এ কথা অনস্বীকার্য যে, দেশ-সমাজ-সংসারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা-প্রয়োগের প্রধানতম পূর্বশর্ত হলো ব্যক্তিজীবনে শুদ্ধাচারিতা। ব্যষ্টি থেকেই সমষ্টি। সঠিক জীবনদৃষ্টি প্রয়োগ করে মেধা ও প্রতিভার পরিপূর্ণ বিকশিত ব্যক্তিই ‘স্ব-উদ্যোগ, স্ব-পরিকল্পনা ও স্ব-অর্থায়ন দ্বারা সৃষ্টির সেবায় সংঘবদ্ধভাবে কাজ করে অশান্তিকে প্রশান্তিতে, রোগকে সুস্থতায়, ব্যর্থতাকে সাফল্যে, অভাবকে প্রাচুর্যে রূপান্তরিত করতে পারে।’ বলা বাহুল্য, সুশাসনের ফলিত রূপ হচ্ছে শুদ্ধাচার আর জবাবদিহিহীনতার ফলিত রূপ হচ্ছে দুরাচার। সুশাসক যেমন দুরাচারী হতে পারে না, তেমনি দুরাচারীও কখনো সুশাসক বলে গণ্য হতে পারে না।
ব্যষ্টি ও সমষ্টির জীবনে শুদ্ধাচার বা সদাচার চর্চার তাৎপর্যময় আবশ্যকতার কথা তাবৎ ঐশী গ্রন্থে, ধর্ম প্রবর্তক-প্রচারক, পণ্ডিত প্রবরের বাণীতে। সেই সদাচার-শুদ্ধাচারের চর্চা অবলম্বন অনুসরণ যুগে যুগে নানান প্রেক্ষাপটে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটেছে। সদাচার-সুশাসন লোপ পেলে ব্যক্তি-সমাজ-সংসার নিপতিত হয় নানান অরাজক পরিস্থিতিতে। মানবসমাজে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সূচনা-বিকাশ-বিবর্তনও ঘটেছে শুদ্ধাচারের প্রতি আকিঞ্চন আকাঙ্ক্ষা ও দায়বদ্ধতা থেকে। শান্তি ও শৃঙ্খলার স্বার্থে, সহযোগিতা-সহমর্মিতার স্বার্থে, ন্যায়নীতিনির্ভরতার স্বার্থে ও তাগিদে সুশাসনকে অগ্রগণ্য সাব্যস্ত করা হয়েছে।
তেপ্পান্ন বছর বয়সী বাংলাদেশি সমাজ, প্রশাসন ও অর্থনীতিতে সর্ববিধ বিবেচনায় নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু, রাজপথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে এবং ক্ষেত্রবিশেষে তাদেরও বেপরোয়া আচরণ, বিদেশে বিপুল অর্থ পাচারের মতো অর্থনীতির সমূহ সর্বনাশসাধন, সেবাধর্মী সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির প্রতিকার না পাওয়ার মতো বিষয়গুলো দিন দিনই সাধারণ মানুষকে যাতে আরও উদ্বিগ্ন করে না তোলে, সে জন্য সংবিধান-শুদ্ধাচার বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করছেন, রাষ্ট্রই সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে, সরকারি প্রতিষ্ঠানকে আনবে জবাবদিহির মধ্যে, যাতে সরকারকে মুখোমুখি হতে হবে না অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতির।
