ঢাকা ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে রেল ট্রানজিট ও তিস্তা প্রকল্প

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ১১:০৪ এএম
আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ১১:০৪ এএম
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে রেল ট্রানজিট ও তিস্তা প্রকল্প
মো. তৌহিদ হোসেন

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত গেছেন ২১-২২ জুন। দুই দেশেরই সরকার নতুন মেয়াদে প্রবেশ করেছে এবং দুই সরকারের মাঝে সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নতুন টার্মে প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে ভারতে যাওয়া বা ভারত সরকারের নতুন মেয়াদের প্রথম অতিথি হওয়া খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। ১১ দিনের মাথায় দ্বিতীয়বার ভারত গমন নিয়ে অনেকে কথা বলছেন। তবে দ্বিতীয় সফরটা আগেই নির্ধারিত ছিল। শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার নিমন্ত্রণটা হঠাৎ এসে পড়ায় এই ছোট্ট বিভ্রাট।

সফর থেকে প্রাপ্তি নিয়ে কথা উঠেছে। বস্তুত বড় কোনো প্রাপ্তি এতে প্রত্যাশিত ছিল না। এ কারণে যদি বড় কোনো সমস্যার সমাধান করতে হয়, তার আগে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রস্তুতিমূলক সভা লাগে। এ রকম কিছু দেখিনি এই সফরের আগে। কাজেই আমি ব্যক্তিগতভাবে ধরেই নিয়েছিলাম যে, বড় কোনো কিছু ঘটবে না এই সফরে।  

শীর্ষ পর্যায়ের সফরে প্রতিনিধিদল নিয়ে যে আনুষ্ঠানিক সভা হয়, সেখানে খোলামেলা বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়, সভা অন্তে যা প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া থাকে একান্ত আলোচনা, যা হয় শুধু দুই প্রধানমন্ত্রীর মাঝে। স্পর্শকাতর বিষয়গুলো আলোচিত হয় সেই একান্তে অনুষ্ঠিত সভায়। সেখানে কী আলোচনা হয়েছে, সেটা জানা সাধারণের জন্য সম্ভব হয় না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চীন যাবেন কদিন পর। অনুমান করা যায়, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বিষয়ে ভারতের যা কিছু উদ্বেগ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে তা অবহিত করেছেন।

সফরকালে অনেক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর। তার বেশির ভাগই রুটিন ধরনের। কিন্তু তার মধ্যে একটি এমওইউ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এটি হচ্ছে দুই দেশের রেলওয়ের মধ্যে সম্পাদিত এমওইউ। এটির আওতায় ভারতীয় মালবাহী ট্রেন গেদে-দর্শনা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বাংলাদেশ রেলওয়ের লাইন ব্যবহার করে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি দিয়ে ভারতে বেরিয়ে যাবে। 

যে রুটটা ব্যবহার করবে ভারতীয় ট্রেন, সেটা একটি বহুল ব্যবহৃত রুট। বাড়তি লোড নেওয়ার সক্ষমতা এখানে আছে কি না, সেটি একটি প্রশ্ন। সক্ষমতা বাড়াতে অবকাঠামো যদি আরও উন্নত করতে হয়, প্রশ্ন থেকে যাবে এটার অর্থায়ন কীভাবে হবে। আবার এ জন্য যদি ঋণ নিতে হয় ভারত থেকে এবং শোধ করতে হয় সুদসহ, সেটা বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য বাড়তি বোঝা হতে পারে।

অপর বিষয়টি ঠিক এমওইউ নয়। অভিন্ন নদীর পানি নিয়ে দুটি নির্দেশনা দিয়েছেন দুই প্রধানমন্ত্রী। একটি হলো গঙ্গা নদীর ওপর ফারাক্কার ব্যাপারে, যে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে ২০২৬ সালে। একটি টেকনিক্যাল কমিটিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে চুক্তি নবায়ন নিয়ে আলোচনা শুরু করার। পানি বিষয়ে অপর নির্দেশনাটি তিস্তাসংক্রান্ত। 

বাংলাদেশের ভেতরে তিস্তা নদীর পানি সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা নিয়ে যে প্রকল্প চীনের সহায়তায় এবং অর্থায়নে হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, ভারত সেখানে একটি টেকনিক্যাল দল পাঠাবে এটা নিয়ে কথাবার্তা বলার জন্য। পরে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ভারতই সহায়তা করবে। 

ভারতের অর্থায়নে প্রকল্প নেওয়ার যে অভিজ্ঞতা, তাতে করে এমন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে যে বিষয়টা ঝুলে যেতে পারে বা দীর্ঘসূত্রতার পাল্লায় পড়তে পারে। কিছু বিশেষজ্ঞও মতামত দিয়েছেন যে এতে কালক্ষেপণই হবে শুধু। তিস্তা প্রকল্পের এই অঞ্চলটি ভারতের শিলিগুড়ি করিডর থেকে বেশি দূরে নয়। এ কারণে ভারতে উদ্বেগ আছে যে এই এলাকায় দীর্ঘদিনের জন্য চীনা উপস্থিতি ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। এটা খুবই সম্ভব যে ভারতের চাপেই এই প্রকল্প থেকে চীনকে বাদ দিতে হচ্ছে।

তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে অনেক বছর যাবৎ কোনো কথা নেই, এবারও দৃশ্যত কোনো কথা হয়নি। এর মাঝে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছেন শক্ত ভাষায়, যেখানে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তিস্তার পানি বাংলাদেশকে দেওয়া যাবে না। বর্তমান শর্তে গঙ্গাচুক্তি নিয়েও তিনি তার আপত্তির কথা ব্যক্ত করেছেন। 

শুকনো মৌসুমে তিস্তার পানি অনেক বছর যাবৎই পাচ্ছে না বাংলাদেশ, শতভাগ পানি আটকে দিয়ে ভারতই তা ব্যবহার করছে। তিস্তায় পানি সংরক্ষণের বিকল্প প্রকল্প বাস্তবায়নও স্পষ্টতই অনিশ্চিত হয়ে গেল। মনে হচ্ছে তিস্তা অববাহিকায় বাংলাদেশের যে মানুষ আছে, পানির জন্য তাদের প্রতীক্ষা আরও দীর্ঘায়িত হবে। 

পত্রিকায় দেখলাম, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন ভারতের সঙ্গে যেসব সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, সব কটি বাংলাদেশের স্বার্থে হয়েছে। হবে হয়তো! তবে আমার মতো সাধারণ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ বুঝতে পারছে না গেদে-দর্শনা দিয়ে ঢুকে ভারতীয় মালবাহী ট্রেন যদি বাংলাদেশের রেললাইন ব্যবহার করে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি দিয়ে বেরিয়ে যায় আবার ভারতে, তাতে বাংলাদেশের স্বার্থটা কোথায়? তিনি ইউরোপে ছিলেন দীর্ঘকাল এবং সেখানকার ট্রেন এক দেশ থেকে আরেক দেশে চলে যায় বলেছেন। 

