![শেষ হলো ওয়ার্নার অধ্যায়](uploads/2024/01/06/1704521491.David-Warner-Chapter-End..jpg)
পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন এই সিরিজ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্যারিয়ারের ইতি টানতে যাচ্ছেন ডেভিড ওয়ার্নার। সিডনিতে সিরিজের তৃতীয় টেস্টের দুদিন আগে ঘোষণা দেন ওয়ানডে ক্রিকেটটাও ছেড়ে দিচ্ছেন তিনি। চালিয়ে যাবেন শুধুমাত্র টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট।
সিডনি টেস্ট তাই হয়ে গিয়েছিল বিদায়ের মঞ্চ। শেষবারের মতো মাঠে নেমেছিলেন তিনি বনেদি পোশাকে অজিদের হয়ে আর ওয়ানডে তো সবশেষ খেলেছিলেন ভারত বিশ্বকাপের ফাইনালে। বিদায়ী টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৩৪ ও দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ৫৭। শেষ ম্যাচের আগে ব্যাগী গ্রীণ হারানো শোকে কাতর ওয়ার্নারের কাছে সহজ ছিল না এই ইনিংস খেলা। ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে সেটি কেউ পেলে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিলে এর ঠিক চার দিন পর নিজের ব্যাগি গ্রিন বা টেস্ট ক্যাপগুলো ফিরে পেয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার। মেলবোর্ন থেকে সিডনিতে আসার পথে তাঁর ব্যাকপ্যাকটি খোয়া গিয়েছিল, যাতে ছিল তাঁর দুটি ব্যাগি গ্রিন। তার বিদায়ী সিরিজে পাকিস্তানকে হেসেখেলে ধবলধোলাই করেছে অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম এই সেরা ব্যাটারের বিদায় উপলক্ষে সিরিজের শুরুতেই নায়কোচিত সংবর্ধনারও ব্যবস্থা করেছিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। যদিও, সেই আয়োজনের বিরোধীতা করে বসেন সাবেক অজি পেসার মিচেল জনসন। মূলত ২০১৮ সালে বল টেম্পারিংয়ের মতো ঘটনার সাথে জড়িত থাকা কারো এমন বিদায়ী আয়োজনে সন্তুষ্ট হতে না পেরে করেন সমালোচনা। সেই সমালোচনার জবাব ওয়ার্নার দিয়েছিলেন পার্থে প্রথম টেস্টে ১৬৪ রানের এক অনবদ্য ইনিংস খেলে। আর ওয়ার্নারের সমালোচনা করে জনসন খুইয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের চাকরি।
প্রথম শ্রেণীর কোনো ম্যাচ না খেলেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার অভিষেকটা হয়েছিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়ে ২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেদিন তিনি খেলেন ২০৭ স্ট্রাইকরেটে ৪৩ বলে ৮৯ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস। জানান দেন আধুনিক ক্রিকেটে রাজ করতে এসেছেন তিনি।
একই সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ওয়ানডে ক্রিকেটেও যাত্রা শুরু করা ওয়ার্নার টেস্টে যাত্রা শুরু করেন ২০১১ সালে মাইকেল ক্লার্কের নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। সেসময় তাকে প্রমাণ করতে হয়েছিল কেন্দ্রীয় চুক্তিতে স্থায়ী হতে। যেহেতু, কোনো ধরণের প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ না খেলেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রেখেছিলেন তিনি। তাই বোর্ডের কর্তাদের মাঝে অনিশ্চয়তা ছিল ক্রিকেটের সবচেয়ে কঠিন সংস্করণে ওয়ার্নার টিকতে পারবেন কিনা। কিন্তু নিজের যোগ্যতায় সবাইকে ভুল প্রমাণ করে এই ফরম্যাটেও নিজেকে প্রমাণ করেন তিনি। অধিনায়ক ক্লার্কের সমর্থনও পেয়েছিলেন বেশ। কিছুদিন আগে ক্লার্ক ইএসপিএন ক্রিকইনফোতেই জানান এই কথা নিজেই।
সিনিয়রদের সমর্থন পেয়ে এই ফরম্যাটে ১১২ ম্যাচে ২০৫ ইনিংস ব্যাটিং করে ২৬টি শতক ও ৩৭টি অর্ধশতকে করেন ৮৭৮৬ রান। আছে দুটি দ্বিশতকও। ক্যারিয়ার সেরা অপরাজিত ৩৩৫ রানের ইনিংসটি তিনি খেলেন অ্যাডিলেট ওভালে পাকিস্তানের বিপক্ষে। জিতেছেন এই ফরম্যাটের সর্বোচ্চ শিরোপা বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। ২০২৩ সালে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া জয় পায় ২০৯ রানে।
রঙিন পোশাকে সবশেষ ম্যাচটি খেলেছিলেন আহমেদাবাদে নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ২০২৩ ভারত বিশ্বকাপের ফাইনালে স্বাগতিক ভারতেরই বিপক্ষে। সে বিশ্বকাপে ছিলেন শীর্ষ দশ রান স্কোরারের মধ্যে ছিলেন ছয়ে দুটি করে শতক ও অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৫৩৫ রান করে। অজিদের ষষ্ঠ শিরোপা জেতায় রাখেন মুখ্য ভূমিকা।
ওয়ানডে ক্রিকেটে বিশ্বকাপে এটি তার দ্বিতীয় শিরোপা জয় ছিল। প্রথমটি জিতেছিলেন ২০১৫ সালে ঘরের মাঠেই। এই ফরম্যাটে ১৬১ ম্যাচে ১৫৯ ইনিংস ব্যাটিং করে ২২টি শতক ও ৩৩টি অর্ধশতক হাঁকানো ওয়ার্নার করেছেন মোট ৬৯৩২ রান। ওয়ানডে ক্রিকেটের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৭৯ রানের ইনিংসটি পাকিস্তানের বিপক্ষে অ্যাডিলেডে খেলেছিলেন ২০১৭ সালে।
অবসর নেওয়ার ঘোষণা দিলেও চালিয়ে যাবেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ও ফ্র্যাঞ্চাইজ লিগে খেলা। এই ফরম্যাটেও তিনি জিতেছেন অজিদের হয়ে বিশ্বকাপ ২০২১ সালে। অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন হলে খেলতে রাজি আছেন ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। তার আগে আপাতত তুলে রাখছেন টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটের জার্সি ও ব্যাট-প্যাড। সিডনিতে ৫৭ রানের ইনিংস খেলে আউট হয়ে যাওয়ার পথে প্রতিপক্ষ পাকিস্তান ও গ্যালারিভর্তি দর্শকের কাছ থেকে পেয়েছেন করতালি।
জয় নিয়ে দুই ফরম্যাটেই বিদায়, এমন বিদায়ই তো সবাই চায়। কিন্তু ক’জনে পায় ?