ঢাকা ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪

ছেলে না থাকলে বাবার সম্পত্তিতে মেয়ের ভাগ

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৫৬ পিএম
আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪, ১১:৫১ পিএম
ছেলে না থাকলে বাবার সম্পত্তিতে মেয়ের ভাগ
ছবি:অ্যাডভোকেট সেলিনা আক্তার

আমাদের দেশে সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলা লেগেই থাকে। বিশেষ করে ওয়ারিশদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে নানা সমস্যা হয়। যদি কোনো ব্যক্তির ছেলে সন্তান না থাকে শুধু মেয়ে থাকে, তাহলে সম্পদের ভাগবাটোয়ারার জটিলতা বৃদ্ধি পায়। ছেলে সন্তান না থাকলে মেয়েরা তার বাবার সম্পত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে আইন কী সেই বিষয়ে বলেছেন অ্যাডভোকেট সেলিনা আক্তার।

মুসলিম আইনে কোরআন, সুন্নাহ ও ইজমার ওপর ভিত্তি করে মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারতসহ বেশ কিছু মুসলিম রাষ্ট্রে সুন্নি আইন প্রয়োগ করা হয়। তাই দেশে সম্পদের বণ্টন মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী হয়ে থাকে। মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী, মৃত ব্যক্তির ছেলে সন্তান না থাকলে মেয়েই যদি তার একমাত্র সন্তান হন, তাহলে সেই মেয়ে মোট সম্পত্তির অর্ধেক পাবে। যদি একাধিক মেয়ে থাকে এবং ছেলে না থাকে, মেয়েরা মোট সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ পাবে এবং এ অংশ সব মেয়ের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ হবে। বাকি সম্পত্তি অন্যরা পাবে। 

ব্যক্তির মৃত্যুর সময় যদি তার স্ত্রী অর্থাৎ মেয়ের মা বেঁচে না থাকেন, তাহলে তাদের পুরো সম্পত্তির অর্ধেক তার মেয়েরাই পাবে। যদি স্ত্রী বেঁচে থাকেন, তাহলে তার স্ত্রী সম্পত্তির এক-অষ্টমাংশ পাবে এবং মেয়েরা সম্পত্তির অর্ধেক পাবে এবং বাকি সম্পত্তি অন্যরা পাবে। মৃত ব্যক্তির এক বা একাধিক মেয়ে থাকলে এবং তার ভাই-বোন জীবিত না থাকলে, ভাই-বোনের ছেলেরা ক্রমান্বয়ে সম্পত্তির ভাগ পাবে। আপন ভাই-বোন না থাকলে সৎভাই, সৎবোন কিংবা তারা না থাকলে সৎভাইয়ের পুত্র থাকলেও অবশিষ্টভোগী হিসেবে তারাও সম্পত্তির ভাগ পাবে। তবে, কেউই যদি না থাকে তবে তখন মেয়েরা কিন্তু পুরো সম্পত্তিরই মালিক হবে।ব্যক্তি যদি পুরো সম্পত্তি শুধু মেয়ের নামে হস্তান্তর করতে চান সে ক্ষেত্রে তার জীবদ্দশায় তার মেয়েদের অনুকূলে উইল করে দিয়ে যেতে পারেন। মনে রাখতে হবে, মেয়েকে পুরো সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের বেশি উইল করা যাবে না। এর বেশি উইল করলে অন্য উত্তরাধিকারীদের সম্মতি লাগবে। আর উইল কার্যকর হবে উইলকারীর মৃত্যুর পর।

সম্পত্তির মেয়ের নামে হেবা বা দান করে যেতে পারেন। এ দান করতে হবে যথাযথ উপায়ে এবং দানের সব আইন মেনে। এই দলিলটি অবশ্যই রেজিস্ট্রি হতে হবে। অন্যথায় আপনি সব সম্পত্তি পাবেন না। অপ্রাপ্তবয়স্ক কন্যাকেও দান করা যাবে। তবে সম্পত্তির দখল মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরই দিয়ে দিতে হবে।

কলি

দেশে নারী মাদকাসক্ত বাড়ছে!

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৪, ১২:০৭ পিএম
আপডেট: ২৬ জুন ২০২৪, ১২:০৮ পিএম
দেশে নারী মাদকাসক্ত বাড়ছে!
অলংকরণ: নাজমুল আলম মাসুম

দেশে পুরুষের পাশাপাশি নারী মাদকসেবীর হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে এ সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। নারীদের মধ্যে মাদক গ্রহণের বিষয়টি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সমাজে তা একসময় ভয়ংকর রূপ নেবে। সামাজিক ও আর্থিক প্রতিবন্ধকতার কারণে অধিকাংশ নারী মাদকাসক্তই পাচ্ছেন না যথাযথ চিকিৎসা। সামাজিক লোকলজ্জার কারণে নারী মাদকসেবীরা চিকিৎসা গ্রহণে অনাগ্রহী। একসময় পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন তারা। আর এ সুযোগটি নিচ্ছে মাদক কারবারিরা। পরিবার বিচ্ছিন্ন মাদকাসক্ত নারীদের তারা ব্যবহার করছে মাদক পাচারের কাজে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ঢাকা আহছানিয়া মিশন কাজ করছে নারী মাদকাসক্তদের নিয়ে। সংস্থাটির আছে একটি নারী মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র। এর ‘হেলথ অ্যান্ড ওয়াশ’ বিভাগের প্রধান ইকবাল মাসুদ এক গণমাধ্যমে বলেন, ‘স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মাদকে জড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ পারিবারিক অবহেলা। বিশেষ করে তারা বাবা-মায়ের কাছ থেকে যথাযথ সময় পায় না। মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত মেয়েদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।’

সম্প্রতি এক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা আহছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৬৪৭ নারীকে মাদক থেকে মুক্ত করার পাশাপাশি মানসিক ব্যাধি ও আচরণবিষয়ক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ১২৯ রোগী পুনরায় চিকিৎসা গ্রহণ করেন। চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারী নারীদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ ইয়াবা, ২৮ শতাংশ গাঁজা, ১৬ শতাংশ ঘুমের ওষুধ ও ১৫ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের মাদক গ্রহণকারী। মানসিক রোগের মধ্যে সিজোফ্রেনিয়া ৩৪ শতাংশ, মুড ডিজঅর্ডার ৩০ শতাংশ, বাইপোলার ১২ শতাংশ, ডিপ্রেশন ১০ শতাংশ, ওসিডিতে ৬ শতাংশ ও বাকিরা অন্যান্য মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন।

মাদকাসক্ত নারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী। এ ছাড়া গৃহবধূ থেকে শুরু করে সব বয়সী নারীই আছেন এর মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের মতে, টিনেজ মেয়েদের মধ্যে মাদকাসক্তির অন্যতম প্রধান কারণ পরিবারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক না থাকা, বাবা-মায়ের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সময় না পাওয়া। আবার ছেলে বন্ধুদের সঙ্গও অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদক নিরাময় কেন্দ্রের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তার মতে, ‘দেশে নারী মাদকাসক্তের সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ হতে পারে তাদের দিয়ে মাদক পাচার করানো। সুকৌশলে আন্তর্জাতিক মাদক কারবারিরা নারীদের মধ্যে মাদকের ব্যবহার বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। এতে দুই দিক দিয়ে লাভবান হচ্ছে তারা। প্রথমত, তাদের মাদকের ক্রেতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, মাদকাসক্ত এই নারীদেরই তারা ব্যবহার করতে পারছে মাদক পাচারের কাজে। কারণ নারীদের দিয়ে মাদক পরিবহন পুরুষদের তুলনায় নিরাপদ।’

সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক ও গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. দেলোয়ারা বেগম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নারীরা যেহেতু সন্তান প্রসব করেন, তাই একজন মাদকাসক্ত নারী এ ক্ষেত্রে তার নিজের ও সন্তানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এ ধরনের নারীদের অনেকেরই গর্ভপাত হয়ে যায়। আবার অপুষ্ট কিংবা কখনো বিকলাঙ্গ সন্তানও জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা থাকে।’

মনোবিদদের মতে, অন্য অনেক কারণের সঙ্গে সবার মধ্যে থেকেও একাকিত্ব নারীর মাদকাসক্তির কারণ। এজন্য পরিবারকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। বন্ধুদের চাপ, একাকিত্ব, পরিবারের অন্য সদস্য বা বন্ধুবান্ধবের মাদক গ্রহণ, বিষণ্নতা, হতাশা, বাবা-মায়ের অতিরিক্ত প্রশ্রয় বা শাসন, অভিভাবকের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, বিচ্ছেদ, সন্তানকে সময় না দেওয়ার প্রবণতা এর জন্য দায়ী বলে মনে করছেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

শুধু মাদক নয়, নারীদের মধ্যে তামাক সেবনের হারও বাড়ছে বলে জানা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে ৪৩ শতাংশ মানুষ তামাকে (সিগারেট, বিড়ি, সাদা পাতা, জর্দা) আসক্ত। এর মধ্যে ২৯ শতাংশই নারী।

ছয় বছর আগে জাতিসংঘের এক জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কমপক্ষে ৬৫ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত। এর মধ্যে ৮৭ শতাংশ পুরুষ আর নারী ১৩ শতাংশ। মাদকাসক্ত নারীদের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।

অন্যদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, দেশে ৪০ লাখ মাদকাসক্তের মধ্যে ৪ লাখ নারী। মাদকাসক্তদের মধ্যে ৯১ শতাংশ কিশোর ও তরুণ, ৪৫ শতাংশ বেকার, ৬৫ শতাংশ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট এবং ১৫ শতাংশ উচ্চশিক্ষিত।

আবার বাংলাদেশ মাদকবিরোধী সংস্থা (মানস)-এর এক পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৭০ লাখ। এর মধ্যে নারী মাদকাসক্তের সংখ্যা ১৬ শতাংশ। মানসের ওই পরিসংখ্যানে আরও উল্লেখ করা হয়, পাঁচ বছর আগে নারী মাদকাসক্তের সংখ্যা ছিল ৫ শতাংশ।

এদিকে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশে মাদকাসক্তদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ২০ দশমিক ৬ শতাংশ।

চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের মতে, নারী মাদকাসক্তদের চিকিৎসায় মূল বাধা হচ্ছে তার পরিবার। এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীকে চিকিৎসার ব্যাপারে পরিবার কোনো সহযোগিতা করে না। অন্যদিকে, পরিবারের সদস্যদের অনাগ্রহের পাশাপাশি মাদকাসক্ত নারী নিজেও চিকিৎসার ব্যাপারে আগ্রহী নন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাদক গ্রহণের পর শরীর যখন আর সহ্য করতে পারে না এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন শুরু করেন, তখন নারীরা চিকিৎসা নেন।

মাদকাসক্ত নারী যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে মাদক কারবারে জড়িত নারীর সংখ্যাও। তালিকায় শীর্ষে থাকা মরণনেশা ইয়াবার ভয়াবহ বিস্তারে নারী ও শিশুদের ব্যবহার ক্রমাগত বাড়ছে। মাদক কারবারিরা ইয়াবার আমদানি, সরবরাহ ও কেনাবেচার জন্য নিরাপদ হিসেবে নারী ও শিশুদের বেছে নিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষরা ব্যর্থ হওয়ায় তাদের পরিবার ও ভাড়া করা নারী-শিশুদের নামাচ্ছে এ ব্যবসায়। একজন নারী মাদক কারবারি তার চুলের খোঁপায় প্রায় ৬০টি ইয়াবা বহন করতে পারে। একইভাবে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে শিশুদের স্কুল ব্যাগেও পাচার করা হচ্ছে মরণনেশা ইয়াবার ছোট-বড় চালান।