নিতান্ত সত্য কথা। আমি নিজেও ট্রেনে ইউরোপের এ-মাথা থেকে ও-মাথা ভ্রমণ করেছি, কোথাও থামতে হয় না। এমনকি আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের এসএডিসিভুক্ত ১৬টি রাষ্ট্রের নাগরিকদেরও পাসপোর্ট লাগে না এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেতে। আমি যখন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মোজাম্বিক, বতসোয়ানা বা নামিবিয়া যেতাম দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে, আমার ভিসা লাগত। কিন্তু আমার স্থানীয় গাড়িচালক পরিচয়পত্র দেখিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে যেতেন। 

তফাতটা হচ্ছে, ইউরোপে বা দক্ষিণ আফ্রিকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই, আর সীমান্তে গুলি করে মানুষও মারা হয় না। বাংলাদেশ-ভারতের মাঝে যখন এই দুটো জিনিস থাকবে না (যদি কোনো দিন তা হয়), ট্রেন চলাচল নিয়েও তখন কোনো কথা উঠবে না। বাংলাদেশ থেকে ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল, ভুটানে ট্রানজিটের কথা শুনতে শুনতে চাকরি থেকে অবসরে গেছি। আমার ১০ বছর কনিষ্ঠরা অবসর নিচ্ছেন এখন। একটি ট্রাকও এযাবৎ বাংলাদেশ থেকে মালামাল নিয়ে ভারতের ভেতর দিয়ে এই দেশ দুটোর কোনোটিতে যেতে সক্ষম হয়নি।

লেখক: সাবেক পররাষ্ট্রসচিব

সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা ও ভীতিকর পরিবেশ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৭ এএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১১:১১ এএম
সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা ও ভীতিকর পরিবেশ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
সুলতানা কামাল

দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি খুবই নাজুক। অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার অব্যাহত রয়েছে। সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সংখ্যালঘু সহিংসতার শিকার অনেকাংশে বেড়েছে। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে; যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার ও গণপিটুনির মতো ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। স্বাধীন মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও অবিরত হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন। সামগ্রিক বিবেচনায় গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও আইনি পরিবেশ উন্নয়নে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সব ধরনের সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা ও ভীতিকর পরিবেশ বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ত্বরিত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। 

দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, মে ২০২৪-এ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত দুই মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক ও নির্বাচনি সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ঘটেই চলেছে। বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। পুলিশি বলপ্রয়োগের ঘটনা বন্ধ হয়নি বরং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে অনেক ক্ষেত্রে তা বেড়েছে। প্রাপ্ত তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ধর্ষণসহ নারী ও শিশুর ওপর সহিংসতার ঘটনা অনেকাংশে বেড়েছে, যা উদ্বেগজনক। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে হুমকি ও হামলা তথা সাংবাদিকতা এবং মতপ্রকাশের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু, কারা হেফাজতে মৃত্যু, সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংসতার ধারাবাহিকতা রয়ে গেছে, সীমান্তে হতাহতের মতো ঘটনা বন্ধ হয়নি। অপরদিকে অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার অব্যাহতভাবে বেড়েছে, গণপিটুনির মতো আইন হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনাও বন্ধ করা যায়নি, বরং বেড়েই চলেছে। 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক বন্দুকযুদ্ধ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, মে ২০২৪-এ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক গোলাগুলির অন্তত চারটি ঘটনা ঘটেছে। একটি ঘটনায় ব্যাপক গোলাগুলি হলেও হতাহতের কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। গণমাধ্যমে দুজনের আটকের বিষয় জানা যায়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে আসামির মৃত্যুর ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অগ্রহণযোগ্য, যা জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক সৃষ্টি করে। এমএসএফ মনে করে, প্রতিটি হেফাজতে মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া আবশ্যক। মে ২০২৪-এ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে তিনজনের মৃত্যুর খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ১৭ মার্চ ২০২৪-এ শাহ আলম ও সবুজ নামের দুই পুলিশ কর্মকর্তা ডিবি পরিচয়ে মো. রানাকে বাসা থেকে তুলে যাত্রাবাড়ী থানায় নিয়ে যান এবং সেখানে রানাকে ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় এবং তিনি মারা যান। 

রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাহত, মামলা ও গ্রেপ্তার, বিরোধীদলীয় কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকলেও বিএনপি তাদের নিজস্ব কর্মকাণ্ড ধরে রাখার লক্ষ্যে জনসংযোগ কর্মকাণ্ড বজায় রেখেছে। রাজনৈতিক মাঠে বিএনপি না থাকায় ক্ষমতাসীন দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের বিষয়টি জনমনে ভীতির সঞ্চারে পরিণত হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি ২০২৪-এ রাজনৈতিক সহিংসতার ২৯টি ঘটনায় সহিংসতার শিকার হয়েছেন ১০৪ জন। তাদের মধ্যে ৬ জন নিহত ও ৯৮ জন আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ২ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। ২৯টি ঘটনার মধ্যে ২৪টি ঘটনা ঘটেছে ক্ষমতাসীন দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে আর পাঁচটি ঘটনা ঘটেছে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে বিরোধী দল বিএনপির। 

সীমান্তে হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ করতে বিএসএফ কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা বন্ধ যাচ্ছে না বরং ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত রয়েছে। এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে তিনজন নিহত, নিহতের মধ্যে একজন ভারতীয়, দুজন বাংলাদেশি। এপ্রিলে তিনজন বাংলাদেশি বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। যশোরের বেনাপোল সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি আহত হন। সীমান্ত থেকে দুজন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করে নিয়ে গেছে বিএসএফ। কুড়িগ্রাম সীমান্তে বিএসএফ বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রবেশ করে নারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে। অপরদিকে মায়ানমারের আরাকান আর্মির গুলিতে এক বাংলাদেশি জেলের পা বিচ্ছিন্ন হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। 

ভারতের পক্ষ থেকে বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার ঘটনা বাড়ছে। এমএসএফ মনে করে, সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় সীমান্তে হতাহতের ঘটনা কমছে না। সরকার সীমান্তে হতাহতের প্রতিবাদ ও প্রতিকারে যে ব্যর্থতা দেখাচ্ছে তা জনমনে ক্রমাগত প্রশ্নের সৃষ্টি করছে। অপরদিকে মায়ানমার আন্তর্জাতিক সীমানা আইন লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। সীমান্তে এ ধরনের ঘটনা কখনোই কাম্য হতে পারে না। সংখ্যালঘু নির্যাতন গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া ও এমএসএফের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী মে ২০২৪-এ বিভিন্ন পর্যায়ে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া ও এমএসএফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ মাসে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ছয়টি ও দুটি জাতিগত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।

