![ভাইয়ের খেলায় বোন তারকা!](uploads/2024/03/06/1709706241.Jaker-Ali-Sister.jpg)
একজন খেলোয়াড়ের যখন জাতীয় দলে অভিষেক হয়, তখন তার পরিবারের মাঝে অন্য ধরনের আনন্দ দোলা দিয়ে যায়। সময়-সুযোগ হলে পরিবারের সদস্যা দলবেঁধে মাঠে গিয়ে তার খেলা দেখেন। মনে মনে প্রার্থনা করেন যেন সে ভালো করে। দল জিতে। সাফল্য-ব্যর্থতা যাই হোক পরে তারা ফিরেও আসেন নিজ গৃহে। ভালো খেললে স্পটলাইটটা সেই খেলোয়াড়ের দিকেই থাকে। তখন তার পরিবারের সদস্যদেরও প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা চলে মিডিয়া থেকে। কিছু কথা বলার মাধ্যমে নিজেদের প্রতিক্রিয়া দিয়ে সেখানেই শেষ হয় পরিবারের সদস্যদের মিডিয়ার সামনে আসার পর্ব। কখনই তারা মিডিয়ার সামনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন না। কিন্তু জাকের আলীর বোন শাকিলা ববির ক্ষেত্রে সেটিই হয়েছে। ২২ গজে খেলেছে ছোট ভাই জাকের আলী। আর আলো গিয়ে পড়েছে বড় বোন শাকিলা ববির ওপর! একের পর এক দেশের সব শীর্ষস্থানীয় মিডিয়ায় তার সাক্ষাৎকার প্রচার হচ্ছে। কোনো কোনো টেলিভিশনে লাইভেও যুক্ত হচ্ছেন। এমন কি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমেও তাকে নিয়ে নিউজ হয়েছে। শ্রীলঙ্কা থেকে আসা এক সাংবাদিকও নিয়েছেন সাক্ষাৎকার। কিন্তু কেন?
অন্য সবার পরিবারের সদস্যরা যখন খেলা শেষে মাঠে কিছুক্ষণ অবস্থান করে বাড়ি ফিরে যান, সেখানে জাকের আলীর বোন শাকিলা ববি বাড়ি ফিরে যেতে পারেননি। তিনি যাবেনই বা কি করে? তিনি যে একজন সাংবাদিক। দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দৈনিক খবরের কাগজের সিলেট ব্যুরো অফিসের প্রতিনিধি। শুধু তিনি একা নন, তার স্বামী জাকের আলীর দুলাভাই মামুন হোসেনও একই পত্রিকার ফটোসাংবাদিক। খেলা চলাকালীন ভগ্নিপতি তুলেছেন শ্যালক জোকের আলীর ছবি। আর বোন খেলা শেষে গিয়ে হাজির হন সংবাদ সম্মেলনে। যেখানে আবার এসেছিলেন জাকের আলীও। সংবাদ সম্মেলনে জাকের আলীকে একটি প্রশ্নও করেন শাকিলা ববি। এমন সুযোগ অন্য ক্রিকেটারদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রে হয়নি। মাঠের বাইরে সংবাদ সম্মেলনের অভিজ্ঞতাটাও পেয়ে যান জাকের আলী ও তার পরিবারের সদস্যরা। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে সম্ভবত এ রকম ঘটনা প্রথম।
সংবাদ সম্মেলনে ভাইকে প্রশ্ন করেই মিডিয়ার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন শাকিলা ববি। শাকিলার প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে জাকের আলী নিচু স্বরে ছোট্ট করে ‘আপু’ শব্দটি ব্যবহার করেন। তারপর অবশ্য যথারীতি একজন পেশাদার ক্রিকেটারের মতো করেই বোনের প্রশ্নের জবাব দিয়ে যান তিনি। আবার শাকিলাও অন্য সব সাংবাদিকদের মতো করেই পেশাদার মনোভাব নিয়ে ভাইকে প্রশ্ন করেছিলেন। জাকের আলীর এই এক ইনিংসই তার বোনকে আলোর মিছিলে নিয়ে আসে। যদিও সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে জানাজানির আগেই একমাত্র খবরের কাগজের প্রথম সংস্করণে ‘জাকের আলীর খেলা দেখতে মাঠে পরিবারের সদস্যরা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল।