কেননা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কারণে সরকারের প্রতি আস্থা হারাতে পারে সাধারণ মানুষ। রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতি এই আস্থাহীনতাই জন্ম দেয় সামাজিক অনাচার ও রাজনৈতিক সহিংসতার। ইতিহাসের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ এ কথা স্পষ্ট যে, ঔপনিবেশিক শাসন প্রশাসনযন্ত্রের যাবতীয় অন্যায়-অনিয়ম ও শোষণ-বঞ্চনারহিত সুশাসন-সদাচারী সমাজ বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা থেকেই ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগ এবং ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো মানুষের রক্তত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা। সেই স্বাধীন রাষ্ট্রে সুশাসন-শুদ্ধাচারের যে দুর্গতি, তার স্বরূপ সন্ধান ও প্রতিকারের দাবি তাই জোরেশোরে উঠছে।
রসুলপুরের চৌধুরীদের একসময় বেশ প্রতিপত্তি ছিল। জমি-জোতদারি তো ছিলই, ছিল লোকলস্কর, পাইক-পেয়াদার বিশাল বহর। মহিষার মাঠে চাঁদের রাতে তাদের অশ্বারোহীর দল যখন পরের দিন পাশের জমিদার রামজীবনপুরের প্রাণনাথ বাবুর তালুকদারি দখলের লড়াইয়ে নামার মহড়া দিত, তখন বোঝা যেত ক্ষমতা ও কুর্নিশের কৌলীন্য কীভাবে সময়ের স্রোতে বহমান। হোমনাথ ছিল অশ্বারোহী দলের দলপ্রধান এবং চৌধুরীদের প্রধান প্রতিরক্ষক। তার বিশাল বপু ও পেটানো শরীর মনে করিয়ে দিত শক্তিমত্তা যেন চিরস্থায়ী পত্তন নিয়েছে তার চোখে, চোয়ালে ও দুই হাতের কবজিতে। মনে হতো সে যেন মর্ত্যলোকের অমর্ত্য অবয়বের প্রতীক। কিন্তু কালের কপোলতলে সম্রাট শাহজাহানের পত্নীপ্রেমের পসার যেমন অমরতা পেয়েও পায়নি, তেমনি নজিরবিহীন হোমনাথকেও একদিন কঙ্কালসার হয়ে শবযাত্রায় শামিল হতে হয়েছিল।
বর্মপরিহিত সশস্ত্র হোমনাথ অনেক দূর পর্যন্ত তার দুচোখকে প্রসারিত করে শত্রুর নিশানা ঠাওর করতে পারত। কিন্তু তার জীবনের অনিবার্য পরিণতি নিয়ে দূরদৃষ্টি দূরে থাক, নিকটদৃষ্টিতেও ছিল না। তার মনের জোর তার চাহনিতে, সহিসের লাগাম টানায় কিংবা তরবারির চাকচিক্যের মধ্যে মূর্ত হয়ে উঠত। তার মনে হতো অমরাবতীর জলে তার মা জননী তাকে যেন সদ্য চুবিয়ে এনেছেন- তার গোটা দেহ অমরার আশীর্বাদ পেয়েছে।
তার ধরাকে সরা জ্ঞানের কাণ্ডকারখানা দেখে একদিন তার মা ডেকে বলেন, ‘বাছা আশপাশে একটু তাকাস। কেউ কিন্তু একদিনের জন্যও এককভাবে চিরদিনের চরণতলে ঠাঁই পায়নি।’ মায়ের কথা হোমনাথের বড্ড বেশি মনে পড়ে সেদিন, যেদিন নকীপুরের হরিচরণ বাবুর তিরন্দাজ বলরামের ছোড়া ছোট্ট একটা তির তার বাঁ হাতের খালি জায়গাটাতে এসে বেঁধে। সেই তিরে বিষ মাখানো ছিল- পচন ধরেছিল সে জায়গায়, সারানো যায়নি হাজার বদ্দি-কবিরাজি করেও। হাতের কবজিসমেত কেটে ফেলেও শেষরক্ষা হয়নি তার।
