![বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট এবং স্পিন উইকেট](uploads/2023/12/11/1702268529.Mirpur 3.jpg)
মেঘলা আকাশের সঙ্গে বৃষ্টির বাধা। এমন আবহাওয়াতে মিরপুর টেস্ট গড়ায় চতুর্থ দিনে। তবে পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে কী চতুর্থ দিনে গড়াত? উত্তর হলো- না। কেন গড়াত না তার একটি ব্যাখ্যাও আছে। সেটা হলো- মিরপুর টেস্টের চার দিনে খেলা হয়েছে মাত্র ১৭৮.১ ওভার।
মিরপুরের আবহাওয়া পুরোপুরি অনুকূলে থাকলে দ্বিতীয় দিনেই শেষ হতো ম্যাচ। এমন স্পিন বাধ্যভূমিতে খেলা ম্যাচের পর নাজমুল হোসেন শান্ত প্রত্যাশা রাখেন, ভবিষ্যতে ঘরের মাঠে এমন উইকেটে খেলবেন পরের টেস্টগুলোও!
মিরপুর টেস্ট শেষে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানান, তার চোখে উইকেটে দেখা মেলেনি কোনো খুত। বরং, ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে হেরেছে ম্যাচ। মিরপুর টেস্টের পর বিসিবি সভাপতি ও অধিনায়কের কথায় খানিকটা স্পষ্ট ঘরের মাঠে সাদা পোশাকে জয় তুলে নিতে বারবার ভরসা রাখা হবে স্পিন উইকেটে। এমন উইকেট দেশের ক্রিকেটের উন্নতির পথে বাধা হবে- এমন কথা তো সবাই নিয়মিত বলে। কিন্তু অধিনায়ক শান্তর ঘরের মাঠের টেস্ট ম্যাচ নিয়ে স্পষ্ট বার্তা- ‘টেস্ট ক্রিকেটে তো আমরা উন্নতি করতে আসিনি, জিততে এসেছি।’
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেটের উইকেট নিয়ে আলোচনা হয়েছে বিস্তর। সিলেটের উইকেট নিয়ে বারবার প্রশংসা হয়েছে। স্পোর্টিং উইকেট-ব্যাটারদের যেমন রান করার সুযোগ ছিল, তেমনি বোলাররাও পেয়েছেন সাফল্য। এমন স্পোর্টিং ধাঁচের উইকেটে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে চমক জাগায় বাংলাদেশ। মিরপুরে সিরিজের শেষ ম্যাচে জয় তুলে কিউইদের হোয়াইটওয়াশ করে স্বপ্নে মশগুল ছিল সবাই। সেই চিন্তা থেকে মিরপুরে তৈরি হয় স্পিন স্বর্গ। কিন্তু ‘হোম অ্যাডভান্টেজের’ সুবিধা নিতে গিয়ে হয়েছে হিতে বিপরীত। নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে শেষ করতে হয়েছে সিরিজ। অথচ নিউজিল্যান্ড সিরিজে বারবার উচ্চারিত হয়েছে ‘হোম অ্যাডভান্টেজের’ কথা। সেই সুবিধা কোনো অংশেই নিতে পারেনি বাংলাদেশ দল।
হোম অ্যাডভান্টেজের আড়ালে একটি কথা অনেকেই ভুলে যান। সাদা পোশাকে দেশের ক্রিকেটের বেশির ভাগ বড় সাফল্য ধরা দিয়েছে স্পোর্টিং উইকেটের বদৌলতে। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডকে অবশ্য ঘরের মাঠে স্পিন ফাঁদে ফেলেই হারিয়েছিল টাইগাররা। তবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাওয়া দুই জয়ের দুটোই এসেছে স্পোর্টিং উইকেটের কল্যাণে। এমন কী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট ড্র হয়েছিল স্পোর্টিং উইকেটে। তবুও বারবার টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ শরণাপন্ন হয় স্পিনিং উইকেটের। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের প্রথম মেয়াদে একই পথে ছিল বাংলাদেশ দল। সেবার হাতেগোনা কিছু সাফল্য এলেও সেটা দীর্ঘমেয়াদি ছিল না।
একই কোচের দ্বিতীয় মেয়াদে ফের স্পিন উইকেটের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ দল। তবে এবার স্পিনস্বর্গের মুখোমুখি হতে খানিকটা বেশি সময় নিয়ে ফেলেছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের আগে একই মাঠে হওয়া দুই টেস্টে ছিল স্পোর্টিং উইকেট। আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডকে ঘরের মাঠে হারায় স্পোর্টিং উইকেটে খেলে। সেখানে সাফল্য পেলেও নিউজিল্যান্ড সিরিজে ফের ফিরিয়ে আনে ‘র্যাঙ্ক-টার্নার’। ওই উইকেট বানিয়ে নিজেদের গড়া ফাঁদে হারে ম্যাচ। এমন হারের পর ক্রিকেটারদের সমালোচনা করতে চান না সাবেক ক্রিকেটার তুষার ইমরান। তিনি আছেন ক্রিকেটারদের পক্ষে। তার মতে, স্পিনিং উইকেটে খেলে সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা ভুল কিছু ছিল না। কিন্তু এমন উইকেটে খেলার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুত ছিল না। তার কথায়, ‘সিরিজ জয়ের জন্য যা করেছে সেটা ভুল না। তবে এর আগে আমাদের প্রস্তুত হওয়াটা জরুরি ছিল। এনসিএল-বিসিএলের মতো টুর্নামেন্টগুলোতে সাধারণত স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হয়। সেখানে স্পিনিং উইকেটে খেলে তারপর খেলা উচিত ছিল।’
এমন উইকেটে মিরপুর টেস্ট হারের জন্য তুষার দায় দেখেন বাংলাদেশি ব্যাটারদের। তিনি বলেন, ‘বোলাররা তাদের নিজেদের কাজ করেছে। ব্যাটাররা কাজটা ঠিকঠাক করতে পারেনি। নিউজিল্যান্ডের বোলাররা উইকেট বুঝে যথার্থভাবে চেষ্টা করেছে। এই কারণেই তারা সফল। আমাদের ব্যাটাররা ৪০-৫০ রান বেশি করলে আমরা ম্যাচটা জিততেও পারতাম। ভাগ্যও আসলে আমাদের পক্ষে ছিল না।’
এমন উইকেটের পক্ষে সাবেক ক্রিকেটারদের অবস্থান থাকলেও আদোতে যে দেশের ক্রিকেটের জন্য ক্ষতি সেটা মানেন সবাই। দেশের মাঠে পরের সিরিজগুলোতে উইকেট কেমন হবে সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।