![এশিয়ার সেরা বাংলার যুবারা](uploads/2023/12/18/1702879093.BD-U-19 Asip Cup Cricket-Champion.jpg)
১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জনের ৫২ বছর পূর্তি উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়েছে বাংলার জমিনে। সেই রাশ কাটতে না কাটতেই পরের দিন ১৭ ডিসেম্বর ১৭ কোটি বাঙালিকে আবারও নতুন করে উৎসবে রাঙিয়েছেন বাংলা মায়ের একদল সূর্যসন্তানরা। মরুর বুকে উড়িয়েছেন লাল-সবুজের নিশান। এনে দিয়েছেন এশিয়ার ক্রিকেটে যুবাদের শ্রেষ্ঠত্ব। অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখন এশিয়ার সেরা। ভারতের সাম্রাজ্যে আঘাত হেনে প্রথমবারের মতো নাম লিখিয়েছেন শিরোপাধারীদের তালিকায়। যে তালিকায় এর আগে ভারত ছাড়া নাম ছিল শুধুই আফগানিস্তানের। ৯ আসরের মাঝে ভারত ছিল আটবারেরই চ্যাম্পিয়ন। এর আগে যুবারা ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
বাংলাদেশের যুবারা প্রথমবারের মতো নিজেদের এশিয়ার সেরা প্রমাণ করতে সামনে পেয়েছিল স্বাগতিক সংযুক্ত আরব আমিরাতকে। কিন্তু স্বাগতিকদের বহুজাতিক (ভিন দেশের ক্রিকেটারদের নাগরিকত্ব দিয়ে দল গড়া) বাহিনী দাঁড়াতেই পারেনি লাল-সবুজ বাহিনীর কাছে। শিরোপা জয়ের স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশের যুবারা এক কথায় উড়িয়ে দিয়েছে স্বাগতিকদের। নতুন রেকর্ড গড়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মাহফুজুর রহমান রাব্বি বাহিনী। জিতেছে ১৯৫ রানের বিশাল ব্যবধানে। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ওপেনার আশিকুর রহমান শিবলির ১২৯ রানে ভর করে গড়ে ৮ উইকেটে ২৮২ রানের নির্ভার স্কোর। রান তাড়া করতে নেমে আবার বাংলাদেশের যুবাদের তোপে পড়ে মাত্র ২৪.৫ ওভারে অলআউট হয় ৮৭ রানে। এশিয়া কাপের ফাইনালে রানের ব্যবধানে এটিই সবচেয়ে বড় জয়। আগের বড় জয় ছিল আফগানিস্তানের, ১৮৫ রানে। ২০১৭ সালে তারা পাকিস্তানকে হারিয়েছিল।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের চরম ব্যর্থতায় দেশবাসীকে যখন হতাশার সাগরে ডুবিয়েছিল, অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তখন যুবাদের এই সাফল্য নতুন করে প্রাণের সঞ্চার করেছে। ফাইনালে সাধারণত কোনো প্রতিপক্ষই দুর্বল থাকে না। কিন্তু আরব আমিরাতকে পাওয়ার পরই বাংলাদেশের শিরোপা জেতার পাল্লা অনেকটা ভারী হয়ে ওঠে। সেই ধারণাই শতভাগ বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায় ২২ গজের লড়াইয়ে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন একতরফা ফাইনাল হয়েছে।
