![নতুনের আবাহন না পুরাতনকে বরণ](uploads/2024/06/29/sport-1719636938.jpg)
বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন এখন খুবই ব্যস্ত। একসঙ্গে আসর চলছে তিনটি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকা আর ইউরো। এদিকে আবার দরজায় কড়া নাড়ছে প্যারিস অলিম্পিক। এসবের ভিড়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আবার ক্রীড়ামোদিদের কাছে পেছনের সারিতে। ফুটবল নিয়ে যে মাতামাতি, তার কাছাকাছিও নেই ক্রিকেট। নিউ জার্সিতে কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনার খেলা নিয়ে যে উন্মাতাল ভাব দেখা গেছে, সে রকমটি কিন্তু দেখা যায়নি টি-টোয়েন্টিতে। বিশ্ব ক্রিকেট মানেই যেন উপমহাদেশ। আলাদা করে বললে ভারত। এই ভারতকে আবার বিশেষ সুবিধা দিতে আইসিসি কোনো রকম রাখঢাক করে না। ভারতের কোটি কোটি দর্শকের কথা চিন্তা করে তাদের খেলা ভারতের সময় অনুযায়ী রাতে রাখা হয়। ভারতের পৃষ্ঠপোষকদের টাকায় আইসিসি চলে বলে ফাইনাল পর্যন্ত ভারতকে রাখতে আইসিসির পক্ষ থেকে চেষ্টার কোনো কমতি থাকে না। ভারত আগেই বিদায় নিলে আসর নাকি সুপার ফ্লপ মারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আইসিসি এখানে সফল হতে পারে না। কিন্তু এবার আইসিসি সফল। ভারত ফাইনাল খেলছে। ভারতের এই ফাইনালে আসা নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হচ্ছে। কিন্তু ফাইনালে অপর প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকার উঠে আসা নিয়ে কেউ সমালোচনা করেননি। তাই বার্বাডোসের আজকের ফাইনাল নতুন আর পুরাতনের। ভারতের একাধিকবার ফাইনালে খেলার অভিজ্ঞতা থাকলেও দক্ষিণ আফ্রিকা কিন্তু খেলছে প্রথমবারের মতো। ভারত চ্যাম্পিয়ন হলে বিশ্ব ক্রিকেটের জন্য নতুন কিছু হবে না। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা চ্যাম্পিয়ন হলে নতুন নাম যোগ হবে আইসিসির রোল অব অনারে। যেখানে আগে থেকে নাম আছে দুবার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের, একবার করে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়ার।
আইসিসির যেকোনো ইভেন্টে দক্ষিণ আফ্রিকার নামটি ‘চোকার্স’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ ইতিহাস সবারই জানা। গোটা আসরে দুর্দান্ত খেলার পর নকআউট স্টেজে দক্ষিণ আফ্রিকা আর পেরে ওঠে না। যে কারণে ১৯৯৯ সালে নকআউট (বতর্মানে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি) বিশ্বকাপের প্রথম আসরই এখন পর্যন্ত তাদের একমাত্র ফাইনাল আর শিরোপা জেতার সাক্ষী হয়ে আছে। এবার তারা সে ইতিহাস বদলে দিয়েছে। সেই বদলে যাওয়া ইতিহাসের পূর্ণতা পাবে যদি শিরোপা জিততে পারে। একবার মাত্র ফাইনাল খেলায় বলা যায়, ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা কখনো হারেনি। ভারতের জন্য ফাইনাল খেলাটা আবার নানাবাড়ির দুধ-ভাতের মতো সহজলভ্য হয়ে গেছে। কিন্তু শিরোপা জেতা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। সেই ২০০৭ সালের প্রথম আসরে তারা ফাইনালে উঠে শিরোপা জিতেছিল। এরপর ২০১৪ সালে তারা ফাইনাল খেলেছিল। কিন্তু শ্রীলঙ্কার কাছে ৬ উইকেটে হেরে গিয়েছিল। গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালেও তারা অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছিল ৬ উইকেটে। শুধু কি এই দুটি আসরই? আইসিসির নতুন করে শুরু হওয়া বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম দুই আসরেও ফাইনালে উঠে একবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি ভারত। প্রথমবার নিউজিল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটে, দ্বিতীয়বার অস্ট্রেলিয়ার কাছে ২০৯ রানে হেরে গিয়েছিল তারা। তাই ফাইনালের ক্ষেত্রে ভারতও এক ধরনের ‘চোকার্স’। তাই ফাইনালে হবে দুই চোকার্সের লড়াই।
ফাইনালে কিন্তু আছে বৃষ্টির চোখ রাঙানি। এবারের আসরে ক্রিকেটের আজন্মশক্রু এই বৃষ্টি বেশ ভুগিয়েছে। এমন কী ভারত-ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সেমিতেও বৃষ্টি হানা দিয়েছিল। যদিও ছিল না কোনো রিজার্ভ ডে। তবে ফাইনালে রাখা হয়েছে রিজার্ভ ডে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে কিন্তু রিজার্ভ ডেতেও বৃষ্টির হানা আছে। সে ক্ষেত্রে প্লেয়িং কন্ডিশন অনুযায়ী ন্যূনতম ১০ ওভার করেও খেলা না হলে দুই দলকেই যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হবে।
ফাইনালে উঠে আসার পথে গ্রুপপর্ব ও সুপার এইটে দুই দলই বাধার সম্মুখীন হয়েছিল। কিন্তু সেমিতে যেন দুই দলই নিজ নিজ প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়েছে। তা এমনইভাবে যে, যা দেখে মনেই হয়নি আসরের সেরা দল খেলছে ফাইনালে। এবারের আসরের চমক আফগানিস্তানকে তো তাদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বনিম্ন ৫৬ রানের লজ্জায় ডুবিয়ে অলআউট করে ম্যাচ জিতেছিল ৯ উইকেটে। অপর সেমিতে ভারত আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ১৭১ করার পর ইংল্যান্ডকে মাত্র ১০৩ রানে অলআউট করে ম্যাচ জিতেছে ৬৮ রানে। সেমির এই লড়াইয়ে দুই দলই বুঝিয়ে দিয়েছে শিরোপা জিততে তারা বদ্ধপরিকর। আসুক যত বাধা। দেখার বিষয় আজ কে কার বাধা হয়ে ওঠে!
সেমিতে ভারত তাদের স্পিন দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করলেও দক্ষিণ আফ্রিকা কিন্তু পেস অ্যাটাক দিয়েই কাজ সেরেছে। তাদের স্পিনাররা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সহযোগিতার হাত। তাই বলে ভারতকে স্পিননির্ভর ভাবার কারণ নেই। কারণ দুই পেসার আর্শদীপ সিং ১৫ ও বুমরাহ ১৩ উইকেট নিয়ে আছেন শীর্ষ উইকেট শিকারির তালিকার ওপরের দিকে। সেখানে দুই স্পিনার কুলদীপ যাবদের ১০, অক্ষর প্যাটেলের উইকেট ৮টি। দক্ষিণ আফ্রিকাও একই পথের কাণ্ডারি। নর্টজে ১৫ ও রাবাদা ১২ উইকেট নিয়ে ১১ উইকেট নেওয়া তাবারিজ শামসির ওপরেই আছেন। আবার কেশব মহারাজের উইকেটও ৯টি। আর সেমিতে আফগানিস্তানকে গুঁড়িয়ে দেওয়া পেসার মার্কো জানসেন ৬ উইকেটের ৩টিই পেয়েছিলেন সেই ম্যাচে।
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসলে বোলারদের লড়াই হয়ে উঠেছে। যে কারণে ভারতের বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনের মুগ্ধকর ব্যাটিং দেখা যায়নি। বিরাট কোহলি (৭ ম্যাচে ৭৫ রান) পুরো ফ্লপ। অধিনায়ক রোহিত শর্মা (৭ ম্যাচে ২৪৮ রান), সূর্যকুমার যাদব (৭ ম্যাচে ১৯৬ রান), রিশাভ পন্থ (৭ ম্যাচে ১৭১ রান) হার্দিক পান্ডিয়া (৭ ম্যাচে ১৩৯ রান) শিভাম দুবে (৭ ম্যাচে ১০৬ রান) রান যেন মানায় না। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংলাইন ভারতের মতো অনিন্দ্যসুন্দর না হলেও তাদের ডি কক ২০৪, ডেভিড মিলার ১৪৮, ক্লাসেন ১৩৮, টি স্টাবস ১৩৪, মার্করাম ১১৯, রেজা হেন্ডরিকস ১০৯ রান করে ভারতের বোলিংকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জেতার স্বপ্নে বিভোর।
ফাইনাল ম্যাচের আগে ব্রিজটাউনে এবারের আসরে খেলা হয়েছে মোট ৮টি। এখানে যেমন দুই শর ওপরে রান হয়েছে, তেমনি আবার শতরানের নিচেও। ওমান-নামিবিয়ার টাই ম্যাচও হয়েছে এখানে। কাজেই ব্যাটিং, না বোলিং উইকেট ম্যাচের শুরুর আগে এই তথ্য খুব একটা কাজে দেবে না। তবে ফিরে যাওয়া যেতে পারে ২০১০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে। যেখানে অস্ট্রেলিয়ার করা ৬ উইকেটে ১৪৭ রান ইংল্যান্ড ১৭ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে টপকে গিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।