ঢাকা ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪

নীলফামারীতে বেড়েছে দুধ উৎপাদন

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ০১:০৩ পিএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ০১:০৩ পিএম
নীলফামারীতে বেড়েছে দুধ উৎপাদন
নীলফামারীর ডোমার উপজেলার আদর্শ দুগ্ধ খামারে দুধ ওজন করা হচ্ছে। ছবি: খবরের কাগজ

গরুর জাতের উন্নয়ন ঘটানোয় গত পাঁচ বছরে নীলফামারীতে দুধ উৎপাদন ৭০ হাজার মেট্রিক টন বৃদ্ধি পেয়েছে। তার পরও জেলায় দুধের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। মাথাপিছু দুধপানও কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে কম। আবার দিন দিন বাড়ছে দুধের দামও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ঘাটতি মেটাতে গো-খাদ্যের বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণে নজর রাখার পাশাপাশি সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন হলে স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর রপ্তানি করা সম্ভব হবে।

জানা গেছে, নীলফামারীতে প্রায় ৩১ হাজার ছোট-বড় দুগ্ধ খামারি বছরে ১ লাখ ৫৩ হাজার টন দুধ উৎপাদন করছেন। অথচ পাঁচ বছর আগে জেলায় বছরে দুধ উৎপাদন হতো মাত্র ৮৫ হাজার টন। গরুর জাত উন্নয়নের ফলে দুধ উৎপাদন বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে দেশি গরুর খামার করা থেকে সরে আসছেন অনেকেই। একটি দেশি গরু প্রতিদিন গড়ে পাঁচ লিটার দুধ দেয়। সেখানে একটি উন্নত সংকর জাতের গরু প্রতিদিন গড়ে দুধ দেয় ২০ লিটার। 

নীলফামারী সদর উপজেলার দুগ্ধখামারি সাইদুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর আগে ছয়টি দেশি গরু দিয়ে খামার শুরু করেছিলাম। প্রথম দুই বছর লাভের মুখ দেখতে পারিনি। পরে প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করলে তারা আমাকে উন্নত সংকর জাতের গরু পালনের পরামর্শ দেন। বর্তমানে আমার খামারে ২৫টি গরু আছে, যা প্রতিদিন ৮০ লিটার দুধ দেয়। এতে খামার থেকে আমি কিছুটা লাভবান হয়েছি।’

ডোমার উপজেলার আদর্শ দুগ্ধ খামারের ব্যবস্থাপক বাবুল মিয়া বলেন, ‘এক লিটার দুধ উৎপাদনে যে ব্যয় হয়, তার ৭০ শতাংশই যায় গো-খাদ্যে। এর বাইরে শ্রমমূল্য এবং অন্য নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ও রয়েছে। দেশি গরু খায় কম, তাই দুধ উৎপাদন কম, সংকর জাতের গরু খায় বেশি, তাই দুধ উৎপাদন অনেক বেশি। সংকর জাতের খামারের তুলনায় দেশি গরুর খামারে এত বেশি দুধ উৎপাদন সম্ভব নয়। গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় দেশি খামারে মালিকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।’ 

নীলফামারী সদরের রুহামা অ্যাগ্রো লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী ড. রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে জেলায় খামারির সংখ্যা বেড়েছে। তবে গরুর জাত উন্নয়নের কারণে দুধের উৎপাদন বেড়েছে। খামারিরা এখনো দেশি গরুতে সীমাবদ্ধ থাকলে দুধের বর্তমান উৎপাদন সম্ভব হতো না। যেখানে ২০১৯ সালে মানবদেহে প্রতিদিন ১৫০ মিলিলিটার দুধের প্রয়োজন ছিল, সেখানে বর্তমানে ডব্লিউএইচওর সমীক্ষা অনুযায়ী মানবদেহে দুধের প্রয়োজন ২৫০ মিলিলিটার। বর্তমানে আমরা ১৭৫ মিলিলিটার দুধ উৎপাদন করতে পেরেছি। দুধের উৎপাদন বেড়েছে। তবে গো-খাদ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ না করলে উৎপাদন বৃদ্ধির এই হার হোঁচট খাবে। তবে সরকার ঘোষিত ১০০ ফিডমিল তৈরি ও ২০টি মিল্কহাব স্থাপন করার পর পরিস্থিতি অনুকূলে আসবে।’ 