যুবাদের আসরে সাধারণত দর্শক-আগ্রহ থাকে কম। কিন্তু স্বাগতিকরা ফাইনালে ওঠায় মাঠ সরগরম করে তুলতে আয়োজকরা গ্যালারি উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। সেখানে ভিড় করেছিলেন প্রচুরসংখ্যক প্রবাসী বাঙালি। তারা শুধু টস হারের মুহূর্তটা বাদে বাকি পুরোটা সময় কাটিয়েছেন হইহুল্লুড় করে। বাংলার তুর্কি তরুণরা ক্ষণে ক্ষণে উল্লাস করার উপলক্ষ এনে দিয়েছেন। ব্যাট হাতে ওপেনার আশিকুর রহমান শিবলি (১২৯) যেমন সেঞ্চুরি করার পথে চার-ছয়ে মেরে হাত তালি দেওয়ার উপলক্ষ এনে দেন, তেমনি আবার চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ান (৬০), আরিফুল ইসলাম (৫০) হাফ সেঞ্চুরি সেখানে বাড়তি উপলক্ষ এনে দেন। এই তিনজনের বাইরে দুই অঙ্কের রান করেন অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান রাব্বি (২১)।
শুরুতে ওপেনার জিসান আলম (৭) ফিরে যাওয়ার পর আশিকুর ও রিজওয়ান দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ২৫.৪ ওভারে ১২৫ রান যোগ করে দলের ভিত মজবুত করে দেন। ৫৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি করা রিজওয়ান ৬০ (৭০ বলে ১ ছয় ও ৪ চার) রান করে ফিরে যাওয়ার পর তৃতীয় উইকেট জুটিতে আশিকুর ও আরিফুল ১২.২ ওভারে ৮৬ রান যোগ করে দলের ভিত আরও বেশি করে পাকাপোক্ত করে তোলেন। ৬ চারে ৩৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে পরের বলেই আউট হয়ে যান আরিফুল। কিন্তু দুই অঙ্কের ফিগারকে তিন অঙ্কে রূপ দিয়ে সমর্থকদের বিপুল করতালির বৃষ্টিতে সিক্ত হন আশিকুর। আউট হওয়া দুই ব্যাটারের মাঝেই তিনি শতরান পূর্ণ করেন ১২৯ বলে ১০ চারে। আসরে এটি ছিল তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। এর আগে গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনি করেছিলেনব অপরাজিত ১১৬ রান। আশিকুর আউট হন একেবারে ইনিংসের শেষ প্রান্তে এক বল বাকি থাকতে আয়মান আহমেদের বলে ডি সুজার হাতে ধার পড়ে। তার ১৪৯ বলের ১২৯ রানের ইনিংসে ছিল এক ছক্কা ও ১০ চার। এই আয়মানই ছিলেন স্বাগতিকদের সফল বোলার। ৫২ রানে নেন ৪ উইকেট।
ব্যাটাররা দর্শকদের যতটা না উল্লাস করার উপলক্ষ এনে দিয়েছেন, তার চেয়ে বেশি উপলক্ষ এনে দেন বোলাররা। সেই উপলক্ষ কতটা ঘন ঘন এসেছে, তা বোঝা যায় প্রতিপক্ষের উইকেট পতন দেখেই। ৫০ ওভারের খেলা শেষ হয়ে যায় মাত্র ২৪.৫ ওভারে। দলীয় ৫০ রানের আগেই পাঁচ-পাঁচবার এ রকম উপলক্ষ আসে বাংলাদেশের শিবিরে। মারুফ মৃধা দুটি আর রহমত দৌল্লাহ বর্ষণ ৩টি উইকেট নিয়ে এই উপলক্ষ এনে দিয়েছিলেন। এরপর শুরু করেন শাকিল পারভেজ জীবন ও ইকবাল হোসেন ইমন। দুজনে নেন দুটি করে উইকেট। এই দুজনের মাঝে ভাগ বসান মারুফ মৃধা এক উইকেট নিয়ে। ফলে ৮৭ রানেই শেষ হয়ে যায় আরব আমিরাতের ইনিংস। যুবাদের ফাইনালে এটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রান। আগের সর্বনিম্ন রান ছিল ২০১৭ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে পাকিস্তানের ৬৩ রান। আরব আমিরাতের পক্ষে দ্রুভ প্রসার ২৫ রান করে অপরাজিত থাকেন। এ ছাড়া দুই অঙ্কের রান করেন শুধু রাজ ১১। বর্ষণ ২৬ ও মারুফ ২৯ রানে তিনটি করে এবং জীবন ৭ ও ইমন ১৫ রানে নেন দুটি করে উইকেট। ১২৯ রানের ইনিংস খেলে যেমন ম্যাচসেরা হয়েছেন আশিকুর, তেমনি দুই সেঞ্চুরিতে ৩৭৮ রান করে আসরের সেরাও তিনি।