![শেষ পর্যন্ত হলো না](uploads/2023/12/10/1702185063.1st Page.jpg)
হলো না! এবারও বড় দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট সিরিজ জেতা হলো না। অতীতে অস্ট্রেলিয়া (২০১৭) ও নিউজিল্যান্ডের (২০২২) বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজের প্রথম টেস্ট জিতে বাংলাদেশের সামনে সিরিজ জয়ের দিগন্ত প্রসারিত সুযোগ এসেছিল। কিন্তু হেরে গিয়ে ড্র করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল টাইগারদের। এবার তৃতীয়বারের মতো সেই সুযোগ হাতছাড়া করল বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয়বার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেট টেস্ট ১৫০ রানে জিতে বাংলাদেশ পেয়েছিল সেই সুযোগ। কিন্তু ৪ উইকেটে ম্যাচ হেরে অতীতের মতো এবারও পুড়তে হয়েছে আফসোসের বেড়াজালে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দুই টেস্টের সিরিজ হয়েছে ১-১ ড্র। প্রথম টেস্ট জিতে বাংলাদেশ পেয়েছিল ১২ পয়েন্ট। দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে নিউজিল্যান্ডেরও পয়েন্ট ১২। দুই দলই এই সিরিজ দিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের যাত্রা শুরু করে। পয়েন্ট টেবিলে বাংলাদেশের অবস্থান চারে, নিউজিল্যান্ডের তিনে। দুই ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপর পাকিস্তান। সমান ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে ভারত।
অতীতের দুইবারের চেয়ে এবার বাংলাদেশের সামনে সুযোগ ছিল বেশি। বলা যায় বাংলাদেশের মুখের খাবার কেড়ে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ২০২২ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ জয়ের কোনো ক্ষেত্রই তৈরি করতে পারেনি। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭ উইকেটে ও নিউজিল্যান্ডের কাছে ইনিংস ও ১১৭ রানে হেরেছিল। এবার জয়-পরাজয়ের দোলায় দুলতে দুলতে হেরেছে। ঘূর্ণি বলের ভেল্কিতে নিউজিল্যান্ডের সামনে টার্গেট ছিল মাত্র ১৩৬ রান অতিক্রম করা। সেই রান অতিক্রম করতে গিয়ে তাদের হয় ত্রাহি অবস্থা। একপর্যায়ে হারের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত সপ্তম উইকেট জুটিতে গ্লেন ফিলিপস ও মিচেল স্যান্টনারের অবিচ্ছিন্ন ৭০ রানে ম্যাচ জিতেছে ৪ উইকেটে। ৬ উইকেটে ৬৯ রান থেকে পরে বিনা উইকেটে যোগ হয় ৭০ রান।
নিউজিল্যান্ডের হারের শঙ্কা কিংবা বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা কীভাবে তৈরি হয়েছিল? ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর নিউজিল্যান্ডের সামনে জয় ঘোলাটে হয়ে হারের শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। পেস ও স্পিনের যুগলবন্দি আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েন কিউই ব্যাটাররা। শুরু করেন পেসার শরিফুল ডেভন কনওয়েকে আউট করে। এরপর শুরু হয় মিরাজ-তাইজুলের স্পিন ভেল্কি। দুজনে তুলে নেন ৫ উইকেট। মিরাজ নিকোলাস, ড্যারেল মিচেল ও টম ল্যাথামকে এবং তাইজুল কেন উইলিয়ামসন ও টম ব্লুন্ডেলকে শিকার করে দলের রানকে পরিণত করেন ৬ উইকেটে ৬৯। জয়ের জন্য তখনো নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ৬৮ রানের। কিন্তু ষষ্ঠ উইকেটের পতনের আগে ফিলিপস আউট হতে পারতেন যদি মিরাজের বলে প্রথম স্লিপে নাজমুল ক্যাচ ছেড়ে না দিতেন। তখনো ফিলিপস রানের খাতা খোলেননি। তার এই জীবন পাওয়াই শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের জন্য ‘কাল’ হয়ে ওঠে। ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে ব্লুন্ডেল আউট হওয়ার পর নতুন ব্যাটার মিচেল স্যান্টনারকে নিয়ে ফিলিপস আর পেছনে ফিরে তাকাননি। দলকে একেবারে জয়ী করে তবেই মাঠ ছাড়েন। ৬ উইকেটে যেখানে রান ছিল ৬৯, সেখানে পরে ১২.৫ ওভারে ৭০ রান যোগ হয় কোনো উইকেট না হারিয়ে।
প্রথম ইনিংসে ফিলিপস দলের বিপর্যয়ে আক্রমণকে হাতিয়ার বানিয়ে খেলেছিলেন ৮৭ রানের ঝোড়ো ইনিংস। এবার তিনি ঝোড়ো ইনিংস খেলেননি। ৪৮ বলে ১ ছক্কা ও ৪ বাউন্ডারিতে ৪০ রান করে অপরাজিত থাকেন। কিন্তু ঝোড়ো ইনিংস খেলেন স্যান্টনার। তিনি ৩৯ বলে ১ ছক্কা ও ৩ চারে ৩৫ রান করে অপরাজিত থাকেন। এই দুজনের ব্যাটিংয়ে নিউজিল্যান্ড কঠিন ম্যাচকে অনেকটা সহজ করে জিতে নেয়।
মিরপুর টেস্ট গড়িয়েছে চতুর্থ দিনে। আসলে সময়ের হিসেবে খেলা হয়নি দুই দিনও। দুই দিনে খেলা হয় ১৮০ ওভার। সেখানে চার দিনে খেলা হয়েছে ১৭৮.১ ওভার। এর মাঝেই দুই দল দুইবার করে চারবার ব্যাটিং করছে। উইকেট পড়েছে ৩৬টি। এই ৩৬ উইকেটের মাত্র ৪টি ছিল পেসারদের দখলে। তারা বোলিং করেন ২৪.১ ওভার। বাকি সব ওভার করেছেন স্পিনাররা।
প্রথম দিন ৭৮.২ ওভার খেলা হয়েছিল। উইকেট পড়েছিল ১৫টি। দ্বিতীয় দিন খেলা হয়নি। তৃতীয় দিন মাত্র ৩২.৩ ওভারে উইকেট পড়েছিল ৭টি। আর চতুর্থ দিন ৬৬.৪ ওভারে উইকেট পড়েছে ১৪টি। যার ৮টিই ছিল দিনের প্রথম সেশনে। এই সব কটিই ছিল বাংলাদেশের। দুই স্পিনার এজাজ প্যাটেল ও মিচেল স্যান্টনার মিলেই বাংলাদেশের সব কটি উইকেট তুলে নেন। দ্বিতীয় সেশনে নিউজিল্যান্ডের উইকেট পড়ে ৬টি। শেষ সেশনে তাদের কোনো উইকেট পড়েনি।
বৃষ্টির কারণে প্রথম তিন দিনে খেলা হয়েছিল মাত্র ১১১.৩ ওভার। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের পুরোটাই এবং বাংলাদেশের ৮ উইকেট বাকি ছিল। পিচে স্পিনারদের রাজত্ব থাকলেও চতুর্থ দিনই খেলা শেষ হওয়ার সম্ভাবনা কমই ছিল। কিন্তু সেই অসম্ভব কাজটিই সম্ভব করে তোলেন মূলত নিউজিল্যান্ডের স্পিনাররা। বিশেষ করে দুই স্পিনার এজাজ প্যাটেল ও মিচেল স্যান্টনার। দুজনেই পিচ থেকে সুবিধা পাওয়াতে অধিনায়ক টিম সাউদি দিনের ইনিংসের ২৭ ওভারের মাঝে নিজে করেন ৪ ওভার। বাকি ২৩ ওভার মিলেমিশে করেন প্যাটেল-স্যান্টনার জুটি। বাংলাদেশের ইনিংসে আঘাত হানতে খুব বেশি সময় নেননি তারা। দিনের তৃতীয় ওভারেই মুমিনুলকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে এজাজ শুরু করেন। এই এজাজই পরে ‘ঘাতক’ হয়ে ওঠেন। ৮ উইকেটের ৫টিই তুলে নেন তিনি। আগের দিন নিয়েছিলেন ১ উইকেট। ৫৭ রানে নেন ৬ উইকেট। ১৬ টেস্টের ক্যারিয়ারে এটি ছিল তার চতুর্থবার ইনিংসে ৫ উইকেট পাওয়া। স্যান্টনার নেন ৩ উইকেট। দুজনের পাল্টাপাল্টি উইকেট নেওয়ার মাঝে এক প্রান্ত আগলে রেখে একাই লড়াই চালিয়ে যান ওপেনার জাকির হাসান। নবম ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগে তিনি খেলেন ৫৯ রানের ইনিংস। তার ৮৬ বলে ১ ছক্কা ও ৬ চার সাজানোর ইনিংসে ইতি ঘটে প্যাটেলের বলে ড্যারেল মিচেলের হাতে ধরা পড়ে। ৫ টেস্টের ক্যারিয়ারে তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন ৭৯ বলে। দুই ইনিংসে ৮৭ ও অপরাজিত ৪০ রানের ইনিংসের পাশাপাশি বল হাতে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন গ্লেন ফিলিপস। আর দুই টেস্টে ১৫ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরা হন তাইজুল ইসলাম।