১৯ মে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে জয়ন্ত মণ্ডল নামে একজনকে গ্রেপ্তার ও তার বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। 

সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় নানাভাবে হুমকি, নিপীড়ন, হয়রানি, নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন; যা স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার খর্বের শামিল। সাংবাদিকদের যেভাবে শারীরিক, মানসিক এবং আইনি হয়রানি, আক্রমণ, হুমকি ও লাঞ্ছিত করা হচ্ছে তা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়, বরং তার মাধ্যমে সৎ সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধ করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। জুন মাসেও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র উদ্বেগজনক। দেশে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের ১৭টি ঘটনায় ৩৫ জন সাংবাদিক দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। 

এমএসএফ মনে করে, যেভাবে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে তা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিতই নয় বরং বস্তুনিষ্ঠ ও সৎ সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধের পাশাপাশি স্বচ্ছতা, গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ। সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষা ও নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সাংবাদিকদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সাইবার নিরাপত্তা আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার/অপব্যবহার, ভিন্নমত দমন ও গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আদলে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার ও অপব্যবহার জনমনে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছিল, সাইবার নিরাপত্তা আইনও একইভাবে সাইবার মাধ্যম ব্যবহারকারীর জন্য হয়রানি, হুমকি, আতঙ্ক ও সাইবার নিরাপত্তাহীনতাবোধ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে সাইবার নিরাপত্তা আইনে ছয়টি মামলা হয়েছে, অভিযুক্ত হয়েছেন ৩৫ জন ব্যক্তি এবং সি প্লাস টিভির ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব পেজ। একই মাসে সাইবার নিরাপত্তা আইনে দুজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তারদের মধ্যে একজন হিন্দু যুবক, যিনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং একজন ক্ষমতাসীন দলের কর্মী, যার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যঙ্গোক্তি করার অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি দুটি মামলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটূক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে, একটি মামলা হয়েছে হিন্দু যুবকের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, একটি মামলা হয়েছে চট্টগ্রামে সি প্লাস টিভি, সাংবাদিকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে এবং দুটি মামলা হয়েছে মানহানির অভিযোগে। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে দেশে যথেষ্ট কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ভূমিকা দেখা যায় না। ফলে দিন দিন নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বেড়ে গিয়ে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা জাতীয় জীবনে প্রধান উদ্বেগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, মে ২০২৪-এ দেশে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা যেমন: ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, হত্যা, আত্মহত্যা ও পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা বিগত মাসগুলোর তুলনায় বেড়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা, তা দৃশ্যমান হচ্ছে না। এ বিষয়ে সরকারকে ত্বরিত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। 

লেখক: মানবাধিকারকর্মী

বাইডেনের সঙ্গে বিতর্কে ট্রাম্পের নির্বাচনি আনন্দ...

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১০:৪১ এএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১০:৪১ এএম
বাইডেনের সঙ্গে বিতর্কে ট্রাম্পের নির্বাচনি আনন্দ...
ড. আমাল মুদাল্লালি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা জো বাইডেন এবং রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার বিতর্কটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। উভয় দলের প্রার্থীই তাদের প্রতিপক্ষকে বিবাদে ফেলে দেন। বিতর্কটি এমন যে, ডেমোক্র্যাটদের মতে বয়স কোনো সমস্যা নয় এবং ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার উপযুক্ত নন। হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, প্রার্থী নির্বাচনে যোগ্যতার একটি বিষয় আছে। 

গত বৃহস্পতিবার রাতের বিতর্ক সত্যিই ঐতিহাসিক ছিল। এই বিতর্কের পর থেকে ডেমোক্র্যাটরা আতঙ্কিত। তারা কী করবেন তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। সাংবাদিকদের কাছে কয়েকজন বলেছেন, বিকল্প প্রার্থী খুঁজে বের করা উচিত। অপর দিকে রিপাবলিকানরা বিষয়টি নিয়ে আনন্দ উদযাপন করছেন। বিতর্কের সময় বাইডেন মেসেজ আদান-প্রদানে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি বেশির ভাগ প্রশ্ন উপেক্ষা করছিলেন। 

বিতর্কটি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এতে ডেমোক্রেটিক প্রার্থীর ভাগ্য পরিবর্তন হতে পারে। আমেরিকান সংবাদমাধ্যমে এসব বিষয় বিস্তরভাবে চলে এসেছে। নিউইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্ট একই শব্দ ব্যবহার করে প্রেসিডেন্টের কর্মক্ষমতা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, তিনি ‘সংগ্রাম’ করে যাচ্ছেন। রাজনীতি আরও বেশি নাটকীয়। 

ডেমোক্র্যাটদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য এখনো পাঁচ মাস সময় হাতে রয়েছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছিলেন, জো বাইডেন ‘ধীর গতিসম্পন্ন কিন্তু শক্তিশালী সমাধানকারী’। প্রকৃতপক্ষে প্রেসিডেন্ট তার সমাপনী বক্তব্যে সংগ্রামের কথা বলেছেন। 

নির্বাচনের আগে বিতর্কটি ডেমোক্র্যাটদের জন্য বড় ধরনের সতর্কতা। তারা দুই প্রার্থীকে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যেতে দেখছেন। তবে প্রতিযোগিতাগুলো গুরুত্বপূর্ণ। যদিও স্টেটগুলোর জনগণই নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করবেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, ট্রাম্প এগিয়ে আছেন। নির্বাচন তথ্য বিশ্লেষক ডোয়েন নেট সিলভারের মতে, ৬৫.৭ শতাংশ ভোটে ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন, ট্রাম্প অনেক বেশি ভোটের ব্যবধানে জিতবেন। ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বিতার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।

ডেমোক্র্যাটদের সমস্যা হচ্ছে, এখান থেকে প্রচারণা কোন দিকে যাবে? সম্মেলনের আগে দলের পক্ষ থেকে ভিন্ন প্রার্থী বাছাইয়ের আহ্বান জানানো হয়েছে। অনেকে বাইডেনকে প্রত্যাহারের আহ্বানও জানিয়েছেন। বাইডেনের নির্বাচনি প্রচারে দাতারা এখন কী করবেন? তারা কি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে থাকবেন নাকি নির্বাচনের আগে তাকে ত্যাগ করবেন? এখন ডেমোক্রেটিক পার্টিকে এসব মোকাবিলা করতে হবে। তবে এই পর্যায়ে এসে প্রার্থী পরিবর্তন করা কঠিন। দলে এমনও লোক আছেন যারা বিশ্বাস করেন, বাইডেন এ পর্যায়ে এসে আরও ভালো করবেন। যদিও নির্বাচন অতি সন্নিকটে। রিপাবলিকান কনভেনশনের মাত্র চার দিন আগে ১১ জুলাই ট্রাম্পকে ‘হাশ মানি’ বা ঘুষসংক্রান্ত মামলায় বিচারক সাজা ঘোষণার জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন। ডেমোক্র্যাটরা আশা করছেন, এতে মানুষের মনের পরিবর্তন হতে পারে। 

