![নতুন বছরে ‘টেস্ট’ পরীক্ষা](uploads/2023/12/12/1702355590.bd test team.jpg)
২০২৪ সাল বাংলাদেশের জন্য সাদা পোশাকে হতে যাচ্ছে ঐতিহাসিক বছর। নতুন বছরে দেশে ও দেশের বাইরে সবমিলিয়ে খেলবে ১৪ টেস্ট। বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে এটাই এক বছরে সাদা পোশাকে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড হবে। এর আগে ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি ১০ টেস্ট খেলেছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
২০২৪ সালে ঘরের মাঠে ৬ ও দেশের বাইরে ৮ টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ দল। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুয়ে ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে আতিথ্য দিবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। বিদেশে খেলবে আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ কোথায় খেলবে সেটা এখনো নির্ধারিত হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ভারত, আরব আমিরাত কিংবা শ্রীলঙ্কা, যেকোনো জায়গায় অনুষ্ঠিত হতে পারে এই সিরিজ। নিজেদের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দেশে ও দেশের বাইরে এত বেশি টেস্ট খেলতে প্রস্তুত তো বাংলাদেশ দল? এমন প্রশ্নই জাগছে এখন?
২০২৪ সালের ব্যস্তসূচিতে ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সের বড় অন্তরায় হতে পারে ফিটনেস। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল এখনো আলাদা করে দল গঠন করতে পারেনি। মুমিনুল, মাহমুদুল, সাদমান, সৈয়দ খালেদ, নাঈম হাসান, জাকির হাসান এ রকম হাতেগুনা কয়েকজন ক্রিকেটারের গায়ে টেস্ট ক্রিকেটের ‘টেগ’ লাগানো। বাকিরা টেস্ট ক্রিকেটার পাশাপাশি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচও খেলে থাকেন।
১৪ টেস্ট। ৫ দিনের হিসাব করলে ৭০ দিন ক্রিকেটারদের মাঠে থাকতে হবে। পাশাপাাশি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচতো আছেই। আবার ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। যে কারণে বছরজুড়ে ক্রিকেটারদের মাঠেই থাকতে হবে। পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ থাকবে কম। এ ক্ষেত্রে তারা ফিটনেস সমস্যায় পড়তে পারেন। বাংলাদেশে এটি নিয়মিত ঘটনা ক্রিকেটারদের ইনজুরিতে পড়া। দেখা যায় সারা বছরই বিভিন্ন ইনজুরিতে ভোগেন ক্রিকেটাররা। ফলে টেস্ট ম্যাচে নিয়মিত খেলোয়াড়দের পাওয়া যাবে কি না সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আরও প্রশ্ন জেগেছে দুটি। প্রথমত- ঘরের মাঠে উইকেট কেমন হবে, দ্বিতীয়ত- বিদেশের মাঠে কেমন পারফর্ম করবে বাংলাদেশ দল।
প্রথম প্রশ্নের উত্তর খানিকটা আন্দাজ করা যায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে নাজমুল হোসেন শান্তর কথায়। সেখানে তিনি বলেছিলেন- টেস্টে উন্নতি নয় জিততে এসেছি। এ ছাড়া তিনি আরও বলেছিলেন- হোম অ্যাডভান্টেজ কাজে লাগাবেন। অর্থাৎ ঘরের মাঠে নিয়মিত টেস্ট জিততে মরিয়া থাকা বাংলাদেশ দল এখন শরণাপন্ন হবে স্পিন কন্ডিশনের উপর। সবশেষ মিরপুর টেস্টের উইকেটের চিত্রায়ন হতে পারে আগামী বছরের ঘরের মাঠে হওয়া টেস্টগুলোতে। এমন কি এর পক্ষে আছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট শেষে তিনি দলের সিদ্ধান্তের পক্ষে কথা বলেন। তাতে আরও বেশি স্পষ্ট হয় টেস্ট জিততে মরিয়া বাংলাদেশ দল।
দেশের বাইরে একই ধরনের সুবিধা পাবে না। এটা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। ভারতের মাটিতে র্যাঙ্ক টার্নার উইকেট পেলেও পেতে পারে বাংলাদেশ দল। কারণ, ভারত বারবারই টেস্ট জয়ে নির্ভর করে র্যাঙ্ক টার্নার উইকেটের উপর। বাংলাদেশের বিপক্ষে একই পথে হাঁটবে কি না সেটা নিশ্চিত নয়। তবে বাংলাদেশ স্পিনে কিছুটা শক্তিশালী বলে র্যাঙ্ক টার্নার উইকেট থেকে বেরিয়ে ভরসা রাখতে পারে স্পোর্টিং উইকেটে। অন্যদিকে পাকিস্তানের উইকেটগুলো বারবার কথা বলে ব্যাটারদের পক্ষে। ফলে পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট জিততে বড় ভূমিকা নিতে হবে বাংলাদেশের ব্যাটারদের। অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে থাকে পেসারদের দাপট। সেখানে লাল-সবুজের ঝাণ্ডা ওড়াতে দায়িত্ব নিতে হবে পেসারদের। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের ভেন্যু চূড়ান্ত না হওয়ায় কোন ধরনের উইকেটে খেলা হতে পারে সেটার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না।
দেশে ও দেশের বাইরের উইকেট নিয়ে আছে বিস্তর আলোচনা। ঘরের মাঠে স্পিন উইকেটে খেলে বিদেশের মাটিতে কতটা মানিয়ে নিতে পারবে সেটা এখন ভাবনার বিষয়। আগামী বছরের টেস্ট চ্যালেঞ্জ জিততে সেই পথে হাঁটতে পারবে তো বাংলাদেশ দল? এমন প্রশ্নই এখন ক্রিকেট মহলে।
এই নিয়ে গতকাল খবরের কাগজকে সাবেক ক্রিকেটার রাজিন সালেহ বলেন, ‘আমরা যদি ঘরের মাঠে স্পিন, বিদেশের মাঠে স্পোর্টিং উইকেটে খেলি- সেটা হবে রাতদিন পার্থক্য। মিরপুর টেস্টের মতো হলে বিদেশের মাঠে আমাদের সংগ্রাম করতে হবে। তবে বিদেশের মাঠে জয় পেতে হলে অবশ্যই দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেটে খেলতে হবে।’ ক্রিকেটারদের ফিটনেস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না, ১৪ টেস্ট খুব বেশি। তবে বোর্ড যাদেরকে টেস্ট খেলানোর চিন্তা করছে, তাদেরকে আলাদা করে পরিচর্যা করে তাহলে আমাদের জন্য ভালো। অন্য ফরম্যাটেও যারা খেলবে তাদের জন্য রোটেশন পলিসি করলে টেস্টে আমরা ভালো সাফল্য পেতে পারি।'