ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে করা মামলার আসামি কাজী কামাল আহমেদ বাবুকে ফের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেছিল পুলিশ। আবেদনের ওপর শুনানি করে তা নামঞ্জুর করেছেন আদালত। তবে বাবুকে নিয়ে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনগুলো উদ্ধারে ঝিনাইদহে অভিযান পরিচালনার আদেশ দিয়েছেন আদালত। মামলার তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এ অভিযানে একজন ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থাকবেন।
সোমবার (২৪ জুন) ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক বাবুর বিষয়ে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ এ আদেশ দেন।
আবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ভিকটিম আনোয়ারুল আজীম আনারকে প্রলুব্ধ করে অপহরণ ও হত্যার মূল ঘাতক সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়ার জব্দ করা মোবাইল ফোন পর্যালোচনায় দেখা যায়, শিমুল ভূঁইয়া ১৫ মে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে আসেন এবং ১৬ মে রাতে গ্যাস বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ সময় তারা আনারকে অপহরণ ও হত্যাসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথাবার্তা বলেন। পরবর্তী সময়ে দুজনেই ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকায় মিটিং করে আনারের ছবি বিনিময় করেন।
তা ছাড়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাবু কিছু বিষয় স্বীকার করেছেন। সেগুলো হচ্ছে, ১৭ মে থেকে ১৯ মে রাত পর্যন্ত শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে গ্যাস বাবুর হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ, এসএমএস আদান-প্রদান এবং আনারকে অপহরণ ও পরবর্তী টাকা পয়সার লেনদেন বিষয়ে কথাবার্তা হয়। শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা মোবাইল ফোনগুলোর হদিস জানতে চাইলে জিজ্ঞাসাবাদে গ্যাস বাবু জানান, তার মোবাইল ফোনগুলো হারিয়ে গেছে এবং থানায় এ নিয়ে তিনি জিডিও করেছেন।
বাবুকে রিমান্ড চাওয়ার আবেদনে আরও বলা হয়, জবানবন্দিতে আসামি স্বীকার করেছেন, শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা তিনটি মোবাইল ফোনের মধ্যে দুটি ভাঙ্গার গাঙ্গুলী হোটেলের পেছনের পুকুরে এবং অন্যটি স্টেডিয়ামের পূর্ব পাশের পুকুরের পানিতে ফেলে দেন তিনি। ওই মোবাইল ফোনগুলোতে এমপি আনারের অপহরণ ও হত্যাসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকায় সেগুলো প্রয়োজন। ফলে ফোনগুলো কোন কোন স্থানে ফেলেছে সেই স্থান নির্ধারণসহ মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত হিসেবে ফোনগুলো উদ্ধারে আসামি গ্যাস বাবুকে সঙ্গে নিয়ে ঝিনাইদহের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনার জন্য আসামির পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ড প্রয়োজন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান এই আবেদন করেন।
এর আগে গত ৯ জুন আদালত ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা বাবুর সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে তিনি আদালতে জবানবন্দি দেন। এই মামলার অন্য আসামি শিমুল ভূঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে আমানুল্যাহ সাঈদ, তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমানও আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি দেওয়ার পর তাদের প্রত্যেককেই কারাগারে পাঠান আদালত। মামলার অন্য আসামি ও ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে তিনি আদালতে জবানবন্দি দেননি।
এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন গত ২২ মে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন তিনি। এদিকে এমপি আনার খুনের ঘটনায় ভারতে একটি হত্যা মামলা বিচারাধীন আছে।