খেলা শেষে রাতে সাক্ষাৎকার দিতে দিতে একপর্যায়ে ক্লান্তও হয়ে পড়েছিলেন শাকিলা। কিন্তু ঘটনার শেষ এখানেই নয়। নতুন ভোরের সূর্য ওঠার পর দিনের কোলাহল বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শাকিলা ববিও টের পেতে থাকেন তার ভাই যে কাজটি করেছে, তাতে করে সে শুধু নিজেই আলোকিত হয়নি, তাকেও আলোকিত করেছে। তারকা বানিয়ে দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার শাকিলার ঘুমই ভাঙে একটি টিভি চ্যানেলে সকালে সরাসরি যুক্ত হওয়ার জন্য। পরে আরও বেশ কয়েকটি মিডিয়া থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় কথা বলার জন্য। এরপর শুরু হয় একের পর এক ফোনে তাকে অভিনন্দন জানানোর পালা। ফোনের পাশাপাশি ম্যাসেঞ্জার হোয়াটসঅ্যাপ, এসএমএসেও এসেছে বার্তা। সিলেটে নিজের সাংবাদিক মহলের অনেকেই তাকে ফোন করে বলেন, তুমি তো ভাইয়ের মতো স্টার হয়ে গেছ। অনেকেই আবার জানতেন না জাকের আলী যে তার ভাই। তারাও ফোন করে নিজেদের বিস্ময়ের কথাটি জানান। বিভিন্ন মিডিয়াতে শাকিলা ববির সাক্ষাৎকার দেখে জাকের আলীর নিজ জেলা হবিগঞ্জ থেকেও প্রচুর ফোন এসেছে। তারা সবাই মিষ্টি খাওয়ার বায়না ধরছেন বলে জানান শাকিলা ববি। সেই সঙ্গে নিজেদের উচ্ছ্বাসের কথাও জানিয়েছেন তারা। দেশের গণ্ডি পার হয়ে বিদেশ থেকেও এসেছে অনেক ফোন। যেখানে ছিলেন জাকের আলীর ছোটবেলার কোচ রাসেল আহমেদও। লন্ডন থেকে তিনি ফোন করে শাকিলাকে অভিনন্দন জানিয়ে নিজের খুশি হওয়ার কথা ব্যক্ত করেন।
সাংবাদিক হিসেবে অনেকেরই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাকিলা ববি। এবার নিজে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে মনে হয়েছে ক্যামেরার সামনের চেয়ে পেছনের কাজ অনেক সহজ। তিনি বলেন, ‘সব সময় অন্যের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। কখনো নিজে এভাবে সাক্ষাৎকার দিব, আবার একসঙ্গে দেশ-বিদেশের মিডিয়ায়, এ রকম আমি ভুলেও ভাবিনি। এটি একটি অন্য রকম অভিজ্ঞতা, কঠিনও। আমার কাছে মনে হয়েছে ক্যামেরার পেছনে কাজ করা সহজ। সামনে সাক্ষাৎকার দেওয়া অনেক কঠিন।’
শাকিলা ববির এভাবে সাক্ষাৎকার দেওয়ার খবর জেনেছেন জাকের আলীও। সকালে বোনকে ফোন করে পরামর্শও দিয়ে জানিয়েছেন কীভাবে কথা বলতে হবে, কী কী বলা যাবে, কী কী বলা যাবে না। শাকিল ববি বলেন, ‘সকালে আমাকে ফোন দিয়ে অনিক (জাকের আলীর ডাক নাম) বলেছে তুমি যখন সাংবাদিক, তখন কাউকে এড়িয়ে যেতে পারবে না। কিন্তু এমন কিছু বলবে না, যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে, বিসিবিরি বিপক্ষে যেতে পারে।’ ভাইয়ের ফোন পাওয়ার পরই শাকিলা ববি নিজেও সতর্ক হয়ে গেছেন।