দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হেফাজতেই দেওয়া হয়েছে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের চারটি ফ্ল্যাট। রাজধানীর গুলশানে থাকা ওই চারটি ফ্ল্যাটের রিসিভার (তত্ত্বাবধায়ক) হিসেবে দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের পরিচালককে নিয়োগ করেছেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত। এখন থেকে ওই চারটি ফ্ল্যাটের সঠিক নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা, তদারকি, রক্ষণাবেক্ষণ করবে দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিট।
রবিবার (৯ জুন) আদালতের ওই আদেশের রেজিস্ট্রি ডাকযোগে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এসেছে।
একই সময়ে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের ৬২১ বিঘা জমি, কয়েকটি রিসোর্ট, ২৮টি পুকুরসহ মৎস্য ও গরুর খামার দেখভালের জন্য বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় প্রশাসনকে রিসিভার নিয়োগে আদালতের আদেশ পাঠানো হয়েছে।
এদিকে ৯ জুন জিজ্ঞাসাবাদের ধার্য দিনে দুদকে হাজির হননি বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জিশান মির্জা এবং দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর।
দুদক কর্মকর্তারা খবরের কাগজকে জানান, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আগামী ২৪ জুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে রবিবার (গতকাল) বিকেলে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আইন অনুযায়ী তাদের ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে তারা আত্মপক্ষ সমর্থনে এ ধরনের সময় পাবেন না।
ঢাকা জজ কোর্টে দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর খবরের কাগজকে জানান, বেনজীরের গুলশানের ফ্ল্যাটগুলোর দেখভালের দায়িত্ব দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটকে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গোপালগঞ্জে রিসোর্টসহ ফসলি জমির সঠিক নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা, তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণ জন্য গোপালগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এবং একই এলাকায় পুকুর ও মৎস্য খামার দেখভালের জন্য জেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে রিসিভার নিয়োগ করা হয়েছে। কক্সবাজারের স্থাবর সম্পদ দেখভালের জন্য কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, ঢাকার সাভারের স্থাবর সম্পদ দেখভালের জন্য সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় থাকা স্থাবর সম্পদ দেখভালের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে রিসিভার নিয়োগ করা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত আদেশের কপি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
আদেশে রিসিভারদের সব ধরনের আইনি ও প্রশাসনিক সহযোগিতা দিতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদেশে আরও বলা হয়, নিযুক্ত রিসিভাররা তফসিলে বর্ণিত সম্পত্তির আয়-ব্যয়ের হিসাব দুই মাস অন্তর আদালতকে অবহিত করবেন। আয়কৃত অর্থ তফসিলি ব্যাংকে জমা দেওয়া এবং সার্ভিস চার্জ বাদে আদায় করা টাকার আয়-ব্যয়ের হিসাবসহ সমুদয় তথ্য দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা অনুযায়ী ছয় মাস পরপর কমিশনের মাধ্যমে আদালতকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। আইন ও বিধিমোতাবেক রিসিভাররা তাদের দায়িত্ব ও কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, দুদকের অনুসন্ধান ও মামলায় গত পাঁচ বছরে অন্তত দেড় হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালতের আদেশে প্রায় ৫৫০ একর জমি, ৯২টি বাড়ি, ১০৮টি ফ্ল্যাটসহ বিপুল পরিমাণ স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে। এর মধ্যে গুলশানে বেনজীর আহমেদের চারটি ফ্ল্যাট এবং উত্তরায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক হিসাবরক্ষক আবজাল হোসেনের দুটি বাড়ি ও একটি ফ্ল্যাটের দেখভালের দায়িত্ব পেয়েছে দুদক। বাকিগুলোতে পুলিশ ও জেলা বা উপজেলা প্রশাসনকে রিসিভার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে দুদক কর্মকর্তারা খবরের কাগজকে জানান, দুদকের জনবল কম থাকায় সব সম্পদের রিসিভারের দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব নয়। তাই যেখানে নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা, তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব শুধু সেখানেই রিসিভারের দায়িত্ব নিয়েছে দুদক।