ট্রাম্পকে তার সমর্থকরা বাইডেনের বিরুদ্ধে বিতর্কে বিজয়ী ঘোষণা করেছিলেন। যদিও ভোটারদের প্রকৃত মতামত জানতে আরও অপেক্ষা করতে হবে। তবে সিদ্ধান্তহীন তারাই, যারা ২০২৪ সালের নির্বাচনের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন। যা-ই ঘটুক না কেন, প্রত্যেকেই তাদের প্রার্থীকে সমর্থন করবেন। 

অন্য ঘটনাগুলোও নানাবিধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কংগ্রেসে বিশেষ করে যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের কর্মক্ষমতার ওপর সবার দৃষ্টি রয়েছে। কংগ্রেস নির্বাচনে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট উভয়েরই এমন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর প্রয়োজন, যিনি দলের জন্য সম্পদ। ভোটারদের কাছে বোঝা নন।

রিপাবলিকানরা সিনেট পুনরুদ্ধার করতে এবং হাউস ধরে রাখতে চান। তারা বিশ্বাস করেন, ট্রাম্প তার কর্মক্ষমতায় সিনেট পুনরুদ্ধারে সক্ষম হবেন। অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটদের ভাবনা, প্রেসিডেন্টের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড তাদের ক্ষতি করতে পারে। যদি তা-ই হয়, সে ক্ষেত্রে তাদের প্রার্থী নির্বাচনে নতুন করে ভাবতে হবে। 

লেখক:  জাতিসংঘে লেবাননের সাবেক রাষ্ট্রদূত 
আরব নিউজ থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: সানজিদ সকাল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সফল হোক

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১০:৩৬ এএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৭ এএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সফল হোক
সৈয়দ ফারুক হোসেন

এ ভূখণ্ডের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিন ১ জুলাই। জ্ঞানের আলোকবর্তিকা হয়ে আজ ১০৪ বছরে পা দিল এ জাতির বাতিঘর। দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসনে অবহেলিত এ অঞ্চলে একটি উচ্চশিক্ষিত শ্রেণি তৈরিতে নেতৃত্ব দিয়েছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়। এখানকার ছাত্র-শিক্ষক জাতির মানস গঠনে ছিলেন পথপ্রদর্শক। একটি আত্মনির্ভর জাতিসত্তার বিকাশের উদ্দেশ্য নিয়ে আজ থেকে শতাধিক বছর আগে আত্মপ্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অসাধারণ শিক্ষক ও মানসম্পন্ন পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে এটি হয়ে ওঠে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’। ১৯২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এর আগে ১৯১২ সালের ২৭ মে গঠিত হয় ১৩ সদস্যবিশিষ্ট নাথান কমিশন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব অর্পিত হয় নাথান কমিশনের ওপর। ১৯১৩ সালে নাথান কমিশনের ইতিবাচক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সে বছরের ডিসেম্বরেই রিপোর্টটি অনুমোদিত হয়। এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পথ আরও সুগম হয়। ১৯১৭ সালে স্যাডলার কমিশন ইতিবাচক রিপোর্ট দিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত ধাপ তৈরি হয়। অবশেষে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইন সভায় ‘দ্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট ১৯২০’ পাস হয়। ২৩ মার্চ গভর্নর জেনারেল এই বিলে সম্মতি দেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সব সন্দেহের অবসান ঘটে। এই আইনকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আইনটির বাস্তবায়নের ফলাফল হিসেবে ১৯২১ সালের ১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় যারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন স্যার নবাব সলিমুল্লাহ, ধনবাড়ীর নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক এবং অন্য নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তাব করেন ব্যারিস্টার আর. নাথানের নেতৃত্বে ডি আর কুলচার, নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, নওয়াব সিরাজুল ইসলাম, ঢাকার প্রভাবশালী নাগরিক আনন্দ চন্দ্র রায় প্রমুখ। সে সময় ১৯১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া বিলের জন্য ৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিতে একমাত্র বাঙালি মুসলমান সদস্য হিসেবে ছিলেন খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ। ১৯১৭ সালের মার্চে ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সরকারের কাছে অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল পেশের আহ্বান জানান। ১৯২১ সালের ১ জুলাই ৮৪৭ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। সে সময়ে ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রমনা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির ওপর পূর্ববঙ্গ এবং আসাম প্রদেশের পরিত্যক্ত ভবনাদি এবং ঢাকা কলেজের (বর্তমান কার্জন হল) ভবনগুলোর সমন্বয়ে মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার এই দিনটি প্রতিবছর ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই দেশের, এই ভূখণ্ডের মানুষের উচ্চশিক্ষার পথটিকে সুগম করে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ইতিহাসে স্বর্ণোজ্জ্বল হয়ে থাকবে সব সময়। একই সঙ্গে উচ্চশিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে এই দেশের মানুষকে সচেতন করার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তারই ফলে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম- সর্বক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

লেখক: রেজিস্ট্রার, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর

শুদ্ধাচার ও তুরুপের তাস

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:১৮ এএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:১৮ এএম
শুদ্ধাচার ও তুরুপের তাস
ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

এ কথা অনস্বীকার্য যে, দেশ-সমাজ-সংসারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা-প্রয়োগের প্রধানতম পূর্বশর্ত হলো ব্যক্তিজীবনে শুদ্ধাচারিতা। ব্যষ্টি থেকেই সমষ্টি। সঠিক জীবনদৃষ্টি প্রয়োগ করে মেধা ও প্রতিভার পরিপূর্ণ বিকশিত ব্যক্তিই ‘স্ব-উদ্যোগ, স্ব-পরিকল্পনা ও স্ব-অর্থায়ন দ্বারা সৃষ্টির সেবায় সংঘবদ্ধভাবে কাজ করে অশান্তিকে প্রশান্তিতে, রোগকে সুস্থতায়, ব্যর্থতাকে সাফল্যে, অভাবকে প্রাচুর্যে রূপান্তরিত করতে পারে।’ বলা বাহুল্য, সুশাসনের ফলিত রূপ হচ্ছে শুদ্ধাচার আর জবাবদিহিহীনতার ফলিত রূপ হচ্ছে দুরাচার। সুশাসক যেমন দুরাচারী হতে পারে না, তেমনি দুরাচারীও কখনো সুশাসক বলে গণ্য হতে পারে না। 

