![মাশরাফির জন্য ক্যারিয়ার থমকে যায়নি শুভাশিষের](uploads/2024/05/20/Subashiskk-1716207160.jpg)
প্রশ্নটা শুনেই শুভাশিষ রায় হেসে উঠলেন। ডানহাতি পেসার কণ্ঠে হাসি নিয়েই বললেন, ‘আমি জানি আপনি এই প্রশ্ন করবেন। এ নিয়ে এখনো অনেকে আমার সাক্ষাৎকার নিতে চায়…।’
জাতীয় দলের হয়ে ৪টি টেস্ট ও ১টি ওয়ানডে খেলা শুভাশিষ এখন অনেকটা আড়ালেই চলে গেছেন। সেটা স্বাভাবিকই। সেই ২০১৯ সালের অক্টোবরের পর থেকেই যে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের বাইরে তিনি। কোথায় আছেন, কেমন আছেন, এটা জানতেই ৩৫ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের সঙ্গে যোগাযোগ করা। গল্পে গল্পেই একপর্যায়ে এসে যায় প্রসঙ্গটা। যে প্রসঙ্গ শুভাশিষের ক্যারিয়ারের অবিচ্ছেদ্য অংশই হয়ে গেছে বলা চলে। না হলে তিনি কেন বলবেন, ‘আমি জানি আপনি এই প্রশ্ন করবেন।’
২০১৭ বিপিএলে মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে উত্তেজনা ছড়ানো একটি ঘটনা আছে শুভাশিষের। দুজনে সেদিন বিবাদে জড়িয়ে গিয়েছিলেন। মাশরাফি তখন জাতীয় দলের অধিনায়ক। বিপিএলের ওই আসরে রংপুর রাইডার্সের নেতৃত্বেও ছিলেন। আর শুভাশিষ খেলছিলেন চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে। দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে শুভাশিষের বিপক্ষে মাশরাফি ব্যাট করার সময় ঘটে ঘটনাটি। শুভাশিষের ইয়র্কার রুখে দিয়েছিলেন মাশরাফি। নিজের বলে নিজেই ফিল্ডিং করে মাশরাফির দিকে বল ছোড়ার ভঙ্গি করেন শুভাশিষ। মাশরাফিও সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজিতভাবে শুভাশিষকে বোলিং প্রান্তে ফিরে যেত ইঙ্গিত করেন। এ নিয়েই বেশ উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। যদিও ওই ঘটনার পর দিনই একসঙ্গে ফেসবুক লাইভে এসে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন দুজন। এমনকি নিজেদের সম্পর্কে যে এতটুকুও ফাটল ধরেনি, তুলে ধরেছিলেন সেটাও। কিন্তু আজ এতদিন পর এসেও সেই প্রসঙ্গে প্রশ্ন শুনতেই হয় শুভাশিষকে।
শুভাশিষ মনে করেন বাংলাদেশের মানুষ আবেগী বলেই পরিস্থিতি এমন হয়েছে, ‘ওই দিন যেটা ঘটেছে সেটা আসলে তেমন কিছুই না। আমরা ক্রিকেটাররা যেটা জানি, মাঠের বাইরে আমরা সবাই বন্ধু, ছোটভাই বা অন্য যেকোনো কিছু। কিন্তু মাঠের ভেতরে ঢুকলে সেটা দেখার সুযোগ থাকে না। প্রতিপক্ষ দলে সে যতই আমার ছোট ভাই বা বাবা থাকুক না কেন? এটা খেলারই অংশ। বাংলাদেশের জনগণ একটু ইমোশনাল। তাই অনেকে সেদিনের বিষয়টি অন্যভাবে নিয়েছেন।’ এখানেই থামেননি শুভাশিষ, ‘এখনো অনেকে মনে করেন, এই কারণে আমার ক্যারিয়ার থমকে গেছে। আমি বলি এগুলো কোনো কারণই না। আসল কারণ আমার ইনজুরি।’
