সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে বক্সিং ডে মানেই অন্যরকম রোমাঞ্চ। কারণ মাঠে যে গড়ায় বেশ কয়েকটি হাইভোল্টেজ ম্যাচ। তবে বেশির ভাগই জানেন না কীভাবে এল বক্সিং ডে ক্রিকেট। এর সঙ্গে বক্সিংয়ের সম্পর্ক আছে কি না? উত্তর হলো- না। বক্সিং ডের সঙ্গে নেই বক্সিংয়ের কোনো সম্পর্ক। বক্সিং ডে নামকরণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিন। ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন মতবাদ আছে বক্সিং ডে নিয়ে। বক্স-ইন-ডে থেকে হয়েছে বক্সিং ডে। অনেকের মতে, একটি বক্সের মধ্যে দেওয়া হয় বড়দিনের উপহার। সেই উপহার খোলা হয় ২৬ ডিসেম্বর। আবার অনেকের মতে, বড়দিনে ঘরের পরিচারক-পরিচারিকারা অনেক কাজ করেন। তাদের ২৬ ডিসেম্বর উপহার বাক্স দেওয়া হয়।
পাশাপাশি পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ দেওয়া হয়। নানা তত্ত্বের মারপ্যাঁচে জানা যায়নি বক্সিং ডে নামকরণের আসল কারণ। সঠিক কারণ জানা না গেলেও ক্রিকেটপ্রেমীরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন দিনটির। কারণ অনেক ক্রিকেট ম্যাচ যে থাকে ক্রিকেটপ্রেমীদের আনন্দ বাড়িয়ে দিতে। এবার যেমন থাকছে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান, সেঞ্চুরিয়ানে দক্ষিণ আফ্রিকা-ভারত ম্যাচ।
অনেকটা দৈব ঘটনার মধ্য দিয়ে জন্ম হয়েছিল বক্সিং ডে ক্রিকেট ম্যাচের। ১৮৫৬ সালে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয় বক্সিং ডে ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্টের শেফিল্ড শিল্ডের একটি ম্যাচ। সূচি অনুযায়ী ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে মাঠে গড়ানোর কথা ছিল ভিক্টোরিয়া এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের মধ্যকার ম্যাচ। একে তো পরিবারের সঙ্গে বড়দিন কাটাতে পারছেন না, তার ওপর গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। এতে বেজায় চটেন সাউথ ওয়েলসের ক্রিকেটাররা। তাদের দাবি মেনে এক দিন পিছিয়ে ২৬ ডিসেম্বর শুরু হয় ম্যাচটি। বক্সিং ডে-তে হওয়া প্রথম ম্যাচটি ছিল টাইমলেস। তবে দুই দলের লড়াইয়ের ইতি ঘটে তৃতীয় দিনেই। বড় দিনের ছুটি বিসর্জন দিয়ে মেলবোর্নে ছুটে আসা নিউ সাউথ ওয়েলস জিতে নেয় ম্যাচটি। এরপর থেকে প্রতিবছরই দুই রাজ্যের মধ্যে ২৬ ডিসেম্বর আয়োজন করা হতো শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচটি। পরে ১৮৬৫ সালে দুই দলের এই লড়াই যুক্ত হয় বার্ষিক সূচিতে।
শেফিল্ড শিল্ডে বক্সিং ডে ম্যাচ আয়োজনের প্রায় শতবছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দেখে বক্সিং ডে ম্যাচ। ১৯৫০-৫১ অ্যাশেজ সিরিজে হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার প্রথম বক্সিং ডে টেস্ট। সে ম্যাচ অবশ্য ২৬ ডিসেম্বর নয় শুরু হয়েছিল ২২ ডিসেম্বর। তখনকার দিনে পাঁচ দিনের টেস্টে এক দিনের বিরতি দেওয়ায় চতুর্থ দিন গড়ায় বক্সিং ডেতে। অ্যাশেজের এই ঘটনার পর ১৯৮০ সাল থেকে নিয়মিত বক্সিং ডে টেস্ট আয়োজন করে আসছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। এই ম্যাচের জন্য নির্ধারিত ভেন্যু প্রথম বক্সিং ডে ম্যাচের সাক্ষী হওয়া মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড। এর পিছনে একটি মাত্রই কারণ। ইতিহাসের প্রথম বক্সিং ডে ম্যাচ এবং অস্ট্রেলিয়ায় হওয়া প্রথম বক্সিং ডে টেস্ট- কাকতালীয়ভাবে দুই ম্যাচের ভেন্যুই ছিল মেলবোর্নের এই মাঠটি। এখন আর বক্সিং ডেতে শেফিল্ড শিল্ডের কোনো ম্যাচ আয়োজন করে না ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। এই দিনে আয়োজন করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও বিগব্যাশের ম্যাচ।
বক্সিং ডে টেস্ট নিয়মিত আয়োজন শুরুর আগে সবশেষ তাসমানপাড়ের দেশটিতে বক্সিং ডে টেস্ট হয় ১৯৭৪ সালে। ১৯৭৪-৭৫ মৌসুমের অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্টটি শুরু হয় বক্সিং ডে-তে। কাকতালীয়ভাবে ম্যাচটি শুরুও হয়েছিল ২৬ ডিসেম্বর।
যে অস্ট্রেলিয়ায় এতো ঘটা করে পালন করা হয় বক্সিং ডে টেস্ট সেখানে আয়োজিত হয়নি প্রথম বক্সিং ডে টেস্ট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম বক্সিং ডে ম্যাচ আয়োজন করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৯১৩ সালে প্রথম বক্সিং ডে টেস্টে সেঞ্চুরিয়নে মুখোমুখি হয় দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ড। ইংলিশদের কাছে ইনিংস এবং ১৫৭ রানে হারে প্রোটিয়ারা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে শেষ ক্রিকেট সিরিজ ছিল এই সিরিজ। এরপর থেকে প্রতি বছর সেঞ্চুরিয়নে বক্সিং ডে টেস্ট আয়োজন করে দক্ষিণ আফ্রিকা। মাঝে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসনের সময়ে প্রোটিয়াদের মাঠে বক্সিং ডে ম্যাচ কোনো ম্যাচ হয়নি। এ ছাড়া বিক্ষিপ্তভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড ও অন্য দেশগুলোতে মাঝেমধ্যে হয় বক্সিং ডে ক্রিকেট ম্যাচ।
বক্সিং ডেতে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত টেস্ট খেলেছে ৮টি। নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২টি করে এবং ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি করে ম্যাচ খেলেছে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি ম্যাচ ছাড়া বাকি সব ম্যাচেই হেরেছে বাংলাদেশ।