![মদিনার যে মসজিদ পুড়িয়ে দিয়েছিলেন নবিজি (সা.)](uploads/2024/05/12/1698820146.muhammad-1715488641.jpg)
পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা মসজিদ তৈরি করেছে ক্ষতিসাধন, কুফুরি এবং মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে, আর যে ব্যক্তি আগে থেকেই আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে তার ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের নিমিত্তে, তারা অবশ্যই শপথ করবে যে, আমাদের উদ্দেশ্য সৎ ছাড়া নয়। আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন, তারা নিশ্চিত মিথ্যাবাদী। তুমি ওর ভেতরে কখনো দাঁড়াবে না। প্রথম দিন থেকেই যে মসজিদের ভিত্তি তাকওয়ার (খোদাভীতি) ওপর প্রতিষ্ঠিত, তোমার দাঁড়ানোর জন্য সেটাই অধিক উপযুক্ত, সেখানে এমন সব লোক আছে যারা পবিত্রতা লাভ করতে ভালোবাসে, আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন। কে উত্তম যে তার ভিত্তি আল্লাহভীরুতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির ওপর স্থাপন করে সে, না ওই ব্যক্তি যে তার ভিত্তি স্থাপন করে পতনোন্মুখ একটি ধসের কিনারায় যা তাকে নিয়ে জাহান্নামের আগুনে ধসে পড়বে? আল্লাহ অত্যাচারীদের সঠিক পথে পরিচালিত করেন না। তাদের তৈরি ঘরটি তাদের অন্তরে সবসময় সন্দেহের উদ্রেক করে যাবে, যে পর্যন্ত না তাদের হৃদয়গুলো ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, মহা প্রজ্ঞাময়।’(সুরা তওবা, আয়াত: ১০৭-১১০)
মুসলিম সমাজের মূল কেন্দ্র হলো মসজিদ। মুসলমান যেখানে বসতি গড়বে, সেখানে গড়ে উঠবে মসজিদ—এটা নবিজি (সা.)-এর শিক্ষা। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরতের সময় যাত্রাবিরতিকালে কুবা নামক স্থানে ইসলামের প্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন। পরে মদিনায় পৌঁছে তিনি মসজিদে নববি স্থাপন করেন।
মসজিদ আল্লাহর ঘর। আল্লাহর পছন্দনীয় জায়গা। মুমিনজীবনের আনুষ্ঠানিক সেজদা করার পবিত্র স্থান। মুসলমানদের বিশ্বাস, চেতনা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক মসজিদ।
মসজিদ নির্মাণ সওয়াবের কাজ। আল্লাহকে খুশি করার মাধ্যম। আল্লাহ মানুষকে মসজিদ নির্মাণে উৎসাহিত করেছেন। নবিজি তাগিদ করেছেন। জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। তবে মসজিদ নির্মাণ হতে হবে তাকওয়ার ওপর ভিত্তি করে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। মুসলমানদের কল্যাণের জন্য। আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য। ইসলামের ক্ষতিসাধন হয়—এমন মসজিদ নির্মাণ করা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আমলেই মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। মদিনার অদূরে, কুবা এলাকায়। মসজিদটি ইসলামের ইতিহাসে ‘মসজিদে জিরার’ (জেদবশত মসজিদ) নামে পরিচিত। পরে নবি (সা.) মসজিদটি ধ্বংস করার নির্দেশ দেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন তাবুক যুদ্ধে যাচ্ছিলেন। এক ঘণ্টা পথ চলে জুআওয়ান নামক স্থানে থামলেন। মসজিদে জিরার নির্মাণকারীরা নবিজির কাছে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, দুর্বলদের জন্য এবং বৃষ্টির রাতে নামাজ পড়ার জন্য আমরা একটি মসজিদ নির্মাণ করেছি। আমরা চাই যে, আপনি তাতে আসবেন এবং নামাজ পড়ে মসজিদটি উদ্বোধন করে দেবেন।’ নবিজি (সা.) বললেন, ‘আমি সফরে যাচ্ছি। ফেরার পথে তোমাদের এখানে যাব, ইনশাআল্লাহ।’
মূলত মুসলমানদের ক্ষতি করার জন্য খ্রিষ্টান পাদরি আবু আমেরের উসকানিতে কিছু অমুসলিম ইসলাম গ্রহণের ভান করে ওই মসজিদ বানায়। সেখানে তারা লোক দেখানো নামাজ পড়ত আর অশান্তি সৃষ্টি এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে বহিঃশত্রুর আক্রমণের সুযোগ তৈরিসহ নানা রকম ষড়যন্ত্র করত। তাবুক থেকে ফেরার পথে নবিজিকে সতর্ক করে আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা মসজিদ তৈরি করেছে ক্ষতিসাধন, কুফুরি আর মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে, আর যে ব্যক্তি আগে থেকেই আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে তার ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের নিমিত্তে, তারা অবশ্যই শপথ করবে যে, আমাদের উদ্দেশ্য সৎ ব্যতীত নয়। আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন, তারা নিশ্চিত মিথ্যাবাদী।’ (সুরা তওবা: ১০৭)
রাসুলুল্লাহ (সা.) তখনই দুই সাহাবিকে এই মসজিদ পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য পাঠালেন। তিনি মদিনায় পৌঁছার আগেই তারা মসজিদটি একেবারে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেন।
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক