![স্পিনই কিউইদের অস্ত্র!](uploads/2023/11/27/1701059255.new Zealand- Partha=OK.png)
পাকিস্তানি কিংবদন্তি সাকলায়েন মুশতাক ঠিক কখন কোথায় থাকেন সেটা ঠাউর করা কঠিন। তবে সিলেটের মাঠে হুট করে মুশতাককে দেখে বোঝার অপেক্ষা থাকে না নিউজিল্যান্ড দলের সঙ্গে কাজ করছেন। উপমহাদেশে সফর বলে আপাতত দলটির স্পিন বোলিং কোচের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি। স্বল্প সময়ের দায়িত্ব বলে সাকলায়েন ‘দায়সারা’ভাবে ছিলেন না। বরং ইশ সোধি, রাচিন রবীন্দ্র ও এজাজ প্যাটেলকে নিয়ে পুরোটা সময় নিবিড় মনোযোগী ছিলেন। গতকাল সিলেটে নিউজিল্যান্ড দলের অনুশীলনের পুরোটা সময় সাকলায়েন ব্যস্ত ছিলেন এই স্পিনারকে নিয়ে। তার এমন নিবিড় মনোযোগের পর বুঝতে বাকি নেই স্পিনই হবে বাংলাদেশ বধের অস্ত্র।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আউটার মাঠে সকাল সকাল নিজেদের অনুশীলন সেরে নেয় সফরকারী নিউজিল্যান্ড। উপস্থিত ছিল পুরো দল। মূল মাঠে গা গরমের পর আউটারে তাদের জায়গা হয়। ওই আউটারের সেন্টার উইকেটে স্পিনারদের নিয়ে কাজ করেন সাকলায়েন মুশতাক। অন্য প্রান্তে বাকিদের নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন লুক রনকি ও অন্য কোচরা। সবার চেয়ে আলাদা ছিলেন মুশতাক। তিনি শুধু কাজ করেন স্পিনারকে নিয়েই। শুধু কাজ বললে ভুল হবে- স্পিনারদের ভুলগুলো হাতে-কলমে শুধরে দেন।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে সাকলায়েন মুশতাকের। ২০১২ ও ২০১৩ সালে কাজ করেন স্পিন পরামর্শক হিসেবে। ফলে বাংলাদেশ ক্রিকেট সম্পর্কে তার জানাশোনা কোনো অংশে কম নয়। এ ছাড়া বেশ কয়েকবার প্রতিপক্ষ দলের কোচ হয়েও তাকে দেখা গিয়েছিল বাংলাদেশে। ফলে টাইগারদের ক্রিকেটারদের শক্তিমত্তা নিয়ে তার আছে যথেষ্ট জানাশোনা। আর প্রযুক্তির এই যুগে তো ক্রিকেটারদের বিশ্লেষণ করে ফেলা যায় মুহূর্তেই। সিলেট টেস্টের আগে সেই তত্ত্বটাই ভেদ করেছেন সাকলায়েন মুশতাক। রাচিন-সোধিদের দিয়ে বারবার করিয়েছেন ফ্লাইটেড ডেলিভারি। বাংলাদেশের টেস্ট দলে থাকা তিন স্পিনার- মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসানরা পটু ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে। তাদের ওই ভেল্কিতে উইল ইয়ং, টম লাথাম ও টম ব্লান্ডেলরা যেন ভড়কে না যান সেই দীক্ষাই দেন সাকলায়েন। এমন কি নিজেও শিষ্যদের পরীক্ষা নেন ওই ফ্লাইটেড ডেলিভারি করে। শিষ্যরা কেমন শিখলেন সেটাই সম্ভবত যাচাই করে নেন।
সিলেটে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ফিরবে সাদা পোশাকের ক্রিকেট। সেবার সিলেটে ছিল স্পিন দাপট। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বদলেছে চিত্র। দেশের সেরা স্পোর্টিং উইকেটের তকমা পেয়েছে সিলেট। তবুও অবশ্য দুই দলের ভরসা ওই স্পিন আক্রমণ। দুই দলেই আছে কমপক্ষে চারজন করে স্পিনার। ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো সিলেটের উইকেটে স্পিন ধরবে, এমন ভাবনা নিয়েই হয়তো বাড়তি স্পিনার যোগ হয়েছে নিউজিল্যান্ড শিবিরে। সেটা স্বীকার করে নিউজিল্যান্ড কোচ লুক রনকির ভাষ্য ছিল, ‘এটা (স্পিন-সহায়ক উইকেট) বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রকৃতি। আশা করছি, বলে কিছুটা আনইভেন বাউন্স হবে এবং টার্ন থাকবে।’
সেই সুযোগের সদ্ব্যবহারে কোচিং প্যানেলে যুক্ত করেছে সাকলায়েন মুশতাকের মতো কিংবদন্তি স্পিনারকে। তার অন্তর্ভুক্তি একমাত্র এই কারণে সেটা প্রমাণিত কোচ লুক রনকির কথায়। গতকাল সিলেটে নিউজিল্যান্ডের অনুশীলন শেষে তিনি বলেন, ‘এটা দারুণ (সাকলায়েনের অন্তর্ভুক্তি)। এই বিষয়ে তার জ্ঞান দারুণ এবং সে যেভাবে আমাদের স্পিনার, কোচদের সঙ্গে লাইন, লেন্থ এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছে সেটা দারুণ। তার অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য বড় বিষয়।’
২০২২ সালে ঘরের মাঠ মাউন্ট মঙ্গানুইতে ম্যাচ হারে নিউজিল্যান্ড। সেবার তাদের পেসেই পরাস্ত করেছিলেন বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা। এবার হয়তো কিউইদের পরিকল্পনাও সেটা। বাংলাদেশের মাঠে টাইগারদের কাবু করতে চান স্পিনেই। এই ম্যাচ দিয়ে ২০১৩ সালের পর প্রথমবার বাংলাদেশের মাঠে টেস্ট খেলতে নামবে নিউজিল্যান্ড দল। ওই বছরই রঙিন পোশাকে বাংলাদেশের কাছে হেরেছিল ওয়ানডে সিরিজ। ওই হারের বদলা নেয় চলতি বছর। হয়তো টেস্টের প্রত্যাবর্তনটাও স্মরণীয় করতে চান বলে কিউইরা শান দিচ্ছেন স্পিন আক্রমণে।