিং করতে হয় ২২.১ ওভার। রান যোগ হয় ৬৮। ফলে পঞ্চম দিনে ১৮১ রানে শেষ হয় নিউজিল্যান্ডের ইনিংস।
বাংলাদেশের জয়কে মূলত বিলম্বিত করেন আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার ড্যারেল মিচেল, ইশ সোধির সঙ্গে অধিনায়ক টিম সাউদি। সপ্তম উইকেট জুটিতে মিচেল ও সোধি আগের দিনের ১১ রানের সঙ্গে আরও ১৯ যোগ করে ৩০ রান এবং নবম উইকেট জুটিতে সোধি ও সাউদি মারমুখী ব্যাটিং করে ৮.৩ ওভারে ৪৮ রান যোগ করেন।
এই দুই জুটি ভাঙতে বিলম্বিত হওয়ায় বারবার সবার হৃদয়ে ভেসে উঠছিল ২০২১ সালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ও উইন্ডিজের টেস্ট। বাংলাদেশের নিশ্চিত জয় হাতছাড়া হয়েছিল কাইল মেয়ার্সের সঙ্গে এনক্রুমা বোনার ও জশুয়া ডি সিলভার জুটিতে। চতুর্থ দিনে জয়ের আভাস পাওয়া বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত হেরে গিয়েছিল সেই টেস্ট। এবার অবশ্য সে রকম কোনো কিছু হয়নি। শুধু নাটকীয়তা সৃষ্টি হচ্ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত রূপ নেওয়ার আগেই ম্যাচ বাংলাদেশ দল নিজেদের করে নেয়।
২০২১ সাল ফিরে না আসার কারণ বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট পাওয়া এ স্পিনার দ্বিতীয় ইনিংসে পতন হওয়া ৭ উইকেটের ৪টি নিয়েছিলেন। তিনিই এগিয়ে আসেন জুটি ভাঙতে। সাদাপোশাকের ক্যারিয়ারের দশম হাফসেঞ্চুরি করে সামনে নাঈম হাসানের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন। তিনি আউট হওয়ার পর অধিনায়ক সাউদি এসে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন। এগুতে থাকা ড্যারেল মিচেল এরপর বেশি দূর যেতে পারেননি। সোধিকে অনেকটা দর্শক বানিয়ে তিনি আক্রমণকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন। তার এ রকম বাটিং মনে ভয়ের সঞ্চার করলেও লক্ষ্য দূরে থাকায় আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু ছিল না। সাউদি ২৪ বলে ২ ছক্কা ও ১ চারে ৩৪ রান করে নাঈমের বলে সুইপ করতে গিয়ে জাকিরের হাতে ধরা পড়ে বিদায় নেওয়ার ৩ রান পরই তাইজুল বাংলাদেশের স্মরণীয় জয়ের লগন এনে দেন সোধিকে ২২ রানে ফরোয়ার্ড শট লেগে জাকিরের হাতে ক্যাচ বানিয়ে।