![বাজির ঘোড়া আফগানিস্তান](uploads/2024/05/22/afghanistan--Anik=ok-1716355847.jpg)
বড় কোনো ইতিহাস নেই। নেই আহমরি কোনো সাফল্য। আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের প্রাপ্তি বলতে কিছু জয়। এটা যেমন দ্বিপক্ষীয় সিরিজে, তেমনই আইসিসি ইভেন্টে। এমন দলকেই বাজির ঘোড়া মানছেন ব্রায়ান লারা। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলবে কোন দল? এমন প্রশ্নে সাবেক ক্যারিবীয় কিংবদন্তির জবাব ছিল- ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, ইংল্যান্ড এবং আফগানিস্তান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবশেষ সংস্করণে তাকিয়ে এই ভবিষদ্বাণী নিয়ে হাসতেই পারে অনেকে। কারণ অস্ট্রেলিয়ার জয়শূন্য ছিল আফগানরা। তবে লারার মতো ক্রিকেটবোদ্ধারা যে ভুল বলেননি তার প্রমাণ ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। গত বছর ভারতে ওই অভিযানে শেষ পর্যন্ত সেমিফাইনালের লড়াইয়ে ছিল আফগানিস্তান।
সবশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে আফগানদের শিকার হয়েছিল টুর্নামেন্টের সাবেক তিন চ্যাম্পিয়ন- ইংল্যান্ড, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা। সেরা চারের দৌড়ে তারা আসর শেষ করেছিল টেবিলের ছয়ে থেকে। চতুর্থ দল হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করা নিউজিল্যান্ডের চেয়ে মাত্র ২ পয়েন্ট কম ছিল রশিদদের। এমন দলকে হুমকি মানা যায় কোনো সংকোচ ছাড়াই, বিশেষ করে অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটের ছোট ফরম্যাট টি-টোয়েন্টিতে।
নির্দিষ্ট দিনে ভালো ক্রিকেটে জয়ের গল্প লেখার মতো শক্তি-সামর্থ্যের কমতি নেই আফগানিস্তান শিবিরে। তাদের ১৫ সদস্যের বিশ্বকাপ দলে অলরাউন্ডার ছড়াছড়ি। অধিনায়ক রশিদ ছাড়াও এই তালিকায় আছেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই, মোহাম্মদ নবী, করিম জানাত এবং নাঙ্গিয়াল খারোতি।
আফগান দলে স্বীকৃত ব্যাটার মাত্র চার জন- কিপার রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, নাজিবুল্লাহ জাদরান এবং ব্যাকআপ মোহাম্মদ ইসহাক। স্পিনভাগে রশিদ, নবী, খারোতি ছাড়া আছেন মুজিব উর রহমান এবং নুর আহমদ। পেসভাগে নবীন উল হক, ফজলহক ফারুকী এবং ফরিদ আহমদ। এক কথায়- বিশ্বকাপের জন্য সেরা দল সাজিয়েছে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি)। পূর্ণশক্তির দলটি এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে। রশিদের নেতৃত্বে অভিযান শুরুর অপেক্ষায়, যিনি বিশ্বকাপের জন্য সম্প্রতি জন্মভূমিতে ফিরেছেন চার বছর পর! নিরাপত্তা ইস্যুতে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে খুব বেশি থাকা হয় না তার। যেহেতু রাজধানী কাবুল থেকে বিশ্বকাপ যাত্রা করেছে দল, তাই জন্মভূমিতে ফিরেছিলেন আফগানিস্তান ক্রিকেটের পোস্টার বয়।
অল্প সময় দেশে কাটিয়ে ক্যারিবীয় দ্বীপে রশিদ ও তার সতীর্থরা। যুদ্ধের দেশের ছেলেরা এখন ২২ গজের লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং সামনের চ্যালেঞ্জ নিতে মুখিয়ে রয়েছে। সবশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপের স্মৃতি আঁকড়ে শুরু থেকেই নিজেদের সেমিফাইনালের রেসে রাখার চেষ্টা করবে । খেলবে তাদের স্বভাবসুলভ ভয়ডরহীন ক্রিকেট। সম্প্রতি এক মিডিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ দল নিয়ে কথা বলার সময় আফগানদের এই সাহসিকতার কথা ফুটে উঠেছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের কণ্ঠেও। বলেছিলেন, ‘দেখুন, আফগানিস্তানের খেলোয়াড়রা একটি যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ থেকে এসেছে, তাই তারা আমাদের খেলোয়াড়দের মতো ১৪০ প্লাস গতির বল মোকাবিলা করতে ভয় পায় না।’
