![বেগুন তরমুজে চরম নৈরাজ্য](uploads/2024/03/22/1711080822.Watermelone-brin-jel.jpg)
রোজার আগে বেগুনে আগুন লাগলেও চৈত্র্য মাসের খরা না আসতেই গ্রামাঞ্চলে দাম একেবারে কমে গেছে। কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নের হাত্রাপাড়া গ্রামে বেগুনের কেজি ৫-৭ টাকা। মানিকগঞ্জের বিভিন্ন বাজারেও দাম ১০ টাকার নিচে। বগুড়ার মহাস্থানহাটেও বেগুনের কেজি ১০ টাকা। কিন্তু রাজধানীর আড়তে সেই বেগুনের কেজি ২০-২৫ টাকা। একটু দূরেই ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়।
একইভাবে তরমুজের বাজারেও দেখা গেছে চরম অব্যবস্থাপনা। ব্যাপারীদের কাছ থেকে কেনার পর আড়তদারির খরচ, শ্রমিকের খরচ ধরে (৮ কেজি ওজনের) আড়তে তরমুজের পিস ১৮০ টাকা। কিন্তু একটু দূরেই খুচরা বিক্রেতারা সেটা ৫০-৬০ টাকা কেজি অর্থাৎ ৪০০-৪৮০ টাকায় বিক্রি করছেন। ভোক্তারা বলছেন, নীতি-নৈতিকতার তোয়াক্কা করছেন না ব্যবসায়ীরা। যে যার মতো দাম আদায় করছেন।
রমজানের প্রথমে খেজুরের দাম বেশি থাকলেও বর্তমানে কেজিতে ১০০-১৫০ টাকা কমেছে। শসা ও লেবুর দামও কমেছে। তবে দাম বাড়ার পরে ঝিম ধরে আছে মাংস, চালের দাম। গতকাল বিভিন্ন আড়ত, বাজার ঘুরে সংশ্লিষ্ট ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
কিশোরগঞ্জের হাত্রাপাড়া গ্রামের কৃষক মো. জুনাঈদ গত বুধবার ৫-৭ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, বেগুনের মূল্য কম। চাষের খরচের টাকাই ওঠে না। তাই বেগুনের সব গাছ কেটে ফেলেছি। সেই বেগুন রাজধানীতে এখনো ভোক্তাদের চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে খুচরা বাজারে ৫০-৬০ টাকা কেজি বলে বিক্রেতারা জানান। দামের ব্যাপারে সবজি বিক্রেতা মাসুদসহ অন্য বিক্রেতারা খবরের কাগজকে বলেন, বেগুন ৫০-৬০ টাকা কেজি। টাউনহলসহ অন্য বাজারেও দাম বেশি বলে বিক্রেতারা জানান।
কিন্তু কারওয়ান বাজারের সিটি করপোরেশন মার্কেটের সামনে শফিক বলেন, বেগুনের দাম কমেছে। ১২০ টাকায় পাল্লা মানে ৫ কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি কেজি ২৫ টাকা। আড়তে গেলে দেখা যায়, বেগুনের দাম আরও কম। কারওয়ান বাজারের সততা ট্রেডার্সের রোকন খান এই প্রতিবেদককে বলেন, রোজার আগে অনেক বেশি থাকলেও এখন বাজারে বেগুনের দাম অর্ধেকের নিচে। সব খরচা বাদে আড়তে ২০-২৫ টাকা কেজি। তাও বিক্রি হয় না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই আড়তদার বলেন, বগুড়াসহ বিভিন্ন মোকাম থেকে বেগুন আনা হয়। সড়কের খরচা, ট্রাক ভাড়া, লেবার দিয়ে কেজিতে ৫-৬ টাকা পড়ে। ভাড়া কম হলে আরও কম দামে সবজি ক্রেতারা পাবেন। অন্য আড়তদাররাও বলছেন, বেগুনের দাম অনেক কমেছে।
রমজানে ইফতারের জন্য অন্য ফলের মতো তরমুজেরও বেশি চাহিদা থাকে। এ জন্য বরিশালের আগামজাতের তরমুজে ভরে গেছে রাজধানী। কিন্তু দামে গলা কাটছে ভোক্তাদের। বিভিন্ন আড়তে কম দামে পিস হিসেবে বিক্রি হলেও খুচরা বিক্রেতারা তা কেজিতে গলাকাটা দামে বিক্রি করছে। গতকাল কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন আড়তে সরেজমিনে গেলে এমনই চিত্র দেখা গেছে। এই বাজারের দুলাল ট্রেডার্সের রুবেল বলেন, আগের চেয়ে অর্ধেকে নেমে গেছে তরমুজের দাম। গতকাল ১৬০ টাকা পিস বিক্রি করা হয়েছে। আড়তদারির খরচ ১৬ টাকা, লেবার খরচা ৩ টাকা সবমিলে বড় তরমুজের (ওজন ৮ কেজি) দাম ১৮০ টাকা। ছোট সাইজের ৪-৫ কেজির তরমুজ ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
অন্য আড়তদারেরাও বলছেন, পিসেই তরমুজ বিক্রি করা হয়। আড়তে কখনো কেজিতে বিক্রি হয় না। কারওয়ান বাজারের স্বদেশ ফার্মের মালিক ও আড়তদার ফিরোজ আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘সেই ছোটকাল থেকেই আমরা খামারিদের কাছ থেকে আড়তে তরমুজ পিস হিসেবে কিনে খুচরা বিক্রেতারাদের কাছে পিস হিসেবেই বিক্রি করে থাকি। এভাবে বেশি দাম নেওয়ায় শাহেদ আলী নামে এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রমজানে মাসে তরমুজে নৈরাজ্য দেখা দিয়েছে। এটা সরকারের দেখা দরকার। এত দামের তারতম্য হতে পারে না।’
