ম্যাচ শুরু সাবিনা খাতুনের একাধিক গোলমিসের মধ্য দিয়ে। অভিজ্ঞ এই ফুটবলার অন্তত তিনটি সুযোগ তৈরি করলেন প্রথম ১২ মিনিটে। যার প্রতিটিতেই গোল পাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেটা না হওয়ায় হাহাকারের সুর বাজল কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে।
তবে বাংলাদেশের মেয়েরা এরপর দ্রুতই গুছিয়ে নিল নিজেদের। ৯ মিনিটের ব্যবধানে আসল তিন গোল, ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হাতের মুঠোয়। বাকি সময়টা শুধুই দোর্দণ্ড দাপট দেখাল বাংলাদেশের মেয়েরা। গোলের পর গোল হজমে রীতিমতো কোণঠাসা সিঙ্গাপুরের মেয়েরা। বাংলাদেশ পেল ৮-০ গোলের বিশাল জয়।
বাংলাদেশের হয়ে দুটি করে গোল করেছেন তহুরা খাতুন ও ঋতুপর্ণা চাকমা। একটি করে গোল করেন সাবিনা, সানজিদা আক্তার, মাতসুসিমা সুমাইয়া ও শামসুন্নাহার জুনিয়র।
প্রথমার্ধে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষের জালে তিন গোল দেওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে করেছে আরও ৫টি। আরও দুটি গোল বাতিল হয়েছে অফসাইডে। গোল মিস তো রয়েছেই। না হলে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়টা এদিন পেয়েই যেত বাংলার মেয়েরা। লাল-সবুজের মেয়েদের সবচেয়ে বড় জয়টা ৯-০ ব্যবধানে। ২০১০ সালে ভুটানের বিপক্ষে এসেছিল এই জয়। গত শুক্রবার দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে সিঙ্গাপুর হেরেছিল ৩-০ গোলে। এনিয়ে দলটির বিপক্ষে তিন বারের দেখায় দুটিতে জিতল বাংলাদেশ।
সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম খেলেছিল ২০১৭ সালের শুরুতে। দীর্ঘ বিরতির কারণে এবার প্রথম ম্যাচটার আগে তাদের নিয়ে ধাঁধায় ছিল সাবিনারা। প্রথম ম্যাচে পরিষ্কার হয়ে যায় এই দলটার চেয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা ঢের এগিয়ে। যদিও র্যাঙ্কিংয়ে তারা ১২ ধাপ পিছিয়ে সিঙ্গাপুরের চেয়ে। প্রথম ম্যাচে বাজেভাবে হারলেও এ ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ছিল সিঙ্গাপুরের। বাংলাদেশও প্রতিপক্ষ নিয়ে ছিল সতর্ক। কিন্তু মাঠে আসলে সেভাবে কোনো প্রভাবই রাখতে পারেনি সিঙ্গাপুর। তাদের বলার মতো আক্রমণ ছিল একটি।
বাংলাদেশ তৃতীয় মিনিটেই দারুণ এক সুযোগ তৈরি করে। মিডফিল্ড থেকে বল নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতিপক্ষের দুই ফুটবলারকে বোকা বানিয়ে এগিয়ে যান মনিকা। বা পায়ে শটে অন্যপ্রান্তে সাবিনার উদ্দেশে বল বাড়ান তিনি। কিন্তু শট নিতে একটু বেশিই সময় নিয়ে ফেলেন সাবিনা। যা বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে রুখে দেন সিঙ্গাপুর গোলরক্ষক তান লি। ফিরতি বলে তহুরা শট নিলে সেটাও ক্রসবারে লেগে ফিরে। অবশ্য অফসাইডেও জড়িয়ে পড়েছিলেন তহুরা। পরের মিনিটেই সাবিনা বক্সের ভেতর ভালো জায়গায় বল পেয়েও উড়িয়ে মারেন। ১১তম মিনিটেও দারুণ গতিতে বক্সে ঢুকেছিলেন। এ দফায়ও তিনি বল পোস্টে রাখতে পারেননি। সাবিনার মতো ফুটবলারের কাছে একের পর এক এমন গোল মিস ছিল বেশ হতাশার।
এর মধ্যেই ১৪তম মিনিটে নুর সায়াজওয়ানি বাংলাদেশের পোস্টে ভালো জায়গায় বল পেয়ে যান। তবে তার নেওয়া শট রুখে দেন গোলরক্ষক রুপনা চাকমা। দুই মিনিট পর তহুরার গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। গোলটির উৎস সাবিনার নেওয়া ফ্রি কিক। ডানপ্রান্ত থেকে নেওয়া কিকে বক্সের ভেতর বল ফেলেন তিনি। সেখানে প্রান্তির ভলি থেকে মাসুরা হেডে সামনে বাড়ান। এরপর তহুরা হেডে বল জালে জড়ানোর কাজটা সারেন।
১৮তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ঋতুপর্ণা। সাবিনার নেওয়া ফ্রি কিক বক্সের ভেতর ক্লিয়ার করতে পারেননি সিঙ্গাপুরের খেলোয়াড়রা। ফাঁকায় বল পেয়ে ঋতুপর্ণা আলতো টোকায় বলটা জালে জড়িয়ে দেন। ২৪তম মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করেন তহুরা (৩-০)। ডানপ্রান্ত থেকে সানজিদার ক্রস থেকে বল পেয়ে ঋতুপর্ণা বাঁ পায়ে আড়াআড়ি শট নেন। কিন্তু সেটি প্রতিহত করেন সিঙ্গাপুর গোলরক্ষক। ফিরতি বলে তহুরা বল জালে জড়াতে ভুল করেননি। আগের ম্যাচেও তিনি করেছিলেন জোড়া গোল।
বিরতির পর ম্যাচের ৫১তম মিনিটে সানজিদা বল জালে জড়ালেও অফসাইডে বাতিল হয়। তবে ৫৬তম মিনিটে সেই আক্ষেপ দূর হয় তার। বক্সের বাঁ প্রান্ত থেকে ঋতুপর্ণার কাটব্যাক থেকে তহুরার নেওয়া শট রুখে দিয়েছিলেন সিঙ্গাপুর গোলরক্ষক তান লি। ফিরতি বলে দারুণ টোকায় বল জালে জড়িয়ে দেন সানজিদা। বাংলাদেশ পায় ৪-০ গোলের লিড।
৬২তম মিনিটে ঋতুপর্ণা দেখার মতো এক গোল করেন। মনিকা চাকমার বাড়ানো বল ধরে বক্সের বাঁ দিক দিয়ে ঢুকে পড়েন। কাছের পোস্টের ওপরের কোণা দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন তিনি। ৭৪তম মিনিটে তহুরার জায়গায় সুমাইয়া ও সানজিদার জায়গায় শামসুন্নাহার জুনিয়ারকে মাঠে নামানো হয়। পরের মিনিটেই শামসুন্নাহার জুনিয়রের এসিস্ট থেকে গোল করেন সাবিনা। বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ৬-০ ব্যবধানে। ৮৭তম মিনিটে বদলি নামা সুমাইয়া গোল করলে ৭-০ গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। যোগ করা সময়ে ঋতুপর্নার কাটব্যাক থেকে শামসুন্নাহার গোল করলে ৮-০ গোলের জয় নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের।