![শস্যের ওপর শুল্ক বসানোর পরিকল্পনা করছে ইইউ](uploads/2024/03/25/1711360016.russia.jpg)
রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে আমদানি করা শস্য ও অন্যান্য পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করছে ইউরোপীয় কমিশন। এই শুল্ক আরোপের উদ্দেশ্য হলো, মস্কোর কৃষিপণ্যকে যুদ্ধের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে বাধা দেওয়া। তবে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মস্কো জানিয়েছে, ইউরোপীয়রা এই পদক্ষেপের ফলে ‘ভুগবে’। খবর ডেইলি সাবাহের।
ইউরোপীয় কমিশন বলেছে, এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত রাশিয়ার রাজস্ব আয়কে সীমিত করার লক্ষ্যে। কারণ তারা (কমিশন) কার্যকরভাবে ইইউতে রাশিয়ার শস্য রপ্তানি প্রতিহত করতে চাইছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য কমিশনার ভালদিস ডোমব্রোভস্কিস বলেছেন, আরোপিত নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে কিয়েভ। তবে অন্য কোথাও খাদ্য সরবরাহ যেন ব্যাহত না হয়, সে জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে অন্যান্য বাজারে রাশিয়ান শস্য পরিবহনের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে না।
ডোমব্রোভস্কিস উল্লেখ করেন, এই প্রস্তাবটি করা হয়েছে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অবৈধ যুদ্ধে রুশ সরকারের অর্থায়নের কারণে।
গত বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ইইউ নেতাদের বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে অভিযোগ করেন, ইউক্রেনের আমদানি সীমিত হওয়ার সময়, তাদের (ইইউ) বাজারে রাশিয়ান শস্যের ‘অনিয়ন্ত্রিত’ প্রবেশ অব্যাহত রাখা ঠিক নয়।
তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, রাশিয়া ও দেশটির মিত্র বেলারুশ থেকে আমদানি করা দানাদার খাদ্য, তেলবীজ ও উদ্ভিদজাত তেল, ইউরোপীয় বাজারের মোট আকারের মাত্র ১ শতাংশ। বাকিটা জোগান দেয় দেশীয় সরবরাহকারীরা।
এদিকে ক্ষুব্ধ কৃষকরা ইতোমধ্যে ইউক্রেনের সস্তা পণ্য আমদানি বৃদ্ধির কারণে উদ্বিগ্ন। তবে ইইউ আশঙ্কা করছে যে, ২৭ জাতির ব্লকটিকে (ইইউ) আরও অস্থিতিশীল করার জন্য উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সুবিধা নিতে উৎসাহিত হবে রাশিয়া।
ইইউর কৃষকের ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণ হলো ইউক্রেন থেকে আসা তুলনামূলক কম দামের পণ্য তাদের জন্য হুমকিস্বরূপ। কারণ কম দামে পণ্য বিক্রি করার ফলে বাজারে ইউক্রেনের পণ্যের চাহিদা বাড়বে এবং ইউরোপীয় পণ্যের বিক্রি কমে যাবে। এর ফলে ইউরোপীয় কৃষকদের আয় কমে যাবে।
কমিশন বলেছে, ‘সরবরাহের এই ঘাটতি আংশিকভাবে ইইউর অভ্যন্তরীণ উৎপাদন দ্বারা পূরণ করা হবে। তাতে ইইউর কৃষকরাই উপকৃত হবেন, যারা ইইউভুক্ত দেশগুলোতে তাদের শস্য বিক্রি করতে পারবেন।’
কমিশন জানায়, এ ছাড়া ঘাটতি পূরণের জন্য ঐতিহ্যগতভাবে ইউরোপীয় বাজারে সরবরাহকারী তৃতীয় দেশগুলো থেকে আমদানি বৃদ্ধি করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ইউক্রেন, সার্বিয়া এবং আর্জেন্টিনা।
এদিকে মস্কো এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আগে থেকেই সতর্ক করেছিল। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘(এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে) ইউরোপের ভোক্তারা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
২০২৩ সালে রাশিয়া থেকে ইইউর দানাদার খাদ্য, তেলবীজ ও উদ্ভিদজাত তেল, গম, ভুট্টা ও সূর্যমুখী থেকে তৈরি খাবারসহ আমদানি করা পণ্যের পরিমাণ ছিল ৪২ লাখ টন ছিল। এর দাম ছিল ১৩০ কোটি (১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন) ইউরো (১ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার)। এর বিপরীতে ইইউর সরবরাহকারীরা প্রতিবছর ৩০ কোটি টন পণ্য সরবরাহ করে।
