![তিস্তা এখন ভূ-রাজনীতির দ্বৈরথের শিকার: রাশেদ খান মেনন](uploads/2024/05/25/workers partykk-1716649273.jpg)
তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে দুই বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশ ও ভারত যে পরিস্থিতির মুখোমুখি, তা এক অর্থে ট্র্যাজেডি। আওয়ামী লীগের টানা চার মেয়াদে ঢাকা ও নয়াদিল্লি দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক নানা ইস্যু সমাধান করলেও তিস্তা চুক্তি ঝুলেই থাকছে বছরের পর বছর। তিস্তা যেন আর নিছক নদী নেই; কূটনীতি, রাজনীতি, ভূ-রাজনীতি, প্রতিবেশ, অর্থনীতি মিলে হয়ে উঠেছে দুই দেশের সম্পর্কের প্রতীকী কাঁটা।
শনিবার (২৫ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত ‘অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন: প্রেক্ষিত পদ্মা ও তিস্তা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় রাজনীতিবিদ ও পানি বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।
দলের সভাপতি রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে এই আলোচনায় যোগ দেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। আলোচনা সভায় ‘১৯৯৬ এর গঙ্গাচুক্তির মেয়াদ শেষে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক বক্তব্য রাখেন নদী ও পরিবেশবিদ মাহবুব সিদ্দিকী, নদী অধিকারবিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন। ‘বাংলাদেশের দুঃখ তিস্তা : তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ নিয়ে আলোচনা করেন ‘তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ’ এর সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, অভিন্ন নদীতে উজান-ভাটির সমান অধিকার আছে, সে কথা মানেন না পশ্চিমবঙ্গের সরকার প্রধান মমতা। ২০১৪ সাল থেকে শুষ্ক মৌসুমে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে শক্তিশালী প্রতিবেশী তার শক্তিমত্তার জোরে তিস্তার সব পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। খরাকালে ৫০০-৬০০ কিউসেক পানি যেটুকু আসে, তা উপনদীর পানি।
রাশেদ খান মেনন বলেন, গঙ্গা চুক্তি শেষ পর্যায়ে, তিস্তা চুক্তি অধরাই রয়ে গেছে। ফারাক্কাসহ গঙ্গার উজানে পানি প্রত্যাহার করার ফলে বাংলাদেশের জন্য গঙ্গার পানি প্রাপ্তি কার্যত অসম্ভব পর্যায়ে পৌঁছেছে। অন্যদিকে ভারতের আন্তনদী সংযোগ পরিকল্পনা এই বিপদকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। গঙ্গা চুক্তি শেষ হওয়ার আগে ওই চুক্তির পর্যালোচনার ভিত্তিতে চুক্তির নবায়ন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিস্তা চুক্তি সম্পর্কে মেনন বলেন, সম্পাদিত হলোই না বরং তিস্তা এখন ভূ-রাজনীতির দ্বৈরথের শিকারে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ তিস্তা চুক্তির জন্য আর অপেক্ষা করতে পারে না। তিস্তায় পানি না দিয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনায় ভারতের অর্থায়নের সাম্প্রতিক প্রস্তাবের অর্থ কার্যত গরু মেরে জুতা দানের শামিল। তিস্তা বাঁচাতে নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাবনা দেন মেনন।
অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, তিস্তা-পদ্মাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন চুক্তি, অববাহিকাভিত্তিক পানি ও নদী ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
দেশীয় ব্যবস্থাপনায় তিস্তা সুরক্ষার কাজটিকে ঝুলে রাখলে পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে উঠবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্ষাকালে তিস্তায় প্রবাহিত হয় তিন থেকে চার লাখ কিউসেক ঘনফুট পানি। গভীরতা না থাকায় এ পরিমাণ পানি বাংলাদেশ অংশের তিস্তা তার বুকে ধারণ করতে পারে না। তিস্তার শাখা-প্রশাখা ও উপনদীগুলোর সঙ্গে তিস্তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা সবচেয়ে বেশি ভাঙনপ্রবণ নদী। প্রতি বছর ভাঙনে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। প্রতি বছর তিস্তার ভাঙনে কমপক্ষে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার ফসল ও সম্পদ তিস্তার গর্ভে চলে যায়। রংপুর বিভাগে অতি দারিদ্র্যের প্রধান কারণ তিস্তার ভাঙন।
জয়ন্ত/এমএ/