![গুলবাদিনের এ কেমন নাটক?](uploads/2024/06/26/Gulbadin-naib=ok-1719397647.jpg)
সেরা অভিনেতা তো তিনিই, যার অভিনয় বাস্তব মনে হয়। সেদিক থেকে আফগানিস্তানের অলরাউন্ডার গুলবাদিন নাইব ব্যর্থ! চোটের অভিনয় করে দর্শকের চোখ ফাঁকি দিতে পারেননি। তার কোচ জোনাথন ট্রটও নাটক পরিচালনায় সফল হতে পারেননি। তাতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে ক্রিকেট মহলে। কেউ বলছে তাকে অস্কার দেওয়া হোক, কেউ বলছেন দেওয়া হোক লাল কার্ড।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে উঠেছে আফগানিস্তান। অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পর বাংলাদেশের বিপক্ষেও জিতেছে ৮ রানে। তবে বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে তাদের জয়ের চেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে আফগান ক্রিকেটার গুলবাদিনের চোট কাণ্ড নিয়ে।
সেন্ট ভিনসেন্টে সমীকরণটি এমন ছিল যে আফগানিস্তান জিতলেই সেমিফাইনালে যাবে। আর বাংলাদেশ যদি ১২.১ ওভারেই জয় পায় তাহলে তারা উঠবে সেমিতে। তা না হলে শেষ চারে খেলবে অস্ট্রেলিয়া।
তবে বাংলাদেশ ১১তম ওভারে তাদের ষষ্ঠ ও সপ্তম উইকেট হারায়। তখন দলীয় স্কোর ছিল ৮০ রান। তখন বাংলাদেশের সেমিতে যাওয়ার স্বপ্ন অনেকটা ফিকে হয়ে যায়। তবে ম্যাচটিতে জয় পাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। ম্যাচটিতে বার বার বৃষ্টি হানা দেয়। ১২তম ওভারে সমীকরণ এমন দাঁড়ায় যে বৃষ্টির কারণে খেলা বাতিল হয়ে গেলে ডিএলএস অনুযায়ী জয় পাবে আফগানিস্তান।
তখন আকাশে মেঘের ঘনঘটা। খেলা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ১২তম ওভারের তৃতীয় ও চতুর্থ বলের মাঝখানে আফগানিস্তানের কোচ খেলা বিলম্বিত করার ইশারা দেন। কোচের এমন ইশারা পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই মাটিতে শুয়ে পড়েন গুলবাদিন। পায়ে হাত দিয়ে পড়ে যান। বোঝাতে চেয়েছেন তিনি পায়ে অনেক চোট পেয়েছেন। অথচ স্লিপে ফিল্ডিং করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন তিনি। কোনো হাঁটা চলা বা দৌড়ানো ছাড়াই যেন বাতাসের আঘাতে চোট পেয়েছেন তিনি।
ততক্ষণে বৃষ্টি এসে যায়। খেলা থেমে যায়। নাভীন উল হক ও এক স্টাফের কাঁধে ভর দিয়ে মাঠ ত্যাগ করেন গুলবাদিন। আফগান অধিনায়ক রশিদ খানকে তখনই অস্বস্তিতে দেখা গিয়েছিল। বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যান লিটন দাস সঙ্গে সঙ্গে গুলবাদিনের অভিনয়ের পুনরাবৃত্তি করে দেখান। হাসতে হাসতে তার ভঙ্গিমা প্রকাশ করেছে যে গুলবাদিনের চেয়ে তিনি ভালো অভিনয় জানেন।
বৃষ্টি দীর্ঘায়িত হয়নি। গুলবাদিনের চোট সারতেও সময় লাগেনি। বৃষ্টির পর খেলা এক ওভার কমিয়ে দেওয়া হয়। আর বাংলাদেশের টার্গেট নির্ধারণ করা হয় ১১৪ রান। বৃষ্টির পরে গুলবাদিনের পরিবর্তে নাজিবুল্লাহ জাদরান ফিল্ডিংয়ে নামেন। কিন্তু ১৩তম ওভারেই ফের মাঠে নামেন গুলবাদিন। আর ১৫তম ওভারে বল হাতে তানজিম হাসানের উইকেটও তুলে নেন। সেটি উদযাপনও করেন সতীর্থদের সঙ্গে। তার উদযাপন দেখে বোঝার উপায় নাই যে তিনি চোট পেয়েছিলেন।
আফগান অলরাউন্ডারের এমন কাণ্ডে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সঙ্গে সঙ্গেই সমালোচনার ঝড় ওঠে। তাদের সেমিফাইনালের চেয়ে বেশি আলোচনায় বাতাসে চোট পাওয়া কাণ্ড নিয়ে। ভারতের সাবেক ক্রিকেটার রবীচন্দ্রন অশ্বিন এক্স এ লিখেছেন, ‘গুলবাদিনের জন্য লাল কার্ড।’ একজন ক্রিকেট ভক্ত লিখেছেন, এমন অভিনয়ের জন্য গুলবাদিনকে অস্কার দেওয়া উচিত।
অস্ট্রেলিয়ান স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা ইনস্টাগ্রামে গুলবাদিনের ভিডিও শেয়ার করে লিখেছেন, ‘ওল্ড রেইনস্ট্রিং’। ম্যাচ শেষ এটা নিয়ে কথা বলতে ছাড় দেননি নিউজিল্যান্ডের সাবেক পেসার সাইমন ডুল। রশিদ খানকে গুলবাদিনের চোট কাণ্ড নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে আফগান অধিনায়ক বলেন, ‘বৃষ্টি কারও হাতে নয়। এটা আসে আবার চলে যায়। আমরা মানসিকভাবে সব সময় প্রস্তুত ছিলাম যে আমাদের ২০ ওভার খেলতে হবে এবং ১০ উইকেট নিতে হবে। সেমিতে যাওয়ার এটাই একমাত্র পন্থা। আমার মনে হয়, গুলবাদিনের টান লেগেছিল। আশা করি তিনি ঠিক হয়ে যাবেন। তবে তিনি ওই মুহূর্তে যে উইকেটটি পেয়েছেন সেটি ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
গুলবাদিনের নাটকে খেলায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। এ নিয়ে রশিদ খান বলেন, ‘এটা খেলার মাঠে একটা চোট। বৃষ্টি এসেই চলে গেছে। তাতে আমাদের ওভার কমানো হয়নি। এটা এমন কিছু নয় যে খেলায় বড় কোনো পার্থক্য তৈরি করে দিয়েছে।’
খেলায় ইচ্ছাকৃতভাবে সময় নষ্ট করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে আফগানিস্তানের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত এর কোনো প্রভাব পড়েনি। তারা ৮ রানে জয় পেয়েছে। সেই সঙ্গে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে।