![আফগানদের অনিন্দ্যসুন্দর ইতিহাস](uploads/2024/06/26/Afganistan-News-Tofail=ok-1719386748.jpg)
সেন্ট ভিনসেন্টের কিংসটাউনে তখন গভীর রাত। আফগানিস্তানে সকাল। গতকাল মঙ্গলবারের সকালটা নিশ্চিতভাবেই আফগানদের জন্য অন্য দশটা সকালের মতো ছিল না। বাংলাদেশকে হারিয়ে কিংসটাউনে ফ্লাডলাইটের আলোর রোশনাইয়ের নিচে নীল জার্সির রশিদ খানরা যখন আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠলেন, কেমন ছিল তখন কাবুল, জালালাবাদ, কান্দাহার, গাজনির চিত্র? নিশ্চিতভাবেই প্রশান্তির ফল্গুধারা বয়ে যাচ্ছিল প্রতিটি আফগানের মনে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান। একটা সময় যে দেশের মানুষদের জন্য গোলার আওয়াজ আর বারুদের গন্ধই ছিল নিত্যসঙ্গী। সেই দেশই বেশ কিছুদিন ধরে ক্রিকেটের মাধ্যমে নিজেদের নতুনভাবে চিনিয়ে যাচ্ছে। তাদের রশিদ খান তো এখন বিশ্বসেরা ক্রিকেটারদের একজন। দল হিসেবেও আফগানরা পিছিয়ে কোথায়! এবারের টি-টোয়েন্টি সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে দলটি। আপাতত দলটাকে বিশ্বের সেরা চার দলের একটি বললে দোষের কি! এমনকি এবারের প্রতিযোগিতায় এখন পর্যন্ত দলটির যা পারফরম্যান্স, তাতে ফাইনাল বা এর চেয়েও বড় কিছুও হয়তো অসম্ভব কিছু নয়।
সাদা বলে আফগানিস্তানকে বরাবরই বিপজ্জনক দল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রশিদ খান ছাড়াও মোহাম্মদ নবি, রহমানউল্লাহ গুরবাজের মতো ভয়ডরহীন ক্রিকেটারে ভরপুর দলটি। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তাদেরকে সমীহ করছিল সবাই। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে গল্প লিখেছে দলটি, তা সবার কল্পনাকেও ছাড়িয়ে গেছে বলতে হবে। প্রথম রাউন্ডে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দলটির স্বপ্নযাত্রার শুরু। সুপার এইট পর্বে সাবেক চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে থমকে দেয় দলটি। সবশেষ গতকাল রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে বাংলাদেশকে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে দলটি। অথচ ১৬ বছর আগেও দেশটি খেলত আইসিসি ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড ডিভিশন ফাইভে। ২০১০ সালে এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়েই দলটির বিশ্বমঞ্চে প্রথম পা রাখা। এরপর প্রতিটি আসরেই অংশ নেওয়া এবং ১৪ বছরের ব্যবধানে ফাইনালের মঞ্চে পা রাখার অন্যতম দাবিদার দলটি। বাংলাদেশ সময় আগামীকাল সকাল সাড়ে ৬টায় প্রতিযোগিতার প্রথম সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে আফগানরা। চোকার্স খ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকাকে বলা হয় সেমিফাইনালের দল। টুর্নামেন্টজুড়েই তারা ভালো খেলবে। এবারও যেমন খেলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেমিফাইনালে গিয়ে হতাশ করবে। এবারও যদি আইডেন মার্করামরা এই ধারা ধরে রাখে, তাহলে তো আফগান রূপকথা নেবে অন্যরূপ।
সেটা হবে কি না তা বলবে সময়। তবে এখন পর্যন্ত আফগানিস্তান বিশ্বকাপে ক্রিকেটের যে আল্পনা এঁকেছে, তাকে অনিন্দ্যসুন্দর বলতেই হবে। বাংলাদেশ ম্যাচটাই ধরা যাক না। সেমিফাইনাল খেলতে হলে জিততেই হতো দলটাকে। কিন্তু এমন ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ১১৫ রানের বেশি করতে পারেনি দলটি। এই ম্যাচ জিতে বাংলাদেশের সামনেও সুযোগ ছিল সেমিফাইনালে যাওয়ার। এজন্য নির্দিষ্ট সমীকরণ মেলাতে হতো। জিততে হবে ১২.১ ওভারে। বাংলাদেশ তো সেটা পারেইনি, পরে বৃষ্টিতে ১ ওভার কমে আসা ম্যাচে ৮ রানে (ডিএলএস ম্যাথডে) হেরে গেছে দলটি। তাতে শুধু বাংলাদেশ নয়, একই সঙ্গে সুপার এইট পর্ব থেকে বিদায় ঘটেছে পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়ারও।
স্কোরবোর্ডে পুঁজি অল্প হলেও মোটেও নিজেদের প্রতি বিশ্বাস হারায়নি আফগানিস্তান। এটাই আসলে এই দলটার শক্তি। সেমিফাইনালে ওঠার পর অধিনায়ক রশিদ যেমন বলেছেন, ‘পুরো টুর্নামেন্টে আমরা সবকিছু স্বাভাবিক রেখেছি। হ্যাঁ, কঠিন সময় এসেছে। তবে আমরা নিজেদের হতাশ করিনি এবং সবসময় শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি।’ যে চেষ্টায় বিশ্ব দেখল আফগানদের নতুন রূপকথা। রশিদ যে অর্জনের অনুভূতি প্রকাশ করতে ভাষাই খুঁজে পাচ্ছিলেন না, ‘আমি আসলে জানি না, কীভাবে অনুভূতি প্রকাশ করব। সেমিফাইনালে ওঠা আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। এখনো পর্যন্ত যেভাবে পুরো টুর্নামেন্টে আমরা খেলেছি, আমার মতে সেমিফাইনালে খেলাটা আমাদের প্রাপ্যই।’
রশিদের এই কথায় নিশ্চয়ই দ্বিমত করবে না কেউ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আরও বড় কীর্তি কি হবে? দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে পারবে আফগানরা? রশিদ বলছেন, ‘এখন আমাদের স্বচ্ছ ভাবনা নিয়ে যেতে হবে। এখন পর্যন্ত আমরা যা করেছি, যেসব বিষয় আমাদের পক্ষে কাজ করেছে, সবকিছু স্বাভাবিক রাখতে হবে। আমরা যেন বড় উপলক্ষটি উপভোগ করি, তা নিশ্চিত করতে হবে।’