ব্যষ্টি ও সমষ্টির জীবনে শুদ্ধাচার বা সদাচার চর্চার তাৎপর্যময় আবশ্যকতার কথা তাবৎ ঐশী গ্রন্থে, ধর্ম প্রবর্তক-প্রচারক, পণ্ডিত প্রবরের বাণীতে। সেই সদাচার-শুদ্ধাচারের চর্চা অবলম্বন অনুসরণ যুগে যুগে নানান প্রেক্ষাপটে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটেছে। সদাচার-সুশাসন লোপ পেলে ব্যক্তি-সমাজ-সংসার নিপতিত হয় নানান অরাজক পরিস্থিতিতে। মানবসমাজে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সূচনা-বিকাশ-বিবর্তনও ঘটেছে শুদ্ধাচারের প্রতি আকিঞ্চন আকাঙ্ক্ষা ও দায়বদ্ধতা থেকে। শান্তি ও শৃঙ্খলার স্বার্থে, সহযোগিতা-সহমর্মিতার স্বার্থে, ন্যায়নীতিনির্ভরতার স্বার্থে ও তাগিদে সুশাসনকে অগ্রগণ্য সাব্যস্ত করা হয়েছে।  

তেপ্পান্ন বছর বয়সী বাংলাদেশি সমাজ, প্রশাসন ও অর্থনীতিতে সর্ববিধ বিবেচনায় নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু, রাজপথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে এবং ক্ষেত্রবিশেষে তাদেরও বেপরোয়া আচরণ, বিদেশে বিপুল অর্থ পাচারের মতো অর্থনীতির সমূহ সর্বনাশসাধন, সেবাধর্মী সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির প্রতিকার না পাওয়ার মতো বিষয়গুলো দিন দিনই সাধারণ মানুষকে যাতে আরও উদ্বিগ্ন করে না তোলে, সে জন্য সংবিধান-শুদ্ধাচার বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করছেন, রাষ্ট্রই সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে, সরকারি প্রতিষ্ঠানকে আনবে জবাবদিহির মধ্যে, যাতে সরকারকে মুখোমুখি হতে হবে না অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতির। 

কেননা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কারণে সরকারের প্রতি আস্থা হারাতে পারে সাধারণ মানুষ। রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতি এই আস্থাহীনতাই জন্ম দেয় সামাজিক অনাচার ও রাজনৈতিক সহিংসতার। ইতিহাসের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ এ কথা স্পষ্ট যে, ঔপনিবেশিক শাসন প্রশাসনযন্ত্রের যাবতীয় অন্যায়-অনিয়ম ও শোষণ-বঞ্চনারহিত সুশাসন-সদাচারী সমাজ বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা থেকেই ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগ এবং  ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো মানুষের রক্তত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা। সেই স্বাধীন রাষ্ট্রে সুশাসন-শুদ্ধাচারের যে দুর্গতি, তার স্বরূপ সন্ধান ও প্রতিকারের দাবি তাই জোরেশোরে উঠছে। 

রসুলপুরের চৌধুরীদের একসময় বেশ প্রতিপত্তি ছিল। জমি-জোতদারি তো ছিলই, ছিল লোকলস্কর, পাইক-পেয়াদার বিশাল বহর। মহিষার মাঠে চাঁদের রাতে তাদের অশ্বারোহীর দল যখন পরের দিন পাশের জমিদার রামজীবনপুরের প্রাণনাথ বাবুর তালুকদারি দখলের লড়াইয়ে নামার মহড়া দিত, তখন বোঝা যেত ক্ষমতা ও কুর্নিশের কৌলীন্য কীভাবে সময়ের স্রোতে বহমান। হোমনাথ ছিল অশ্বারোহী দলের দলপ্রধান এবং চৌধুরীদের প্রধান প্রতিরক্ষক। তার বিশাল বপু ও পেটানো শরীর মনে করিয়ে দিত শক্তিমত্তা যেন চিরস্থায়ী পত্তন নিয়েছে তার চোখে, চোয়ালে ও দুই হাতের কবজিতে। মনে হতো সে যেন মর্ত্যলোকের অমর্ত্য অবয়বের প্রতীক। কিন্তু কালের কপোলতলে সম্রাট শাহজাহানের পত্নীপ্রেমের পসার যেমন অমরতা পেয়েও পায়নি, তেমনি নজিরবিহীন হোমনাথকেও একদিন কঙ্কালসার হয়ে শবযাত্রায় শামিল হতে হয়েছিল। 

বর্মপরিহিত সশস্ত্র হোমনাথ অনেক দূর পর্যন্ত তার দুচোখকে প্রসারিত করে শত্রুর নিশানা ঠাওর করতে পারত। কিন্তু তার জীবনের অনিবার্য পরিণতি নিয়ে দূরদৃষ্টি দূরে থাক, নিকটদৃষ্টিতেও ছিল না। তার মনের জোর তার চাহনিতে, সহিসের লাগাম টানায় কিংবা তরবারির চাকচিক্যের মধ্যে মূর্ত হয়ে উঠত। তার মনে হতো অমরাবতীর জলে তার মা জননী তাকে যেন সদ্য চুবিয়ে এনেছেন- তার গোটা দেহ অমরার আশীর্বাদ পেয়েছে। 

তার ধরাকে সরা জ্ঞানের কাণ্ডকারখানা দেখে একদিন তার মা ডেকে বলেন, ‘বাছা আশপাশে একটু তাকাস। কেউ কিন্তু একদিনের জন্যও এককভাবে চিরদিনের চরণতলে ঠাঁই পায়নি।’ মায়ের কথা হোমনাথের বড্ড বেশি মনে পড়ে সেদিন, যেদিন নকীপুরের হরিচরণ বাবুর তিরন্দাজ বলরামের ছোড়া ছোট্ট একটা তির তার বাঁ হাতের খালি জায়গাটাতে এসে বেঁধে। সেই তিরে বিষ মাখানো ছিল- পচন ধরেছিল সে জায়গায়, সারানো যায়নি হাজার বদ্দি-কবিরাজি করেও। হাতের কবজিসমেত কেটে ফেলেও শেষরক্ষা হয়নি তার। 

 হোমনাথরা একবার জমিদার বাবুর সঙ্গে বাদায় গিয়েছিল। জমিদার বাবু বলেছিলেন, বাদায় বড় মিয়া আছে। চল তার সঙ্গে মোলাকাত করে আসি। তার ধারণা হয়েছিল, শ্মশ্রুমণ্ডিত কোনো সাঁইবাবা হবেন হয়তো বড় মিয়া, যার সঙ্গে কর্তার সম্পর্ক বহুদিনের। হোমনাথ নিজেও মাঝেমধ্যে সাঁইবাবাদের আখড়ায় গিয়ে নিজের মনের খবর নেওয়ার কথা ভাবত না যে তা নয়। বিশাল বজরায় তাদের যাত্রা সাত-আট দিনের বনবাস না বন উপভোগের জন্য। 