নীলফামারী সদরের মনষাপাড়ার খুচরা দুধ ব্যবসায়ী মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘তিন-চার বছর আগে প্রতি লিটার দুধ বিক্রি করতাম ৩৫-৪০ টাকা। বর্তমানে গরুর খাবারের দাম বেশি হওয়ায় খামারিদের কাছ থেকে কিনতে হয় অনেক বেশি দামে। এখন প্রতিলিটার দুধ বিক্রি করতে হয় ৭০ টাকা দরে। তাই এখন গ্রাহক কিছুটা কমেছে। গরুর খাদ্যের দাম কমলে দুধের দাম কমে আসবে। তখন গ্রাহক অনেটাই বৃদ্ধি পাবে।’

চা-ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, ‘আগে গরুর দুধের চা বিক্রি করতাম প্রতি কাপ ৫ টাকা। দুধের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণ। তাই এখন প্রতি কাপ চা বিক্রি করতে হয় ১০ টাকা।’

নীলফামারী পৌরসভার বাসিন্দা গৃহিণী আকলিমা খাতুন বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্য ছয়জন। প্রতিদিন বাড়িতে দুধ লাগে দুই লিটার। আগে প্রতি লিটার ৪০ টাকা করে কিনতাম। কিন্তু বর্তমানে দুধের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণ। এত টাকা দিয়ে প্রতিদিন দুধ কেনা আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে সম্ভব হয় না। দুধের দাম কমে এলে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য অনেক ভালো হবে।’ 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় জনপ্রতি প্রতিদিন ২৫০ মিলিগ্রাম দুধ হিসাব করলে চাহিদা দাঁড়ায় ১ লাখ ৯৩ হাজার মেট্রিক টন। যার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ১ লাখ ৫৩ হাজার টন। চাহিদার তুলনায় বছরে প্রায় ৪০ হাজার টন দুধের ঘাটতি রয়েছে। তবে জেলায় প্রশিক্ষিত খামারি রয়েছেন ৪৬ হাজার, উৎপাদমুখী খামারি রয়েছেন ৩১ হাজার। বাকি ১৫ হাজার প্রশিক্ষিত খামারি দুধ উৎপাদন শুরু করলে আগামী পাঁচ বছরে এই ঘাটতি পুষিয়ে দুধ রপ্তানি করা যাবে।

নীলফামারী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সিরাজুল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘২০১৮-১৯ অর্থবছরে জেলায় দুধ উৎপাদন হয়েছিল ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। গরুর জাত উন্নয়ন ও খামারি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টনে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় এখনো প্রশিক্ষিত ১৫ হাজার খামারি পিছিয়ে আছেন। গো-খাদ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা গেলে আমরা আগামী পাঁচ বছরে জেলার চাহিদা মিটিয়ে দুধ রপ্তানি করতে পারব।’

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১৬ কোটি বেশি রাজস্ব আদায় বেনাপোল কাস্টমসের

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১২:১২ পিএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১২:১২ পিএম
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১৬ কোটি বেশি রাজস্ব আদায় বেনাপোল কাস্টমসের
ছবি: খবরের কাগজ

ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৮০ ভাগই সম্পন্ন হয় দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে। গেল ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ডলার সঙ্কটের কারণে ব্যবসায়ীরা চাহিদা মতো এলসি করতে না পারায় আমদানি কমলেও বেনাপোল কাস্টমস হাউসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১৬ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে। 

বেনাপোল কাস্টমস হাউসে গেল ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৬ হাজার ১৬৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। 

বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানায়, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছিল ১৪ লাখ ৪৫ হাজার টন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ২১ হাজার ৭৮০ টন পণ্য।

বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আলহাজ মহসিন মিলন জানান, বৈশ্বিক মন্দা, ডলারের বিনিময় হারে ঊর্ধ্বগতি আর সংকটের কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গত কয়েক বছর ধরে এলসির সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। এতে আমদানি কমায় বছরের শুরুতে রাজস্ব ঘাটতি ছিল দ্বিগুণ পরিমাণ। তবে বছরের শেষে উচ্চ শুল্ক হারের পণ্য আমদানি বেশি হওয়ায় রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে।

আমদানিকারক আল মামুন জানান, বৈশ্বিক মন্দায় ডলার সংকট দেখিয়ে দেশের ব্যাংকগুলো বিনিময় হার বাড়ানোয় এলসি খুলতে পারেননি অনেক ব্যবসায়ী। এতে করে বেনাপোল দিয়ে আমদানি কমেছে ব্যাপকহারে। তবে সরকার হঠাৎ বিভিন্ন পণ্য আমদানি উপর শুল্ক বাড়ানোয় কাস্টমসের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পেয়েছে।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার আব্দুল হাকিম জানান, অর্থবছরে শেষ দিকে উচ্চ শুল্ক হারের বেশি আমদানি এবং সরকার শুল্কহার বাড়ানোয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। রাজস্ব ফাঁকি রোধে এ বন্দরে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হয়। অনিয়ম ধরা পড়লে রাজস্ব পরিশোধ পূর্বক ২০০ শতাংশ জরিমানা আদায় করা হচ্ছে বলে কাস্টমসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে। 

তাছাড়া গেল অর্থবছরে সরকারের মেগা প্রকল্পের পণ্য বেনাপোল দিয়ে আমদানি হয়েছে। এতে করে কাস্টমসের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পেয়েছে। 

এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের বৈধ সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে বেনাপোল কাস্টমস আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

নজরুল ইসলাম/সাদিয়া নাহার/অমিয়/

১৩ মাসে রাশিয়া থেকে সর্বোচ্চ জ্বালানি তেল আমদানি ভারতের

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৬ এএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৬ এএম
রাশিয়া থেকে সর্বোচ্চ জ্বালানি তেল আমদানি ভারতের
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর থেকেও তুলনামূলক কম দামে সরবরাহ করায় রাশিয়া থেকে ভারতের জ্বালানি তেল আমদানি বেড়েছে। ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের জুন মাসে  রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি ১৩ মাসের মধ্যে প্রায় সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের প্রধান গ্রেড ‘ইউরালস’-এর রেকর্ড পরিমাণ আমদানির কারণে এমনটি হয়েছে।

মূলত, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর থেকেও তুলনামূলক কম দামে সরবরাহ করায় রাশিয়া থেকে ভারতের জ্বালানি তেল আমদানি বেড়েছে। তেল ট্যাংকার ট্র্যাকিং ডেটা এবং শিল্প বিশেষজ্ঞরা এ তথ্য জানিয়ছেন। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের। 

ভারতভিত্তিক ইংরেজি দৈনিকটির খবরে বলা হয়, রাশিয়ান পরিশোধনাগার অবকাঠামোতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা এবং প্রতিযোগী মধ্যপ্রাচ্যের অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের তুলনায় বড় ধরনের মূল্য পার্থক্যের কারণে রপ্তানি বাজারে রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সরবরাহ বেড়েছে। এসব কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভারতে রাশিয়ান তেলের সরবরাহ বেড়েছে।

খবরে বলা হয়, গত কয়েক মাস ধরে ছাড় দেওয়া মূল্যে ভারতের রাশিয়ান তেল আমদানির ঊর্ধ্বগতি, সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে সৌদি আরব থেকে আমদানির ওপর। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জুন মাসে রিয়াদ থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেলের পরিমাণ এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে মাসিক সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে।

