
আলোচিত-সমালোচিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজকে শোকজ করেছে আওয়ামী লীগ। কারণ দর্শানো নোটিশে রিয়াজকে আগামী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে। গত বছর নারী শিক্ষিকাকে অশালীন প্রস্তাব দেওয়াসহ একাধিক অভিযোগে গত বছরের মাঝামাঝি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নোটিশ দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, ‘মো. রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ সাম্প্রতিককালে আপনার একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে, যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এটি সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী এবং দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। এর দায়ভার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই বহন করবে না।’
এতে আরও বলা হয়, ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আপনার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, সে মর্মে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭ (৯) ধারা মোতাবেক উপযুক্ত ও যথার্থ যুক্তিযুক্ত কারণসহ আগামী ১৫ মের মধ্যে লিখিত জবাব প্রদানের নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
এর আগে ‘কাউন্সিলর চামেলীকে আ.লীগ থেকে বহিষ্কার: ১০ লাখ টাকায় রফা, দপ্তর সম্পাদকের ফোনকল ফাঁস’ এবং ‘বিতর্কিত রিয়াজ পদে থাকায় ক্ষোভ আওয়ামী লীগে’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক খবরের কাগজ। এর পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতারা রিয়াজের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাড়তে থাকেন। নেতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিউজটি একে অন্যের কাছে পাঠাতে থাকেন, যা গড়িয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পর্যন্ত।
গত শুক্রবার ধানমন্ডিতে এক সংবাদ সম্মেলনে রিয়াজ ১০ লাখ টাকা চাওয়ার বিষয়ে ওবায়দুল কাদেরকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য সৈয়দা রোকসানা ইসলাম চামেলীকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তার অব্যাহতির ব্যাপারে রফা করতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজের ১০ লাখ টাকা চাওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়াদুল কাদের বলেন, ‘প্রমাণ পেলে দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ১০ লাখ টাকা চেয়েছেন, এটার সত্যতা কী? এ সময় সাংবাদিকরা বলেন, ফোন রেকর্ড আছে। এর জবাবে তিনি বলেন, তাহলে দিন, আমরা ব্যবস্থা নেব।’
দলীয় সূত্র অনুযায়ী ওই দিন সন্ধ্যায় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার উদ্দেশে বলেন, ‘রিয়াজ ছেলেটা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সব সময় জড়িয়ে পড়ে।’ সর্বশেষ গত রবিবার সন্ধ্যায় ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতে ধানমন্ডির ওই অফিসে রিয়াজের বিষয়ে ফের আলোচনা ওঠে। সেখানে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও নগর দক্ষিণের কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ওবায়দুল কাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত মির্জা আজমকে রিয়াজের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেন। আজ মির্জা আজম রিয়াজের বিষয়ে নোটিশ দিতে দক্ষিণের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশ দেন। বিকেলে তাকে নোটিশ দেওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য সৈয়দা রোকসানা ইসলাম চামেলীকে গত ২৪ এপ্রিল দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর আগে গত ২৩ এপ্রিল চামেলীকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে না বলে ১০ লাখ টাকায় রফা করতে চেয়েছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ। তিনি চামেলীকে বলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বলেছেন, ১০ লাখ টাকা হলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে না। শুধু অব্যাহতি দেওয়া হবে। আর সেটি পরবর্তীকালে যাতে তুলে নেওয়া যায়, সে ব্যবস্থা করা হবে। এ প্রসঙ্গে একটি ফোনকল রেকর্ড খবরের কাগজের প্রতিবেদকের হাতে আসে। এরপর তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন ছাপা হয়।
এই অভিযোগ দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ অস্বীকার করলে চামেলী তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতারা একের পর এক অভিযোগ করতে থাকেন রিয়াজের বিরুদ্ধে। নেতারা অভিযোগ করেন, ‘আমরাও অডিও রেকর্ডটি শুনেছি। রিয়াজ তো ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন। তাকে দলের মধ্যে কেউ পছন্দ করেন না। রিয়াজ ছাত্রজীবনে কোন দল করেছিলেন তা নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। এ ছাড়া রিয়াজ ওবায়দুল কাদের, মন্নাফীসহ দলের বেশ কয়েকজন নেতার নাম ভাঙিয়ে চাঁদা আদায় করেন, দলের দুর্দিনের সিনিয়র নেতাদের সম্মানও করেন না।’
শুধু তাই নয়, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে রিয়াজের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়ম ও শিক্ষিকাদের অশালীন প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের (সাবেক নারীশিক্ষা মন্দির) শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে তৎকালীন বিদ্যালয়টির সভাপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজের বিরুদ্ধে। তখন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ তাকে বহিষ্কার করে। পরে লবিং-তদবির করে আবার নিজের পদ ফিরে পান রিয়াজ। পদ ফিরে পাওয়ার পরই আবার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন তিনি।