![মৌসুম শেষের অজুহাতে চড়া দামে তরমুজ](uploads/2024/04/23/1713862994.watermalone.jpg)
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আড়তদাররা ৮ থেকে ২০ হাজার টাকায় ১০০ তরমুজ বিক্রি করছেন। প্রতি পিসের দাম পড়ে ১০০ থেকে ২০০ টাকা। এসব তরমুজের ওজন তিন থেকে ৭ কেজি। কিন্তু সেই তরমুজই একটু দূরে ৬০-৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।
এটি শুধু এই বাজারেরই চিত্র নয়, মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে খুচরা বিক্রেতারা এভাবেই বেশি দামে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করছেন। তারা বলছেন, মৌসুম শেষ। প্রচণ্ড গরম। তাই দাম বাড়ছে। আড়তদাররা বলছেন, আমরা খুলনা, বরিশালের কৃষকের কাছ থেকে কিনে সামান্য লাভে বিক্রি করছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এবার খুলনা ও বরিশালে প্রচুর ফলন হয়েছে তরমুজের। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত উৎপাদন হবে। বেশি দামের আশায় পরিপক্ব হওয়ার আগেই কৃষকরা খেত থেকে তুলে বাজারে বিক্রি করছেন। গতকাল সোমবার বিভিন্ন বাজার ঘুরে সংশ্লিষ্ট বিক্রেতা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
কারওয়ান বাজারের চাচা-ভাতিজা বাণিজ্যালয়ের মোক্তার হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, আগের মতোই আছে তরমুজের দাম। বড়গুলো ১০০টার দাম ২০ হাজার টাকা, মাঝারিটা ১৫ হাজার টাকা ও ছোট সাইজ ১০ হাজার টাকা। বরিশালের তরমুজ সাইজে বড়। সেগুলোর দাম একটু বেশি। খুলনারগুলো সাইজে একটু ছোট। সেগুলো বেশি টকটকে লাল ও পাকা। তারা আরও বলেন, প্রথমে যেভাবে বেশি দাম ছিল এখন সেভাবে নেই। তবে মাঝে যেভাবে কমে গিয়েছিল, সে জায়গাতেও নেই। তেমন দাম বাড়েনি।
এই বাজারেরই একটু দূরে কিচেন মার্কেটের সামনে খুচরা বাজারে দেখা যায় উল্টো চিত্র। তারা পিস হিসেবে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছেন। কেজি ৬০-৭০ টাকা। তাতে আড়তের পাইকারির চেয়ে খুচরায় দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। জসিম নামে এক খুচরা বিক্রেতা বলেন, ৭০ টাকা কেজি। এর কমে হবে না। ওজন ৬-৭ কেজি হবে। অন্য বিক্রেতাদেরও একই কথা, কম দামে নেই। সাইজে ছোট ৩ কেজি ওজনের তরমুজ ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন তারা।
টাউন হল বাজারেও দেখা গেছে এই চিত্র। বিক্রেতারা পিস হিসেবে কিনে কেজিতে বেশি দামে খুচরা বাজারে বিক্রি করছেন। এই বাজারের ইউনুছ বলেন, আকার ভেদে ৬০-৭০ টাকা কেজি। ৮ কেজি ওজনেরটা ৬০০ টাকা। এর কমে হবে না। মৌসুম শেষ। তাই দাম বেশি। গরমে চাহিদাও বেড়েছে। কিন্তু সরবরাহ কমছে। বরিশালের তরমুজ শেষ। এত বেশি দাম? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি মেমো দেখিয়ে বলেন, এই দেখেন কারওয়ান বাজার থেকে বেশি দামে কেনা। তাতে দেখা যায় ১৮০ টাকা পিস কেনা। এসব তরমুজের ওজন ৫-৭ কেজি হবে।
খুচরা বিক্রেতা রফিকুল ও হাবিব বলেন, দাম বেশি। এ সপ্তাহেই শেষ হয়ে যাবে। খুলনার বাজুয়া থেকে ট্রাকে করে আনা হয়েছে। বড়টা ৪০ হাজার টাকা শ বা ৪০০ টাকা পিস কেনা হয়েছে। ছোটগুলোর দাম কম। মেমোতে কত আছে জানতে চাইলে তারা বলেন, মেমো নেই। ট্রাক ভাড়া করে এনেছি। ৭০ টাকার কম বিক্রি হবে না। এই বাজারের সুমন বলেন, তরমুজের বেতাল অবস্থা। মোকামে শেষ হয়ে যাচ্ছে। ৩-৫ কেজি ওজনের তরমুজ ২০০-৩৫০ টাকা পিস কেনা। লাভ তো করতে হবে আমাদের। তাই ৭০ টাকা কেজির কম বিক্রি করা যাবে না।
বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. এমরান মাস্টার বলেন, আমরা বেশি দামে বিক্রি করি না। আগের মতোই ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। প্রায়ই অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে প্রথমে দাম বাড়ে সরবরাহ কম থাকায়। এখন দাম বাড়ছে মৌসুম শেষ হওয়ায়। কিন্তু আমরা আড়তে বেশি বাড়াতে পারি না। কৃষকের কাছ থেকে কিনে সামান্য লাভে বিক্রি করা হয়। বৃষ্টি হলে দাম কমে যাবে। কারণ বৃষ্টি হলে স্বাদ কমে যায়। বেশি দাম মনে করলে কেনার দরকার নাই। কখনো আমরা কেজিতে বিক্রি করি না। সব সময়ে পিসে কেনাবেচা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন সুপার শপে কেটে বিক্রি হয় তরমুজ। আমাদের অনেকের পক্ষে বড়টা একা কেনা সম্ভব না। তাই কেটে বিক্রি করার সুযোগ হলে ভালো মানের তরমুজ অনেকে কিনতে পারবেন।
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত পরিচালক মো. শওকত ওসমান খবরের কাগজকে বলেন, এ বছর বরিশাল এলাকায় তরমুজের ভালো উৎপাদন হয়েছে। ফলনও ভালো। ৪৭ হাজার হেক্টর (৩ লাখ ৫৩ হাজার বিঘা) জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৪২ টন উৎপাদন ধরা হয়েছে। সবমিলে তরমুজ উৎপাদন হয়েছে প্রায় দুই লাখ টন। এর মধ্যে পটুয়াখালী, ভোলা ও বরগুনায় বেশি তরমুজের চাষ হয়েছে। এখনো উৎপাদন শেষ হয়নি। আর ১৫ দিন পাওয়া যাবে তরমুজ।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, এই এলাকায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৩৫ টন তরমুজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। তবে খেতে যে ফলন দেখছি, তাতে পরিমাণ আরও বেশি হবে। ইতোমধ্যে ১০ শতাংশ তরমুজ আহরণ করা হয়েছে। বাজারে গেছে সেসব। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত পাওয়া যাবে এই এলাকার তরমুজ। তিনি আরও বলেন, অনেক চাষি বেশি দামের আশায় আগাম তরমুজ তুলে বাজারে বিক্রি করছেন। এ জন্য সাইজ ছোট। সময় দেওয়া হলে সাইজ আরও বড় হবে। কৃষকদের বলা হলেও অনেকে বেশি দামের আশায় তারা তুলে নিচ্ছেন খেত থেকে।
রোজার শুরুতে বেশি দামে তরমুজ বিক্রি হয়েছিল। ১০ কেজি ওজনের তরমুজ ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ নিয়ে দেশে হইচই পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বয়কটের ডাক দেওয়া হলে অনেকে তরমুজ কেনা বন্ধ করে দেন। শেষের দিকে দাম কমে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় নামে। অর্থাৎ কেজি ৮০ টাকা থেকে কমে ৩০-৪০ টাকায় নামে। কিন্তু ঈদের পর হঠাৎ করে গরম পড়তে শুরু করলে রসাল এই ফলের দাম বাড়তে শুরু করে। এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, বাজারে কেজি দরে তরমুজ বিক্রির সুযোগ নেই। কারণ কৃষকরা মাঠে পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি করেন।