পণ্যবাজার বিশ্লেষক সংস্থা কেপলারের প্রাথমিক জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুসারে, ভারতীয় পরিশোধনাকারীরা জুন মাসে মোট দৈনিক ২১ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে। এটি গত বছরের মে থেকে সর্বোচ্চ, যে মাসটিতে রাশিয়ান অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির পরিমাণ দৈনিক ২১ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেলের রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে ছিল। জুন মাসে ভারতের রাশিয়ান জ্বালানি তেল আমদানি তার আগের মাসের তুলনায় ৭ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি ছিল এবং এই মাসে দেশটি থেকে ভারতের মোট জ্বালানি তেল আমদানির পরিমাণ ছিল ৪৫ শতাংশের মতো।

সৌদি আরব হলো ভারতের অশোধিত তেলের তৃতীয় বৃহত্তম উৎস বাজার। গত জুন মাসে দেশটি থেকে জ্বালানি তেল আমদানি ২৫ শতাংশের বেশি কমে দশমিক দৈনিক ৪ লাখ ১০ হাজার ব্যারেলে দাঁড়িয়েছে, যা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। সৌদি আরব থেকে আমদানি কমে যাওয়ার প্রাথমিক কারণ হিসেবে দেখা হয়, রাশিয়ান অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের পর্যাপ্ত প্রাপ্যতা এবং রিয়াদের তুলনায় রাশিয়া থেকে পাওয়া অব্যাহত মূল্য সুবিধা।

কেপলারের অপরিশোধিত জ্বালানি বিশ্লেষণ বিভাগের প্রধান ভিক্টর কাটোনা বলেছেন, ‘নিশ্চিত করে বলা যায়, রাশিয়া থেকে অধিক পরিমাণে জ্বালানি তেল আমদানির প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সৌদি আরবের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি (টার্ম ভলিউম) ভিত্তিক সরবরাহ। জুন মাসে সৌদি আরব থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেলের পরিমাণ ছিল ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর থেকে মাসিক হিসাবে সর্বনিম্ন। শিল্প পর্যবেক্ষকদের মতে, সৌদি আরবের ‘মিডিয়াম-সাওর’ গ্রেডের তুলনায় ইউরালের দামে ব্যারেলপ্রতি ৬ থেকে ৭ ডলারের মূল্য সুবিধা রয়েছে।

ইউরালস হলো একটি মাঝারি সলফারযুক্ত (মিডিয়াম সাওর) অপরিশোধিত জ্বালানি তেল। এটিকে রাশিয়ার প্রধান তেল হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ভারতের রাশিয়ান তেল আমদানির প্রধান ভিত্তি। জুন মাসে ভারতীয় পরিশোধনাগারগুলো সম্মিলিতভাবে সর্বোচ্চ ১৬ লাখ ১০ হাজার বিপিডি ইউরালস ক্রুড (অপরিশোধিত জ্বালানি তেল) কিনেছে। জুন মাসে ভারতের মোট রাশিয়ান জ্বালানি তেল আমদানির মধ্যে ইউরালস ক্রুডের পরিমাণ ছিল তিন-চতুর্থাংশ। এটা স্পষ্ট যে, ভারতের ঐতিহ্যবাহী পশ্চিম এশীয় সরবরাহকারীদের ক্রুড গ্রেডের তুলনায় ইউরালসের দামের পার্থক্য এত বেশি ছিল যে, ভারতীয় পরিশোধনাগারগুলো রাশিয়ান গ্রেডকেই বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে।

ইউক্রেনের যুদ্ধের আগে ভারতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের শীর্ষ দুই সরবরাহকারী ছিল ইরাক ও সৌদি আরব। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে মস্কোর আক্রমণের পর পশ্চিমারা যখন রাশিয়ান জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করা শুরু করে, তখন রাশিয়া তার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ওপর ছাড় দিতে শুরু করে। আর এই সুযোগে ভারতীয় পরিশোধনকারীরা ছাড় পাওয়া দামে ব্যারেলগুলো কিনে নিতে শুরু করে।

