![ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় বিপাকে মার্কিন জনগণ](uploads/2024/06/29/Untitled-1-1719637141.jpg)
গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক টাইমস-এ ‘দোষী’ একক শব্দের শিরোনামে দেশব্যাপী হাহাকার ছড়িয়ে পড়ে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর অবমাননার দুর্দশা নেমে আসে যখন তিনি ম্যানহাটন কোর্টরুম থেকে ‘অপরাধী’ বলে কান্না শুরু করেন। তিনি এখন সাজার অপেক্ষায় রয়েছেন। আরও তিনটি ফৌজদারি বিচারের অপেক্ষা করছেন, তার মধ্যে দুটি ২০২০ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের প্রতিক্রিয়ার কারণে হয়েছিল।
পরমানন্দ বা অতি উচ্ছ্বাস রাজনীতিতে খুবই ভয়ংকর। ট্রাম্পের শত্রুদের সতর্ক হওয়া উচিত, তারা কী চায়। ট্রাম্প আদালত ছাড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩৯ মিলিয়ন ডলার তার প্রচারণার জন্য ব্যয় করেছেন। যদিও কিছু রিপাবলিকান দ্বিধাগ্রস্ত বলে মনে হয়েছিল, তারপরও তার পক্ষে ভোট দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। ২০১৬ সালে তার বিজয়ের মতো রাজনৈতিক দল যত বেশি তাকে দোষারোপ করে, তার নাগালের বাইরের লোকেরা তত বেশি তার প্রতি আকৃষ্ট হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং সারা বিশ্বের অনেক লোকের কাছে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে, যদি তার অযৌক্তিকতা আরও হ্রাস করা হয়। বেশ কয়েকটি নির্বাচনি পোলে তার এখনো সংকীর্ণ সমর্থন রয়েছে, যা রিপাবলিকানদের আতঙ্ক তৈরির জন্য যথেষ্ট।
স্পিকার মাইক জনসনের কাছে ‘আমেরিকান ইতিহাসে এটি একটি লজ্জাজনক দিন’। একটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক অনুশীলন ছিল। ডানপন্থি মিডিয়ার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। রুপার্ট মারডকের ‘নিউইয়র্ক পোস্ট’ সংবাদের ‘দোষী’ শিরোনামের উত্তর দিয়েছে আরেকটি একক শব্দ ব্যবহার করে তা হলো ‘অবিচার’।
অনেক আইনবিদের মতে, ট্রাম্পের প্রসিকিউটর অ্যালভিন ব্র্যাগ একজন নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট, যিনি ট্রাম্পকে অবনমিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি বিচারকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছেন। এটি সাবেক প্রেসিডেন্টকে পরের বছর আপিলে বিজয়ের সুযোগ তৈরি করে দেয়।
যদি তা অনুসরণ করা হয় তাহলে বাইডেন জয়ী হবে। তবে বিপদের আশঙ্কাও রয়েছে। ট্রাম্প তার সম্ভাব্য গৃহবন্দিদের বলেছিলেন, ‘আমি নিশ্চিত নই যে জনগণ এর পক্ষে দাঁড়াবে… এটি একটি ব্রেকিং পয়েন্ট হতে পারে।’ ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি মার্কিন ক্যাপিটলে আক্রমণ করে তার অর্থ বুঝিয়ে দিয়েছিল।
ট্রাম্পের পরবর্তী বিচারের ক্ষেত্রে ‘আইনের বিলম্ব’ হয়নি। স্পষ্টভাবে ন্যায়বিচার অস্বীকার করা হয়নি। মার্কিন বিচার বিভাগীয় কার্যালয়গুলো রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকাকালীন সুপ্রিম কোর্টও তার নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন। তার বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযোগ স্থগিত করে রেখেছেন। রাজনৈতিক শত্রু হিসেবে স্থানীয় রাষ্ট্রীয় আইনজীবীদের বরখাস্ত করার জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তিনি ‘বাম-আমেরিকানদের’ কথা বলেছেন, যাদের ‘জলাভূমি’ বলে উপেক্ষা করেছেন।
‘অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত’ এবং শহর ও প্রদেশের মধ্যে উপসাগরকে উপেক্ষা করা যায় না। সব পশ্চিমা গণতন্ত্রেই তা স্পষ্ট। এটি ব্রিটেনে ব্রেক্সিট গণভোটের ওপর ভিত্তি করে নাইজেল ফারাজ থেকে বরিস জনসন পর্যন্ত ট্রাম্পের সমর্থন লক্ষ করা যায়। ট্রাম্প তার বিচারকে ‘মেশিন গান’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন।
এর মানে হলো, যারা ট্রাম্পের আরেকটি প্রেসিডেন্সিকে বিপর্যয় হিসেবে দেখেন, তাদের জন্য পরবর্তী ছয় মাস উল্লাস না করে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। ট্রাম্পের সমর্থকদের প্রতি তার আবেদন- স্নেহ নয় বরং শত্রুদের প্রতি তিনি যে ঘৃণা প্রকাশ করেন তার মধ্যে সব খুঁজে নিতে হবে।
এ কারণেই তার সমর্থন অল্পশিক্ষিত, দরিদ্র, আফ্রিকান-আমেরিকান এবং এমনকি ল্যাটিনদের মধ্যেও বাড়ছে। জো বাইডেনের শক্তি বরং উচ্চশিক্ষিত এবং আরও মার্জিত মানুষের মধ্যে নিহিত রয়েছে। গণতন্ত্রের যুগে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটের মধ্যে বিভাজন করা অর্থহীন।
উত্তরটি ট্রাম্পবাদের সঙ্গে যুক্তি হতে পারে না, যা একটি প্রোগ্রামের চেয়ে অবস্থানকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। বাইডেনের সঙ্গে টেলিভিশন বিতর্ক নিছক তর্কমাত্র। কৌশলটি হতে পারে শুধু চাপ কমিয়ে আনা, ট্রাম্পের অযৌক্তিক অভিযোগের প্রচার কমিয়ে আনা। বাইডেনের প্রেসিডেন্সির গুণাবলি এবং তার ক্রমবর্ধমান নেতৃত্বকে শক্তিশালী করা।
হোয়াইট হাউসের নির্বাচন ওয়াশিংটন এবং রাজ্যগুলোর মধ্যে সংবিধানের সার্বভৌমত্বের ভারসাম্যকে প্রতিফলিত করে। রাজ্যগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে সুইং স্টেটগুলো যারা নিয়মিত পক্ষ পরিবর্তন করে, যেখানে প্রতিযোগিতায় জয়ী বা হেরে যায়। বহির্বিশ্ব চিন্তা করে যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট কে হবে। এই সময়ে নেতিবাচক প্রভাবগুলোই সবাই খেয়াল রাখে।
লেখক: ব্রিটিশ লেখক ও গার্ডিয়ান কলামিস্ট
দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: সানজিদ সকাল