![ঋতুপর্ণার ফুটবল- দর্শন](uploads/2023/11/29/1701238851.Rituporna-Tofael.jpg)
মাঠে অনেকের ভিড়ে ঋতুপর্ণা চাকমাকে খুঁজে নিতে কষ্ট হয় না কারও। লম্বা কেশে বাহারি স্টাইলে ইতোমধ্যে মন হরণ করেছেন অনেকের। ১৯ বছর বয়সী এই ফুটবলার মাঠেও বেশ চৌকস। বল নিয়ে তার বাঁ পায়ের কারুকাজ ছড়ায় অপার মুগ্ধতা। খেলার মাঠে দুরন্ত ঋতুপর্ণা পড়াশোনাতেও মেধাবী। সম্প্রতি তিনি ভর্তি হয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সাবজেক্ট- দর্শন।
গত পরশু (সোমবার) বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন ঋতু। ক্যাম্পাস থেকে বাফুফে ভবনে ফিরতেই পড়াশোনা ও খেলা নিয়ে অনেক কথাই বললেন এই ফরোয়ার্ড।
ঋতুপর্ণা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন সাদা সালোয়ার কামিজে। প্রথম দেখায় তাকে চিনতে পারাই কঠিন। ঋতু জানালেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পর তাকে নাকি সাধারণত কেউ চিনতেই পারেননি। অবশ্য তাকে কোনোভাবেই ফুটবলার মনেও হচ্ছিল না। জানতে চাইলে ঋতু হেসে উত্তর দেন, ‘মাস্ক পরে ছিলাম আমি। তাই কেউ চিনতে পারেনি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অনুভূতি জানতে চাইলে ঋতুর উত্তর, ‘সবারই তো ইচ্ছা থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। অবশ্যই এটা ভালো অনুভূতি। আমারও অনেক ভালো লাগছে। বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলাম। একটা স্বপ্ন বাস্তবায়ন হলো। সত্যিই খুবই ভালো লাগছে।’
পার্বত্য জেলা রাঙামাটির মেয়ে ঋতুপর্ণা। ছোটবেলা থেকেই ছিল খেলাধুলার ঝোঁক। বঙ্গমাতা আন্তপ্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তার ফুটবলে হাতেখড়ি। ২০১৬ সালে ভর্তি হন বিকেএসপিতে। একই বছর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) ছায়াতলে আসেন। ঋতুপর্ণাকে এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০২২ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী দলের অন্যতম সারথি ছিলেন তিনি। তার আগে আলো ছড়িয়েছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতাতেও।
খেলার সঙ্গে পড়াশোনাটাও তিনি সামলেছেন ভালোভাবে। খেলোয়াড় কোটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির দুয়ার খুলতেই ঋতুপর্ণা সেই সুযোগটা লুফে নিতে পারলেন। কিন্তু সারা বছর ফুটবলে কঠোর অনুশীলনে মধ্যে থেকেও পড়াশোনাও কীভাবে সামলান? ঋতুপর্ণার লাজুক উত্তর, ‘পড়াশোনার সময় পড়াশোনা, খেলাধুলার সময় খেলাধুলা। দুটিই মেনটেইন করি, যেভাবেই হোক।’
তার পড়ার বিষয় দর্শন নিয়ে জানতে চাইলে বললেন, ‘আমার সাবজেক্ট এসেছে ফিলোসফি (দর্শন)। ভালোই লাগছে। আমার পছন্দের সাবজেক্ট এটি।’ পড়াশোনায় তার লক্ষ্যের কথা জানতে চাইলে খুব দূরে তাকাতে চাইলেন না। ছোট্ট করে বললেন, ‘আপাতত গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে চাই ভালোভাবে।’
ঋতুপর্ণার বাবা বরজ বাঁশি চাকমা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ২০১৫ সালে। চার বোনের একমাত্র ভাই ছিল। কিন্তু গত বছর আদরের সেই ভাই পার্বণ চাকমা মারা যান বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে। বাবা ও ভাই হারানোর কষ্ট একপাশে রেখেই এগিয়ে চলেছেন ঋতুপর্ণা। তাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত পরিবারের সদস্যরা। উচ্ছ্বসিত তার ফুটবল গুরুরাও। পরশু ক্যাম্পাস থেকে ফিরতে যেমন বাফুফে ভবনে ঢোকার পথেই তার দেখা হয়ে যায় মাহবুবুর রহমান লিটুর সঙ্গে। এ সময় জাতীয় নারী দলের সহকারী কোচকে বেশ গর্বিতই লাগছিল। শিষ্যের সাফল্যে খুব আনন্দিত তিনি।
আগামী ১ ও ৪ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। এই দুই ম্যাচের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঋতুপর্ণা বললেন, ‘প্রস্তুতি মোটামুটি ভালো। এখন মাঠেই প্রমাণ করতে চাই বাকিটা। আমরা নিজেদের সেরাটা দিয়ে খেলব। ইন্শাআল্লাহ ভালো রেজাল্ট হবে।