বাখরাবাদ-হরিপুর গ্যাস পাইপলাইন: অর্থনীতিতে খুলবে নতুন দিগন্ত

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১১:৪৭ এএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১১:৪৭ এএম
বাখরাবাদ-হরিপুর গ্যাস পাইপলাইন: অর্থনীতিতে খুলবে নতুন দিগন্ত
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় বাখরাবাদ-হরিপুর গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ করছেন শ্রমিকরা। ছবি: খবরের কাগজ

দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট এবং হরিপুর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকার বিদ্যুৎকেন্দ্র, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ নেয় সরকার। এ লক্ষ্যে কুমিল্লার বাখরাবাদ গ্যাসক্ষেত্র থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস আনতে নারায়ণগঞ্জ জেলার মেঘনাঘাট হয়ে হরিপুর পর্যন্ত ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণকাজ চলছে। ২০২৫ সালের জুনে প্রকল্পটি চালু হলে এটি নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট ও হরিপুর এবং মুন্সীগঞ্জের গজারিয়াসহ আশপাশের বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্প-কারখানাগুলোতে বাড়তি গ্যাসের চাহিদা পূরণে যুগান্তকারী অবদান রাখবে। যা দেশের অর্থনীতিতে যোগ করবে এক নতুন দিগন্তের। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় জামালদীতে মেঘনা নদীর কোল ঘেঁষে গ্যাসভিত্তিক ৬৬০ মেগাওয়াটের নতুন আরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের জুনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩০৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া হবে ৫১২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। বাকি ৭৯২ কোটি ৩ লাখ টাকার জোগান দেওয়া হবে সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে। ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে মেয়াদ ও প্রকল্পের খরচ কিছুটা বাড়তে পারে।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মেঘনাঘাট পাওয়ার হাব এলাকায় বেসরকারি খাতে নির্মিত/নির্মিতব্য মোট ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে এই সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া গজারিয়া, হরিপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার হাব এলাকায় তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রেও গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এর ফলে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়বে এবং কমে আসবে লোডশেডিং।

সরেজমিনে প্রকল্পটির গজারিয়া অংশ ঘুরে দেখা যায়, ভবেরচর ইউনিয়নের আলীপুরা ও নয়াকান্দি এলাকায় সঞ্চালন লাইন বসানোর কাজ চলছে। প্রকৌশলীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে পাইপ বসানোর কাজ করছে শ্রমিকরা। তবে প্রকল্পটির জন্য অধিগ্রহণ করা জমির দাম পাওয়া নিয়ে কয়েকজন ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন।

বিষয়টি সম্পর্কে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাকির হোসেন বলেন, ‘যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে তারা আমাদের কাছে আবেদন করেছেন। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই চলছে, শিগগিরই তারা ক্ষতিপূরণ পাবেন। বিষয়টি নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই।’

পাওয়ার প্ল্যান্ট বিশেষজ্ঞ জালাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় জামালদীতে মেঘনা নদীর কোল ঘেঁষে গ্যাসভিত্তিক ৬৬০ মেগাওয়াটের নতুন আরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ-মালেশিয়া জয়েন্ট ভেঞ্চারে নির্মাণ করা হবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাস/এলএনজি জ্বালানির উৎস হিসেবে আনুমানিক ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইন বসানো হবে যা জিটিসিএলের মাধ্যমে নির্মাণাধীন ৪২ ইঞ্চি বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হরিপুর লাইনের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। আমরা এই লাইনটির জন্য অপেক্ষা করছি। এই এলাকার সব বিদ্যুৎকেন্দ্র এ লাইনের সঙ্গে সংযুক্ত হবে।’

