![১০ দেশের সুন্দর ১০ মসজিদ](uploads/2024/01/11/1704965993.10-majsid.jpg)
বিভিন্ন দেশে দৃষ্টিনন্দন, চমৎকার স্থাপত্য এবং বৃহৎ আয়তনের বহু মসজিদ রয়েছে। এগুলো নিয়ে মানুষের কৌতূহল ও আগ্রহের শেষ নেই। ১০ দেশের সুন্দর ১০ মসজিদের পরিচয় তুলে ধরা হলো—
১. মসজিদ আল-হারাম, সৌদি আরব : পৃথিবীর প্রথম ঘর এবং মসজিদ—মসজিদুল হারাম। সৌদি আরবের মক্কায় এর অবস্থান। মুসলিমদের প্রাণ মসজিদ। পবিত্র স্থান। মসজিদের বর্তমান অবকাঠামো প্রায় ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮০০ বর্গমিটার (৮৮ দশমিক ২ একর)। একসঙ্গে আনুমানিক ১০ লাখ মানুষ নামাজ পড়তে পারেন। হজ ও উমরা পালনে অসংখ্য মুসলিম হাজির হন এখানে। মসজিদ প্রাঙ্গণে হাজরে আসওয়াদ, মাকামে ইবরাহিম, জমজম কূপ ও সাফা-মারওয়া পাহাড় রয়েছে।
২. আয়া সুফিয়া মসজিদ, তুরস্ক : তুরস্কের ইস্তাম্বুলের বসফরাস প্রণালির পাশে অবস্থিত আয়া সুফিয়া মসজিদ। ১৬০০ বছরের পুরোনো স্থাপনা। ৫৫ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন এ মসজিদ ৭৩ মিটার প্রশস্ত। আছে কয়েকটি গম্বুজ। গম্বুজগুলো নকশা করা। রয়েছে কোরআনের আয়াতের ক্যালিগ্রাফিও। দেয়ালে সামনের অংশে লাগানো আছে আল্লাহ ও মুহাম্মদ লেখা দুটি বোর্ড। এটি বিশ্বঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ইউনেস্কো থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে।
৩. শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ, সংযুক্ত আরব আমিরাত : শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদের অবস্থান সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে। এটি আমিরাতের সর্ববৃহৎ মসজিদ। ১৯৯৬ সালে কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০০৭ সালে। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪২০ মিটার, প্রস্থ ২৯০ মিটার। ৮২টি গম্বুজ ও ১০৭ মিটার উঁচু চারটি মিনার আছে। বৃহত্তম গম্বুজের উচ্চতা ২৭৯ ফুট। মেঝেতে রয়েছে চোখধাঁধানো মার্বেল মোজাইকের কারুকাজ। নারীদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা আছে। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে রয়েছে এর নাম।
৪. ক্রিস্টাল মসজিদ, মালয়েশিয়া : মালয়েশিয়ার তেরেনগানু এলাকায় ‘পোলা ও ওয়ান ম্যান’ দ্বীপে ক্রিস্টাল মসজিদ অবস্থিত। ২০০৬ সালে মালয়েশিয়ার রাজার আদেশে এ মসজিদের কাজ শুরু হয়, শেষ হয় ২০০৮ সালে। মূল্যবান ক্রিস্টাল আর সঙ্গে স্বচ্ছ কাচ ও স্টিলের দণ্ড দিয়ে বানানো হয়েছে মসজিদটি। মসজিদটির কিছু অংশ সমুদ্রে আর কিছু অংশ স্থলে হওয়ায় তৈরি হয়েছে এক অনিন্দ্য সুন্দর দৃশ্য। মসজিদের চারপাশে চারটি মিনার আছে।
