![কম দামে মিলছে না তেল](uploads/2024/03/04/1709542785.Soyabin.jpg)
এখনো কম রেটের ৫ লিটার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) ৮০০ টাকার সয়াবিন তেল পাইনি। তাই কম দামে বিক্রিও করতে পারছি না। সরকার বলছে, লিটারে ১০ টাকা কমানো হয়েছে। কোম্পানি থেকেও কম দামের তেল দেব, দিচ্ছি করছে। কিন্তু পাচ্ছি না। আগের বেশি রেটের তেলই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এভাবেই কম দামের তেল না পাওয়ার ব্যাপারে অনুযোগ করেন রাজধানীর কৃষি মার্কেট বাজারের সিটি এন্টারপ্রাইজের আবু তাহের। বিভিন্ন পাড়ায়ও পাওয়া যাচ্ছে না কম দামের তেল। মোহাম্মদপুরের নামাবাজারের রুবেল বলেন, আগে কেনা ৮৪৫ টাকার ৫ লিটার তেল লোকসান করে বিক্রি করতে হচ্ছে। এখনো কম রেটের তেল কোম্পানি থেকে দেয়নি। তারা বলছে আসবে, অপেক্ষা করেন।
অথচ ভোজ্যতেল মিলমালিকরা গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি টাস্কফোর্সের সভায় ১ মার্চ থেকে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমিয়ে ১৬৩ টাকা বিক্রির সিদ্ধান্ত জানান। সরকারও কম দামে তেল বিক্রির ঘোষণা দেয়। এ ছাড়া গত শুক্রবারও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, গতকাল রবিবার থেকে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৬৩ টাকা বিক্রি হবে। কিন্তু গতকাল বিভিন্ন বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সবখানে কম রেটের তেল নেই। কোনো কোনো দোকানে ৫ লিটার ৮০০ টাকা রেট দেখা গেলেও অধিকাংশ দোকানে ১ লিটার তেলের গায়ে ১৭৩ টাকা দেখা গেছে এবং বিভিন্ন বাজারে খুচরা ব্যবসায়ীরা ১৭০ টাকা লিটার বিক্রি করছেন। তারা সাফ জানিয়ে দেন, ‘কম দামের তেল পেলে তখন কম দামে বিক্রি করব।’
কম রেটে বাজারে ১ মার্চ থেকে তেল বিক্রির ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারের দিপক জেনারেল স্টোরের দিপক খবরের কাগজকে জানান, সয়াবিন তেল আছে। আগের বেশি রেটের ৫ লিটার ৮৪৫ টাকার তেল রয়েছে। এটা ৮১০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। দাম কমেনি? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কম রেটের তেল এখনো আসেনি। আগেরটা কিছু কমে বিক্রি হচ্ছে। অন্য বিক্রেতারাও বলেন, কম দামের ১৬৩ টাকা লিটার তেল এখনো পাইনি। তাই বিক্রিও করা যাচ্ছে না। একই কথা জানান, কৃষি মার্কেটের সিটি এন্টারপ্রাইজের আবু তাহের। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘কোম্পানি থেকে দেব, দিচ্ছি বলছে কিন্তু তেল পাই না। এ জন্য বিক্রিও করতে পারছি না কম দামের ১৬৩ টাকা লিটার তেল।’
তবে কারওয়ান বাজারে সয়াবিন তেল বিক্রির ক্ষেত্রে একটু ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। কোনো কোনো দোকানে তীর ব্র্যান্ডের কম রেটের ৫ লিটার ৮০০ টাকা এমআরপি লেখা তেল পাওয়া গেছে। কিন্তু অধিকাংশ দোকানে দেখা গেছে বসুন্ধরা, টিকে গ্রুপের পুষ্টি আগের বেশি রেটের ৫ লিটার ৮৪৫ টাকা লেখা তেল। খুচরা বিক্রেতারা তা ৮০০-৮১০ টাকা বিক্রি করছেন। তবে কোনো কোম্পানির ১ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল দেখা যায়নি। এ সময় কুমিল্লা জেনারেল স্টোরের মজিবুর রহমান জানান, বসুন্ধরা তেল আছে। ৮০০ টাকা। কিন্তু এমআরপি দেখা যায় ৮১৭ টাকা। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কী জানি। এর কারণ কোম্পানি জানে। কিছু বলার থাকলে তাদের বলেন।’
এই বাজারের আল্লাহর দান স্টোরের শাহ আলম বলেন, তীরের ৫ লিটার ৮০০ টাকা পাওয়া গেছে। তবে ১ লিটার এখনো পাওয়া যায়নি। আগের ১৭৩ টাকার তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা লিটার। পাশের শাহ পরান স্টোরের খুচরা বিক্রেতা শাহ পরান জানান, আগের রেটের ৫ লিটার ৮৪৫ টাকার তেল ৮০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে কম রেটের তীর ব্র্যান্ডের তেল পাওয়া যাচ্ছে। তা ৮০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
ভোজ্যতেলের দাম সীমাহীনভাবে বেড়ে গেলে এ নিয়ে বাজারে হইচই পড়ে। বিভিন্ন মহল থেকে বেশি দাম বলা হলেও মিলমালিকরা বলেন, ডলারসংকট। শুল্ক না কমালে কমবে না তেলের দাম। এ জন্য সরকার গত ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চাল, চিনি ও খেজুরের ওপর শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় এবং ভোজ্যতেল আমদানির ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেয়। পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ের মূল্য সংযোজন কর বা মূসক বা ভ্যাট পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর ফলে পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ে ভ্যাট ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত দিতে হবে না ব্যবসায়ীদের। এ ছাড়া সয়াবিন ও পাম তেলের আমদানি পর্যায়েও ৫ শতাংশ ভ্যাট কমানো হয়েছে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনাবিষয়ক টাস্কফোর্সের সভায় সয়াবিন তেলের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। তাতে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১০ টাকা কমিয়ে ১৬৩ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়। সেদিনই জানানো হয়েছিল, ১ মার্চ থেকে সয়াবিন তেলের নতুন এই দর কার্যকর হবে। তবে খুচরা বাজারে এখনো নতুন দামে তেল বিক্রি শুরু হয়নি। দেশে বছরে সয়াবিন তেলের চাহিদা ২০ লাখ টনের মতো। প্রতি মাসে গড়ে দেড় লাখ টন লাগলেও রমজান মাসে চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে যায়। কিন্তু উৎপাদন দেড় লাখ টনও হয় না। বাকি চাহিদা আমদানি করে মেটাতে হয়।
কম রেটের তেলের ব্যাপারে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা খবরের কাগজকে বলেন, শুল্ক ও ভ্যাট কমানোয় প্রতি লিটারে ৫ টাকা প্রভাব পড়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী রিফাইনাররা লিটারপ্রতি ১০ টাকা দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১ মার্চ থেকেই বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে পাম তেলের দাম কমানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কম রেটের ৫ লিটার তেল ৮০০ টাকারটা পাওয়া গেছে। তবে ১ লিটারের তেল ১৬৩ টাকা বাজারে পাওয়া যায়নি। খুচরা বিক্রেতারাও অভিযোগ করে জানান তারা পাননি। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিল থেকে বাজারে যাচ্ছে নতুন রেটের তেল। ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। বিক্রেতরা বেশি লাভের আশায় হয়তো ১ লিটারের তেল দৃশ্যমান জায়গা রাখেন না। এ জন্য পাওয়া যাচ্ছে না।