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি প্রায় ৬০ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও আরও কিছুটা সময় দরকার। আমরা সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছি। আশা করছি আগামী বছর জুনের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে।’

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কারিগরি কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে আমাদের অনেক কারিগরি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আমাদের ৯টি নদী ক্রসিং করতে হচ্ছে, যার মোট দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৮০ কিলোমিটার। নদী ক্রসিং সবচেয়ে বড় সমস্যা, শুধুমাত্র মেঘনা নদীতেই দুই কিলোমিটার ক্রসিং আছে যা বিশাল চ্যালেঞ্জের। হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ (এইচডিডি) পদ্ধতিতে ৯টি নদী ক্রসিং করা হচ্ছে। ভূমি অধিগ্রহণ নিয়েও নানা রকম জটিলতা তৈরি হয়েছিল। আমরা তা ওভারকাম করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’

গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)-এর মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ডিভিশন) প্রকৌশলী আবু সাঈদ মাহমুদ বলেন, ‘দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যেই মেঘনাঘাট, হরিপুর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে। এসব এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা গেলে এখান থেকে অভাবনীয় সুফল মিলবে যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক প্রভাব রাখবে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।’

এদিকে গত ৩০ জুন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তার ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে এ বিষয়ে একটি পোস্ট করে জানিয়েছেন ‘২০২৫ সালের মধ্যে নতুন এই পাইপলাইনের নির্মাণকাজ শেষ হবে যা নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট ও হরিপুর এবং মুন্সীগঞ্জের গজারিয়াসহ আশপাশের বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্প-কারখানাগুলোতে বাড়তি গ্যাসের চাহিদা পূরণে যুগান্তকারী অবদান রাখবে।’

রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি চট্টগ্রাম কাস্টমস

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১১:৪০ এএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১১:৪০ এএম
রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি চট্টগ্রাম কাস্টমস
চট্টগ্রাম কাস্টমসে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬৮ হাজার ৫৬২ দশমিক ৭২ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছর থেকে ৫ হাজার ৯০৫ দশমিক ৯১ কোটি টাকা বেশি। কিন্তু তাও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারে নি চট্টগ্রাম কাস্টমস। ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রাম কাস্টমসে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬৮ হাজার ৫৬২ দশমিক ৭২ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছর থেকে ৫ হাজার ৯০৫ দশমিক ৯১ কোটি টাকা বেশি। গত অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৭ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের। কিন্তু সে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি কাস্টমস হাউস। আগের অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব আদায় বেশি হলেও লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১১ দশমকি ৬৬ শতাংশ পিছিয়ে। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে না পারলেও আদায়ের প্রবৃদ্ধি নিয়ে সন্তুষ্ট কাস্টমস হাউস। 

জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি রাজস্ব আদায় করেছে ৬২ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ছিল ৫৯ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। এর আরও আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টমস রাজস্ব আহরণ করেছিল ৫১ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার নাজিউর রহমান মিয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস ইতিহাসে  রেকর্ড রাজস্ব আদায় করেছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হলেও অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও আমরা রেকর্ড রাজস্ব আদায় করতে পেরেছি।’ 

গত অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৪ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। ওই হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ দশমিক ১৭ শতাংশ কম আহরণ হয়েছে।

গত অর্থবছরের মে মাসে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৫০২ কোটি টাকা আদায় হয়, সর্বনিম্ন ফেব্রুয়ারি মাসে আদায় হয় ৪ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। 

 ২০২২-২৩ অর্থবছরে জুন মাসেই সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ হয়েছিল, সর্বনিম্ন ডিসেম্বরে ৪ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ হয়েছিল।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, আগামী দু-এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা কিছু বাকি পাওনা টাকা সংগ্রহ করতে পারব। সেটাসহ হিসাব করা গেলে আমাদের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণটা আরও বাড়বে। লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ পিছিয়ে থাকলেও যে পরিমাণ রাজস্ব আহরণ হয়েছে তাতেই আমরা সন্তুষ্ট।’

