অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড ক্রিকেট দ্বৈরথের সঙ্গে বার্বাডোসের নামটাও দারুণভাবে জড়ানো। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ ব্রিজটাউনের এই কেনসিংটন ওভাল স্টেডিয়ামে দুদলেরই রয়েছে দারুণ কিছু সুখস্মৃতি। কিছু অর্জন আর প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির ইতিহাস। ২০০৭ সালে এই স্টেডিয়ামে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ নেয় অস্ট্রেলিয়া, ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে। একইভাবে এই স্টেডিয়ামেই প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের ইতিহাস গড়ে ক্রিকেটেরজনক ইংল্যান্ড। তবে সেটা ওয়ানডেতে নয়; ২০ ওভারের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। সেদিন ফাইনালে ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ ছিল চিরচেনা শত্রু অস্ট্রেলিয়া। পুরোনো সেই ভেন্যুতে আজ আবার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে দুদল।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চলতি আসরে শুরুটা ভালো হয়নি বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের। গ্রুপ পর্বে (বি-গ্রুপ) নিজেদের প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ায় স্কটল্যান্ডের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হয়েছে। গেল ৪ জুন ব্রিজটাউনে ঘটে এমন ঘটনা। চার দিন পর সেই ভেন্যুতে আজ অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি ইংল্যান্ড। বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় শুরু হবে ম্যাচটি।
বার্বাডোসে দুই ক্রিকেট কুলীনের লড়াই ছাপিয়ে আলোচনাতে রয়েছে বৃষ্টি। যদিও ম্যাচ শুরুর সময় আবহাওয়া রিপোর্টে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে শতকরা ১০ ভাগ। সেই ১০ ভাগ আবার শতভাগে রূপ নিলে কপাল পুড়বে ইংল্যান্ডের। বিশ্বকাপে টিকে থাকতে হলে যে আজ জয় চাই দলটির! বৃষ্টির সঙ্গে দুদলের রয়েছে পুরোনো মিতালি। সবশেষ ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও দুদলের ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে ঘটেছিল সেই ঘটনা। পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়েছে দুদলের। দুই বছর পর আবারও ছোট ফরম্যাটের বিশ্বকাপে খেলতে নামছে দুদল। ম্যাচ ছাপিয়ে এবারও তাই আলোচনার কেন্দ্রে বৃষ্টি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ উদ্যোগে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আইসিসির ছোট ফরম্যাটের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এবার বি-গ্রুপ থেকে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ছাড়াও স্কটল্যান্ড, ওমান এবং নামিবিয়ার মতো দল রয়েছে। পয়েন্ট টেবিল বলছে এই মুহূর্তে ২ খেলায় ৩ পয়েন্ট (এক জয়, এক ড্র) নিয়ে শীর্ষে স্কটল্যান্ড। পরের অবস্থানে থাকা অস্ট্রেলিয়া এবং নামিবিয়ার সংগ্রহ ২ পয়েন্ট। অবশ্য ২ খেলায় নামিবিয়া সংগ্রহ ২, অজিরা ১ ম্যাচ জিতেই রয়েছে টেবিলের দুইয়ে। বি-গ্রুপে চতুর্থ স্থানটি ইংল্যান্ডের। বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়া ম্যাচে ১ পয়েন্ট পেয়ে চারে অবস্থান ইংলিশদের। ২ খেলায় দুই হারে পয়েন্ট শূন্য ওমানের। এমন যখন অবস্থা তখন গ্রুপ পর্বে থেকে সুপার এইটে যেতে হলে আজ ইংল্যান্ডকে জিততেই হবে। হেরে গেলে সুপার এইটে ওঠার পথ কঠিন হয়ে যাবে। পয়েন্ট খোয়ালে অজিদের সমান বিপদে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড ম্যাচ তাই সব ছাপিয়ে টিকে থাকার, অনেকটা বাঁচা-মরার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড দ্বৈরথের ইতিহাস যেমন সমৃদ্ধ, তেমনি প্রাচীন। দুদলের টেস্ট ক্রিকেটের লড়াইয়ের ইতিহাসই তো প্রায় দেড়শ বছর ছুঁই ছুঁই। ওয়ানডের ইতিহাসটা শুরু দুদলকে দিয়ে। সেটাও ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। এরপর ২০০৫ সাল থেকে শুরু আইসিসি প্রবর্তিত ২০ ওভারের নতুন সংস্করণ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। সেই লড়াইয়ের শুরুর সারথি অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড। দ্বিপক্ষীয় সিরিজ এবং আইসিসির ইভেন্ট মিলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দুদল এখন পর্যন্ত ২৩ বার মুখোমুখি হয়েছে। তাতে ইংল্যান্ডের ১১ জয়ের বিপরীতে অজিদের জয় ১০ ম্যাচে। দুদলের বাকি দুই ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছে। শুধু বিশ্বকাপের হিসাব টানলে এগিয়ে থাকবে ইংলিশরা। ২০১০ বিশ্বকাপে অজিদের হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতার পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বর্তমান চ্যাম্পিয়নও তারা (২০২২ সবশেষ আসর)। এর বাইরে ২০১৬ সালে রানার্সআপ হওয়ারও কীর্তি গড়ে ইংল্যান্ড।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পিছিয়ে নেই অস্ট্রেলিয়াও। ২০২১ সালের চ্যাম্পিয়ন তারা। দুবাইতে সেবার নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা জেতে অজিরা। ক্রিকেটে অনেক অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে অজিরা। আইসিসি স্বীকৃত এমন কোনো ইভেন্ট নেই যা জয় করেনি অস্ট্রেলিয়া। গত বছর ভারতের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছে তারা। সেটা আবার স্বাগতিক ভারতকে হারিয়ে। চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফেবারিট হিসেবে খেলছে মিচেল মার্শের দল। প্রথম ম্যাচে ওমানকে ৩৯ রানে হারিয়ে সেটার প্রমাণ রেখেছে। অপর দিকে বৃষ্টির কারণে প্রথম ম্যাচে হোঁচট খেয়েছে জস বাটলারের ইংল্যান্ড। আজ পুরোনো শত্রুর বিরুদ্ধে কেমন করে- এখন সেটাই দেখার।