ঢাকা ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪

বাজেটে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাবনা কতটুকু

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ১১:৪৩ এএম
আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ১১:৪৫ এএম
বাজেটে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাবনা কতটুকু
এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

এবারের বাজেটে যেসব কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য রয়েছে, অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগের হার, মূল্যস্ফীতি হ্রাসের মাত্রা ইত্যাদি বিষয় বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন হবে বলে মনে হয়। বর্তমানে দেশের বিনিয়োগ বাজার অনেকটা নাজুক অবস্থায় রয়েছে। শেয়ারবাজারে ক্রমাগত দরপতন হচ্ছে। সার্বিকভাবে ইনডেক্স অনেকটা নিচের দিকে নেমে এসেছে। সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে অর্থনীতিতে একটি সংস্কার আবশ্যক হয়ে পড়েছিল আরও আগেই এবং তা জরুরি। সে ক্ষেত্রে প্রথমেই দরকার ব্যাংক খাতে বড় ধরনের সংস্কার। 

অর্থনীতির বড় এই খাতটিতে সুশাসনের যথেষ্ট অভাব আছে। ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের কথা যদি বলা হয়, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পথনির্দেশনা দেওয়া নেই। সম্প্রতি যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা এই খাতকে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আরও পিছিয়ে দিয়েছে। তা ছাড়া যেসব সংস্কার ইতোমধ্যে হয়েছে, সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ দেখা যায়নি। বেসরকারি বিনিয়োগও বেশ শ্লথগতিতে হয়েছে এবং হচ্ছে। কাজেই অর্থনীতিকে চাঙা রাখতে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এর বিকল্প নেই। 

দেশে সরবরাহ ব্যবস্থার সংকট এবং শ্রমবাজারের ওপর থাকা চাপ যদি প্রশমিত না হয়, তাহলে মূল্যস্ফীতির হারের অঙ্কটি আরও অধিকমাত্রায় বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যখন দুর্বল থাকে, তখন লম্বা সময় ধরে মূল্যস্ফীতি বাড়তে দেওয়া ঝুঁকি তৈরি করে। কাজেই নীতিনির্ধারকদের মধ্যমেয়াদি রাজস্ব পরিকল্পনা করতে হবে, যেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা থাকবে এবং দরিদ্র ও দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে আছে এমন পরিবারকে সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের যথেষ্ট ব্যর্থতা আছে। 

এই মুহূর্তে অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি বৈষম্য বেড়ে যাওয়া। মূল্যস্ফীতির কারণে নতুন করে অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। এই সংখ্যা কত তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। এ ছাড়া দেশে বৈষম্য এখন বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এ পরিস্থিতিকে এখনই মোকাবিলা করা না গেলে তাতে নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রবাসী আয়, খেলাপি ঋণ, রপ্তানি আয়, লেনদেনে ভারসাম্যসহ অর্থনীতির সূচকগুলোও সন্তোষজনক পর্যায়ে নেই।

নিম্ন মধ্যবিত্ত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাপনের মান অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেঙে পড়লে অস্থিরতা আরও বাড়বে। দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণ না করে বা সিন্ডিকেট না ভেঙে সরাসরি আমদানি করতে চাইলে কৃষক বা উৎপাদনকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি বা বাজার ম্যানিপুলেশন করার জন্য সাধারণত কৃষক বা উৎপাদনকারী দায়ী নয়। বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবসায়িক শ্রেণি। এরা সিন্ডিকেট করে বাজারকে অস্থিতিশীল করে থাকে। মূল্যস্ফীতি কীভাবে কমানো হবে, সে বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। 

আরেকটি বিষয় হচ্ছে, কালোটাকা সাদা করার যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে তা অবশ্যই অনৈতিক। এতে করে লোকজনের মধ্যে উৎসাহের অনেকটাই ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। এর ফলে তাদের মধ্যে একধরনের ধারণা তৈরি  হয়েছে যে, সে যদি কর না দিয়ে কালোটাকা বানায় তাহলে ভবিষ্যতে এর প্রেক্ষিতে কম হারে কর দেওয়া যাবে। সুতরাং এতে করে  কালোটাকার মাত্রাটা আরও বেড়ে যেতে পারে। 

দেশ থেকে অনেক টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে, সেগুলোর আইনি প্রয়োগে যথেষ্ট অবহেলা আছে। আইনগুলো শক্তিশালী হওয়া দরকার ছিল, কিন্তু হয়নি। এসব বিষয় অর্থনীতির ভিত্তিকে আরও বেশি দুর্বল করেছে। ফলে অর্থনীতি একটা বড় রকম ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। মুদ্রাস্ফীতি সামাল দিতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হলেও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরি না হয়ে আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। যেটি মানুষের জীবনযাত্রার মানকে অনেক বেশি নিচের দিকে নামিয়ে নিয়ে এসেছে। 

এমতাবস্থায় সচেতনতার সঙ্গে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে অর্থনীতি আরও বেশি সমস্যাসংকুল হবে। মূল্যস্ফীতির ফলে আমাদের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমগুলো ব্যাহত এবং একই সঙ্গে বিনিয়োগ ব্যাহত হলে যেসব সমস্যা আছে সেগুলোর সমাধান কঠিন হয়ে যাবে। বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য আমাদের পরিবেশ উন্নত এবং অনুকূল করতে হবে। তাই অর্থনীতির চলমান সমস্যাগুলো সমাধান করতে হলে জোরালো ও শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পণ্যের মূল্য যাতে না বাড়ে, সে জন্য প্রয়োজনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা যেতে পারে। 

দেশের অর্থনীতি ঋণনির্ভর হলে চলবে না। এতে সরকারি এবং বেসরকারি খাতে অর্থনৈতিক প্রবাহ কমে যাবে। আমাদের বিনিয়োগ বাজারের অবস্থা মোটেও সন্তোষজনক নয়। বিনিয়োগ বাজার যেভাবে চলছে সেভাবে চলতে দেওয়া ঠিক নয়। আমাদের অবশ্যই চেষ্টা করা উচিত ঋণনির্ভর না হয়ে রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে মনোযোগ বাড়ানো। 

আমাদের যে টার্গেট আছে সেটা কোনো অবস্থাতেই অর্জিত হয় না। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। করের হার না বাড়িয়ে করদাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে। যাদের কর দেওয়ার ক্ষমতা আছে তারা অনেকেই কর দেয় না। ইনকাম ট্যাক্স, অর্থাৎ যাদের টিন নম্বর আছে তারা অনেকেই রিটার্ন দেয় না। 

সর্বোপরি বাজেট কতটা জনবান্ধব হলো সেটিও দেখা দরকার। হঠাৎ পণ্যের দাম বেড়ে গেলে ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের একটি অংশকে ঋণ করে জীবনযাত্রার বাড়তি খরচ মেটাতে হয়। এখন ভোক্তাঋণের সুদ বাড়ানোর ফলে তারা হয়তো চাপে পড়বেন। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ঋণের সুদহার বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবিলা করছে। দেরিতে হলেও আংশিকভাবে আমরা সেই পথে গেছি। তবে বিদ্যমান নীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি কতটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কাজেই সার্বিকভাবেই অস্থিতিশীল অর্থনীতির চাপ মোকাবিলায় একটি ভালো রকম সংস্কার প্রয়োজন আছে। ডলারসংকটসহ যেসব কারণে পণ্যের মূল্য বেড়ে যাচ্ছে, সেসব বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। 

পণ্যের মূল্য যাতে না বাড়ে, সে জন্য প্রয়োজনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা দরকার। বাজেট যেন সাধারণ মানুষের জন্য একপেশে হয়ে না যায়, সেদিকে লক্ষ রাখা জরুরি। দেশে বিদ্যমান যেসব আইন আছে, সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে কঠোর আইন প্রয়োগের প্রতি বিশেষ জোর দিতে হবে। অর্থনীতির ভিত সুরক্ষায় এ বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজন আছে।