রাশিয়া থেকে খাদ্যশস্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করার জন্য এই শুল্ক আরোপ যথেষ্ট উচ্চহারের হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইইউর বাণিজ্য কমিশনার ভালদিস ডোমব্রোভস্কিস বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবিত নিষেধাজ্ঞামূলক শুল্ক এই পণ্যগুলোর আমদানিকে বাণিজ্যিকভাবে অব্যর্থ করে তুলবে। এটি ইউক্রেনীয় শস্য চুরি করে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অবৈধভাবে রপ্তানি করার রাশিয়ার চর্চাকে থামাতেও সহায়তা করবে।’
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুসারে কার্যত রাশিয়ান সব শস্য এখন পর্যন্ত ইইউ আমদানি শুল্ক থেকে অব্যাহতি পেয়েছে।
তবে ইউরোপীয় কমিশনের এই পরিকল্পনার অধীনে শুল্ক হয় প্রতি টন ৯৫ ইউরোতে পৌঁছাবে বা কমপক্ষে ৫০ শতাংশ দাম বাড়িয়ে দেবে। এই পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব, কারণ এটি কার্যকর করার জন্য মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য দেশের সম্মতিই যথেষ্ট। এ ছাড়া এই পরিকল্পনার ফলে রাশিয়া ও বেলারুশ এখন থেকে আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) শস্যের কোটা, যেটি কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে উন্নত শুল্ক সুবিধা দিত, সেটি ব্যবহার করতে পারবে না।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, ‘আমাদের বাজার ও আমাদের কৃষকদের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি কমাতে আমরা এই রাশিয়ান আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করছি।’
‘এই শুল্ক আরোপ, রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রের সুবিধার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে কাজে লাগানোর ক্ষমতা কমিয়ে দেবে। সেই সঙ্গে আমরা বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতি বজায় রাখছি।’
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনের সমর্থনে মস্কোর ওপর কয়েক দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইইউ। এই পদক্ষেপগুলো জ্বালানি খাত, ব্যাংক, বিশ্বের বৃহত্তম হীরা খনির কোম্পানি এবং অন্যান্য ব্যবসাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। এ ছাড়া রাশিয়ার কর্মকর্তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও তাদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে।
ডেইলি সাবাহ জানায়, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ও অন্যান্য কারণে বিশ্ব খাদ্যের দাম রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছে। কিন্তু ২০২২ সালে রেকর্ড উচ্চ দাম থেকেও কম রয়েছে।
যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজের অংশ হিসেবে অ-ইইউ দেশগুলোতে রাশিয়ার খাদ্য বা সার রপ্তানি নিষিদ্ধ করেনি, তা সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী খাদ্য ঘাটতির জন্য ইইউকেই দায়ী করেছে মস্কো।
ইইউ কর্মকর্তারা বলেছেন, রাশিয়ার শস্যের ওপর শুল্ক তৃতীয় দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিকে প্রভাবিত করবে না এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে ট্রানজিট বাধাহীন থাকবে।
ইউরোপীয় কমিশন বলছে, ‘প্রস্তাবিত শুল্ক, এসব কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করবে না, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। এর বিপরীতে তারা (কমিশন) উন্নয়নশীল দেশগুলোসহ অ-ইইউ বাজারে পণ্য রপ্তানি করতে রাশিয়ার জন্য একটি প্রণোদনা প্যাকেজ তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।’