হোমনাথরা একবার জমিদার বাবুর সঙ্গে বাদায় গিয়েছিল। জমিদার বাবু বলেছিলেন, বাদায় বড় মিয়া আছে। চল তার সঙ্গে মোলাকাত করে আসি। তার ধারণা হয়েছিল, শ্মশ্রুমণ্ডিত কোনো সাঁইবাবা হবেন হয়তো বড় মিয়া, যার সঙ্গে কর্তার সম্পর্ক বহুদিনের। হোমনাথ নিজেও মাঝেমধ্যে সাঁইবাবাদের আখড়ায় গিয়ে নিজের মনের খবর নেওয়ার কথা ভাবত না যে তা নয়। বিশাল বজরায় তাদের যাত্রা সাত-আট দিনের বনবাস না বন উপভোগের জন্য।
জমিদার বাবুর বজরা তেঁতুলখালির খাড়িতে নোঙর করেছিল। নোঙর করার পর বিরাট এক বাঘ বাদার দিক থেকে ‘হালুম’ শব্দ করে যখন হুংকার দেয়- দুজন বরকন্দাজ তৎক্ষণাৎ পানিতে পড়ে যায়- পাশে কুমির ছিল। তারা হজম করে ফেলে তাদের। জমিদার বাবু জানালেন, ‘বড় মিয়া’ আমাদের স্বাগত জানিয়েছেন। আর তার ভাষা না বুঝতে পেরে পরান ও প্রণবরা পানিতে পড়ে গেল! হোমনাথের সংবিৎ ফেরে। সে বুঝল এই ‘বড় মিয়া’ তো সাঁইজির ধারেকাছের কেউ নন।
ইনি তো বাদার বড় জমিদার সুন্দর মিয়া। তখন সন্ধ্যা হবে হবে- পশুর নদী থেকে তারা তেঁতুলখালীর খাড়িতে ঢুকেছে ঘণ্টাখানেক হলো। এর মধ্যে এই ‘হুংকার’, জমিদার বাবু যাকে বলছেন ‘অভ্যর্থনা’। আর সেই অভ্যর্থনায় পরান-প্রণবের কুমিরের পেটে চালান হওয়া। ব্যাপারটা ভয়ানক! বজরা নোঙর করা হলো খালপাড় থেকে নিরাপদ দূরত্বে। বড় মশাল জ্বালানো হলো। খালপাড় দেখা না গেলেও খালপাড়ের বড় মিয়ার শাগরেদরা যাতে তাদের শনাক্ত ও সমীহ করতে পারেন তেমন একটা ধারণায়।
জমিদার বাবু সামনের ডেস্কে তার গদিতে বসে নল টানছেন। এখন বসন্তকাল। আকাশে তারা। মৃদুমন্দ বাতাস। ডানে-বায়ে গভীর বাদা। বজরায় রাগপ্রধান গানের রেশ- বাইজিরা নাচছে- এমন সময় একটা উল্লুক প্রকৃতির পাখি এসে ছোঁ দিয়ে যেন নিয়ে গেল বজরায় বাঁধা জুনিয়র ছাগলটিকে। এই ছাগলটি আনা হয়েছে ‘বড় মিয়া’র মনোরঞ্জনের জন্য, তাকে ভেট দেওয়ার জন্য। এই রাতে এই খালপাড়ে ছোঁ মারার মতো এত বড় উল্লুক পাখি কিংবা কিছু কীভাবে এল- কেউ ভাববার আগেই ঘটনাটা ঘটে গেল। জমিদার বাবু আবার ব্যাখ্যা করলেন, ওটা কিছু না।
‘বড় মিয়া’র উড্ডয়ন বাহিনী আমাদের একটা ছবক দিতে এসেছিল। আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, তা দেখতে আর যাওয়ার সময় ছাগলটাকে আগেভাগে ভেট চাইছেন হয়তো ‘বড় মিয়া’। জমিদার বাবু রসিকতা করলেন- দেখ না, আমাদের নায়েব মশাই- খাজনা আদায়ের আগে নিজে কত পাবেন তার হিসাব কষেন। ‘ওমা, জমিদার বাবু এটাও জানেন তা হলে! তিনি তবে কেন এমন নায়েব রাখলেন?’ হোমনাথের মাথায় ঢোকে না। তার পাশে ছিল কূটবুদ্ধি বিভাগের রঘুনাথ বাবু। কানে কানে বলেন- ‘এটা হচ্ছে পরস্পরকে ভেট দেওয়ার রীতি’, ‘সেটা কেমন’? ফিসফিস করে জানতে চায় হোমনাথ। রঘু বাবু বলেন- ‘তুমি শুধু তরবারি চালিয়েই গেলে- এটুকু তোমার মাথায় ঢোকে না- আরে নায়েব মশায়ের যেমন দরকার জমিদার বাবুর আশীর্বাদ, তেমনি জমিদার বাবুরও দরকার নায়েব মশায়ের আনুগত্য ও তেলেসমাতি।
