ভোজ্যতেল মিলের মালিকরা প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১০ টাকা বাড়িয়ে ১৭৩ টাকা ও ৫ লিটার ৮৪৫ টাকা করার প্রস্তাব করলেও সরকার তাতে সম্মত হয়নি। মিলমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বুধবার (১৭ এপ্রিল) ট্যারিফ কমিশনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন পায়নি। সিদ্ধান্ত হয়েছে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত আগের মতোই অর্থাৎ প্রতি লিটার তেল ১৬৩ টাকায় বিক্রি করতে হবে। এর বেশি দামে কেউ বিক্রি করতে পারবেন না। তা করলে ভোক্তা অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরকার মিলমালিকদের প্রস্তাবে অনুমোদন না দেওয়ায় রাজধানীর মৌলভীবাজারে খোলা তেলের দাম বাড়েনি। পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা খবরের কাগজকে বলেন, ‘শুনেছি ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে মিলমালিকদের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে মিটিং হয়েছে। কিন্তু মিলমালিকদের প্রস্তাবে সরকার সাড়া দেয়নি। বাড়তি দামের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই দাম বাড়ানোর কোনো প্রশ্নই আসে না। মিলগেট থেকে তেলের সরবরাহ ঠিক আছে। সরকার দাম বাড়ানোর অনুমোদন দিলে তখন আমরাও বেশি দামে বিক্রি করব। তাই আগের মতোই প্রতি লিটার তেল পাইকারি দরে ১৪৪ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।’
‘তেলের দাম বাড়ল’ বলে অনেক টিভি চ্যানেল ও পত্রিকায় খবর প্রচারের পর কারওয়ান বাজারের কোনো কোনো পাইকারি ব্যবসায়ী বিভিন্ন কোম্পানির বোতলজাত তেলের দাম বাড়িয়ে দেন। ফলে খুচরা বিক্রেতাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। বিক্রেতাদের বেশি লাভ থাকছে না। গতকাল বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য জানা গেছে।
কারওয়ান বাজারের লক্ষ্মীপুর জেনারেল স্টোরের আবুল কাসেম বলেন, “আগে ৫ লিটার ৭৭০-৭৮০ টাকা কেনা হতো। তাতে ২০-৩০ টাকা লাভ থাকত। কিন্তু ‘বাড়ল তেলের দাম’ গত মঙ্গলবার টিভিতে এমন খবর প্রচারের পর পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে ৭৯০ টাকায় নিয়ে গেছেন। আমরা ৮০০ টাকার বেশি বিক্রি করতে পারছি না। ৫ লিটারে মাত্র ১০ টাকা লাভ থাকছে। ১ লিটারের বোতল সহজে পাওয়া যায় না। আগে ১৬০ টাকায় কিনে ১৬৩ টাকা বিক্রি করতাম। এখন ১৬০ টাকায় পাওয়া যায় না।” অন্য খুচরা বিক্রেতারাও বলছেন, কিচেন মার্কেটের দোতলায় বিভিন্ন কোম্পানির বোতলজাত তেলের দাম বেশি রাখা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বিভিন্ন কোম্পানির পাইকারি সয়াবিন তেল বিক্রেতা মেসার্স সিদ্দিক এন্টারপ্রাইজের আবুবকর সিদ্দিক এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরেই শুনছি মিলমালিকরা তেলের দাম বাড়াবেন। কিন্তু সরকার অনুমোদন দেয়নি। তাই আমিও কোনো দাম বাড়াইনি। আগের মতোই ১ লিটার ১৬০ টাকা ও ৫ লিটার ৭৭০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অনেকে অভিযোগ করলেও আমি কোনো দাম বাড়াইনি।’
মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হলেও গতকাল পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের উপপ্রধান মাহমুদুল হাসান বলেন, কমিশনের চেয়ারম্যান ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীনের সভাপতিত্বে বুধবার (গতকাল) বিকেলে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের মিটিং হয়েছে। সেখানে তারা লিটারে ১০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। আমরাও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেছি। এলসি খোলা থেকে শুরু করে অনেক কিছু এর সঙ্গে জড়িত। এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু ১০ টাকা দাম বাড়ানোর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত বর্তমান দর অর্থাৎ প্রতি লিটার তেল ১৬৩ টাকা ও ৫ লিটার ৮০০ টাকা মূল্যই বহাল থাকবে। এর বেশি দাম কোনো ব্যবসায়ী রাখতে পারবেন না।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা হায়দার খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভ্যাট কমানোর মেয়াদ গত ১৫ এপ্রিল শেষ হয়ে গেছে। আমরা লোকসান করে ব্যবসা করতে পারি না। এ জন্য আমরা ১৫ এপ্রিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি লিটারে ১০ টাকা বাড়ানোর। ১৬ এপ্রিল থেকে নতুন দর কার্যকর করার জন্য বলেছি। দামের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বুধবার (গতকাল) ট্যারিফ কমিশনে মিটিং হয়েছে। আলোচনা হয়েছে। কিন্তু দাম বাড়ানোর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আশা করি, সরকার তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত জানাবে। বাজারে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের (এমআরপি) যে তেল আছে (১ লিটার ১৬৩ টাকা) খুচরা ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের কাছে সেই দামে বিক্রি করবেন। নতুন দরের তেল মিলগেট থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি করতে পারবে না।’
উল্লেখ্য, মিলমালিকরা গত ১৫ এপ্রিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে লিটারপ্রতি ১০ টাকা বাড়িয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের নতুন দাম ১৭৩ টাকা, ৫ লিটারের দাম ৮৪৫ টাকা এবং খোলা ১ লিটার পাম তেলের দাম ১৩২ টাকা নির্ধারণ করে অনুমোদনের প্রস্তাব দেয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাড়তি দর যেন ১৬ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিউজও হয়েছে, বাড়ল তেলের দাম। তবে মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, সয়াবিনের আগের দামে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
অন্যান্য পণ্যের মতো ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে গেলে সরকার রমজান মাস উপলক্ষে গত ৭ ফেব্রুয়ারি মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) কমায় ৫ শতাংশ। এর মেয়াদ ১৫ এপ্রিল শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিলমালিকরা লিটারে ১০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়।