![ইভিএম প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তায় ইসি](uploads/2024/04/01/1711944826.EVM.jpg)
সংরক্ষণে অব্যবস্থাপনা, ৯০ শতাংশের বেশি যন্ত্রাংশ অকেজো, প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না পাওয়া বা বরাদ্দ প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তার কারণে সংকটে পড়েছে নির্বাচন কমিশনের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্প। এমতাবস্থায় প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ জানতে চেয়ে সরকারকে চিঠি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সংস্থাটির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ খবরের কাগজকে জানিয়েছেন, ইভিএম প্রযুক্তি ব্যবহারে সরকার নতুন করে বাজেট বরাদ্দ না দিলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর আগামী জুন মাস থেকে এই প্রকল্পের কার্যক্রম আর চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না। আর প্রকল্পটি বন্ধ হলে সব মিলিয়ে ইসির আর্থিক ক্ষতি হবে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।
ইভিএমের প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ইভিএম যন্ত্র সংরক্ষণ, অকেজোগুলো মেরামতসহ প্রকল্পের চলমান কার্যক্রমে আর্থিক সংকট রয়েছে। বর্তমানে দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে ১ লাখের বেশিই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। এতে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। মেরামতের জন্যও নেই কোনো অর্থের জোগান। সংকটের বিষয়টি বেশ কয়েকবার জানানোর পরও বরাদ্দ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা আমরা এখনো পাইনি।’
২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে দেড় লাখ ইভিএম কেনে তৎকালীন কে এম নুরুল হুদা কমিশন। সে সময় প্রতি ইভিএম বাবদ খরচ ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ধরে হাতে নেওয়া হয় ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প। দাবি করা হয়, উন্নত মানের ফল পাওয়া যাবে ইভিএমে। তবে ৫ বছর না যেতেই বিগড়ে যেতে থাকে কথিত উন্নত মানের সেই ইভিএম।
এদিকে চলতি বছরের জুনে শেষ হয়ে যাচ্ছে এই প্রকল্পের মেয়াদ। এ পর্যায়ে প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ এবং ভবিষ্যৎ জানতে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে প্রায় প্রতিটি ইভিএমেই নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তখন প্রয়োজন অনুযায়ী যন্ত্রগুলো মেরামত করে কাজ চালানো হয়। আসছে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চার ধাপে ৬৯টি আসনে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তারপর বরাদ্দ না পেলে এই প্রকল্পের কার্যক্রম চালানো সম্ভব হবে না। ইভিএমের মেয়াদ ১০ বছর ধরা হলেও ৫ বছরের মধ্যে অকেজো হয়ে পড়ে বেশি ভাগ মেশিন। প্রকল্পটি বাতিল হলে যন্ত্রগুলো পুড়িয়ে বা নষ্ট করে ফেলা হবে।’
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘চলমান ইভিএম প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সরকার থেকে নতুন বরাদ্দ না দিলে আগামী জুনে এই প্রকল্প বন্ধ করে দিতে হবে। তখন যেসব ইভিএম আছে, সেগুলো সরকারি আইন মেনে স্থায়ীভাবে অকেজো/অপসারণ করা হবে।’ চিঠি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উপজেলার ভোট শেষে আগামী কোনো নির্বাচনে সরকার ইভিএম ব্যবহার করবে কি না, তা সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হবে। যদি ইভিএম ব্যবহার করা হয়, তাহলে সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি খরচ আছে। এ পর্যায়ে আমাদের হাতে থাকা সচল ইভিএম দিয়ে উপজেলা নির্বাচনের ভোট শেষ করা যাবে। তবে জুনের মধ্যে সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ দিলে এই ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমেই শেষ হবে আধুনিক প্রযুক্তির এই ভোট ব্যবস্থাপনা।’
বাংলাদেশে প্রথম ইভিএম ব্যবহৃত হয় ২০১১ সালে। বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ এবং স্থানীয় ও উপনির্বাচন মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার নির্বাচন হয়েছে ইভিএম পদ্ধতিতে। বর্তমানে ইসির সংরক্ষণে থাকা ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএমের মধ্যে ৯০ ভাগের বেশি মেশিনই অকেজো পড়ে আছে। যেগুলোর মূল্য প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। এ পর্যায়ে ব্যবহারের উপযোগী ইভিএম রয়েছে ৪০ হাজার। সেগুলো দিয়েই সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অকেজো ইভিএমগুলোর কিছু কিছু বাটন নষ্ট, আবার কিছুর ডিসপ্লে নষ্ট। কেব্লেও সমস্যা আছে। মেরামত ও সংরক্ষণের অভাবে মেশিনগুলো পড়ে রয়েছে অনাদরে-অবহেলায়। এসব ছোট ছোট সমস্যার সমাধান করা গেলে ৫০ থেকে ৬০ হাজার ইভিএম পুনরায় সচল হবে।
গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম দিকে ১৫০ আসনে এবং পরবর্তী সংকট বাস্তবতায় ৬০ থেকে ৭০টি আসনে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইসি। কিন্তু নষ্ট ইভিএমগুলো মেরামতসহ প্রয়োজনীয়সংখ্যক বাড়তি ইভিএম কেনার বাজেট না পাওয়ায় তা করা সম্ভব হয়নি। আগামীতে স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনেই ইভিএমে ভোট নিতে আগ্রহী নির্বাচন কমিশন। কিন্তু অকেজো ইভিএমগুলো মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান আপাতত ইসির কাছে নেই। চলমান বাস্তবতায় সরকারও এই খাতে নতুন করে কোনো অর্থ বরাদ্দে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।