![লিপুর ছক্কায় আলোকিত জাকের](uploads/2024/03/06/1709703804.Gazi-Ashraf-Jaker-Ali.jpg)
কথায় আছে ‘কপালের লিখন, যায় না খণ্ডন’- কথাটি আরেকবার সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে জাকের আলী অনিকের ক্ষেত্রে। সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মূল জাতীয় দলের হয়ে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে খেলতে নেমে জাকের আলী যে দৃষ্টিন্দন, অবিস্মরণীয় ইনিংস খেলেছেন তা যেন সেই কথাটিকেই নতুন করে ফিরিয়ে দিয়েছে। পাক্কা ২০০ স্ট্রাইক রেটে ৪ চার আর ৬ ছক্কায় ৬৮ রানের ইনিংস যেন অকেটা রূপকথার মতোই। তার ৫ ছক্কায় আবার এক ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চ ছিল নাজিমউদ্দিনের। ২০০৭ সালে নাইরোবিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিনি মেরেছিলেন ৫টি ছক্কা। জাকের আলীর এই দুর্দান্ত ইনিংসেই ভর করে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার ২০৬ রানের পাহাড় টপকানোর দুঃসাহসিক অভিযানে নেমে সফলই হয়ে গিয়েছিলেন প্রায়। ৪ বল বাকি থাকতে জাকের আলী আউট হয়ে গেলে সে লক্ষ্য আর পূরণ হয়নি। জাকের আলীর মন মাতানো ইনিংসের মাঝেও তাই বেজে উঠে ৩ রানে হারের করুণ সুর।
জাকের আলী যদি আউট না হতেন, তাহলে ম্যাচের চিত্রনাট্য বদলেও যেতে পারত। বাংলাদেশ জয়ী হলে ম্যাচ সেরাও যে তিনি হতেন তা নির্দ্বিদায় বলে দেওয়া যায়। তার জায়গা হয়ে যেত তখন ইতিহাসের বুকে। কিন্তু দল হারলেও জাকের বন্দনা থেমে যায়নি; চলছেই। এই জাকের বন্দনা কী হওয়ার ছিল? শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে তিনি তো দলেই ছিলেন না। প্রথমবারের মতো ডাক পাওয়া স্পিনার আলিস ইসলামের ইনজুরি জাকের আলীর ভাগ্যের দরজা খুলে যায়। সেই ভাগ্যের দরজা দিয়ে তিনি প্রবেশ করেন জাতীয় দলে। তার এই অন্তর্ভুক্তিটাও কিন্তু ছিল রাজ্যের বিস্ময় জাগানো। জাকের আলী মূলত উইকেটকিপার কাম ব্যাটার। সেখানে স্পিনার আলিস ইসলামের পরিবর্তে আরেকজন স্পিনার কিংবা বোলার অথবা অলরাউন্ডারের সুযোগ পাওয়ার কথা। সেখানে জাকের আলী! যে কারও অবাক তো হওয়ারই কথা। কিন্তু অবাক হননি প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। দায়িত্ব নিয়েই একমাত্র জাকের আলীকে দলে নিয়ে তিনি হাঁকিয়েছেন ছক্কা। যে ছক্কায় আলোর ঝরনধারা বইছে জাকের আলীর ভুবনে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচের জন্য দল ঘোষণা করেছিলেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর নেতৃত্বাধীন আগের নির্বাচক কমিটি। যেখানে ঠাঁই হয়নি জাকের আলীর। বিপিএল চলাকলীন এ নিয়ে জাকের আলীর দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কোচ সালাউদ্দিন খুবই কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছিলেন। গাজী আশরাফ হোসেন লিপু দায়িত্ব পালন শুরু করেন ১ মার্চ থেকে। আলিস ইসলামের ইনজুরিতে তিনি জাকের আলীকে দলে নিয়ে নিজের কাজ শুরু করেন। ২ মার্চ আলিস ইসলামের পরিবর্তে জাকের আলীকে দলে নেওয়ার কথা জানানো হয় বিসিবির পক্ষ থেকে। গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর আস্থার প্রতিদান বেশ ভালোভাবেই দিয়েছেন জাকের আলী।
বিসিবি যদি নির্বাচক কমিটিতে পরিবর্তন না আনতো, তাহলে হয়তো জাকের আলীর জাতীয় দলে খেলার অপেক্ষার প্রহর আরও বেড়ে যেত। কিংবা গাজী আশরাফ হোসেন লিপুকে প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব দেওয়া না হতো। প্রখর ক্রিকেট জ্ঞানসম্পন্ন গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর দূরদর্শিতার কারণেই জাকের আলীর দিকে আজ স্পটলাইট। স্পিনার আলিস ইসলামের পরিবর্তে উইকেটকিপার কাম ব্যাটার জাকের আলীর কোন বিষয়টি প্রধান নির্বাচককে উদ্বুদ্ধ করেছে দলে নিতে? খবরের কাগজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় প্রধান নির্বাচক বলেন, ‘বিপিএল যারা ভালোভাবে ফলো করেছেন তারা হয়তো জাকের আলীকে জানেন। তার আগে হয়তো সেভাবে জানতেন না। বিপিএলে তাকে দেখার পর মনে হয়েছে সে মূলত ব্যাটসম্যান। তার মাঝে লম্বা শট খেলার ভালো সামর্থ্য আছে। মিডল অর্ডার বা লোয়ার মিডিল অর্ডারে সে খুবই কার্যকরী হবে। যে কারণে তাকে আমি দলে নেই।’ এরপরই জাকের আলীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে প্রধান নির্বাচক বলেন, ‘তার প্রতি আমার যতটুকু আশা ছিল, তার থেকে কয়েকগুণ বেশি সে ভালো খেলেছে। সত্যি এটা দলের জন্য খুবই ভালো একটি দিক। দেখা যাক এখন সে আগামীতে কী করে? সবে তো শুরু।’