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আমদানি দায় পরিশোধে দেশের সক্ষমতা বেড়েছে

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১১:৩৬ এএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১১:৩৬ এএম
আমদানি দায় পরিশোধে দেশের সক্ষমতা বেড়েছে
ছবি: সংগৃহীত

দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সঞ্চিতির উন্নতি হয়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি দায় পরিশোধ করার মতো সক্ষমতা আবারও হয়েছে। 

গতকাল মঙ্গলবার (২ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ২ জুলাই শেষে সর্বমোট বা গ্রস রিজার্ভ সঞ্চিতি দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬৮৮ কোটি ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া হিসাব পদ্ধতি ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ম্যানুয়াল-৬ (সংক্ষেপে বিপিএম-৬) আমলে নিলে রিজার্ভ রয়েছে ২১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১৭৯ কোটি ডলার। আর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী নেট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভের (এনআইআর) পরিমাণ ১৬ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৬৭৭ কোটি ডলার। 

সাম্প্রতিক আমদানি ব্যয়ের পরিমাণ আমলে নিলে বিদ্যমান নেট রিজার্ভ ব্যবহার করে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি দায় পরিশোধ করার সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে। 

এনআইআর বা নেট রিজার্ভ কি?

গ্রস রিজার্ভ থেকে দুই পর্যায়ের অর্থ বাদ দিলে যা থাকে তাই নেট রিজার্ভ। এর একটি হলো, কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বিনিয়োগের পরিমাণ। দ্বিতীয়টি হলো, আগামী এক বছরে সরকারের বৈদেশিক ঋণ, সুদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য দায়ের পরিমাণ। 

রিজার্ভের বিনিয়োগ ও দায় কত?

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রিজার্ভ থেকে আয় বা মুনাফা সৃজনমূলক বিনিয়োগ রয়েছে ৫ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন বা ৫০৯ কোটি ডলার। আর সরকারের ডেট সার্ভিস ও অন্যান্য দায়ের পরিমাণ রয়েছে ৫ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন বা ৫০২ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দাবি, দেশে ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর পরিমাণ বাড়তে বা কমতে পারে। আবার একই সঙ্গে আগামী এক বছরে এখন যে পরিমাণ দায় নির্ধারণ করা আছে সেটিও সাময়িক এবং এর পরিমাণও বাড়তে পারে। এই মুহূর্তে বিনিয়োগের পরিমাণ আপাতত বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘হিসাবায়ন দুই ধরনের। একটি ম্যানেজারিয়াল অপরটি অ্যাকাউন্টিং পদ্ধতি। হিসাব যাই হোক, রিজার্ভ নিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো অতিরঞ্জিত রিপোর্ট করেছে। নিজেদের মতো করে যা ইচ্ছা তাই হিসাব করার খবরও ছাপা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া তথ্যকে চ্যালেঞ্জ করে নিজেদের হিসাবমতো সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ হলো সামষ্টিক অর্থনীতি সচল রাখতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রয়োগ করা। সেটিই বাংলাদেশ ব্যাংক করেছে। কোনো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড তো বন্ধ হয়ে যায়নি!’

তিনি বলেন, বিগত মাসগুলোর তুলনায় রিজার্ভের সক্ষমতা এখন বেড়েছে। ট্রেন্ড বা প্রবনতা বিশ্লেষণ করে ধারণা করা যায় রিজার্ভ পুনর্গঠন হতে শুরু করেছে। আগামী দিনগুলোতে রিজার্ভ পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়।

তিনি বলেন, গড়ে প্রতি মাসে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় ধরলে বিদ্যমান রিজার্ভের অর্থ ব্যবহার করে চার মাসের আমদানি সক্ষমতা আছে বাংলাদেশের। আইএমএফ কর্তৃক নির্ধারিত সতর্কতামূলক আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী একটি দেশের কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের অর্থ রিজার্ভে থাকা দরকার। 