সে কারণে জমিদার বাবু দেখেও না দেখার ভান করেন নায়েব বাবু যাতে কিছু কামাতে পারেন রায়ত প্রজার কাছ থেকে- নইলে নায়েব বাবু তার পক্ষে কেন অতিখেয়ালি হবেন খাজনা আদায়ে? আরও জানো, প্রজার পয়সা জমিদার বাবুর বেশি বেশি দরকার তার নিজের, পরিবারের ও জ্ঞাতিগোষ্ঠীর হাতে তোলার জন্য। সবাইকে হাতে না রাখলে নিজের গদি নিয়ে টানাটানি। এটা একধরনের গদি রক্ষার জন্য উৎকোচ বলা যায়। আমাকে গদিনশিন থাকতে দাও- এর জন্য তোমার নিজের পেট যেভাবে ভরতে চাও- ভরো। আমি কিছু বলব না। বিষয়টা হোমনাথের কাছে নজিরবিহীন মনে হয়।
সে ভাবে, তাই তো, আমার আনুগত্য নিশ্চিত করার জন্য জমিদার বাবু আমাকে অনেক এনাম, অনেক সম্মান, অনেক সুযোগ দিয়ে রেখেছেন, যাতে আমি কখনো বিগড়ে না যাই কিংবা বিশ্বাসঘাতকতা করে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে না পড়ি অথবা জমিদার বাবুর বিরুদ্ধবাদী বা বিপক্ষ অভ্যন্তর কিংবা বাইরের কারও সঙ্গে যাতে হাত না মেলাই। যাতে সময়মতো তিনি আমাকে তুরুপের তাস হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন। জমিদার বাবু যথেষ্ট আত্মসচেতন এসব ব্যাপারে। কেননা তিনি বিচক্ষণ। জানেন বড় রক্ষকের মাথা যদি বিগড়ে যায় তাহলে তার নিজের জন্য তো বটেই, গোটা জমিদারি হুমকির মুখে পড়তে বাধ্য। সে এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে।
হোমনাথ বড় একটা মঞ্চে বসা রঘুনাথ বাবুর দিকে ঠায় তাকিয়ে। তিনি ওখানে ওই বাঘটার পাশে বসে রয়েছেন কেন- এ তো ভয়ানক কাণ্ড দেখি। বেশ বড় ধরনের একটা হল ঘর। ঘোষণা দেওয়া হলো অনুষ্ঠানের প্রধান প্রতিবেদন উপস্থাপনকারী হিসেবে আছেন আপ্যায়িত অতিথি বিশিষ্ট গবেষক এবং প্রতিবেশী লোকালয়ের জমিদার চৌধুরী প্রবরের প্রধান কূট পরামর্শদাতা মি. রঘুনাথ। তাকে সুন্দর মিয়া বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন কয়েক শ বছর আগেকার মগ সম্প্রদায়ের রাজত্বকালে সেখানকার সামাজিক পরিবেশ সম্পর্কে গবেষণার জন্য। ঘোষণা শুনে হোমনাথের বুক গর্বে ভরে উঠল এবং তখন তার মনে হলো বাঘকে মানুষ ভয় পায় খামোখা- বাঘদের সরদার এবং এই বাদার স্বঘোষিত রাজ্যের প্রধান সুন্দর মিয়া কত বিচক্ষণ এবং ইতিহাসসচেতন।
