দক্ষিণ আফ্রিকা কখনোই ফাইনাল খেলতে পারে না। ক্রিকেটে এই বাক্যটা অমর বাক্যে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু একজন এইডেন মার্করাম কথাটা বদলে দিয়েছেন। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে সাত-সাতবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আটকে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকাকে ফাইনালে নিয়ে গেছে মার্করামের নেতৃত্ব। কখনো বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলতে না পারলেও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে তো কম তারকা ক্রিকেটার উঠে আসেনি। কিন্তু তাদের সবার থেকে একজন মার্করাম যেন একেবারেই আলাদা। বয়স এখনো ত্রিশ হয়নি। মাঠে তার চলনে বলে ডাকাবুকো ভাবের লেশমাত্র নেই। কিন্তু চোখে ও মনে কেবল জয়ের নেশা। অধিনায়ক হিসেবে প্রোটিয়াদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতানোর পর এখন যিনি বড় বিশ্বকাপ জয়ের দুয়ারে দাঁড়িয়ে। বার্বাডোসে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে এই অন্য ধাতুতে গড়া মার্করামই কি হাসবেন শেষ হাসি?
ক্রিকেট ইতিহাসে মার্করামই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি অধিনায়ক হিসেবে অনূর্ধ্ব-১৯ ও সিনিয়র বিশ্বকাপের ফাইনালে দেশকে নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন। আইসিসি ইভেন্টে অধিনায়ক হিসেবে যার পরাজয়ের কোনো নজির নেই। এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত অপরাজিত দক্ষিণ আফ্রিকা। জিতেছে ৮ ম্যাচের ৮টিতেই। সবগুলোই মার্করামের নেতৃত্বে। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে টেম্বা বাভুমার চোটে ২ ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দেন মার্করাম, দুটিতেই জিতেছিলেন। আর ২০১৪ সালে দেশকে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতানোর পথে জেতেন ৬ ম্যাচের সবকটি। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে মোট ১৬টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে মার্করামের জয় সবগুলোতেই। অবিশ্বাস্যই বলতে হবে।
দেশকে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ এনে দেওয়ার পথে ব্যাট হাতে ৩৬০ রান করে ছিলেন টুর্নামেন্টসেরা। এবার অবশ্য মার্করামের ব্যাট সেভাবে হাসেনি। ৮ ইনিংসে মাত্র ১১৯ রান তার নামের পাশে। সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে। কিন্তু যদি বলা হয় মার্করামের দুই ক্যাচ প্রোটিয়াদের এতদূর এনেছে, ভুল হবে কি!
হ্যাঁ, দক্ষিণ আফ্রিকার এতদূর আসার পেছনে আসলে সম্মিলিত পারফরম্যান্সেরই বড় ভূমিকা। কেউ না কেউ এক ম্যাচে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। নির্দিষ্ট কারও ওপর দলটি নির্ভরশীল নয়। কিন্তু পুরো আসরে দলটি এমন কিছু স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচ জিতেছে, যেখানে ভাগ্যও দলটির পাশে ছিল বলতে হবে। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের কথাতেই আসা যাক। মাত্র ৪ রানে ম্যাচটি জিতেছিল প্রোটিয়ারা। ভাগ্য নিশ্চিয়ই পাশে ছিল বলে। এ ক্ষেত্রে একজন মার্করামের কথা বলতেই হবে। শেষ দুই বলে যখন ৬ রান প্রয়োজন, তখন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নিশ্চিত ছক্কাকে ক্যাচে পরিণত করে প্রোটিয়াদের জয়ের আনন্দে মাতিয়েছিলেন মার্করাম। লং-অনে কীভাবে কোথা থেকে এসে ছোঁ মেরে মার্করাম ক্যাচটা নিলেন, বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের কাছে তো এখনো তা অবিশ্বাস্য লাগার মতো ঘটনা। সুপার এইট পর্বে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও প্রায় হেরে যাচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ ওভারে ৫ উইকেট হাতে রেখে ১৪ রান প্রয়োজন ছিল দলটির। সেই মুহূর্তে ৫৩ রানে উইকেটে থাকা হ্যারি ব্রুকের ক্যাচটা মুগ্ধকরভাবে লুফে নিয়েছিলেন মার্করাম। এরপর ইংল্যান্ড আর ম্যাচটা জিততে পারেনি। জিতবেন কি করে! একজন অধিনায়ক মার্করাম কি হারতে পারেন?
২০১৪ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ও ১৯৯৮ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাপ্তি শূন্য। ১৯৯২ ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবার সেমিফাইনাল খেলে দলটি ৩২ বছরের অপেক্ষার ইতি টেনে আজ ফাইনাল খেলার অপেক্ষায়। ট্রফিটাও মার্করামের হাতে উঠবে কী? মার্করামের দলটা কি স্নায়ুর লড়াইয়ে হেরে যাওয়া কোনো দল নয়। মার্করামের দল চোকার্স নয়।