ছবি : সংগৃহীত
দক্ষিণ আফ্রিকা হয়তো জিতেই যেত। তাদের জয়ের জন্য দরকার ছিল মাত্র ৩০ রান। তখনো ৫ ওভার বাকি। হাতে রয়েছে ৬টি উইকেট। এমন ম্যাচেও তারা হেরেছে। আর হারের দ্বারপ্রান্তে থাকা ভারত জয় পেয়েছে ৭ রানে। ভারতের এমন জয়ে অনন্য অবদান রেখেছেন জসপ্রিত বুমরাহ। শেষ ৫ ওভারের মধ্যে দুই ওভার হাত ঘুরান বুমরাহ। মাত্র ৬ রান দিয়ে তিনি তুলে নিয়েছেন ১ উইকেট। তাতে ১৭ বছর পর টি-টোয়েন্টিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।
শুধু ফাইনাল ম্যাচেই নয়। এবার বিশ্বকাপে ভারতের প্রায় সব প্রতিপক্ষ ডেথ ওভারে বুমরাহর ছোবলে দিশেহারা হয়েছে। তাতে ‘ডেথ ওভারের কিং’ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন এই ফাস্ট বোলার।
বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত ১৭৭ রানের টার্গেট দেয়। ডি ককের পর ক্লাসেনের ব্যাট আশার আলো দেখে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৫তম ওভার শেষে জয়ের জন্য তাদের দরকার ছিল মাত্র ৩০ রান। অথচ শুধু ১৫তম ওভারেই ২৪ রান নিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ফলে জয়টি যেন শুধু সময়ের ব্যাপার ছিল। ভারতের সমর্থকদের কপালে তখন চিন্তার ভাঁজ। হয়তো ফের ফাইনালে হেরে যাচ্ছে তারা।
তবে ১৬তম ওভারেই বুমরাহর হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ৬ বলে মাত্র ৪ রান দিয়ে রান-বলের ব্যবধান বৃদ্ধি করেন বুমরাহ। ফের ১৮তম ওভারে বুমরাহকে নিয়ে আসেন রোহিত। এই ওভারেই তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার স্বপ্নের কবর রচনা করেন। শেষ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ওভারটিতে মাত্র ২ রান দিয়ে তুলে নেন ১ উইকেট। তাতে শেষ ২ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের জন্য দরকার হয় ২০ রানের। বলে বলে যেখানে রান হলে জয় নিশ্চিত, সেখানে এমন ব্যবধানেই যেন হকচকিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ ১২ বলে তারা ১১ রান নিতে পারলেও আগের ঘাটতি আর পূরণ করতে পারেনি।
বুমরাহর বোলিং ছোবল শুধু ফাইনালেই নয়। টুর্নামেন্ট শুরুই করেছেন প্রতিপক্ষকে লণ্ডভণ্ড করে। প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে ১৬ ওভারে অল আউট করতে বড় অবদান রাখেন তিনি। ৩ ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে তুলে নেন দুই উইকেট। তাতে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে নেন তিনি। এরপর ১১৯ রানের পুঁজি নিয়েও পাকিস্তানকে হারায় ভারত। সেই ম্যাচে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৩ উইকেট শিকার বুমরাহ হন ম্যাচসেরা। এবারের বিশ্বকাপের চমক আফগানিস্তানও ‘কিং বুমরাহ’র ছোবল থেকে রেহাই পায়নি। সুপার এইট পর্বের ম্যাচটিতে বুমরাহর রেকর্ড অনন্য। ৪ ওভারে মাত্র ৭ রান দিয়ে একটি মেডেনসহ তিনটি উইকেট নেন ডানহাতি পেসার। ম্যাচটা ৪৭ রানে জিতে ভারত। এরপর বাংলাদেশের বিপক্ষেও কম রান দেন তিনি। ৪ ওভারে দেন মাত্র ১৩ রান। তুলে নেন দুটি উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হাই স্কোরিং ম্যাচেও আলো ছড়ান। ২০৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামা অস্ট্রেলিয়া বুমরাহর করা ১৭তম ওভারে মাত্র ৫ রান নিতে পারে। যার ব্যাটে স্বপ্ন আঁকছিল অজিরা, সেই ট্রাভিস হেডের উইকেটটাও নেন বুমরাহ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে ২.৪ ওভারে ১২ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন বুমরাহ। আর ফাইনালের গল্পটা এখনো সবার মনে তাজা হয়েই থাকার কথা। সবমিলিয়ে এবারের বিশ্বকাপে ১৫ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জিতেছেন বুমরাহ। এমন সাফল্যের রহস্য হিসেবে বলেছেন নিজেকে শান্ত রাখা, ‘আমি শান্ত রাখতে চেষ্টা করি।’ বিশ্বকাপ জয়কে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত উল্লেখ করে বলেন, ‘এটা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের। আমার ছেলে, আমার পরিবার আছে এখানে। আমরা এটা অর্জন করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। এর চেয়ে আনন্দের কিছু নেই।’