ঘোষণা অনুযায়ী রঘুনাথ উঠে দাঁড়ালেন, পোডিয়ামের কাছে গিয়ে তার নিবন্ধ পাঠ শুরু করলেন। হোমনাথ প্রথমে তার ভাষা বুঝতে পারছিল না এবং তার আশঙ্কা হচ্ছিল, এই রঘুনাথ বাবু তাদের সেই রঘুনাথ বাবু তো! এখন তিনি এ কি কোন ভাষায় কথা বলছেন। এর মধ্যে একটি সুদর্শন হরিণ এসে হোমনাথের কানে ফুঁ দিয়ে যাওয়ার পর সে বুঝতে পারল ভাষা। শুনতে পেল রঘুনাথ বাবু প্রাচীনকালে মগ রাজাদের সময়ের কথা বলছেন। রঘুনাথ বাবু একটু বিস্তারিত বয়ানে যাচ্ছিলেন। তখন সুন্দর মিয়া পাশে বসা হরিণা হাপানকে ইশারা করে জানাতে বললেন, রঘুনাথ বাবু যেন তার তার গবেষণার সারবস্তুতে সরাসরি চলে যান।
রঘু বাবু সারবস্তুতে গেলেন- মগরাজাদের অন্যতম অধস্তন রাজা ছিলেন পাগালান। তাহার পিতাও ছিলেন তাহার চাইতে বড় রাজা। পাগালান পিতার গর্বিত সন্তান হিসেবে রাজকর্ম পরিচালনা করিতেন। একপর্যায়ে প্রতিবেশীদের পরামর্শ ও কূটবুদ্ধি লইয়া তিনি রাজ্য অভ্যন্তরে এমন একটি অবস্থা তৈরিতে মনোনিবেশ করিলেন যেন যে কেহ তাহার বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দটি করিতে না পারে। বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দেখভালের ভার এমন ভাঁড়দের নিকট দেওয়া হইল যে, তাহারা ইহার মাধ্যমে এমন এক ভীতির সৃষ্টি করিতে সক্ষম হইলেন যে, রাজার খয়ের খাঁ হইলে সাত খুন মাফ এবং আপন না হইলে তাহাদের সামান্য ছুতা-নাতায় দোষী বানানো অব্যাহত রহিল।
দেখা গেল আজ যিনি খয়ের খাঁ, মুহূর্তের মধ্যে তাহাকে বাকির খাতায় চলিয়া যাইতে হইত। দেখা গেল কোথাও সর্পাঘাতে কাহারো মৃত্যু হইলেও এই সাপের মন্ত্রদাতা সাজাইয়া শত্রুপক্ষের সবাইকে অভিযুক্ত করা হইত। কর্তাভজার সেই সময়ে ঘাটের পানি আঘাটায় প্রবাহিত হইতে লাগিল। পাগালান মগরাজার এসব কর্মকাণ্ড দেখিয়া, ভয় পাইয়া, অবরুদ্ধ হইয়া ক্রমে ক্রমে দেখা গেল সেই মুল্লুকে সকলে কোনো কথা বলা বন্ধ করিয়া মুখে কুলুপ আঁটিতে অভ্যস্ত হইয়া পড়িল। মগের মুল্লুকে যে মৌনতা দেখা গেল, সেই মুল্লুক বেশি দিন টেকে নাই বলে রঘুনাথ বাবু উপসংহার টানেন। তার বক্তব্য শেষ হলেই মঞ্চের চারদিকে এক ধরনের শোরগোল শোনা গেল। এতে আনন্দ না প্রতিবাদ প্রকাশ পেল তা বোঝা গেল না।
পাশে রঘুনাথ বাবু তখনো ঘুমাচ্ছেন। হোমনাথ এতক্ষণ স্বপ্নের ঘোরে ছিল। ঘোর কেটে গেলে সে বাইরের চিৎকার শুনতে পেল। বজরার পাটাতনে যে খালাসি ও চৌকিদাররা ছিল, তাদের একজনের পা কেটে নিয়ে গিয়েছে কুমিরে এই কিছুক্ষণ আগে।
[রস রচয়িতা]
লেখক: সাবেক সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান
[email protected]