তবে খুচরা বিক্রেতারা ইচ্ছামতো দাম আদায় করায় বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) ও ফসল ডটকম লিমিটেড একটু হলেও তরমুজে ভোক্তাদের স্বস্তি দিয়েছে। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারের টিসিবি ভবন চত্বরে সাত-আট কেজি পিস তরমুজ ৩০০ টাকা ও চার থেকে ছয় কেজি ওজনের তরমুজ ২০০ টাকা পিস বিক্রি করে। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে ঢাকায় ২০ স্থানে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকসেল ও দোকানের মাধ্যমে তারা তরমুজ বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন।
আগের চেয়ে পেঁয়াজের দামও কমেছে বাজারে। গতকাল বিভিন্ন বাজারে খুচরা পর্যায়ে ৬৫-৭০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। দামের ব্যাপারে খুচরা বিক্রেতা সেলিম বলেন, পেঁয়াজ ৭০ টাকা, আলু ৪০ টাকা, আমদানি করা রসুন ২০০ টাকা ও দেশি রসুন ১৩০ টাকা, আদা ১৮০-২০০ টাকা কেজি। একই বাজারের এরশাদও বলেন, আগের চেয়ে কমে ৭০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
তবে কেউ বেশি করে অর্থাৎ পাল্লা (৫ কেজি) ধরে নিলে কম দামে পাচ্ছে। কারণ প্রতি পাল্লা ৩৫০ টাকা বিক্রি করতে দেখা গেছে। সেই পেঁয়াজ আড়তে আরও কম দামে ৫৭-৬১ টাকা কেজি ছিল। মাতৃভাণ্ডারের তারেক বলেন, আগের চেয়ে দাম কমেছে। নতুন পেঁয়াজের মৌসুম শুরু হয়েছে। তবে গত বছরের চেয়ে দাম এখনো দ্বিগুণ বলে টিসিবি সূত্রে জানা গেছে।
রমজানের প্রথমে খেজুরের দাম অস্থির হয়ে যায়। তবে ১০ রমজানের পরে কেজিতে ১০০-১৫০ টাকা কমেছে বলে বিক্রেতারা জানান। দামের ব্যাপারে কারওয়ান বাজারের বিক্রমপুর ভ্যারাইটি স্টোরের সজীব বলেন, আগে বেশি দামে বিক্রি করা হলেও বর্তমানে কেজিতে ১০০-১৫০ টাকা কমেছে। মরিয়ম খেজুর ৯৫০-১০০০ টাকা, বরই খেজুর ৪০০ টাকা, তিউনেশিয়া খেজুর ৫৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অন্য খেজুর ব্যবসায়ীরাও বলছেন, দাম কমে আসছে। চাহিদা কমছে। তাই দাম কমছে। সামনে আরও কমতে পারে।
রমজানে ছোলার দাম বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহের মতো বৃহস্পতিবারও ১১০ টাকা কেজি ছিল। বিভিন্ন বাজারে সয়াবিন ১৬৩ টাকা লিটার, ৫ লিটার ৭৯০-৮০০ টাকা, চিনি ১৪০ টাকা কেজি, মিনিকেট চাল ৬৮-৭০ টাকা, ২৮ চাল ৫৮-৬০ টাকা ও মোটা চাল ৪৮-৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্য পণ্যের মতো রমজান মাসের প্রথমে শসার চাহিদা বেশি থাকায় দামও ছিল চড়া। এখন কমে ৪০-৫০ টাকা কেজিতে নেমেছে। খিরার কেজিও বর্তমানে ৪০ টাকা। রোজার প্রথমে মরিচের দামও বাড়তে শুরু করে। আগে ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও গতকাল বিভিন্ন বাজারে ৬০-৮০ টাকা দাম ছিল বলে বিক্রেতারা জানান। লেবুর দামও আগের চেয়ে কমেছে। আগে ৫০-৬০ টাকা হালি বিক্রি হলেও এখন ৩০-৪০ টাকায় নেমেছে।
তবে কমে না মাংসের দাম। খলিলসহ তিনজন ৬০০ টাকার কমে গরুর মাংস বিক্রি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও অন্য বাজারগুলোতে তা মেলে না। কারওয়ান বাজারসহ অন্য বাজারের বিক্রেতারা বলেন, ৭৫০ টাকার কমে বিক্রি করলে কিছুই থাকে না। আগের সপ্তাহে পোলট্রি মুরগি ২১০-২২০টাকা ও পাকিস্তানি কখ ৩১০-৩৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও বর্তমানে পোলট্রি ২০০, সোনালি মুরগি ৩০০ টাকা বলে বিভিন্ন বাজারের বিক্রেতারা জানান।
ডিম ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রমজানে ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। সাদা ডিমের ডজন ১২০ ও লাল ডিম ১৩০ টাকা। মাছের দাম আগের মতোই বলে বিভিন্ন বাজারের বিক্রেতারা জানান।