![মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশ নেমে আসবে: অর্থমন্ত্রী](uploads/2024/06/29/Abul_hasan_mahmud-1719231885-1719682861.jpg)
প্রস্তাবিত বাজেটে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে সংসদ অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশ নেমে আসবে। শনিবার (২৭ জুন) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আলোচনার সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এর আগে সংসদে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট আমরা এমন একসময়ে প্রণয়ন করছি, যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, চলমান মধ্যপ্রাচ্য সংকট। নানা বৈশ্বিক সংকটের কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশও মূল্যস্ফীতিসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। তাই এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নকে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মুদ্রানীতিতে ইতোমধ্যে সংকোচনমূলক নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নীতি সুদহার (রেপো) উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়িয়ে ৮.৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। ব্যাংক সুদের হার সম্পূর্ণরূপে বাজারভিত্তিক করা হয়েছে।’
আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘রপ্তানি উৎসাহিতকরণ এবং প্রবাস আয়ে গতি সঞ্চারের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডলারের বিনিময় হারের ক্ষেত্রে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছে। মুদ্রানীতির সংকোচনমূলক উদ্যোগের সঙ্গে সংগতি রেখে আমরা রাজস্ব নীতিতেও সহায়ক নীতিকৌশল অবলম্বন করেছি।’ যেমন- বাজেট ঘাটতি হ্রাসকরণ, কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় নিরুৎসাহিতকরণ এবং বিভিন্ন খাতে কৃচ্ছ্রসাধনের উদ্যোগ। গৃহীত নানা নীতি-কৌশলের ফলে আশা করছি আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নেমে আসবে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে সংকোচনমূলক নীতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও এ কথা অনস্বীকার্য যে, দীর্ঘমেয়াদে এ পন্থা অবলম্বন করা হলে প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে যেতে পারে। অথচ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে ধারাবাহিক উচ্চ প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন। এমতাবস্থায় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন এবং প্রবৃদ্ধির গতি ধরে রাখা, এ দুটি আপাত বিপরীতমুখী লক্ষ্যের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার কঠিন চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে আশা করি, প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ, অভিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে আমরা সাধ ও সাধ্যের মধ্যে ব্যবধান ঘুচিয়ে শিগগিরই উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথে ফিরতে পারব।’
২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোট বরাদ্দ বৃদ্ধির হার ১১.৬ শতাংশ হলেও শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য খাতে বাড়ানো হয়েছে ৩৯ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইত্যাদি খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। পাশাপাশি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো, দেশে শিল্পায়ন ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য কাঙ্ক্ষিত অনুকূল ও সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তার সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা। আমরা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) মাধ্যমে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করছি। এ ছাড়া ব্যবসা সহজীকরণের লক্ষ্যে দেশে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচি (বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট ইমপ্রোভমেন্ট প্রোগ্রাম-বিআইসিআইপি)-এর অধীনে আগামী ২০২৪-২৫ থেকে ২০২৬-২৭ পর্যন্ত সময়ে, ১১০টি সংস্কার বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
এলিস/এমএ/