ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। সেই হিসেবে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে এখন বসন্ত ঋতু বিরাজমান। ফাগুনের উন্মাতাল হাওয়ায় দেহ-মনে যেন অন্য রকম এক দোলা দিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে ফাগুন উধাও হয়ে যেন বিরাজ করছে ক্রিকেটীয় হাওয়া! দেড় মাসব্যাপী বিপিএল জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন দেশবাসী। ফাইনাল খেলার টিকিট নিয়ে রীতিমতো হুলস্থুল কাণ্ড হয়েছে। একটি টিকিটের জন্য অনেকটা ‘ওপেন চেক’ দিয়ে রেখেছিলেন কেউ কেউ! কিন্তু তারপরও টিকিট মেলেনি। টিকিট হয়ে উঠেছিল সোনার হরিণ। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে গিয়ে অনেকেই পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হয়েছেন। সেই বিপিএলের রেশ কাটতে, না কাটতেই আবার দরজায় কড়া নাড়ছে ক্রিকেট। এবার বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজ। যার পর্দা উঠছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে। ময়দানি লড়াই শুরু হবে আজ থেকে সিলেটে। খেলা শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়। ৬ ও ৯ মার্চ বাকি দুই ম্যাচও সিলেটে। এরপর চট্টগ্রামে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। পরে দুই টেস্টের সিরিজের ভেন্যু এই সিলেট আর চট্টগ্রাম।
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজের কোনো ম্যাচ এই প্রথম হোম অব ক্রিকেটে (মিরপুর) নেই। তাই মাঠে গড়ানোর আগেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যরকম ভাবে জায়গা করে নিয়েছে এই সিরিজ।
জুনে যুক্তরাষ্ট্র ও উইন্ডিজে শুরু হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেই প্রেক্ষাপটে নিজেদের প্রস্তুত করতে দুই দেশের জন্যই এই সিরিজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের জন্য একটু বেশিই। কারণ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছেন না ক্রিকেটাররা। এই সিরিজের তিন ম্যাচ বাদ দিলে আর খেলা হবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের সিরিজ। এ ছাড়া আফগানিস্তানের বিপক্ষেও একটি ৩ ম্যাচের সিরিজ আয়োজনের চেষ্টা করছে বিসিবি। তাই মোটা দাগে বিপিএলই ছিল ক্রিকেটারদের ভালোভাবে প্রস্তুত করে তোলার মঞ্চ। সেই মঞ্চে বলা যায়, একমাত্র তিন ফরম্যাটে বাংলাদেশের নতুন কাণ্ডারি নাজমুল হোসেন শান্ত ছাড়া বাকি সবাই ছিলেন মোটামুটি সফল। এই বিপিএলের জন্যই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ ‘দল’ হিসেবে অনুশীলন করতে পারেনি। আবার এই বিপিএলের পারফরম্যান্সই সেই অপর্যাপ্ত অনুশীলনের ঘাটতি দূর করে দিয়েছে। তাই বলা যায়, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ দল নামবে ক্রিকেট খেলার মাঝে থেকেই।
