![বাংলাদেশের টিকে থাকার লড়াই](uploads/2024/03/06/1709699549.Preview-BD-vs-SL.jpg)
দৃশ্যপটে আমূল পরিবর্তন। দুই দিন আগেও যেখানে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজ নিয়ে সিলেটবাসীর মাঝে আগ্রহের ব্যাপক ঘাটতি ছিল। স্টেডিয়ামমুখী করতে মাইকিং করেও সুফল পাওয়া যায়নি। কিন্তু ঘরের ছেলে জাকের আলীর দৃষ্টিনন্দন, আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের কারণে সিলেটবাসীর মধ্যে তৈরি হয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। জাকের আলীর এই মারমুখী ব্যাটিংয়ের কারণেই বাংলাদেশ দল শ্রীলঙ্কার ৩ উইকেটে করা পাহাড়সমান ২০৬ রান টপকাতে গিয়ে অল্পের জন্য পারেনি। শেষ পর্যন্ত হার মানে ৩ রানে। একে তো হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, সেখানে আবার বোনাস হিসেবে ঘরের ছেলে জাকের আলীর নান্দনিক ব্যাটিং দেখতে না পারার কারণে অনেকের মাঝে ব্যাপক আফসোস দেখা গেছে। কেউ কেউ মাথায় হাত দিয়ে বলছিলেন, ইস কেন যে গেলাম না? কী মিস করলাম? এরকম ম্যাচ কি পরের ম্যাচে গেলে আর দেখতে পারব? জাকের আলী কি আবারও সেই রকম ইনিংস খেলতে পারবে? এ রকম কত প্রতিক্রিয়া।
গতকাল মঙ্গলবার অনেকেরই মুখে মুখে ছিল এ রকম প্রথম ম্যাচের স্তূতি। আর ছিল আজ দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দেখতে মাঠে যাওয়ার আগ্রহ। স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যাচ্ছে প্রথম ম্যাচে দর্শকের যে খরা ছিল তা আর দ্বিতীয় ম্যাচ দেখা যাবে না। টিকিটের চাহিদাও বেড়ে গেছে। অনেকেই টিকিটের জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন।
আজ দ্বিতীয় ম্যাচ বাংলাদেশের জন্য সিরিজ বাঁচানোর। লড়াই করে প্রথম ম্যাচ ৩ রানে হারের পর আজ ঘুরে দাঁড়াতে পারলে ৯ মার্চ শনিবার শেষ ম্যাচ তখন হয়ে উঠবে সিরিজ নির্ধারণী ‘ফাইনাল’। আর যদি দ্বিতীয় ম্যাচ বাংলাদেশ জিততে না পারে, তখন সিরিজ হারানোর পাশাপাশি শেষ ম্যাচ হয়ে উঠবে নিয়মরক্ষার। শ্রীলঙ্কান দলের পরামর্শক সাবেক অধিনায়ক সনাথ জয়াসুরিয়া গতকাল সিলেটে এসে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ ভালো খেলেছে। তারা দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
গতকাল দুই দলই বিশ্রাম কাটিয়েছে। স্টেডিয়ামমুখী হয়নি কোনো দলই। অবশ্য শ্রীলঙ্কা দলের কয়েকজন প্রতিনিধি উইকেট দেখতে মাঠে এসেছিলেন বলে জানা গেছে। প্রথম ম্যাচ বাংলাদেশ হেরে গেলেও লড়াকু মনোভাব সবার মনে দাগ কেটেছে। ম্যাচে দুই দলের হয়েছে অনেক কীর্তি। রান বন্যার ম্যাচে দুই দলের ৪০৯ রান বাংলাদেশের মাটিতে সর্বোচ্চ। শ্রীলঙ্কা ইনিংসে ১২ ছক্কাও বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের সর্বোচ্চ। আবার জাকের আলীর ইনিংসে ৬ ছক্কাও বাংলাদেশের এক ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চ ছিল নাজিমউদ্দিনের ৫টি। জয়-পরাজয়ের মাঝে প্রথম ম্যাচটি টি-টোয়েন্টির পরিপূর্ণ আবহ নিয়ে হাজির হয়েছিল। যা দেখে তৃপ্তি নিয়ে মাঠে উপস্থিত স্বল্পসংখ্যক দর্শক ফিরে গেছেন বাড়িতে। সেই টানে তাদের সঙ্গে নতুন করে আরও অনেকে যোগ হবেন আজ। বিসিবির পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এমপিও এমনটি আশা করছেন। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘বিপিএল মাত্রই শেষ হয়েছে। আবার সবার রোজারও একটি প্রস্তুতি আছে। প্রথম ম্যাচ যে রকম লড়াই হয়েছে, তাতে আমার মনে হচ্ছে সিরিজের বাকি দুই ম্যাচে দর্শক অনেক বেশি হবে।’
প্রথম ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কা দলের ৩ উইকেটে ২০৬ রান অনেক বেশি হয়ে গেছে বলে খবরের কাগজকে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। তিনি বলেন, ‘১৯০ রান হলে ঠিক ছিল। বোলাররা শুরুতে ভালো বোলিং করলেও পরে তা ধরে রাখতে পারেনি।’ হারলেও ম্যাচটি দারুণ উপভোগ্য হয়েছে বলে জানান তিনি। ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে শ্রীলঙ্কার রান ছিল ২ উইকেটে ৪৫। ১০ ওভার শেষে তারা করেছিল ২ উইকেটে ৭৯। সেখানে পরের ১০ ওভার তারা সংগ্রহ করে ১২৭ রান।
শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় বলে প্রথম উইকেট হারিয়েছিল। বাংলাদেশ হারিয়েছিল তৃতীয় বলে। এরপর রান সংগ্রহে শ্রীলঙ্কার সমান সমান থাকলেও উইকেট বেশি হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের রান ছিল ৩ উইকেটে ৪৩। ১০ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ৭৮। পরের ১০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে যোগ করতে পেরেছিল ১২৪ রান। বাংলাদেশকে এমন খেলা উপহার দিয়েছিলেন জাকের আলী ছাড়া অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মাত্র ৩১ বলে ৪ ছক্কা ও ২ চারে তিনি ৫৪ রান করেছিলেন।
প্রথম ম্যাচের আবহ পেতে আজ অনেকেই স্টেডিয়ামে ভিড় করবেন। অনেকেই টিভির সামনে বসে পড়বেন। সবারই প্রত্যাশা জয়-পরাজয়ের মাঝে প্রথম ম্যাচের মতোই হবে উপভোগ্য একটি ম্যাচ। তবে প্রত্যাশা থাকবে বাংলাদেশেরই জয়।