লেখক: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা

শুদ্ধাচার ও তুরুপের তাস

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:১৮ এএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:১৮ এএম
শুদ্ধাচার ও তুরুপের তাস
ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

এ কথা অনস্বীকার্য যে, দেশ-সমাজ-সংসারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা-প্রয়োগের প্রধানতম পূর্বশর্ত হলো ব্যক্তিজীবনে শুদ্ধাচারিতা। ব্যষ্টি থেকেই সমষ্টি। সঠিক জীবনদৃষ্টি প্রয়োগ করে মেধা ও প্রতিভার পরিপূর্ণ বিকশিত ব্যক্তিই ‘স্ব-উদ্যোগ, স্ব-পরিকল্পনা ও স্ব-অর্থায়ন দ্বারা সৃষ্টির সেবায় সংঘবদ্ধভাবে কাজ করে অশান্তিকে প্রশান্তিতে, রোগকে সুস্থতায়, ব্যর্থতাকে সাফল্যে, অভাবকে প্রাচুর্যে রূপান্তরিত করতে পারে।’ বলা বাহুল্য, সুশাসনের ফলিত রূপ হচ্ছে শুদ্ধাচার আর জবাবদিহিহীনতার ফলিত রূপ হচ্ছে দুরাচার। সুশাসক যেমন দুরাচারী হতে পারে না, তেমনি দুরাচারীও কখনো সুশাসক বলে গণ্য হতে পারে না। 

ব্যষ্টি ও সমষ্টির জীবনে শুদ্ধাচার বা সদাচার চর্চার তাৎপর্যময় আবশ্যকতার কথা তাবৎ ঐশী গ্রন্থে, ধর্ম প্রবর্তক-প্রচারক, পণ্ডিত প্রবরের বাণীতে। সেই সদাচার-শুদ্ধাচারের চর্চা অবলম্বন অনুসরণ যুগে যুগে নানান প্রেক্ষাপটে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটেছে। সদাচার-সুশাসন লোপ পেলে ব্যক্তি-সমাজ-সংসার নিপতিত হয় নানান অরাজক পরিস্থিতিতে। মানবসমাজে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সূচনা-বিকাশ-বিবর্তনও ঘটেছে শুদ্ধাচারের প্রতি আকিঞ্চন আকাঙ্ক্ষা ও দায়বদ্ধতা থেকে। শান্তি ও শৃঙ্খলার স্বার্থে, সহযোগিতা-সহমর্মিতার স্বার্থে, ন্যায়নীতিনির্ভরতার স্বার্থে ও তাগিদে সুশাসনকে অগ্রগণ্য সাব্যস্ত করা হয়েছে।  

তেপ্পান্ন বছর বয়সী বাংলাদেশি সমাজ, প্রশাসন ও অর্থনীতিতে সর্ববিধ বিবেচনায় নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু, রাজপথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে এবং ক্ষেত্রবিশেষে তাদেরও বেপরোয়া আচরণ, বিদেশে বিপুল অর্থ পাচারের মতো অর্থনীতির সমূহ সর্বনাশসাধন, সেবাধর্মী সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির প্রতিকার না পাওয়ার মতো বিষয়গুলো দিন দিনই সাধারণ মানুষকে যাতে আরও উদ্বিগ্ন করে না তোলে, সে জন্য সংবিধান-শুদ্ধাচার বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করছেন, রাষ্ট্রই সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে, সরকারি প্রতিষ্ঠানকে আনবে জবাবদিহির মধ্যে, যাতে সরকারকে মুখোমুখি হতে হবে না অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতির। 

কেননা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কারণে সরকারের প্রতি আস্থা হারাতে পারে সাধারণ মানুষ। রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতি এই আস্থাহীনতাই জন্ম দেয় সামাজিক অনাচার ও রাজনৈতিক সহিংসতার। ইতিহাসের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ এ কথা স্পষ্ট যে, ঔপনিবেশিক শাসন প্রশাসনযন্ত্রের যাবতীয় অন্যায়-অনিয়ম ও শোষণ-বঞ্চনারহিত সুশাসন-সদাচারী সমাজ বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা থেকেই ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগ এবং  ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো মানুষের রক্তত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা। সেই স্বাধীন রাষ্ট্রে সুশাসন-শুদ্ধাচারের যে দুর্গতি, তার স্বরূপ সন্ধান ও প্রতিকারের দাবি তাই জোরেশোরে উঠছে। 

রসুলপুরের চৌধুরীদের একসময় বেশ প্রতিপত্তি ছিল। জমি-জোতদারি তো ছিলই, ছিল লোকলস্কর, পাইক-পেয়াদার বিশাল বহর। মহিষার মাঠে চাঁদের রাতে তাদের অশ্বারোহীর দল যখন পরের দিন পাশের জমিদার রামজীবনপুরের প্রাণনাথ বাবুর তালুকদারি দখলের লড়াইয়ে নামার মহড়া দিত, তখন বোঝা যেত ক্ষমতা ও কুর্নিশের কৌলীন্য কীভাবে সময়ের স্রোতে বহমান। হোমনাথ ছিল অশ্বারোহী দলের দলপ্রধান এবং চৌধুরীদের প্রধান প্রতিরক্ষক। তার বিশাল বপু ও পেটানো শরীর মনে করিয়ে দিত শক্তিমত্তা যেন চিরস্থায়ী পত্তন নিয়েছে তার চোখে, চোয়ালে ও দুই হাতের কবজিতে। মনে হতো সে যেন মর্ত্যলোকের অমর্ত্য অবয়বের প্রতীক। কিন্তু কালের কপোলতলে সম্রাট শাহজাহানের পত্নীপ্রেমের পসার যেমন অমরতা পেয়েও পায়নি, তেমনি নজিরবিহীন হোমনাথকেও একদিন কঙ্কালসার হয়ে শবযাত্রায় শামিল হতে হয়েছিল। 

বর্মপরিহিত সশস্ত্র হোমনাথ অনেক দূর পর্যন্ত তার দুচোখকে প্রসারিত করে শত্রুর নিশানা ঠাওর করতে পারত। কিন্তু তার জীবনের অনিবার্য পরিণতি নিয়ে দূরদৃষ্টি দূরে থাক, নিকটদৃষ্টিতেও ছিল না। তার মনের জোর তার চাহনিতে, সহিসের লাগাম টানায় কিংবা তরবারির চাকচিক্যের মধ্যে মূর্ত হয়ে উঠত। তার মনে হতো অমরাবতীর জলে তার মা জননী তাকে যেন সদ্য চুবিয়ে এনেছেন- তার গোটা দেহ অমরার আশীর্বাদ পেয়েছে। 

তার ধরাকে সরা জ্ঞানের কাণ্ডকারখানা দেখে একদিন তার মা ডেকে বলেন, ‘বাছা আশপাশে একটু তাকাস। কেউ কিন্তু একদিনের জন্যও এককভাবে চিরদিনের চরণতলে ঠাঁই পায়নি।’ মায়ের কথা হোমনাথের বড্ড বেশি মনে পড়ে সেদিন, যেদিন নকীপুরের হরিচরণ বাবুর তিরন্দাজ বলরামের ছোড়া ছোট্ট একটা তির তার বাঁ হাতের খালি জায়গাটাতে এসে বেঁধে। সেই তিরে বিষ মাখানো ছিল- পচন ধরেছিল সে জায়গায়, সারানো যায়নি হাজার বদ্দি-কবিরাজি করেও। হাতের কবজিসমেত কেটে ফেলেও শেষরক্ষা হয়নি তার। 

 হোমনাথরা একবার জমিদার বাবুর সঙ্গে বাদায় গিয়েছিল। জমিদার বাবু বলেছিলেন, বাদায় বড় মিয়া আছে। চল তার সঙ্গে মোলাকাত করে আসি। তার ধারণা হয়েছিল, শ্মশ্রুমণ্ডিত কোনো সাঁইবাবা হবেন হয়তো বড় মিয়া, যার সঙ্গে কর্তার সম্পর্ক বহুদিনের। হোমনাথ নিজেও মাঝেমধ্যে সাঁইবাবাদের আখড়ায় গিয়ে নিজের মনের খবর নেওয়ার কথা ভাবত না যে তা নয়। বিশাল বজরায় তাদের যাত্রা সাত-আট দিনের বনবাস না বন উপভোগের জন্য। 

জমিদার বাবুর বজরা তেঁতুলখালির খাড়িতে নোঙর করেছিল। নোঙর করার পর বিরাট এক বাঘ বাদার দিক থেকে ‘হালুম’ শব্দ করে যখন হুংকার দেয়- দুজন বরকন্দাজ তৎক্ষণাৎ পানিতে পড়ে যায়- পাশে কুমির ছিল। তারা হজম করে ফেলে তাদের। জমিদার বাবু জানালেন, ‘বড় মিয়া’ আমাদের স্বাগত জানিয়েছেন। আর তার ভাষা না বুঝতে পেরে পরান ও প্রণবরা পানিতে পড়ে গেল! হোমনাথের সংবিৎ ফেরে। সে বুঝল এই ‘বড় মিয়া’ তো সাঁইজির ধারেকাছের কেউ নন। 

ইনি তো বাদার বড় জমিদার সুন্দর মিয়া। তখন সন্ধ্যা হবে হবে- পশুর নদী থেকে তারা তেঁতুলখালীর খাড়িতে ঢুকেছে ঘণ্টাখানেক হলো। এর মধ্যে এই ‘হুংকার’, জমিদার বাবু যাকে বলছেন ‘অভ্যর্থনা’। আর সেই অভ্যর্থনায় পরান-প্রণবের কুমিরের পেটে চালান হওয়া। ব্যাপারটা ভয়ানক! বজরা নোঙর করা হলো খালপাড় থেকে নিরাপদ দূরত্বে। বড় মশাল জ্বালানো হলো। খালপাড় দেখা না গেলেও খালপাড়ের বড় মিয়ার শাগরেদরা যাতে তাদের শনাক্ত ও সমীহ করতে পারেন তেমন একটা ধারণায়। 

জমিদার বাবু সামনের ডেস্কে তার গদিতে বসে নল টানছেন। এখন বসন্তকাল। আকাশে তারা। মৃদুমন্দ বাতাস। ডানে-বায়ে গভীর বাদা। বজরায় রাগপ্রধান গানের রেশ- বাইজিরা নাচছে- এমন সময় একটা উল্লুক প্রকৃতির পাখি এসে ছোঁ দিয়ে যেন নিয়ে গেল বজরায় বাঁধা জুনিয়র ছাগলটিকে। এই ছাগলটি আনা হয়েছে ‘বড় মিয়া’র মনোরঞ্জনের জন্য, তাকে ভেট দেওয়ার জন্য। এই রাতে এই খালপাড়ে ছোঁ মারার মতো এত বড় উল্লুক পাখি কিংবা কিছু কীভাবে এল- কেউ ভাববার আগেই ঘটনাটা ঘটে গেল। জমিদার বাবু আবার ব্যাখ্যা করলেন, ওটা কিছু না। 

‘বড় মিয়া’র উড্ডয়ন বাহিনী আমাদের একটা ছবক দিতে এসেছিল। আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, তা দেখতে আর যাওয়ার সময় ছাগলটাকে আগেভাগে ভেট চাইছেন হয়তো ‘বড় মিয়া’। জমিদার বাবু রসিকতা করলেন- দেখ না, আমাদের নায়েব মশাই- খাজনা আদায়ের আগে নিজে কত পাবেন তার হিসাব কষেন। ‘ওমা, জমিদার বাবু এটাও জানেন তা হলে! তিনি তবে কেন এমন নায়েব রাখলেন?’ হোমনাথের মাথায় ঢোকে না। তার পাশে ছিল কূটবুদ্ধি বিভাগের রঘুনাথ বাবু। কানে কানে বলেন- ‘এটা হচ্ছে পরস্পরকে ভেট দেওয়ার রীতি’, ‘সেটা কেমন’? ফিসফিস করে জানতে চায় হোমনাথ। রঘু বাবু বলেন- ‘তুমি শুধু তরবারি চালিয়েই গেলে- এটুকু তোমার মাথায় ঢোকে না- আরে নায়েব মশায়ের যেমন দরকার জমিদার বাবুর আশীর্বাদ, তেমনি জমিদার বাবুরও দরকার নায়েব মশায়ের আনুগত্য ও তেলেসমাতি। 

সে কারণে জমিদার বাবু দেখেও না দেখার ভান করেন নায়েব বাবু যাতে কিছু কামাতে পারেন রায়ত প্রজার কাছ থেকে- নইলে নায়েব বাবু তার পক্ষে কেন অতিখেয়ালি হবেন খাজনা আদায়ে? আরও জানো, প্রজার পয়সা জমিদার বাবুর বেশি বেশি দরকার তার নিজের, পরিবারের ও জ্ঞাতিগোষ্ঠীর হাতে তোলার জন্য। সবাইকে হাতে না রাখলে নিজের গদি নিয়ে টানাটানি। এটা একধরনের গদি রক্ষার জন্য উৎকোচ বলা যায়। আমাকে গদিনশিন থাকতে দাও- এর জন্য তোমার নিজের পেট যেভাবে ভরতে চাও- ভরো। আমি কিছু বলব না। বিষয়টা হোমনাথের কাছে নজিরবিহীন মনে হয়। 

সে ভাবে, তাই তো, আমার আনুগত্য নিশ্চিত করার জন্য জমিদার বাবু আমাকে অনেক এনাম, অনেক সম্মান, অনেক সুযোগ দিয়ে রেখেছেন, যাতে আমি কখনো বিগড়ে না যাই কিংবা বিশ্বাসঘাতকতা করে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে না পড়ি অথবা জমিদার বাবুর বিরুদ্ধবাদী বা বিপক্ষ অভ্যন্তর কিংবা বাইরের কারও সঙ্গে যাতে হাত না মেলাই। যাতে সময়মতো তিনি আমাকে তুরুপের তাস হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন। জমিদার বাবু যথেষ্ট আত্মসচেতন এসব ব্যাপারে। কেননা তিনি বিচক্ষণ। জানেন বড় রক্ষকের মাথা যদি বিগড়ে যায় তাহলে তার নিজের জন্য তো বটেই, গোটা জমিদারি হুমকির মুখে পড়তে বাধ্য। সে এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে। 

হোমনাথ বড় একটা মঞ্চে বসা রঘুনাথ বাবুর দিকে ঠায় তাকিয়ে। তিনি ওখানে ওই বাঘটার পাশে বসে রয়েছেন কেন- এ তো ভয়ানক কাণ্ড দেখি।  বেশ বড় ধরনের একটা হল ঘর। ঘোষণা দেওয়া হলো অনুষ্ঠানের প্রধান প্রতিবেদন উপস্থাপনকারী হিসেবে আছেন আপ্যায়িত অতিথি বিশিষ্ট গবেষক এবং প্রতিবেশী লোকালয়ের জমিদার চৌধুরী প্রবরের প্রধান কূট পরামর্শদাতা মি. রঘুনাথ। তাকে সুন্দর মিয়া বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন কয়েক শ বছর আগেকার মগ সম্প্রদায়ের রাজত্বকালে সেখানকার সামাজিক পরিবেশ সম্পর্কে গবেষণার জন্য। ঘোষণা শুনে হোমনাথের বুক গর্বে ভরে উঠল এবং তখন তার মনে হলো বাঘকে মানুষ ভয় পায় খামোখা- বাঘদের সরদার এবং এই বাদার স্বঘোষিত রাজ্যের প্রধান সুন্দর মিয়া কত বিচক্ষণ এবং ইতিহাসসচেতন। 

ঘোষণা অনুযায়ী রঘুনাথ উঠে দাঁড়ালেন, পোডিয়ামের কাছে গিয়ে তার নিবন্ধ পাঠ শুরু করলেন। হোমনাথ প্রথমে তার ভাষা বুঝতে পারছিল না এবং তার আশঙ্কা হচ্ছিল, এই রঘুনাথ বাবু তাদের সেই রঘুনাথ বাবু তো! এখন তিনি এ কি কোন ভাষায় কথা বলছেন। এর মধ্যে একটি সুদর্শন হরিণ এসে হোমনাথের কানে ফুঁ দিয়ে যাওয়ার পর সে বুঝতে পারল ভাষা। শুনতে পেল রঘুনাথ বাবু প্রাচীনকালে মগ রাজাদের সময়ের কথা বলছেন। রঘুনাথ বাবু একটু বিস্তারিত বয়ানে যাচ্ছিলেন। তখন সুন্দর মিয়া পাশে বসা হরিণা হাপানকে ইশারা করে জানাতে বললেন, রঘুনাথ বাবু যেন তার তার গবেষণার সারবস্তুতে সরাসরি চলে যান। 

রঘু বাবু সারবস্তুতে গেলেন- মগরাজাদের অন্যতম অধস্তন রাজা ছিলেন পাগালান। তাহার পিতাও ছিলেন তাহার চাইতে বড় রাজা। পাগালান পিতার গর্বিত সন্তান হিসেবে রাজকর্ম পরিচালনা করিতেন। একপর্যায়ে প্রতিবেশীদের পরামর্শ ও কূটবুদ্ধি লইয়া তিনি রাজ্য অভ্যন্তরে এমন একটি অবস্থা তৈরিতে মনোনিবেশ করিলেন যেন যে কেহ তাহার বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দটি করিতে না পারে। বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দেখভালের ভার এমন ভাঁড়দের নিকট দেওয়া হইল যে, তাহারা ইহার মাধ্যমে এমন এক ভীতির সৃষ্টি করিতে সক্ষম হইলেন যে, রাজার খয়ের খাঁ হইলে সাত খুন মাফ এবং আপন না হইলে তাহাদের সামান্য ছুতা-নাতায় দোষী বানানো অব্যাহত রহিল। 

দেখা গেল আজ যিনি খয়ের খাঁ, মুহূর্তের মধ্যে তাহাকে বাকির খাতায় চলিয়া যাইতে হইত। দেখা গেল কোথাও সর্পাঘাতে কাহারো মৃত্যু হইলেও এই সাপের মন্ত্রদাতা সাজাইয়া শত্রুপক্ষের সবাইকে অভিযুক্ত করা হইত। কর্তাভজার সেই সময়ে ঘাটের পানি আঘাটায় প্রবাহিত হইতে লাগিল। পাগালান মগরাজার এসব কর্মকাণ্ড দেখিয়া, ভয় পাইয়া, অবরুদ্ধ হইয়া ক্রমে ক্রমে দেখা গেল সেই মুল্লুকে সকলে কোনো কথা বলা বন্ধ করিয়া মুখে কুলুপ আঁটিতে অভ্যস্ত হইয়া পড়িল। মগের মুল্লুকে যে মৌনতা দেখা গেল, সেই মুল্লুক বেশি দিন টেকে নাই বলে রঘুনাথ বাবু উপসংহার টানেন। তার বক্তব্য শেষ হলেই মঞ্চের চারদিকে এক ধরনের শোরগোল শোনা গেল। এতে আনন্দ না প্রতিবাদ প্রকাশ পেল তা বোঝা গেল না।

পাশে রঘুনাথ বাবু তখনো ঘুমাচ্ছেন। হোমনাথ এতক্ষণ স্বপ্নের ঘোরে ছিল। ঘোর কেটে গেলে সে বাইরের চিৎকার শুনতে পেল। বজরার পাটাতনে যে খালাসি ও চৌকিদাররা ছিল, তাদের একজনের পা কেটে নিয়ে গিয়েছে কুমিরে এই কিছুক্ষণ আগে।    
[রস রচয়িতা] 

লেখক: সাবেক সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান
[email protected]

মাধ্যমিকের কারিকুলামে কোডিং অন্তর্ভুক্ত

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:১৩ এএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:৪১ এএম
মাধ্যমিকের কারিকুলামে কোডিং অন্তর্ভুক্ত
মো. হাসান-উল-বারী

প্রযুক্তির দুনিয়ায় বর্তমানে চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। শুধু চর্চা নয়, বেড়েছে ব্যবহারও। মানবসভ্যতার উন্নয়নে এই প্রযুক্তি কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে দিনরাত চলছে গবেষণা। আর সেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তারই প্রবেশ ঘটেছে শিক্ষাক্ষেত্রেও। সেটা ভালো হবে কী মন্দ হবে তা নিয়ে অনেক বিতর্ক হচ্ছে। তবু এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর একটি বিশ্ব আমাদের তৈরি হবে। আর সেই বিশ্বে পদচারণ করবে আজকের দিনের নতুন প্রজন্ম, আমার আপনার সন্তানরা। সেই বিশ্বে আমাদের সন্তানরা কেমন করবে তা অনেকখানিই নির্ভর করবে তার ‘তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানের ওপর’।

তাই বর্তমান বিশ্বের অভিভাবকরা চাচ্ছেন তাদের সন্তানরা ছোট থেকেই তথ্যপ্রযুক্তির ওপর বেসিক কিছু জ্ঞান অর্জন করুক। তথ্যপ্রযুক্তি বলতে যদি আপনি শুধু ফেসবুককে বোঝেন তবে মারাত্মক ভুল করবেন। আপনি যেটি ব্যবহার করছেন তা একটি অ্যাপ মাত্র। ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, লিংকডইন, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, গুগল এসব অ্যাপ ও প্ল্যাটফর্মের পেছনে রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির বিশাল কর্মযজ্ঞ। সেখানে কাজ করছেন লক্ষাধিক প্রযুক্তিবিদ। এসব প্ল্যাটফর্মে তথ্যকে সহজেই প্রদর্শন করার জন্য ‘কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বা কোডিং’ ব্যবহার করেন প্রযুক্তিবিদরা। 

আমরা যদি আমাদের শিশু-কিশোরদের একাডেমিক সাফল্য ও স্মার্ট করতে চাই তাহলে প্রতিটি শিশুকে কোডিং শেখাতে হবে। বাচ্চাদের জন্য কোডিং শুধু তাদের গণিত এবং লেখার দক্ষতা উন্নত করতে সাহায্য করে না বরং পরবর্তী সময়ে তাদের কর্মজীবনে দক্ষতার নতুন মাত্রা যোগ করবে। কেন কোডিং শেখা গুরুত্বপূর্ণ এবং কেন ছোটবেলা থেকেই স্কুলে কোডিং শেখানো উচিত তার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। শিশুরা যত তাড়াতাড়ি কোডিং করতে শিখবে, তাদের সাফল্য অর্জনের সুযোগ তত দ্রুত ধরা দেবে। 

আধুনিক বিশ্বে নিজেদের এগিয়ে নিতে গণিত, বিজ্ঞানের পাশাপাশি প্রোগ্রামিং ও কোডিং শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর বৈষম্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ দরকার, যা কিনা শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার মাধমে সোনার মানুষ গড়ে তোলা সম্ভব।

২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট সিটিজেন তৈরি করতে শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে দক্ষ করে গড়ে তোলা অপরিহার্য। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডিজিটাল দক্ষতা উন্নয়ন ও সমস্যা সমাধানে আগ্রহী করে গড়ে তুলতে গত ৬-৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ প্রতিদিন এক ঘণ্টার কোডিং ক্যাম্পেইন ‘আওয়ার অব কোড’ দেশব্যাপী সব মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিচালনা করা হয়। 

ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত আনন্দসহকারে কোডিং আওয়ার শেষ করেছে ও কম্পিউটার জেনারেটেড সনদ গ্রহণ করেছে। ওই ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয় ‘কিশোর বাতায়ন’ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে, যেটি বর্তমান সরকার এটুআইয়ের সহযোগিতায় বেশ কয়েক বছর আগেই স্কুলশিক্ষার্থীদের উপযোগী করে তৈরি করেছে। ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে তোলো স্লোগান সামনে রেখে আমাদের স্কুলশিক্ষার্থীরা ‘কিশোর বাতায়ন’ প্ল্যাটফর্ম থেকে আমার স্কুল, বইসমূহ, জীবন দক্ষতা, ক্যারিয়ার দক্ষতা ইত্যাদি বিষয় অনলাইনে শিখতে পারবে। 

এখানে উল্লেখ্য, শুধু জীবনদক্ষতা বিষয়ের ওপর কিশোর বাতায়নে ১৯৩টি কনটেন্ট রয়েছে। অভিভাবক থেকে শুরু করে সহকর্মী সবার একই প্রশ্ন- শিশু-কিশোরদের কোডিং শিখতে হবে কেন? এই কোডিং শিখে কী লাভ? এটি শিখে কি কম্পিউটার বিজ্ঞানী হবে? নাকি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হবে? সেটা যদি না হয় তাহলে কোডিং শিখবে কেন? একেবারেই যৌক্তিক প্রশ্ন। কোনো জিনিস শেখার আগে কেন শিখছি, সেটি জানা খুবই জরুরি। 

প্রচলিত ধারণায়, প্রোগ্রামিং শুধু কম্পিউটারের ভাষা, এটি দিয়ে কম্পিউটারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রকৃত অর্থে সেটি প্রোগ্রামিংয়ের প্রথম ধাপ নয়। প্রোগ্রামিং আসলে সমস্যা সমাধান (প্রবলেম সলভিং) এবং সিদ্ধান্ত  গ্রহণ (ডিসিশন মেকিং) করতে শেখায়। প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত আমরা সমস্যার সমাধান করে চলেছি। আমরা সেটি সব সময় আসলে খেয়াল করছি না।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. বি এম মইনুল হোসেন স্যারের উদাহরণ টেনে বলা যাক, অফিসে যাওয়ার জন্য রিকশা নেব নাকি উবার বা পাঠাও থেকে কার বা বাইক নেব, নাকি পাবলিক বাসে যাব, এটি একটি সমস্যা। এ সমস্যার সমাধানের জন্য আমাদের অনেক বিষয় বিবেচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। উদ্দেশ্য যদি হয় কম খরচে যাওয়া, তাহলে রিকশা নেওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে খরচের কথা চিন্তা না করে যদি দ্রুত যাওয়াই হয় প্রধান উদ্দেশ্য, তাহলে পাঠাও নেওয়া যায়। আর যদি উদ্দেশ্য হয় কম খরচে তুলনামূলকভাবে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো, তাহলে পাবলিক বাস নেওয়াটা হবে সঠিক সিদ্ধান্ত।

কোডিং শেখার অনেক কারণ আছে, যার কয়েকটি নিম্নে দেওয়া হলো-

১. কোডিং সমস্যা সমাধানে দক্ষ করে তোলে   

২. কোডিং চিন্তা করতে শেখায়

৩. একাডেমিক কর্মক্ষমতা উন্নত করে 

৪. কোডিং সৃজনশীলতা বাড়ায়

৫. ভালো কম্পিউটার প্রোগ্রামার হওয়ার সম্ভাবনা 

৬. সফটওয়্যার শিল্পে দক্ষতার অভাব রয়েছে 

৭. কোডিং শিশুদের গণিত শেখা আনন্দদায়ক করে তোলে 

৮. কোডিং শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করে

নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষায় স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে যুক্ত করা হয়েছে। যদিও বাস্তবে এ বছর প্রাথমিকের সিলেবাসে স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং যুক্ত করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে দেরিতে হলেও বর্তমান সরকার চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে মাধ্যমিকের সিলেবাসে অর্থাৎ অষ্টম ও নবম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ে পাইথন প্রোগ্রামিং ভাষা অন্তর্ভুক্ত করেছে, যেটি খুবই যুগোপযোগী। 

ইতোমধ্যে দেশব্যাপী মাধ্যমিকের সব আইসিটি শিক্ষককে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ও নেটওয়ার্কিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, সবকিছুর মূল সমাধান লুকিয়ে আছে শিক্ষায়। যখনই কোনো সমস্যা হয়, আমি বলি, সর্বক্ষেত্রে শিক্ষা বিস্তার করো। এতেই সমাধান হয়ে যাবে। কাজে কাজেই ডিজিটাল বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের প্রধান ভিত্তি হলো স্মার্ট সিটিজেন। আর স্মার্ট সিটিজেন তৈরির জন্য দরকার ডিজিটাল লিটারেসি ও কোডিং শিক্ষা। 

সুতরাং বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করাসহ পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করে বাংলার শিক্ষার্থীদেরও এআই এবং কোডিং শিক্ষা দিতে পারলে দ্রুত আমাদের এই সোনার বাংলা বাস্তবে সোনার স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত হবে।  

লেখক: শিক্ষক, মিলেনিয়াম স্কলাস্টিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জাহাঙ্গীরাবাদ সেনানিবাস, বগুড়া
[email protected]

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে রেল ট্রানজিট ও তিস্তা প্রকল্প

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ১১:০৪ এএম
আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ১১:০৪ এএম
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে রেল ট্রানজিট ও তিস্তা প্রকল্প
মো. তৌহিদ হোসেন

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত গেছেন ২১-২২ জুন। দুই দেশেরই সরকার নতুন মেয়াদে প্রবেশ করেছে এবং দুই সরকারের মাঝে সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নতুন টার্মে প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে ভারতে যাওয়া বা ভারত সরকারের নতুন মেয়াদের প্রথম অতিথি হওয়া খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। ১১ দিনের মাথায় দ্বিতীয়বার ভারত গমন নিয়ে অনেকে কথা বলছেন। তবে দ্বিতীয় সফরটা আগেই নির্ধারিত ছিল। শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার নিমন্ত্রণটা হঠাৎ এসে পড়ায় এই ছোট্ট বিভ্রাট।

সফর থেকে প্রাপ্তি নিয়ে কথা উঠেছে। বস্তুত বড় কোনো প্রাপ্তি এতে প্রত্যাশিত ছিল না। এ কারণে যদি বড় কোনো সমস্যার সমাধান করতে হয়, তার আগে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রস্তুতিমূলক সভা লাগে। এ রকম কিছু দেখিনি এই সফরের আগে। কাজেই আমি ব্যক্তিগতভাবে ধরেই নিয়েছিলাম যে, বড় কোনো কিছু ঘটবে না এই সফরে।  

শীর্ষ পর্যায়ের সফরে প্রতিনিধিদল নিয়ে যে আনুষ্ঠানিক সভা হয়, সেখানে খোলামেলা বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়, সভা অন্তে যা প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া থাকে একান্ত আলোচনা, যা হয় শুধু দুই প্রধানমন্ত্রীর মাঝে। স্পর্শকাতর বিষয়গুলো আলোচিত হয় সেই একান্তে অনুষ্ঠিত সভায়। সেখানে কী আলোচনা হয়েছে, সেটা জানা সাধারণের জন্য সম্ভব হয় না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চীন যাবেন কদিন পর। অনুমান করা যায়, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বিষয়ে ভারতের যা কিছু উদ্বেগ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে তা অবহিত করেছেন।