জমিদার বাবুর বজরা তেঁতুলখালির খাড়িতে নোঙর করেছিল। নোঙর করার পর বিরাট এক বাঘ বাদার দিক থেকে ‘হালুম’ শব্দ করে যখন হুংকার দেয়- দুজন বরকন্দাজ তৎক্ষণাৎ পানিতে পড়ে যায়- পাশে কুমির ছিল। তারা হজম করে ফেলে তাদের। জমিদার বাবু জানালেন, ‘বড় মিয়া’ আমাদের স্বাগত জানিয়েছেন। আর তার ভাষা না বুঝতে পেরে পরান ও প্রণবরা পানিতে পড়ে গেল! হোমনাথের সংবিৎ ফেরে। সে বুঝল এই ‘বড় মিয়া’ তো সাঁইজির ধারেকাছের কেউ নন। 

ইনি তো বাদার বড় জমিদার সুন্দর মিয়া। তখন সন্ধ্যা হবে হবে- পশুর নদী থেকে তারা তেঁতুলখালীর খাড়িতে ঢুকেছে ঘণ্টাখানেক হলো। এর মধ্যে এই ‘হুংকার’, জমিদার বাবু যাকে বলছেন ‘অভ্যর্থনা’। আর সেই অভ্যর্থনায় পরান-প্রণবের কুমিরের পেটে চালান হওয়া। ব্যাপারটা ভয়ানক! বজরা নোঙর করা হলো খালপাড় থেকে নিরাপদ দূরত্বে। বড় মশাল জ্বালানো হলো। খালপাড় দেখা না গেলেও খালপাড়ের বড় মিয়ার শাগরেদরা যাতে তাদের শনাক্ত ও সমীহ করতে পারেন তেমন একটা ধারণায়। 

জমিদার বাবু সামনের ডেস্কে তার গদিতে বসে নল টানছেন। এখন বসন্তকাল। আকাশে তারা। মৃদুমন্দ বাতাস। ডানে-বায়ে গভীর বাদা। বজরায় রাগপ্রধান গানের রেশ- বাইজিরা নাচছে- এমন সময় একটা উল্লুক প্রকৃতির পাখি এসে ছোঁ দিয়ে যেন নিয়ে গেল বজরায় বাঁধা জুনিয়র ছাগলটিকে। এই ছাগলটি আনা হয়েছে ‘বড় মিয়া’র মনোরঞ্জনের জন্য, তাকে ভেট দেওয়ার জন্য। এই রাতে এই খালপাড়ে ছোঁ মারার মতো এত বড় উল্লুক পাখি কিংবা কিছু কীভাবে এল- কেউ ভাববার আগেই ঘটনাটা ঘটে গেল। জমিদার বাবু আবার ব্যাখ্যা করলেন, ওটা কিছু না। 

‘বড় মিয়া’র উড্ডয়ন বাহিনী আমাদের একটা ছবক দিতে এসেছিল। আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, তা দেখতে আর যাওয়ার সময় ছাগলটাকে আগেভাগে ভেট চাইছেন হয়তো ‘বড় মিয়া’। জমিদার বাবু রসিকতা করলেন- দেখ না, আমাদের নায়েব মশাই- খাজনা আদায়ের আগে নিজে কত পাবেন তার হিসাব কষেন। ‘ওমা, জমিদার বাবু এটাও জানেন তা হলে! তিনি তবে কেন এমন নায়েব রাখলেন?’ হোমনাথের মাথায় ঢোকে না। তার পাশে ছিল কূটবুদ্ধি বিভাগের রঘুনাথ বাবু। কানে কানে বলেন- ‘এটা হচ্ছে পরস্পরকে ভেট দেওয়ার রীতি’, ‘সেটা কেমন’? ফিসফিস করে জানতে চায় হোমনাথ। রঘু বাবু বলেন- ‘তুমি শুধু তরবারি চালিয়েই গেলে- এটুকু তোমার মাথায় ঢোকে না- আরে নায়েব মশায়ের যেমন দরকার জমিদার বাবুর আশীর্বাদ, তেমনি জমিদার বাবুরও দরকার নায়েব মশায়ের আনুগত্য ও তেলেসমাতি। 

সে কারণে জমিদার বাবু দেখেও না দেখার ভান করেন নায়েব বাবু যাতে কিছু কামাতে পারেন রায়ত প্রজার কাছ থেকে- নইলে নায়েব বাবু তার পক্ষে কেন অতিখেয়ালি হবেন খাজনা আদায়ে? আরও জানো, প্রজার পয়সা জমিদার বাবুর বেশি বেশি দরকার তার নিজের, পরিবারের ও জ্ঞাতিগোষ্ঠীর হাতে তোলার জন্য। সবাইকে হাতে না রাখলে নিজের গদি নিয়ে টানাটানি। এটা একধরনের গদি রক্ষার জন্য উৎকোচ বলা যায়। আমাকে গদিনশিন থাকতে দাও- এর জন্য তোমার নিজের পেট যেভাবে ভরতে চাও- ভরো। আমি কিছু বলব না। বিষয়টা হোমনাথের কাছে নজিরবিহীন মনে হয়। 

সে ভাবে, তাই তো, আমার আনুগত্য নিশ্চিত করার জন্য জমিদার বাবু আমাকে অনেক এনাম, অনেক সম্মান, অনেক সুযোগ দিয়ে রেখেছেন, যাতে আমি কখনো বিগড়ে না যাই কিংবা বিশ্বাসঘাতকতা করে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে না পড়ি অথবা জমিদার বাবুর বিরুদ্ধবাদী বা বিপক্ষ অভ্যন্তর কিংবা বাইরের কারও সঙ্গে যাতে হাত না মেলাই। যাতে সময়মতো তিনি আমাকে তুরুপের তাস হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন। জমিদার বাবু যথেষ্ট আত্মসচেতন এসব ব্যাপারে। কেননা তিনি বিচক্ষণ। জানেন বড় রক্ষকের মাথা যদি বিগড়ে যায় তাহলে তার নিজের জন্য তো বটেই, গোটা জমিদারি হুমকির মুখে পড়তে বাধ্য। সে এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে। 

হোমনাথ বড় একটা মঞ্চে বসা রঘুনাথ বাবুর দিকে ঠায় তাকিয়ে। তিনি ওখানে ওই বাঘটার পাশে বসে রয়েছেন কেন- এ তো ভয়ানক কাণ্ড দেখি।  বেশ বড় ধরনের একটা হল ঘর। ঘোষণা দেওয়া হলো অনুষ্ঠানের প্রধান প্রতিবেদন উপস্থাপনকারী হিসেবে আছেন আপ্যায়িত অতিথি বিশিষ্ট গবেষক এবং প্রতিবেশী লোকালয়ের জমিদার চৌধুরী প্রবরের প্রধান কূট পরামর্শদাতা মি. রঘুনাথ। তাকে সুন্দর মিয়া বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন কয়েক শ বছর আগেকার মগ সম্প্রদায়ের রাজত্বকালে সেখানকার সামাজিক পরিবেশ সম্পর্কে গবেষণার জন্য। ঘোষণা শুনে হোমনাথের বুক গর্বে ভরে উঠল এবং তখন তার মনে হলো বাঘকে মানুষ ভয় পায় খামোখা- বাঘদের সরদার এবং এই বাদার স্বঘোষিত রাজ্যের প্রধান সুন্দর মিয়া কত বিচক্ষণ এবং ইতিহাসসচেতন। 

