![রাজশাহীতে অনাবৃষ্টিতে আউশ চাষ ব্যাহত](uploads/2024/06/30/Aush-1719723793.jpg)
আষাঢ় মাসের তৃতীয় সপ্তাহ চললেও রাজশাহীতে বৃষ্টি নেই। ভরা বর্ষা মৌসুম সত্ত্বেও অনাবৃষ্টি ও তীব্র খরায় রাজশাহী অঞ্চলে আউশ ধান চাষ ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। খেত ফেটে চৌচির হওয়ায় আউশের চারা রোপণ করতে পারছেন না কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, দুই মাস ধরে ধানচাষ শুরু হলেও পানির অভাবে খাঁখাঁ করছে মাঠ-ঘাট। ফলে এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অর্ধেকের মতো জমিতে আউশের চারা রোপণ করা সম্ভব হয়েছে। সেগুলোও রোদে পুড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই রোপণ করা ধানের চারা বাঁচাতে বাধ্য হয়ে জমিতে শ্যালো মেশিন বা গভীর নলকূপ দিয়ে পানি সেচ দিতে হচ্ছে। এতে চাষের খরচ বাড়ছে। এমন অবস্থায় ফলন কম হওয়াসহ আউশ চাষ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
জানা গেছে, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় ইরি-বোরো থেকে শুরু করে আউশ-আমন ধান চাষের অন্যতম মাধ্যম হলো সরমংলা খাল। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি প্রকল্পের আওতায় পদ্মা নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে পাইপ লাইনের মাধ্যমে এই খালে ফেলা হয়। সেখান থেকে সোলার বিদ্যুতের মাধ্যমে কৃষকরা জমিতে পানি সেচ দেন। কিন্তু এবার ওই খালেও কোনো পানি নেই। ফলে আশেপাশের অন্তত ৫ হাজার হেক্টর জমিতে এখনো ধান চাষ শুরু করতে পারেননি কৃষকরা।
এদিকে, কয়েকদিন পরেই শুরু হতে যাওয়া আমন চাষের জন্যও জমিতে পানি সেচ দিয়ে বীজতলা প্রস্তুত করতে হচ্ছে। এতে বাড়তি খরচ যেমন হচ্ছে, তেমনি ধানের চারা ঠিকমতো উৎপাদন হবে কি না সেটি নিয়েও কৃষকদের মাঝে সংশয় দেখা দিয়েছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর জেলায় ৫০ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু গত দুই মাসে মাত্র ৩১ হাজার হেক্টরের একটু বেশি জমিতে আউশের চারা রোপণ করা সম্ভব হয়েছে। এদিকে, আগামী এক মাসের মধ্যে শুরু হবে আমন ধান চাষ। কিন্তু রাজশাহীতে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আমন ধানের বীজতলাও প্রস্তুত করা যাচ্ছে না।
রাজশাহী আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে বেশ কিছুদিন ধরে আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখা দিলেও মেঘ সরে গিয়ে আবার রোদের দেখা মিলেছে। এতে তীব্র খরা ও অনাবৃষ্টিতে মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে সর্বশেষ গত ২২ জুন বৃষ্টিপাত হয়েছিল দশমিক ২ মিলিমিটার। এরপর গত শুক্রবার মাত্র ১৫ মিনিটে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১ দশমিক ২ মিলিমিটার। তবে গতকাল শনিবার প্রায় দুই ঘণ্টা বৃষ্টিতে কৃষকদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়া পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, ‘রাজশাহীতে শনিবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত চলে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। এই সময়ে ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।’
স্থানীয় কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে সরমংলা খাল থেকে পানি তুলে বীজতলায় চারা উৎপাদন করছিলাম। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়া ও খালে পানি কমে যাওয়ায় এখন সেচের কোনো সুযোগ নেই। তাই বৃষ্টির অপেক্ষায় প্রহর গুনছি।’
অপর কৃষক মুক্তার হোসেন বলেন, ‘মেশিন নষ্ট থাকায় পদ্মা নদী থেকে খালে পানি দিতে পারছে না বিএমডিএ। তাই খালে পানি নেই। আবার বৃষ্টিও না হওয়ায় আমরা চরম বিপদে আছি। ধানচাষ না করলে কি খেয়ে বাঁচব।’
পবা উপজেলার দামকুড়া এলাকার কৃষক আক্কাছ আলী বলেন, ‘রাজশাহীতে টানা কয়েক মাস ধরে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। এখন বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টিহীন কাটছে। আউশ-আমন হলো বৃষ্টিপ্রধান ধান। জমিতে সেচ দিতেই হয় না। এখন জমিতে চারা রোপণ করতেও সেচ দিতে হচ্ছে, আবার রোপণ করার পরও সেচ দিতে হচ্ছে। এতে বাড়তি টাকা খরচ হচ্ছে।’
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) উম্মে সালমা বলেন, ‘রাজশাহীতে এবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক কম। ফলে বৃষ্টির অভাবে মাঠ-ঘাট শুকিয়ে চৌচির হয়ে যাওয়ায় ধানচাষ ব্যাহত হচ্ছে। এতে টানা তীব্র খরার কবলে পড়েছে এই অঞ্চলের কৃষি। তাই, ধান বাঁচাতে আউশের চারা রোপণ করা জমিতে সেচের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রাজশাহীতে এক দিন মাঝারি বৃষ্টি হয়। এরপর থেকে বরেন্দ্র অঞ্চলে বৃষ্টিপাত নেই বললেই চলে। দু-এক দিন বৃষ্টি হলেও সেটি ছিল পরিমাণে খুবই কম। এতে করে কৃষিপ্রধান রাজশাহী জেলাতে আউশ ধানচাষ নিয়ে কৃষকরা পড়েছেন ব্যাপক ভোগান্তিতে।