একটি বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ‘রিজার্ভ হলো একটি দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার সূচক। বিদেশি ব্যাংকগুলো রপ্তানি আয়ের বিপরীতে ডিসকাউন্টিং সুবিধা থেকে শুরু করে ঋণ দেওয়া পর্যন্ত রিজার্ভের পরিমাণকে বিবেচনায় নেয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিদেশি বিনিয়োকারীরাও রিজার্ভকে বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। 

তাই আমাদের রিজার্ভ যখন ক্ষয় হতে থাকল তখন এ সমস্যাগুলো আমরা ব্যাংক হিসেবে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। তবে পরিস্থিতির এখন পরিবর্তন হচ্ছে। গত মাসে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এআইআইবি, আইএফসি ও উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থ ছাড় হওয়ায় আমাদের রিজার্ভ আবারও বাড়তে শুরু করেছে। এটি আমাদের আশাবাদী হতে উৎসাহ জোগায় যে আগামী মাসগুলোতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো কেটে যাবে। সাধারণভাবেই ডলারের সরবরাহ বাড়লে বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা ফিরবে।’

ডলারসংকটের শুরুটা ২০২২ সালের প্রথম দিকে শুরু হলেও ২০২৩ সালজুড়ে তীব্র আকার ধারণ করেছিল। ডলারসংকটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি ব্যয় মেটাতে রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে রিজার্ভের বড় পতন হয়। একপর্যায়ে রিজার্ভ নেমে আসে ২৪ বিলিয়ন ডলারে। এতে বিপিএম-৬-এর হিসাবায়নে ও নিট পরিমাণে রিজার্ভ কমে যথাক্রমে ১৮ বিলিয়ন ও ১৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। 

এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনাও চলে সারা বছর। সর্বশেষ বছরের শেষ ভাগে অর্থাৎ ডিসেম্বরে এসে আইএমএফ, এডিবি ও আরও কিছু উন্নয়ন সহযোগী দেশ থেকে ঋণ ও বাজেট সহায়তা হিসেবে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার রিজার্ভে যোগ হলে সাময়িক স্বস্তি ফিরে আসে। এরপর আবারও পরিস্থিতির অবনতি হয়। সবশেষ গত মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করে। এতে ডলারের দর বৃদ্ধি পেয়ে ১১৭ টাকা হয়। 

বেশি দর পেয়ে প্রবাসীরা বেশি করে ডলার দেশে পাঠান। এতে মে-জুন মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ে। রিজার্ভ পুনর্গঠনে রেমিট্যান্সের ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। এ ক্ষেত্রে দেরিতে হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ক্রলিং পেগ চালু করার মাধ্যমে ডলারের বিনিময় হার বাড়ানো বা বাজারমুখী করার বিষয়টি প্রশংসিত হয়। ব্যবসায়ী নেতারা অবশ্য তাৎক্ষণিক ক্রলিং পেগ পদ্ধতি ও ডলারের দর একলাফে ৭ টাকা বৃদ্ধির সমালোচনা করেছিলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা এক্সটার্নাল সেক্টর বা বৈদেশিক খাতের চ্যালেঞ্জ এবং মুল্যস্ফীতিকে বৃহৎ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তা সমাধানে সঠিক নীতিমালা প্রয়োগের কথা বলে আসছি।’

তিনি বলেন, ‘যেকোনো নীতি প্রয়োগের ফলাফল আসতে একটা ম্যাচিউরিটি পিরিয়ড দরকার হয়। এ সময়টি শুরু হয়েছে এবং আমরা ইতিবাচক ফলাফল পাব। ডলারের সরবরাহ পরিস্থিতি খানিকটা উন্নতি হয়েছে। ২০২৪ সালের শেষ ভাগে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে।’