সফরকালে অনেক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর। তার বেশির ভাগই রুটিন ধরনের। কিন্তু তার মধ্যে একটি এমওইউ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এটি হচ্ছে দুই দেশের রেলওয়ের মধ্যে সম্পাদিত এমওইউ। এটির আওতায় ভারতীয় মালবাহী ট্রেন গেদে-দর্শনা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বাংলাদেশ রেলওয়ের লাইন ব্যবহার করে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি দিয়ে ভারতে বেরিয়ে যাবে। 

যে রুটটা ব্যবহার করবে ভারতীয় ট্রেন, সেটা একটি বহুল ব্যবহৃত রুট। বাড়তি লোড নেওয়ার সক্ষমতা এখানে আছে কি না, সেটি একটি প্রশ্ন। সক্ষমতা বাড়াতে অবকাঠামো যদি আরও উন্নত করতে হয়, প্রশ্ন থেকে যাবে এটার অর্থায়ন কীভাবে হবে। আবার এ জন্য যদি ঋণ নিতে হয় ভারত থেকে এবং শোধ করতে হয় সুদসহ, সেটা বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য বাড়তি বোঝা হতে পারে।

অপর বিষয়টি ঠিক এমওইউ নয়। অভিন্ন নদীর পানি নিয়ে দুটি নির্দেশনা দিয়েছেন দুই প্রধানমন্ত্রী। একটি হলো গঙ্গা নদীর ওপর ফারাক্কার ব্যাপারে, যে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে ২০২৬ সালে। একটি টেকনিক্যাল কমিটিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে চুক্তি নবায়ন নিয়ে আলোচনা শুরু করার। পানি বিষয়ে অপর নির্দেশনাটি তিস্তাসংক্রান্ত। 

বাংলাদেশের ভেতরে তিস্তা নদীর পানি সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা নিয়ে যে প্রকল্প চীনের সহায়তায় এবং অর্থায়নে হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, ভারত সেখানে একটি টেকনিক্যাল দল পাঠাবে এটা নিয়ে কথাবার্তা বলার জন্য। পরে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ভারতই সহায়তা করবে। 

ভারতের অর্থায়নে প্রকল্প নেওয়ার যে অভিজ্ঞতা, তাতে করে এমন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে যে বিষয়টা ঝুলে যেতে পারে বা দীর্ঘসূত্রতার পাল্লায় পড়তে পারে। কিছু বিশেষজ্ঞও মতামত দিয়েছেন যে এতে কালক্ষেপণই হবে শুধু। তিস্তা প্রকল্পের এই অঞ্চলটি ভারতের শিলিগুড়ি করিডর থেকে বেশি দূরে নয়। এ কারণে ভারতে উদ্বেগ আছে যে এই এলাকায় দীর্ঘদিনের জন্য চীনা উপস্থিতি ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। এটা খুবই সম্ভব যে ভারতের চাপেই এই প্রকল্প থেকে চীনকে বাদ দিতে হচ্ছে।

তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে অনেক বছর যাবৎ কোনো কথা নেই, এবারও দৃশ্যত কোনো কথা হয়নি। এর মাঝে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছেন শক্ত ভাষায়, যেখানে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তিস্তার পানি বাংলাদেশকে দেওয়া যাবে না। বর্তমান শর্তে গঙ্গাচুক্তি নিয়েও তিনি তার আপত্তির কথা ব্যক্ত করেছেন। 

শুকনো মৌসুমে তিস্তার পানি অনেক বছর যাবৎই পাচ্ছে না বাংলাদেশ, শতভাগ পানি আটকে দিয়ে ভারতই তা ব্যবহার করছে। তিস্তায় পানি সংরক্ষণের বিকল্প প্রকল্প বাস্তবায়নও স্পষ্টতই অনিশ্চিত হয়ে গেল। মনে হচ্ছে তিস্তা অববাহিকায় বাংলাদেশের যে মানুষ আছে, পানির জন্য তাদের প্রতীক্ষা আরও দীর্ঘায়িত হবে। 

পত্রিকায় দেখলাম, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন ভারতের সঙ্গে যেসব সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, সব কটি বাংলাদেশের স্বার্থে হয়েছে। হবে হয়তো! তবে আমার মতো সাধারণ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ বুঝতে পারছে না গেদে-দর্শনা দিয়ে ঢুকে ভারতীয় মালবাহী ট্রেন যদি বাংলাদেশের রেললাইন ব্যবহার করে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি দিয়ে বেরিয়ে যায় আবার ভারতে, তাতে বাংলাদেশের স্বার্থটা কোথায়? তিনি ইউরোপে ছিলেন দীর্ঘকাল এবং সেখানকার ট্রেন এক দেশ থেকে আরেক দেশে চলে যায় বলেছেন। 

নিতান্ত সত্য কথা। আমি নিজেও ট্রেনে ইউরোপের এ-মাথা থেকে ও-মাথা ভ্রমণ করেছি, কোথাও থামতে হয় না। এমনকি আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের এসএডিসিভুক্ত ১৬টি রাষ্ট্রের নাগরিকদেরও পাসপোর্ট লাগে না এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেতে। আমি যখন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মোজাম্বিক, বতসোয়ানা বা নামিবিয়া যেতাম দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে, আমার ভিসা লাগত। কিন্তু আমার স্থানীয় গাড়িচালক পরিচয়পত্র দেখিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে যেতেন। 

তফাতটা হচ্ছে, ইউরোপে বা দক্ষিণ আফ্রিকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই, আর সীমান্তে গুলি করে মানুষও মারা হয় না। বাংলাদেশ-ভারতের মাঝে যখন এই দুটো জিনিস থাকবে না (যদি কোনো দিন তা হয়), ট্রেন চলাচল নিয়েও তখন কোনো কথা উঠবে না। বাংলাদেশ থেকে ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল, ভুটানে ট্রানজিটের কথা শুনতে শুনতে চাকরি থেকে অবসরে গেছি। আমার ১০ বছর কনিষ্ঠরা অবসর নিচ্ছেন এখন। একটি ট্রাকও এযাবৎ বাংলাদেশ থেকে মালামাল নিয়ে ভারতের ভেতর দিয়ে এই দেশ দুটোর কোনোটিতে যেতে সক্ষম হয়নি।

লেখক: সাবেক পররাষ্ট্রসচিব

নামের এদিক-ওদিক

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ১১:০২ এএম
আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ১১:০২ এএম
নামের এদিক-ওদিক
ড. পবিত্র সরকার

আমার একটা নাম হয়ে গেল ছেলেবেলায় আর তা নিয়ে সারা জীবন খুশি আর নিশ্চিন্ত থাকলাম, জীবন আমাদের সে সুযোগ খুব বেশি দেয় না। বিশেষ করে আমাদের বাঙালি হিন্দু নামের ক্ষেত্রে নানা ঝামেলায় পড়তে হয়। মুসলমান নাম তো বেশির ভাগই ধর্মীয় নাম, তা নিয়ে কী রকম টানাহেঁচড়া হয়, তা আমার মুসলমান বন্ধুরা বলতে পারবেন। 

কিন্তু একটু বেখাপ্পা নাম হলো, এমনকি সাধারণ নাম হলেও ছোটবেলায় বন্ধুরা তা নিয়ে নানা রকম ভাঙচুর করে। যেমন- ‘অনুপম’ না ‘ফনুপম’, ‘শুভশ্রী’ না ‘ফুভশ্রী’- এ রকম আরও কত ভেংচি-টিটকিরির খেলা খেলে। আমাদের সেগুলো সহ্য করতেই হয়। আর অভিনব নামের (আজকাল ভুল ব্যাকরণ বা বানানে অভিনব নামের খুব রমরমা চলছে) নানা দুর্গতি তো আছেই। শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্তকে শ্রী (ছিরি) আবার তার ওপরে ‘কান্ত’ থাকার জন্য পাঠশালার পণ্ডিতের কাছে যথেষ্ট হেনস্তা হতে হয়েছিল।  