৫. আন-নুর গ্রেট মসজিদ, ইন্দোনেশিয়া : ইন্দোনেশিয়ার রিআউ প্রদেশের রাজধানী পেকানবারুতে অবস্থিত আন-নুর গ্রেট মসজিদ। ১৯৬৮ সালে এ মসজিদের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়। মসজিদটির নির্মাণশৈলী ভারতের তাজমহল, মালয়, তুর্কি ও আরবীয় স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। মসজিদটি তিনতলা বিশিষ্ট, শীর্ষ তলাটি নামাজের জন্য, নিচতলা দুটি অফিস ও সভাকক্ষের জন্য ব্যবহৃত হয়।
৬. ইসলামিক সেন্টার অব আমেরিকা, মিশিগান : ইসলামিক সেন্টার অব আমেরিকার অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডিয়ারবর্ন শহরে। এটিকে উত্তর আমেরিকার বৃহত্তম মসজিদ বলা হয়। ২০০৫ সালে এর উদ্বোধন করা হয়। এ মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারের স্থপতি হিসেবে কাজ করেছেন ডেভিড ডনেলন। এতে চারটি গম্বুজ ও দুটি মিনার রয়েছে। ইমাম মোহাম্মদ জাওয়াদ সিরির উদ্যোগে এটি নির্মাণ করা হয়।
৭. কুল শরিফ মসজিদ, রাশিয়া : তাতারিস্তানের কাজানে রয়েছে মুসলমানের ইতিহাস ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ কুল শরিফ মসিজদ। ভলগা নদীর তীরে এর অবস্থান। খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত এ মসজিদের আয়তন ১৯ হাজার বর্গমিটার। এর চারপাশ দেয়ালঘেরা। বেশ উঁচুতে হওয়ায় সিঁড়ি ভেঙে মসজিদের ভেতরে যেতে হয়। মসজিদটির কেন্দ্রীয় গম্বুজের উচ্চতা ৩৯ মিটার। বড় চারটি মিনারের উচ্চতা ৫৭ মিটার করে। শুধু জোহর ও আসর নামাজ পড়া হয় এখানে।
৮. দিল্লি জামে মসজিদ, ভারত : মোগল বাদশাহ শাহজাহানের আমলে তার তত্ত্বাবধানে দিল্লি জামে মসজিদ নির্মিত হয়। ১৬৫০ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়, শেষ হয় ১৬৫৬ সালে। লাল বেলে পাথর আর সাদা মার্বেল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এটি। মসজিদটির তিনটি প্রকাণ্ড দরজা আছে; উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব দিকে। রয়েছে দুটি বিশাল মিনার।
৯. বাদশাহী মসজিদ, পাকিস্তান : বাদশাহী মসজিদ নির্মাণ করেন মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব। ১৬৭১ থেকে ১৬৭৩ সালের মধ্যে পাকিস্তানের লাহোরে নির্মাণ করা হয়। মসজিদটির আয়তন প্রায় ২ লাখ ৭৬ হাজার স্কয়ার ফুট। সিঁড়ির ২২টি ধাপ পেরিয়ে মূল ফটকে পৌঁছাতে হয়। মসজিদের মূল চত্বরের উপরিভাগে আছে তিনটি বিশাল গম্বুজ। গম্বুজগুলোর শীর্ষদেশে শ্বেতপাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পদ্মফুল। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে লাইব্রেরি।
১০. বায়তুল মোকাররম, বাংলাদেশ : বাংলাদেশের জাতীয় মসিজদ বায়তুল মোকাররম ঢাকার প্রাণকেন্দ্র পল্টনে অবস্থিত। পাকিস্তান আমলে ঢাকার বড় শিল্প উদ্যোক্তা বাওয়ানি পরিবারের পক্ষ থেকে এ মসজিদ নির্মাণ করা হয়। প্রায় সাড়ে আট একর জমির ওপর নির্মিত। মসজিদের মূল ভবনটি আটতলা, যা মাটি থেকে ৯৯ ফুট উঁচু। তিনতলার উত্তরপাশে নারীদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা আছে।
লেখক : গৃহিণী