আইপিএলে ৮ আফগানের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি
রাজনৈতিক কারণে ঘরের মাঠে সিরিজ খেলা কিংবা দল হয়ে প্রস্তুত হওয়া- দুটো সুযোগই কালেভদ্রে পায় আফগানিস্তান ক্রিকেট দল। ঘাটতি পুষিয়ে নিতে দেশের বাইরে ক্রিকেটের ওপর নির্ভরশালী তারা। এটাও সম্ভব হয়েছে তাদের ক্রিকেটীয় মেধার কারণে। যোগ্যতা-বলে চলতি আইপিএলে খেলার সুযোগ হয়েছে ৮ আফগান ক্রিকেটারের। তারা বিশ্বের জনপ্রিয় টি-টোয়েন্টি লিগে খেলেই আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত হয়েছে।
আইপিএলে আফগান ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছে রশিদ খানের। ১২ ম্যাচে শিকার করেছেন ১০ উইকেট এবং তার নামের পাশে রয়েছে ১০২ রান। গুজরাট টাইটান্সে রশিদ ছাড়াও খেলেছেন নুর আহমদ এবং আজমতউল্লাহ ওমরজাই। নুর ১০ ম্যাচে শিকার করেছে ৮ উইকেট। ওমরজাই ৭ ম্যাচে পেয়েছেন ৪ উইকেট এবং ৪ ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে করেছেন ৪২ রান।
লক্ষ্ণৌর হয়ে ১০ ম্যাচে ১৪ উইকেট শিকার করেছেন নবীন উল হক। মোহাম্মদ নবী মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে ভালো সার্ভিস দিতে পারেননি। ৬ ইনিংস বোলিং করে পেয়েছেন মাত্র ২টি উইকেট। আর পাঁচবার ব্যাটিংয়ে নেমে সর্বসাকুল্যে করতে পেরেছেন ৩৫ রান। কলকাতা শিবিরে থাকা রহমানউল্লাহ গুরবাজ এক ইনিংসও ব্যাটিং করার সুযোগ পাননি। এ বছর আইপিএলে অভিষেক হয়েছে গুলবাদিন নায়েবের। দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে ইনিংসে সুযোগ পেয়ে ১৯ রান করেছেন তিনি। দুর্ভাগ্য ফজলহক ফারুকীর। হায়দরাবাদের স্কোয়াডে থাকলেও লিগপর্ব পর্যন্ত একটি ম্যাচের একাদশেও ঠাঁই হয়নি এই আফগান পেসারের।
তারা এখন সেন্ট কিটসে
আগেই বলা হয়েছে, দল হিসেবে খুব বেশি অনুশীলনের সুযোগ হয় না আফগানিস্তানের। তাই আগেভাগেই বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক ওয়েস্ট ইন্ডিজে পাড়ি জমিয়েছে রশিদ বাহিনী। গত বৃহস্পতিবার (১৬ মে) কাবুল থেকে ক্যারিবিয়ান দ্বীপের বিমান ধরে আফগান দল। পাড়ি জমিয়েছে সেন্ট কিটসে। যদিও দলের সঙ্গী হয়নি স্কোয়াডের ১৫ সদস্য। সেটা আইপিএলের কারণে। ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগে দায়িত্ব পালন শেষে সেন্ট কিটসে রশিদদের সঙ্গে যোগ দেবেন অবশিষ্ট কয়েকজন ক্রিকেটার। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (এসিবি) সভাপতি মিরওয়াইস আশরাফ বলেছেন, ‘বিশ্বকাপের আগে খেলোয়াড়রা কন্ডিশন এবং আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে আগে ভ্রমণ করেছে।’
অভিযান শুরু ৪ জুন
‘সি’ গ্রুপে পড়েছে আফগানিস্তান। তাদের অপর চার প্রতিপক্ষ- স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি এবং উগান্ডা। রশিদদের অভিযান শুরু হবে আগামী ৪ জুন। বিশ্বকাপে তাদের প্রথম ম্যাচে প্রতিপক্ষ উগান্ডা। এরপর নিউজিল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলবে যথাক্রমে ৮, ১৪ এবং ১৮ জুন। আফগানদের চার ম্যাচের প্রতিটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময়ে সকালে। তিনটি সকাল সাড়ে ৬টায় এবং একটি সকাল সাড়ে ৫টায়।
টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানের অভিষেক ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০
ম্যাচ: ১৩০
জয়: ৭৯
হার: ৪৮
টাই: ২
পরিত্যাক্ত: ১
র্যাঙ্কিং: ১০
দল
রশিদ খান (অধিনায়ক), রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, আজমতউল্লাহ ওমরজাই, নাজিবুল্লাহ জাদরান, মোহাম্মদ ইসহাক, মোহাম্মদ নবী, গুলবাদিন নায়েব, করিম জানাত, নাঙ্গিয়াল খারোতি, মুজিব উর রহমান, নুর আহমদ, নবীব উল হক, ফজলহক ফারুকী এবং ফরিদ আহমত মালিক। রিজার্ভ: সাদিক অটল, হজরতউল্লাহ জাজাই, সালিম সাফি।