বন্ধুরা যে নাম বিকৃত করে সে তো তবু খেলা। এ নামগুলো অস্থায়ী, এগুলো আজীবন গায়ে লেগে থাকে না। কিন্তু আমি আগেও লিখেছি, আমাদের সমাজে যেহেতু শ্রেণিবিভাগ আছে, সব মানুষকে আমরা সমান ভালোবাসা বা শ্রদ্ধার চোখে দেখি না, আমাদের সংকীর্ণ সমাজই দেখতে দেয় না। ফলে যার নাম মদন, তার নাম আমাদের কাছে হয়ে যায় ‘মদ্না’, যার নাম কৃষ্ণ, সে হয় ‘কেষ্টা’। এই রকম বঙ্কিম থেকে ‘বঙ্কা’, আশুতোষ থেকে ‘এশো’, পঞ্চানন থেকে ‘পচা’, গৌরাঙ্গ থেকে ‘গৌরা’।  

মেয়েদেরও নামের এই রকম বিকৃতি ঘটে, যেমন বিমলা হয় ‘বিম্লি’, সাবিত্রী হয় ‘সাবি’, রাধা হয় ‘রাধি’। পূর্ববঙ্গের মুসলমান নামেরও এই রকম ভাঙচুর হতে আমি শুনেছি, যেমন রহমান হয়েছে ‘রহমাইন্যা’, শাকিল হয়েছে ‘শাকিল্যা’, ফতিমা হয়েছে ‘ফতি’। বাংলায় তিনটে ব্যাকরণের প্রত্যয়— আ, ইয়া আর উয়া এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে -ই-কে এই ব্যাপারে খুব কাজে লাগানো হয়। 

এ তো গেল অনাদরের কথা। আদরেও আমরা নাম একটু বদলাই, তাতে -উ বা -উয়া প্রত্যয়ের কারবার চলে। মনোহর বা মনোরঞ্জন ‘মনু’ হলে আদরের, ‘মনা’ হলে তা অধিকাংশ সময় অনাদরের। এমনকি ‘পচা’ নাম যার, তাকেও ‘পচু’ বলে যে ডাকবে, সে অবজ্ঞা নিয়ে ডাকবে না। বঙ্কিমের ‘বঙ্কা’তে যা একটু তুচ্ছতার ছোঁয়া আছে, ‘বঙ্কু’তে তা একেবারেই নেই।  এই রকম ‘কেবলু’, ‘ভেবলু’, ‘নেকু’, ‘হেংলু’। আমার মুসলমান বন্ধুরা বলবেন তাদের নামে এ ধরনের কোনো হেরফের চলে কি না। প্রিয় ডাকনামে এ রকম প্রায়ই ঘটে। তবে আপনারা সবাই তো জানেন, ডাকনাম আর সরকারি নামের লজিক সম্পূর্ণ আলাদা।  

আধুনিক অনেক (সরকারি বা ফর্মাল) নাম অবশ্য এই পরিবর্তন-প্রুফ। তাদের নিয়ে ঝামেলা করা খুব মুশকিল। যেমন- সৌমিত্র, প্রদীপ, শুভব্রত, শুভঙ্কর, রঞ্জাবতী, সুতনুকা— এসব নাম এমনই ঘাবড়ে দেয় যে, তা নিয়ে টানাহেঁচড়া করতে আমাদের কারও বিশেষ সাহস হয় না। তাদের ওপর বিরাগ প্রকাশ করতে হলে গালি শব্দের আশ্রয় নিতে হয়— সে ‘পাজি’, ‘হারামজাদা’ বা ‘হারামজাদি’ বা ‘হতচ্ছাড়া’ বা ‘হতচ্ছাড়ি’ কোথায়? ইত্যাদি বলতে হয়। শুধু নাম নিয়ে আমরা সুবিধে করতে পারি না।  তাই বোধ হয় আজকাল ডিকশনারি দেখে বড় বড় নাম দেওয়া খুব বেড়েছে। এগুলো ভেংচি-প্রুফ বলা যায়।

আমার নিজের নাম নিয়ে খুব বড় কোনো সমস্যা অবশ্য নেই।  আমার পারিবারিক নাম ছিল পবিত্রভূষণ, সেটা সরকারি খাতায় আছে। তবে আমার কাজের জন্য মাঝখানটা কেটে আমি ছোট করে নিয়েছি। সেটা আমার গণতান্ত্রিক অধিকার ভেবে। শুধু একটাই অসুবিধে যে, দেখি সবাই সেটা পছন্দ করেনি। তারা ভাবে, এই লোকটার এত ছিমছাম নাম হবে কেন? 

এর তো একটা ভারী পদ ছিল একসময়, নামটাও একটু ভারী হওয়া দরকার। তাই তারা নানা কার্ডে আমার নামের মাঝখানে একটা ‘কুমার’ বসিয়ে দেয়, যা আমার কস্মিনকালেও ছিল না, আমার নামের ক্ষেত্রে কথাটা সম্পূর্ণ বহিরাগত, অনাহূত, ফরিন- এলিমেনট্। যা হোক, এসব ছোটখাটো ভালোবাসার উপদ্রব সহ্য করতেই হয়, সেল্ফি তোলার অনুরোধের মতো। তাই আমি কিছু মনে করি না।

ওই যে ডিকশনারি দেখে নামের কথা বলছিলাম, তা আমিও জীবনে একসময় এই একই অপরাধ করেছি, আমার মেয়েদের নাম একটু অন্য রকম রেখেছি। বড় মেয়ের নাম বসুধিতি, যার মানে পৃথিবী।  এই নাম রেখেছিলাম মনিয়ের উইলিয়াম্সের বড় সংস্কৃত ডিকশনারি দেখে। তাতে আমার কোনো পার্থিব সুবিধে হয়নি। তা এ নাম যেই প্রথম শোনে সে বলে, কী ‘বসুধৃতি’? মেয়ে যখন বলে যে না, ‘ধি’, তখন তারা খুব হতাশ হয়, মনে হয় তাদের অপমান করে হয়েছে ওই ঋ-কার বাদ দিয়ে। 

তাদের কাছে একটা ঋ-কার কেন যে এত প্রিয় তা বুঝি। কারণ ‘ধিতি’ কথাটা বাংলায় খুব কম ব্যবহার হয়, মানে যে বসু বা ঐশ্বর্য ধারণ করে আছে। এই দেখে সাবধান হয়ে ছোট মেয়ের নামে ঋ-কারকে ভাগিয়ে দিয়ে দিলাম ‘বসুধারা’। ও মা, তাতেও কি শান্তি আছে! তাকে ‘বসুন্ধরা’ ‘বসুন্ধরা’ সবাই পাগল। একটায় আসে অবাঞ্ছিত ঋ, আর একটায় আসে অপ্রার্থিত দন্ত্য ন্।  এই ঋ-কার বা দন্ত্য ন্ কেউ আমার শত্রু নয়, তারা নিজের নিজের জায়গায় থাকলে আমি তাদের রীতিমতো আদর করি। কিন্তু আমার মেয়েদের নামে তারা এসে অকারণে হানা দিলে আপত্তি না করে পারি না।

 এই বয়সে স্মৃতি দুর্বল হয়ে আসে। ফলে প্রচুর নাম আমি ভুলে যাই। আমার মুখের স্মৃতি কিছুটা সজাগ, কিন্তু নামের স্মৃতি তত পোক্ত নেই আর। কিন্তু তাই বলে কারও কিম্ভূত ভুলভাল নাম তেড়েমেরে উচ্চারণ করতে যাই না। যেমন আমার ছোট জামাইয়ের নাম তপ্তকাঞ্চন। তাকে কোনো একটা বিয়েবাড়িতে একজন পূর্বপরিচিত লোক দেখে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিল, ‘এই যে সপ্তসাগর, কেমন আছ?’ তবু আমি সেই ব্যক্তিকে ধন্যবাদ দেব যে সে ‘প্ত’-এর যুক্তব্যঞ্জনটা পর্যন্ত মনে রাখতে পেরেছে। আমার পক্ষে তাও সম্ভব হয় না।   

আমার অতি সুশ্রী ভ্রাতৃবধূ দীপা বা মণিকুন্তলার অভিজ্ঞতা আরও একটু মজার। সে জানাল তার স্কুলে তার সহপাঠিনীরা তার পুরো নামটা কিছুতে জুত করতে পারত না। তারা তাকে ‘মানিকতলা’ বলে ডাকত। এখনো তারা দেখা হলে ওই নামই ব্যবহার করে।  নাম নিয়ে শান্তিতে থাকা খুব মুশকিল। এ নিয়ে কত নাটক-টাটক হয়েছে!