হ্যাঁ, ইনজুরির জন্যই এখন প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে নেই শুভাশিষ। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের আগে তার বাঁ পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছিল। শুভাশিষ মনে করেন, সেই সময় তার পুনর্বাসনটা ঠিকঠাক হয়নি। এ ছাড়াও ডানপায়ে এসিএল ইনজুরিতে পড়েছিলেন একবার। সেই চোটই নাকি এখনো ভোগাচ্ছে বেশি। জানালেন বর্তমানে এটা নিয়েই ট্রেনার-ফিজিওর সঙ্গে নিয়মিত কাজ করছেন। দ্রুত বোলিং ফিটনেস ফিরে পাবেন বলে আশা তার। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আসছে মৌসুমে মাঠে ফেরারও স্বপ্ন দেখছেন তিনি। শুভাশিষ মনে করেন ইনজুরি তাকে বারবার পিছিয়ে দিয়েছে। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই গুরুত্বপূর্ণ সব সময়ে চোটে বা অসুস্থায় পড়তে হয়েছে তাকে। তবে বিপিএলে মাশরাফির সঙ্গে যে আলোচিত ঘটনা, সেটার কোনো প্রভাব তার ক্যারিয়ারে পড়েনি বলেই বিশ্বাস তার।
শুভাশিষের কথায়, ‘জাতীয় দল এমন এক জায়গা, এখানে যোগ্যতা দিয়েই সবাই খেলে। মাশরাফি ভাই ওই ঘটনার কারণে আমাকে নেবে না, এমন কোনো সুযোগ নেই। আমি পারফর্ম করলে আটকানোর পথ নেই। হ্যাঁ, অধিনায়ক থাকলে হয়তো দুজন ১৯-২০ খেলোয়াড়ের বেলায় ১৯-কে তিনি নিতে পারেন। তাই বলে আমার খেলা শেষ করে দেবেন, এমন না। যারা এটা মনে করে, তারা ভুল। ক্রিকেট এত সহজ নয়। এখানে নিজের যোগ্যতাতেই সবাই খেলে।’
ওই ঘটনার পর মাশরাফির সঙ্গে তার সম্পর্কের কি কোনো অবনতি ঘটেছিল? এবারও শুভাশিষ কণ্ঠে হাসি, ‘সেটা কেন হবে? এখানে সম্পর্কের অবনতি হওয়ার তো কিছু নেই।’ শুভাশিষ বলে যান, ‘মাশরাফি ভাইয়ের সঙ্গে আমি তো আজ থেকে খেলি না। আমার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেও প্রিমিয়ার লিগে একসঙ্গে একই দলে ছিলাম। আমি দেখেছি সে কীভাবে প্রতিপক্ষ দলকে প্রেশারে রাখে বা প্রেশার হ্যান্ডল করে। আমাদের দুজনের মধ্যে যেটা ঘটেছিল, সেটা আসলে এক ধরনের স্লেজিং ছিল। সে আমাকে স্লেজিং করে ডিমোরালাইজড করতে চয়েছিল। উল্টো আমি তাকে স্লেজিং করেছি। ম্যাচটা কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরাই জিতেছি।’ শুভাশিষ মনে করেন, ‘ওই বিষয়টা অনেকে অনেকভাবে নিয়ে নিয়েছেন। যারা বোঝে না, তারা এ নিয়ে তর্ক করবেই। আর যারা ক্রিকেট বোঝার, তারা ঠিকই বুঝবেন। মাঠের মধ্যে অনেক কিছুই তো হতে পারে। তিনি অধিনায়ক দেখে স্লেজিং করতে পারবেন, আমি পারব না, এমন তো কোনো কথাই নেই।’
আবারও মাঠে ফেরার জন্য সংগ্রাম করে যাওয়া শুভাশিষের বিশ্বাস, ফিট হতে পারলে হারানো জায়গা ফিরে পাওয়া তার জন্য কঠিন কিছু হবে না। এখন তার একটাই লক্ষ্য- ‘পরিপূর্ণ ফিট হয়ে যেন ডমিনেট করে খেলতে পারি।’