![জয়ে নেই আত্মতুষ্টি বাড়াবে মনোবল](uploads/2023/12/04/1701668833.BD test.jpg)
ক্রিকেটের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা আকাশ সমান। আবেগের ঢেউ সীমাহীন। বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো। তাই তো ক্রিকেটারদের যেকোনো সাফল্যে মানুষের অন্তর ছুঁয়ে যায়। আনন্দের বহিঃপ্রকাশ করতে নেমে আসেন রাস্তায়। এই ধারা চলে আসছে সেই ১৯৯৯ সালে প্রথম বিশ্বকাপ থেকেই।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথ চলায় বাংলাদেশ দল ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই ধারাবাহিক হতে পারেনি। সময়ের হিসাবে দুই দশক পার হয়ে গেছে। একমাত্র ওয়ানডে ক্রিকেটে সেখানে কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত খেলার মাধ্যমে বাংলাদেশ দল নিজেদের সাফল্যের ধারাবাহিকতা শুরু করেছিল। পরে ঘরে-বাইরে বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জিতেছিল। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চরম ভরাডুবির মাধ্যমে সেই ধারাবাহিকতার জলাঞ্জলি হয়েছে। এবারের ব্যর্থতা এতটাই ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকদের নাড়া দিয়েছে যে, অনেকেই মনকে পাথর করে ক্রিকেট থেকে নিজেদের আবেগ সরানোর চেষ্টা করছেন। ক্রিকেট নিয়ে মাতামাতি কমিয়ে দিয়েছেন। এর প্রথম প্রভাব দেখা গেছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্রই শেষ হওয়া বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচে। টেস্ট ক্রিকেটে মানুষের আগ্রহ এমনিতেই কম থাকে। তারপর সিলেটে অনুষ্ঠিত হওয়া এই টেস্টে সেই আগ্রহে আরও ভাটা দেখা গেছে। চতুর্থ দিনই বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরও পঞ্চম দিন মাঠে সেই জয় দেখতে দর্শকদের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে!
অতীতে কিন্তু এমনটি দেখা যায়নি। যতই দল ব্যর্থ হোক, যেকোনো ফরম্যাটে বড় দলের বিপক্ষে জয় পেলে, তা নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীরা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতেন। এবারে তাদের অনাগ্রহে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, অল্পতেই তুষ্ট তারা আর হতে চান না কিংবা অল্পতেই তুষ্ট হওয়ার দিন শেষ! তারা চান ধারাবাহিকতা। কিন্তু এই ধারাবাহিকতারই বড্ড অভাব বাংলাদেশ দলে। এটা দর্শকরা বুঝতে পেরেছেন, বিসিবি কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারলেই হয়?
অতীতে শুধু ক্রিকেটপ্রেমীরাই নন, হারের চোরাবালিতে ডুবতে থাকার মাঝে হঠাৎ পাওয়া বড় দলের বিপক্ষে জয়ে বিসিবির কর্তারাও আহ্লাদে আটখানা হতেন। তারা ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে খুবই বড় করে দেখতেন এই রকম জয়। এই এক জয়ে হারিয়ে যেতে অতীতের যত ব্যর্থতা। চুইংগামের মতো লম্বা হতে থাকত জয়ের রেশ। অনেকটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো। এবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পাওয়ার আগে এই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই ২০২২ সালের জানুয়ারির শুরুতে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ৮ উইকেট পাওয়া জয়ও ছিল ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে থাকার পর। কিন্তু এই এক জয়ে দেশ তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল। এর কারণও ছিল। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সাদাপোশাকে জয়, চাট্টিখানি কথা ছিল না। তারপর আবারও হারের বৃত্তে। পরের টেস্টেই নিউজিল্যান্ডের কাছে ফিরে গিয়েছিল নিজেদের চেনা রূপে। হেরেছিল ইনিংস ও ১১৭ রানে। এবার সিলেট টেস্ট জেতার আগে বাংলাদেশ বড় কোনো দলের বিপক্ষেই জিততে পারেনি, উপরন্তু হেরেছিল বড় ব্যবধানে। জয় পেয়েছিল সর্বশেষ টেস্ট মর্যাদা পাওয়া আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে। তাও ঘরের মাঠে।
এবারের জয়ে যদি অতীতের মতো বিসিবির কর্তারা আত্মতুষ্টিতে ভোগেন, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের ক্রিকেট। কারণ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ভয়াবহ ব্যর্থতা দেশের ক্রিকেটে আগামীর জন্য অশনি সংকেত। এর কারণ অনুসন্ধান করে নিতে হবে সঠিক পদক্ষেপ। জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার জাভেদ ওমর বেলিম গুল্লু মনে করেন এ রকম হঠাৎ-হঠাৎ করে পাওয়া জয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কিছু নেই। তবে মনোবল বাড়াতে কাজে লাগবে। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘নিউজিল্যান্ড সাবেক বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ন। তারা কিন্তু এই টেস্ট হারের পর হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবে না। গতবার যেমন প্রথম টেস্ট হারের পর দ্বিতীয় টেস্টেই ফিরেছিল নিজেদের শক্তিতে। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে, বিশেষ করে ওয়ার্ল্ড কাপ ক্রিকেটে যে রকম বাজে খেলেছে, তাতে এ রকম জয়ে আত্মসন্তুষ্টি নয়, মিনিমাম একটা আত্মবিশ্বাস জন্ম নিবে। সময়ের বিবেচনায় এই জয় খুবই প্রয়োজন ছিল। পরের টেস্ট যদি আমরা অন্তত ড্র করতে পারি, তাহলে সেটি হবে আমাদের অর্জন। এর মাঝে ব্যাক অব মাইন্ডে যে কাজ আছে, তা খুব দ্রুতই বিসিবিকে করতে হবে। পলিসি মেকিং, বয়সভিত্তিক ক্রিকেট, লোকাল কোচ কাকে কীভাবে প্রমোট করা যায়।’ সিলেট টেস্ট জেতার পর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর কথাও ছিল আত্মতুষ্টিতে না ভোগার। তিনি বলেছেন, ‘কিছুই বদলায়নি। বাইরে কথা হতেই থাকবে। অনেক ভালো কথা হবে এখন। আবার একটা ম্যাচ খারাপ করলে অনেক খারাপ কথা হতে থাকবে। সমালোচনা হতে থাকবে।’