আজকের ম্যাচ দিয়েই আবার নাজমুলের অধিনায়কত্বের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। তিনি এর আগে তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ছিলেন ‘ভারপ্রাপ্ত’ হিসেবে। এবার ‘ভার মুক্ত’ হয়ে তিন ফরম্যাটেই তিনি স্থায়ী অধিনায়ক। বিপিএল চলাকালীন বিসিবি বোর্ড সভায় তাকে এই দায়িত্ব দেওয়ার পর নাজমুল আর সংবাদমাধ্যমের সামনে আসেননি। এই না আসার কারণ ছিল এবারের বিপিএল তার যাচ্ছেতাই রকমের বাজে গিয়েছে। ১২ ম্যাচে রান করেছিলেন মাত্র ১৭৫। সর্বোচ্চ রান ছিল ৩৯। তাই অধিনায়কত্ব যুগে প্রবেশের পর প্রথমবার সংবাদ মাধ্যমে আসায় তাকে এই বিষয়েই বেশি কথা বলতে হয়েছে। কারণ প্রশ্নও ছিল অধিনায়কত্ব নিয়ে। বিপিএলে নিজের ব্যর্থতা কিংবা ম্যাচ নিয়ে প্রশ্ন ছিল খুবই কম। তারপরও সিরিজ জেতা নিয়ে প্রশ্ন হয়েছে একটি। তার জবাবে নাজমুল বলেন, ‘সবাই ভালো টাচে আছে। আমার মনে হয় প্ল্যান করাটা সবার জন্য ইজি হবে। কারণ সিরিজ জেতার জন্য অবশ্যই শতভাগ বিশ্বাস আছে।’ শ্রীলঙ্কার কোচ ক্রিস সিলভারউডও নিজেদের ফেবারিট বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমি বলব যে, শ্রীলঙ্কা ফেবারিট হিসেবে নামবে।’
বিপিএলের কারণে হয়তো টেরই পাওয়া যায়নি, এ বছর বাংলাদেশ দল এ পর্যন্ত কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেনি। সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছিল ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি। হেরেছিল ১৭ রানে। তাই আজকের ম্যাচ দিয়েই বাংলাদেশ দল নতুন বছরের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে। নতুন অধিনায়ক নাজমুল প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে কোনো রকম চাপ অনুভব করছেন না জানিয়ে বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় প্রত্যেকটি আন্তর্জাতিক সিরিজই চাপ। এটা আমাদের জন্যও, প্রতিপক্ষ দলের জন্যও।’ প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কাকে খুবই ভালো দল উল্লেখ করে নাজমুল বলেন, ‘আমার মনে হয় তারা ভালো দল। বিশেষ করে তাদের অনেক অলরাউন্ডার আছে। আমরা আমাদের হোম কন্ডিশনে খেলব। এটা বাড়তি সুবিধা দিবে। সামনের দিকে তাকাচ্ছি। আশা করি, ভালো ক্রিকেট খেলতে পারব।’
দুই দেশের এবারে সিরিজ ভিন্ন একটি কারণে আলাদা গুরুত্ব বহন করছে। ওয়ানডে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ম্যাথিউসকে ‘টাইমড আউট’ করা নিয়ে দুই দেশের আন্তরিকতায় চিড় ধরে। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে বিশ্বে তোলপাড় করা প্রথম টাইমড আউটের পর আজই দুই দল প্রথম মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। সেই আউটের রেশ তো এই ম্যাচে থাকবেই। সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নও উঠেছিল। নাজমুল বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাইরের এই বিষয়গুলো নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করছি না, যেটা অতীতে হয়েছে। কিন্তু ভালো একটা সিরিজই হবে। দুটি টিম জেতার জন্য খেলবে। তাই আমাদের কাজটা নিয়ে ফোকাস করছি।’ শ্রীলঙ্কার কোচ ক্রিস সিলভারউডের দিকেও ছুটে গিয়েছিল এই প্রশ্ন। তিনিও কৌশলী জবাব দিয়ে বলেন, ‘অতীতে যা হয়েছিল তা ইতিহাস, পেছনে চলে গেছে। আমাদের সামনে যা আছে তাতে মনোনিবেশ করতে হবে।’ আজকের ম্যাচে ম্যাথিউস থাকলেও সাকিব কিন্তু নেই। যদি সাকিব থাকতেন, তাহলে টাইমড আউটের ঘটনাটা নতুন করে আজকের ম্যাচে হয়তো কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলত!
দুই দেশ এখন পর্যন্ত ১৩ বার মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশের জয় মাত্র ৪টি। বাকি ৯টিতে জিতেছে লঙ্কানরা। সবশেষ দুই সাক্ষাতে বাংলাদেশ দল জয়ী হতে পারেনি।