ঘোষণা অনুযায়ী রঘুনাথ উঠে দাঁড়ালেন, পোডিয়ামের কাছে গিয়ে তার নিবন্ধ পাঠ শুরু করলেন। হোমনাথ প্রথমে তার ভাষা বুঝতে পারছিল না এবং তার আশঙ্কা হচ্ছিল, এই রঘুনাথ বাবু তাদের সেই রঘুনাথ বাবু তো! এখন তিনি এ কি কোন ভাষায় কথা বলছেন। এর মধ্যে একটি সুদর্শন হরিণ এসে হোমনাথের কানে ফুঁ দিয়ে যাওয়ার পর সে বুঝতে পারল ভাষা। শুনতে পেল রঘুনাথ বাবু প্রাচীনকালে মগ রাজাদের সময়ের কথা বলছেন। রঘুনাথ বাবু একটু বিস্তারিত বয়ানে যাচ্ছিলেন। তখন সুন্দর মিয়া পাশে বসা হরিণা হাপানকে ইশারা করে জানাতে বললেন, রঘুনাথ বাবু যেন তার তার গবেষণার সারবস্তুতে সরাসরি চলে যান। 

রঘু বাবু সারবস্তুতে গেলেন- মগরাজাদের অন্যতম অধস্তন রাজা ছিলেন পাগালান। তাহার পিতাও ছিলেন তাহার চাইতে বড় রাজা। পাগালান পিতার গর্বিত সন্তান হিসেবে রাজকর্ম পরিচালনা করিতেন। একপর্যায়ে প্রতিবেশীদের পরামর্শ ও কূটবুদ্ধি লইয়া তিনি রাজ্য অভ্যন্তরে এমন একটি অবস্থা তৈরিতে মনোনিবেশ করিলেন যেন যে কেহ তাহার বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দটি করিতে না পারে। বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দেখভালের ভার এমন ভাঁড়দের নিকট দেওয়া হইল যে, তাহারা ইহার মাধ্যমে এমন এক ভীতির সৃষ্টি করিতে সক্ষম হইলেন যে, রাজার খয়ের খাঁ হইলে সাত খুন মাফ এবং আপন না হইলে তাহাদের সামান্য ছুতা-নাতায় দোষী বানানো অব্যাহত রহিল। 

দেখা গেল আজ যিনি খয়ের খাঁ, মুহূর্তের মধ্যে তাহাকে বাকির খাতায় চলিয়া যাইতে হইত। দেখা গেল কোথাও সর্পাঘাতে কাহারো মৃত্যু হইলেও এই সাপের মন্ত্রদাতা সাজাইয়া শত্রুপক্ষের সবাইকে অভিযুক্ত করা হইত। কর্তাভজার সেই সময়ে ঘাটের পানি আঘাটায় প্রবাহিত হইতে লাগিল। পাগালান মগরাজার এসব কর্মকাণ্ড দেখিয়া, ভয় পাইয়া, অবরুদ্ধ হইয়া ক্রমে ক্রমে দেখা গেল সেই মুল্লুকে সকলে কোনো কথা বলা বন্ধ করিয়া মুখে কুলুপ আঁটিতে অভ্যস্ত হইয়া পড়িল। মগের মুল্লুকে যে মৌনতা দেখা গেল, সেই মুল্লুক বেশি দিন টেকে নাই বলে রঘুনাথ বাবু উপসংহার টানেন। তার বক্তব্য শেষ হলেই মঞ্চের চারদিকে এক ধরনের শোরগোল শোনা গেল। এতে আনন্দ না প্রতিবাদ প্রকাশ পেল তা বোঝা গেল না।

পাশে রঘুনাথ বাবু তখনো ঘুমাচ্ছেন। হোমনাথ এতক্ষণ স্বপ্নের ঘোরে ছিল। ঘোর কেটে গেলে সে বাইরের চিৎকার শুনতে পেল। বজরার পাটাতনে যে খালাসি ও চৌকিদাররা ছিল, তাদের একজনের পা কেটে নিয়ে গিয়েছে কুমিরে এই কিছুক্ষণ আগে।    
[রস রচয়িতা] 

লেখক: সাবেক সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান
[email protected]

মাধ্যমিকের কারিকুলামে কোডিং অন্তর্ভুক্ত

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:১৩ এএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:৪১ এএম
মাধ্যমিকের কারিকুলামে কোডিং অন্তর্ভুক্ত
মো. হাসান-উল-বারী

প্রযুক্তির দুনিয়ায় বর্তমানে চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। শুধু চর্চা নয়, বেড়েছে ব্যবহারও। মানবসভ্যতার উন্নয়নে এই প্রযুক্তি কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে দিনরাত চলছে গবেষণা। আর সেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তারই প্রবেশ ঘটেছে শিক্ষাক্ষেত্রেও। সেটা ভালো হবে কী মন্দ হবে তা নিয়ে অনেক বিতর্ক হচ্ছে। তবু এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর একটি বিশ্ব আমাদের তৈরি হবে। আর সেই বিশ্বে পদচারণ করবে আজকের দিনের নতুন প্রজন্ম, আমার আপনার সন্তানরা। সেই বিশ্বে আমাদের সন্তানরা কেমন করবে তা অনেকখানিই নির্ভর করবে তার ‘তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানের ওপর’।

তাই বর্তমান বিশ্বের অভিভাবকরা চাচ্ছেন তাদের সন্তানরা ছোট থেকেই তথ্যপ্রযুক্তির ওপর বেসিক কিছু জ্ঞান অর্জন করুক। তথ্যপ্রযুক্তি বলতে যদি আপনি শুধু ফেসবুককে বোঝেন তবে মারাত্মক ভুল করবেন। আপনি যেটি ব্যবহার করছেন তা একটি অ্যাপ মাত্র। ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, লিংকডইন, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, গুগল এসব অ্যাপ ও প্ল্যাটফর্মের পেছনে রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির বিশাল কর্মযজ্ঞ। সেখানে কাজ করছেন লক্ষাধিক প্রযুক্তিবিদ। এসব প্ল্যাটফর্মে তথ্যকে সহজেই প্রদর্শন করার জন্য ‘কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বা কোডিং’ ব্যবহার করেন প্রযুক্তিবিদরা। 

