সন্তান এবং সম্পদ—এ দুটিকে অবলম্বন করে জান্নাতকে নিশ্চিত করা যায়। সন্তানের সঠিক পরিচর্যা আর সম্পদের সঠিক ব্যয় মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যায়। এ দুটির ব্যাপারে আল্লাহ মুমিনদের সাবধান করে বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি যেন আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন করে না রাখে। যারা এগুলোর কারণে উদাসীন হয়ে থাকবে তারাই হবে ক্ষতিগ্রস্ত।' (সুরা মুনাফিকুন, আয়াত: ১০)
সন্তানকে গড়ে তোলার প্রস্তুতি: সন্তানের চারিত্রিক, সামাজিক, আত্মিক ও ধর্মীয় সব বিষয়ের উন্নতি-অবনতি নির্ভর করে মা-বাবার মানসিকতা ও জীবনাচারের ওপর। এ জন্য ইসলাম পাত্রপাত্রী নির্বাচনের সময় দীনদারিত্বকে প্রাধান্য দিতে বলেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নারীদের (সাধারণত) চারটি বিষয় দেখে বিয়ে করা উচিত। যথা—১. তার ধনসম্পদ, ২. বংশমর্যাদা, ৩. রূপসৌন্দর্য, ৪. ধার্মিকতা। তবে তুমি দ্বীনদার (ধার্মিক) নারীকে বিয়ে করে সফল হও! অন্যথায় তুমি লাঞ্ছিত হবে। (বুখারি, হাদিস: ৫০৯০)
শিশুর সহজাত বৈশিষ্ট্যের ওপর গড়ে তোলা: ইসলাম মানুষের স্বভাবজাত ধর্ম। সৃষ্টিগতভাবেই প্রতিটি শিশু মুসলিম হয়ে জন্মগ্রহণ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি সন্তানই পৃথিবীতে আসে তার সহজাত ধর্ম নিয়ে। যেমন চতুষ্পদ জন্তু শারীরিক কোনো অপূর্ণতা নিয়ে আসে না। (যা হয় তা মানুষের কর্তৃত্ব প্রয়োগের কারণে হয়)। পরবর্তী সময়ে তার বাবা-মা তাকে হয়তো ইহুদি, খ্রিষ্টান অথবা অগ্নিপূজারীরূপে গড়ে তোলে। আর মানুষের সহজাত ধর্ম হলো ইসলাম।’ (বুখারি, হাদিস: ১৩৫৮)
অভিভাবকদের সৎ হওয়া: আব্দুল্লাহ ইবনে আমির (রা.) বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের বাড়িতে বসে ছিলেন। এমতাবস্থায় আমার মা আমাকে ডেকে বললেন, এসো তোমাকে একটা কিছু দেব! রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাকে কী দিতে চাও? মা বললেন, আমি তাকে একটি খেজুর দিতে চাই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তুমি যদি তাকে কিছু না দিতে তোমার নামে একটি গুনাহ লেখা হতো।’(আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৯১)
দ্বীন এবং ঈমান শেখানো: জীবনের সূচনাতেই একটি শিশুর হৃদয়ে ঈমানের বীজ বুনে দেওয়া। হাসান বসরি (রহ.) বলেছেন, ‘শৈশবে জ্ঞান শেখা পাথরে নকশা অঙ্কন করার মতো।’ (বায়হাকি, হাদিস: ৬৪০)
সামাজিকতা শেখানো: মা-বাবার উচিত, কার সঙ্গে কি ধরনের ব্যবহার করতে হবে, কাকে কিভাবে সম্বোধন করবে, কোন কাজ কিভাবে করবে—তা ঘরোয়াভাবেই শেখানো। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ আপন সন্তানকে যা দিয়ে থাকে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ দান হলো, তাকে ভদ্রতা-শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া। (তিরমিজি, হাদিস: ১৯৫২)
মসজিদে নিয়ে যাওয়া, বিছানাপত্র আলাদা করে দেওয়া: শিশুর বয়স, বোধবুদ্ধির সঙ্গে মিল রেখে তাকে গঠন করতে হয়। আমর ইবনে শুয়াইব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের সন্তানদের বয়স যখন সাত বছর হয়, তখন থেকে তাদের নামাজের আদেশ করো। যখন দশ বছর পূর্ণ হয় তখন প্রয়োজনে হাল্কা শাসনও করো। আর তখন তাদের শয্যার স্থান আলাদা করে দাও। (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৫)
ইসলাম সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে যেসব নির্দেশনা দিয়েছে, কেউ যদি তা অনুসরণ করে প্রতিপালন করতে পারে, দুনিয়াতে যেমন সুনাম-সুখ্যাতি অর্জন হবে, আখেরাতেও চিরস্থায়ী শান্তির উদ্যান জান্নাত নসিব হবে।
লেখক: শিক্ষক, মাদরাসাতু আনাস (রা.), সাইনবোর্ড