
রাইস মিলমালিকরা বলছেন, বোরোর মৌসুম শেষ হয়ে আসছে। তারপরও ঈদের পর তেমন বাড়েনি চালের দাম। পাইকারি বিক্রেতারাও বলছেন, ঈদের সময় পরিবহন খরচ বাড়লেও পাইকারি বাজারে চালের দাম বাড়েনি। কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে।
রবিবার (৩০ জুন) রাজধানীর কৃষিমার্কেট, কারওয়ানবাজার, বাদামতলীসহ বিভিন্ন বাজারে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে।
দামের ব্যাপারে কৃষিমার্কেটের খুচরা চাল বিক্রেতা সৈকত আলী খবরের কাগজকে বলেন, ‘ধানের দাম বেশি। ঈদের পরে চালের দাম কেজিতে ২/১ টাকা বেড়েছে। মোজাম্মেল চাল ৭২ টাকা, রশিদসহ অন্যান্য মিনিকেট ৬৮-৭০ টাকা, পাইজাম ৫৪-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোরবানি ঈদের সময় পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। তার প্রভাব চালের বাজারেও পড়েছে।’
একই তথ্য জানান, কারওয়ানবাজারের হাজি রাইস এজেন্সির মালিক মো. মাঈনুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ঈদের পর বস্তায় ৫০-১০০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে মিনিকেট ৬৮-৭০ টাকা, আটাশ ৫২ টাকা, নাজিরশাইল ৬৫-৭৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মিল থেকে বাড়ার কারণে আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ জন্য বিক্রিও বেশি দামে করতে হচ্ছে। মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা আনোয়ার রাইস স্টোরের আব্দুল মান্নানও একই সুরে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ডায়মন্ড চাল ৭৫ টাকা কেজি। অন্য মিনিকেটেরও বাড়তি দাম। ঈদে বেড়েছে। আর কমে না। মিল থেকে না কমালে আমরা কীভাবে কমাব। অন্য মিনিকেট ৬৮-৭০ টাকা কেজি। কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে।
তাদের কথার সত্যতা যাচাই করতে চালের পাইকারি মোকাম কৃষিমার্কেটে দেখা যায় বিভিন্ন আড়তে সারি সারি বস্তায় ঠাসা প্রায় দোকান। পাইকারি বিক্রেতা শাপলা রাইস এজেন্সির মালিক শিপন বলেন, ‘মানুষ কোরবানি ঈদ করে ঢাকা এসেছেন। ঈদের পর বিক্রিই নেই। একেবারে কম। বাড়েনি দাম। বর্তমানে মিনিকেট ৬৫-৬৮ টাকা, আটাশ চাল ৫২ টাকা ও মোটা চাল ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগেও এই রেট ছিল। কোনো দাম বাড়েনি।’ একই তথ্য জানান, বাদামতলীর বাবু বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সলিমুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘ঈদের পর বিক্রিই নেই। মানুষ বাড়িতে গিয়েছিল। ঢাকায় এলেও চাল কেনা শুরু করেনি। চাহিদা একেবারে নেই। তাই চালের দামও বাড়েনি। বস্তায় ৫০ টাকা বাড়লেও এটা তেমন বৃদ্ধি না। কারণ অনেক জিনিসের দাম হঠাৎ করে ৫-১০ টাকা বেড়ে যায়। সেটাকে বৃদ্ধি বলা হয়।’
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন চালের দাম বেড়েছে। কিন্তু পাইকারিতে বাড়েনি। আসলে বেড়েছে কী চালের দাম? জানতে চাইলে বাংলাদেশ রাইস মিল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও রশিদ গ্রুপের কর্নধার আব্দুর রশিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঈদের পর পরিবহন ব্যয় যেভাবে বেড়ে গিয়েছিল, চালের দাম তেমন বাড়েনি। বস্তা প্রতি ৫০ টাকাও বাড়েনি। খুচরায় কত বাড়ল তা আমাদের দেখার বিষয় না। আমরা পাইকারি বাজারে চাল বিক্রি করি। বোরো মৌসুম শেষ হয়ে আসছে। আমন ধান বাজারে উঠলে আর বাড়বে না। সামান্য বেশি দামে বর্তমানে ধান কিনতে হচ্ছে। এ জন্য একটু বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এই বাড়তি দাম বস্তায় ৫০ টাকাও না। এটা বাড়তি বলা যায় না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সারা দেশে ৫০ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে এ ধানের আবাদ হয়েছে। এবার বোরোতে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ কোটি ২২ লাখ টন। উৎপাদনও তার কাছাকাছি। তারপরও বিনা ছুতায় বাড়ছে চালের দাম।