সাবিনা খাতুনদের আস্থা প্রস্তুতিতে এবং তাদের সামর্থ্যে, কারণ প্রতিপক্ষ ‘অচেনা’ সিঙ্গাপুর। দীর্ঘ সাত বছর পর দলটির মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ নারী দল। শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে দুটি প্রীতি ম্যাচের প্রথমটি শুরু হবে বিকেল ৪টায়।
লড়াইয়ের আগে বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ফল নিয়ে সরাসরি কিছুই বলতে চাইলেন না বাংলাদেশ কোচ সাইফুল বারী টিটু এবং অধিনায়ক সাবিনা। দুজনের কৌঁসুলি বক্তব্যে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, প্রতিপক্ষ নিয়ে খুব পরিষ্কার ধারণা নেই তাদের।
সংবাদ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে খবরের কাগজের সঙ্গে আলাপে সাবিনা সেটা স্বীকারও করে নিলেন। তাই জয়-পরাজয় নিয়ে প্রশ্ন করলে বলেন, ‘আমার কাছে যদি জানতে চান, আমি বলব হ্যাঁ (প্রতিপক্ষ অচেনা)। কারণ আমি ওদের সম্পর্কে জানি না। তাই কোনো মন্তব্য (জয়-পরাজয় নিয়ে) করে বসাটা মনে হয় না ভালো হবে। ওদের সঙ্গে যদি দুয়েক বছরের মধ্যে খেলা হতো, পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকত, তাহলে আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারতাম কিছু একটা।’ সাবিনা যোগ করেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ হবে, এই আশা আমি রাখছি।’
সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত একটি ম্যাচই খেলেছে নারী দল। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিঙ্গাপুরের মাঠে সেই ম্যাচটি হেরেছিল ৩-০ গোলে। যদিও গত ৭ বছরে বাংলাদেশের নারী ফুটবল পেয়েছে নতুন আদল। মারিয়া মান্ডা, মনিকা চাকমারা বষয়ভিত্তিক ফুটবল পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। তবে ফুটবলে প্রতিপক্ষ অচেনা হলে তাদের বিপক্ষে রণকৌশল সাজানো কঠিনই। সিঙ্গাপুরের বর্তমান দলটা সম্পর্কে ধারণা নিতে গিয়ে বাংলাদেশ কোচ সাইফুল বারী টিটুর যেটা মনে হচ্ছে, ‘দলটা পুনঃগঠনের মধ্যে আছে। অনেক বদলের মধ্যে আছে ওরা। ৬ মাস আগে যে খেলোয়াড়রা ছিল, এখন তারা নেই।’
মেয়েদের র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪২। সিঙ্গাপুর আছে ১৩০তম স্থানে। বাংলাদেশ কোচ মনে করেন, ‘আমরা খুব কাছাকাছিই। ওরা এগিয়ে বা আমরা এগিয়ে এমনটা বলব না।’ প্রতিপক্ষ অচেনা হলেও সিঙ্গাপুর কোচ করিম বেঞ্চরিফাকে বেশ ভালোভাবেই চেনেন টিটু। ফুটবলে কোচদের ফিলোসফির ওপর যেহেতু অনেক কিছু নির্ভর করে, তাই টিটুর এই দিকটায় সুবিধাই হবে কিছুটা। সংবাদ সম্মেলনে সেটা স্বীকারও করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে শিষ্যদের প্রতিও রয়েছে তার পূর্ণ আস্থা, ‘আমাদের জন্য বাড়তি অ্যাডভান্টেজ হচ্ছে ভেন্যু আমাদের খুব চেনা। এখানে আমরা নিয়মিত ট্রেনিং করি। আর আমাদের মেয়েদের টেকনিক্যাল সাইটটা খুব ভালো। সাবিনা থাকাতে আমাদের খেলোয়াড়দের যে বোঝাপড়া, সেটা খুব ভালো।’
বাংলাদেশের মেয়েরা সবশেষ খেলেছে গত সেপ্টেম্বরে এশিয়ান গেমসে। গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে বাংলাদেশের প্রাপ্তি ছিল শেষ ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে ড্র করা। যদিও ওই ম্যাচে আসলে জয়টাই বড় পাওয়া হতো। এর আগে শক্তিশালী জাপানের বিপক্ষে ০-৮ ও ভিয়েতনামের বিপক্ষে ৬-১ ব্যবধানে হারে সাইফুল বারী টিটুর দল। বাংলাদেশের মেয়েদের মতো সিঙ্গাপুরের মেয়েরাও সবশেষ খেলেছে গত সেপ্টেম্বরে এশিয়ান গেমসে। গ্রুপ পর্বে দুই ম্যাচেই তারা হেরেছিল বড় ব্যবধানে। বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর- দুই দলই তাই এই জায়গাটায় একবিন্দু থেকেই শুরু করতে যাচ্ছে। সিঙ্গাপুর প্রথম ম্যাচের মাত্র দুদিন আগে ঢাকায় এসেছে। নতুন জায়গায় মানিয়ে নিতে সময় লাগে। বাংলাদেশ দল এই বিষয়টা কাজে লাগাতে চাইছে। তবে বাংলাদেশ কোচ শিষ্যদের সতর্ক করে দিলেন, ‘আমাদের ম্যাচিউরড ফুটবল খেলতে হবে।’
প্রথম ম্যাচটায় প্রতিপক্ষ সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা হয়ে যাবে বলে মনে করেন টিটু। তাই তার বিশ্বাস, ‘দ্বিতীয় ম্যাচটা খুব উপভোগ্য হবে।’ আজকের ম্যাচ নিয়ে টিটুর মনে হচ্ছে, ‘আমরা ধরে নিচ্ছি ওরা দৌড়ানোর চেষ্টা করবে বেশি। ফিজিক্যাল অ্যাডভান্টেজ নেওয়ার চেষ্টা থাকবে ওদের। ওগুলো মাথায় রেখেই এগোচ্ছি। প্রথম ম্যাচেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। দ্বিতীয় ম্যাচটা আমার মনে হয় খুব ইন্টারেস্টিং করে।’
চোটের কারণে এ ম্যাচে খেলতে পারবেন না অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রানী সরকার। বাংলাদেশের জন্য যা বড় ধাক্কা। তবে অধিনায়ক সাবিনার অন্যদের ওপর আস্থা আছে বেশ, ‘কৃষ্ণা খুবই অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। ও থাকলে অবশ্যই অনেক ভালো হতো। যেহেতু ওকে পাচ্ছি না, সেখানে কিছু করার থাকছে না। কৃষ্ণার যে ইনজুরি সেখান থেকে ওর কামব্যাক করা জরুরি। ওর জায়গায় ঋতুকে ট্রাই করছে কোচ। আশাকরি ও সেই জায়গাটা পূরণ করতে পারবে।’