লেখক: ভাষাতাত্ত্বিক পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং সাবেক উপাচার্য, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়

ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় বিপাকে মার্কিন জনগণ

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ১০:৫৯ এএম
আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ১১:২৪ এএম
ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় বিপাকে মার্কিন জনগণ
সাইমন জেনকিন্স

গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক টাইমস-এ ‘দোষী’ একক শব্দের শিরোনামে দেশব্যাপী হাহাকার ছড়িয়ে পড়ে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর অবমাননার দুর্দশা নেমে আসে যখন তিনি ম্যানহাটন কোর্টরুম থেকে ‘অপরাধী’ বলে কান্না শুরু করেন। তিনি এখন সাজার অপেক্ষায় রয়েছেন। আরও তিনটি ফৌজদারি বিচারের অপেক্ষা করছেন, তার মধ্যে দুটি ২০২০ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের প্রতিক্রিয়ার কারণে হয়েছিল। 

পরমানন্দ বা অতি উচ্ছ্বাস রাজনীতিতে খুবই  ভয়ংকর। ট্রাম্পের শত্রুদের সতর্ক হওয়া উচিত, তারা কী চায়। ট্রাম্প আদালত ছাড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩৯ মিলিয়ন ডলার তার প্রচারণার জন্য ব্যয় করেছেন। যদিও কিছু রিপাবলিকান দ্বিধাগ্রস্ত বলে মনে হয়েছিল, তারপরও তার পক্ষে ভোট দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। ২০১৬ সালে তার বিজয়ের মতো রাজনৈতিক দল যত বেশি তাকে দোষারোপ করে, তার নাগালের বাইরের লোকেরা তত বেশি তার প্রতি আকৃষ্ট হয়। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং সারা বিশ্বের অনেক লোকের কাছে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে, যদি তার অযৌক্তিকতা আরও হ্রাস করা হয়। বেশ কয়েকটি নির্বাচনি পোলে তার এখনো সংকীর্ণ সমর্থন রয়েছে, যা রিপাবলিকানদের আতঙ্ক তৈরির জন্য যথেষ্ট। 

স্পিকার মাইক জনসনের কাছে ‘আমেরিকান ইতিহাসে এটি একটি লজ্জাজনক দিন’। একটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক অনুশীলন ছিল। ডানপন্থি মিডিয়ার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। রুপার্ট মারডকের ‘নিউইয়র্ক পোস্ট’ সংবাদের ‘দোষী’ শিরোনামের উত্তর দিয়েছে আরেকটি একক শব্দ ব্যবহার করে তা হলো ‘অবিচার’।

অনেক আইনবিদের মতে, ট্রাম্পের প্রসিকিউটর অ্যালভিন ব্র্যাগ একজন নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট, যিনি ট্রাম্পকে অবনমিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি বিচারকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছেন। এটি সাবেক প্রেসিডেন্টকে পরের বছর আপিলে বিজয়ের সুযোগ তৈরি করে দেয়। 

যদি তা অনুসরণ করা হয় তাহলে বাইডেন জয়ী হবে। তবে বিপদের আশঙ্কাও রয়েছে। ট্রাম্প তার সম্ভাব্য গৃহবন্দিদের বলেছিলেন, ‘আমি নিশ্চিত নই যে জনগণ এর পক্ষে দাঁড়াবে… এটি একটি ব্রেকিং পয়েন্ট হতে পারে।’  ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি মার্কিন ক্যাপিটলে আক্রমণ করে তার অর্থ বুঝিয়ে দিয়েছিল।

ট্রাম্পের পরবর্তী বিচারের ক্ষেত্রে ‘আইনের বিলম্ব’ হয়নি। স্পষ্টভাবে ন্যায়বিচার অস্বীকার করা হয়নি। মার্কিন বিচার বিভাগীয় কার্যালয়গুলো রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকাকালীন সুপ্রিম কোর্টও তার নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন। তার বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযোগ স্থগিত করে রেখেছেন। রাজনৈতিক শত্রু হিসেবে স্থানীয় রাষ্ট্রীয় আইনজীবীদের বরখাস্ত করার জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তিনি ‘বাম-আমেরিকানদের’ কথা বলেছেন, যাদের  ‘জলাভূমি’ বলে উপেক্ষা করেছেন। 

‘অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত’ এবং শহর ও প্রদেশের মধ্যে উপসাগরকে উপেক্ষা করা যায় না। সব পশ্চিমা গণতন্ত্রেই তা স্পষ্ট। এটি ব্রিটেনে ব্রেক্সিট গণভোটের ওপর ভিত্তি করে নাইজেল ফারাজ থেকে বরিস জনসন পর্যন্ত ট্রাম্পের সমর্থন লক্ষ করা যায়। ট্রাম্প তার বিচারকে ‘মেশিন গান’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। 

এর মানে হলো, যারা ট্রাম্পের আরেকটি প্রেসিডেন্সিকে বিপর্যয় হিসেবে দেখেন, তাদের জন্য পরবর্তী ছয় মাস উল্লাস না করে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। ট্রাম্পের সমর্থকদের প্রতি তার আবেদন- স্নেহ নয় বরং শত্রুদের প্রতি তিনি যে ঘৃণা প্রকাশ করেন তার মধ্যে সব খুঁজে নিতে হবে। 

এ কারণেই তার সমর্থন অল্পশিক্ষিত, দরিদ্র, আফ্রিকান-আমেরিকান এবং এমনকি ল্যাটিনদের মধ্যেও বাড়ছে। জো বাইডেনের শক্তি বরং উচ্চশিক্ষিত এবং আরও মার্জিত মানুষের মধ্যে নিহিত রয়েছে। গণতন্ত্রের যুগে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটের মধ্যে বিভাজন করা অর্থহীন।

উত্তরটি ট্রাম্পবাদের সঙ্গে যুক্তি হতে পারে না, যা একটি প্রোগ্রামের চেয়ে অবস্থানকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। বাইডেনের সঙ্গে টেলিভিশন বিতর্ক নিছক তর্কমাত্র। কৌশলটি হতে পারে শুধু চাপ কমিয়ে আনা, ট্রাম্পের অযৌক্তিক অভিযোগের প্রচার কমিয়ে আনা। বাইডেনের প্রেসিডেন্সির গুণাবলি এবং তার ক্রমবর্ধমান নেতৃত্বকে শক্তিশালী করা। 

হোয়াইট হাউসের নির্বাচন ওয়াশিংটন এবং রাজ্যগুলোর মধ্যে সংবিধানের সার্বভৌমত্বের ভারসাম্যকে প্রতিফলিত করে। রাজ্যগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে সুইং স্টেটগুলো যারা নিয়মিত পক্ষ পরিবর্তন করে, যেখানে প্রতিযোগিতায় জয়ী বা হেরে যায়। বহির্বিশ্ব চিন্তা করে যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট কে হবে।  এই সময়ে নেতিবাচক প্রভাবগুলোই সবাই খেয়াল রাখে।

লেখক: ব্রিটিশ লেখক ও গার্ডিয়ান কলামিস্ট
দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: সানজিদ সকাল