আমরা যদি আমাদের শিশু-কিশোরদের একাডেমিক সাফল্য ও স্মার্ট করতে চাই তাহলে প্রতিটি শিশুকে কোডিং শেখাতে হবে। বাচ্চাদের জন্য কোডিং শুধু তাদের গণিত এবং লেখার দক্ষতা উন্নত করতে সাহায্য করে না বরং পরবর্তী সময়ে তাদের কর্মজীবনে দক্ষতার নতুন মাত্রা যোগ করবে। কেন কোডিং শেখা গুরুত্বপূর্ণ এবং কেন ছোটবেলা থেকেই স্কুলে কোডিং শেখানো উচিত তার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। শিশুরা যত তাড়াতাড়ি কোডিং করতে শিখবে, তাদের সাফল্য অর্জনের সুযোগ তত দ্রুত ধরা দেবে। 

আধুনিক বিশ্বে নিজেদের এগিয়ে নিতে গণিত, বিজ্ঞানের পাশাপাশি প্রোগ্রামিং ও কোডিং শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর বৈষম্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ দরকার, যা কিনা শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার মাধমে সোনার মানুষ গড়ে তোলা সম্ভব।

২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট সিটিজেন তৈরি করতে শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে দক্ষ করে গড়ে তোলা অপরিহার্য। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডিজিটাল দক্ষতা উন্নয়ন ও সমস্যা সমাধানে আগ্রহী করে গড়ে তুলতে গত ৬-৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ প্রতিদিন এক ঘণ্টার কোডিং ক্যাম্পেইন ‘আওয়ার অব কোড’ দেশব্যাপী সব মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিচালনা করা হয়। 

ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত আনন্দসহকারে কোডিং আওয়ার শেষ করেছে ও কম্পিউটার জেনারেটেড সনদ গ্রহণ করেছে। ওই ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয় ‘কিশোর বাতায়ন’ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে, যেটি বর্তমান সরকার এটুআইয়ের সহযোগিতায় বেশ কয়েক বছর আগেই স্কুলশিক্ষার্থীদের উপযোগী করে তৈরি করেছে। ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে তোলো স্লোগান সামনে রেখে আমাদের স্কুলশিক্ষার্থীরা ‘কিশোর বাতায়ন’ প্ল্যাটফর্ম থেকে আমার স্কুল, বইসমূহ, জীবন দক্ষতা, ক্যারিয়ার দক্ষতা ইত্যাদি বিষয় অনলাইনে শিখতে পারবে। 

এখানে উল্লেখ্য, শুধু জীবনদক্ষতা বিষয়ের ওপর কিশোর বাতায়নে ১৯৩টি কনটেন্ট রয়েছে। অভিভাবক থেকে শুরু করে সহকর্মী সবার একই প্রশ্ন- শিশু-কিশোরদের কোডিং শিখতে হবে কেন? এই কোডিং শিখে কী লাভ? এটি শিখে কি কম্পিউটার বিজ্ঞানী হবে? নাকি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হবে? সেটা যদি না হয় তাহলে কোডিং শিখবে কেন? একেবারেই যৌক্তিক প্রশ্ন। কোনো জিনিস শেখার আগে কেন শিখছি, সেটি জানা খুবই জরুরি। 

প্রচলিত ধারণায়, প্রোগ্রামিং শুধু কম্পিউটারের ভাষা, এটি দিয়ে কম্পিউটারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রকৃত অর্থে সেটি প্রোগ্রামিংয়ের প্রথম ধাপ নয়। প্রোগ্রামিং আসলে সমস্যা সমাধান (প্রবলেম সলভিং) এবং সিদ্ধান্ত  গ্রহণ (ডিসিশন মেকিং) করতে শেখায়। প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত আমরা সমস্যার সমাধান করে চলেছি। আমরা সেটি সব সময় আসলে খেয়াল করছি না।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. বি এম মইনুল হোসেন স্যারের উদাহরণ টেনে বলা যাক, অফিসে যাওয়ার জন্য রিকশা নেব নাকি উবার বা পাঠাও থেকে কার বা বাইক নেব, নাকি পাবলিক বাসে যাব, এটি একটি সমস্যা। এ সমস্যার সমাধানের জন্য আমাদের অনেক বিষয় বিবেচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। উদ্দেশ্য যদি হয় কম খরচে যাওয়া, তাহলে রিকশা নেওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে খরচের কথা চিন্তা না করে যদি দ্রুত যাওয়াই হয় প্রধান উদ্দেশ্য, তাহলে পাঠাও নেওয়া যায়। আর যদি উদ্দেশ্য হয় কম খরচে তুলনামূলকভাবে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো, তাহলে পাবলিক বাস নেওয়াটা হবে সঠিক সিদ্ধান্ত।

কোডিং শেখার অনেক কারণ আছে, যার কয়েকটি নিম্নে দেওয়া হলো-

১. কোডিং সমস্যা সমাধানে দক্ষ করে তোলে   

২. কোডিং চিন্তা করতে শেখায়

৩. একাডেমিক কর্মক্ষমতা উন্নত করে 

৪. কোডিং সৃজনশীলতা বাড়ায়

৫. ভালো কম্পিউটার প্রোগ্রামার হওয়ার সম্ভাবনা 

৬. সফটওয়্যার শিল্পে দক্ষতার অভাব রয়েছে 

৭. কোডিং শিশুদের গণিত শেখা আনন্দদায়ক করে তোলে 

৮. কোডিং শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করে

নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষায় স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে যুক্ত করা হয়েছে। যদিও বাস্তবে এ বছর প্রাথমিকের সিলেবাসে স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং যুক্ত করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে দেরিতে হলেও বর্তমান সরকার চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে মাধ্যমিকের সিলেবাসে অর্থাৎ অষ্টম ও নবম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ে পাইথন প্রোগ্রামিং ভাষা অন্তর্ভুক্ত করেছে, যেটি খুবই যুগোপযোগী। 

ইতোমধ্যে দেশব্যাপী মাধ্যমিকের সব আইসিটি শিক্ষককে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ও নেটওয়ার্কিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, সবকিছুর মূল সমাধান লুকিয়ে আছে শিক্ষায়। যখনই কোনো সমস্যা হয়, আমি বলি, সর্বক্ষেত্রে শিক্ষা বিস্তার করো। এতেই সমাধান হয়ে যাবে। কাজে কাজেই ডিজিটাল বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের প্রধান ভিত্তি হলো স্মার্ট সিটিজেন। আর স্মার্ট সিটিজেন তৈরির জন্য দরকার ডিজিটাল লিটারেসি ও কোডিং শিক্ষা। 

সুতরাং বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করাসহ পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করে বাংলার শিক্ষার্থীদেরও এআই এবং কোডিং শিক্ষা দিতে পারলে দ্রুত আমাদের এই সোনার বাংলা বাস্তবে সোনার স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত হবে।  

লেখক: শিক্ষক, মিলেনিয়াম স্কলাস্টিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জাহাঙ্গীরাবাদ সেনানিবাস, বগুড়া
[email protected]