এক পরিসংখ্যানে বলা হয়, দেশে যেকোনো ধরনের অপরাধের তুলনায় মাদকের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় নারীর। মাদকের সঙ্গে নারীর এই জড়িয়ে পড়ার কারণ বহুবিধ হলেও মূলত নারীর সামাজিক অবস্থান ও অসহায়ত্ব এটির মূল কারণ। নানাভাবেই নারী বৈষম্যের শিকার, সেটি যেমন পারিবারিকভাবে, তেমনি সামাজিকভাবেও। এই বৈষম্য তাদের ভেতর যে হতাশা আর ক্ষোভের জন্ম দেয় তা থেকে তারা মাদক গ্রহণ করে থাকে। এ ছাড়া দেখা যায় কখনো নারী মাদক গ্রহণ করছে তার স্বামীর কারণে। একইভাবে মাদক কারবারিতে জড়িয়ে পড়ছে তার স্বামীর কারণে। নারীর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে নারীকে ব্যবহার করা হচ্ছে মাদক কারবারিতে।

গণমাধ্যমে মাদকের কুফল নিয়ে অনেক বেশি প্রচার-প্রচারণা, স্কুল-কলেজে বিভিন্ন সময়ে মাদকবিরোধী সেমিনারের আয়োজন করা, সন্তানের ব্যাপারে বাবা-মায়ের নিয়মিত খোঁজখবর রাখার মাধ্যমে নারীদের মাদকে আসক্তির ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব।

জাহ্নবী

সৌদি আরবের প্রথম নারী পাইলট

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৪, ১২:০৫ পিএম
আপডেট: ২৬ জুন ২০২৪, ১২:০৯ পিএম
সৌদি আরবের প্রথম নারী পাইলট
ইয়াসমিন আল মাইমানি

সৌদি আরব বরাবরই রক্ষণশীল দেশ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু কয়েক বছর ধরে নারীদের প্রতি তাদের মনোভাবের পরিবর্তন গোটা বিশ্বকে অবাক করছে। খেলাধুলা, স্টেডিয়ামে যাওয়া, বাইরে বিভিন্ন কাজের অনুমতি, গাড়ি চালানোর অনুমতির পাশাপাশি নারীদের পাইলট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সৌদি আরব যেন আরও বেশি নিজেকে এগিয়ে রাখতে চাইছে।

সৌদি আরবের প্রথম নারী পাইলটের নাম ইয়াসমিন আল মাইমানি; যিনি সৌদি আরবে নারীদের জন্য বিমান চালনার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। ইনি প্রথম নারী, যিনি বাণিজ্যিক বিমানের পাইলট হয়েছেন এবং এর মাধ্যমে তিনি নারী-পুরুষের সমানাধিকারের একটি নতুন পথ তৈরি করেন। এটি সৌদি আরবের জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। কারণ, দেশটি দীর্ঘদিন ধরে কঠোর সামাজিক ও ধর্মীয় বিধিনিষেধের মধ্যে ছিল। এই অর্জন সৌদি আরবের ভিশন-২০৩০-এর অংশ হিসেবে নারীর ক্ষমতায়ন এবং তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করার প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

২০১৩ সালে জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিমান চালানোর ওপর প্রশিক্ষণ নেন ইয়াসমিন। এরপরই তিনি লাইসেন্স পান। কিন্তু পুরুষশাসিত ওই দেশে তেমন কাজ পাচ্ছিলেন না মাইমানি। আর বিমান চালানোর কোনো অনুমতি তো নারীদের ছিল না। ২০১৮ সালে সৌদি আরব কেবিন ক্রু হিসেবে কাজ করার জন্য নারীদের নিয়োগ এবং ফ্লাইট স্কুলে নারীদের তালিকাভুক্তির অনুমতি দিয়ে বিমান চালনার ক্ষেত্রে নীতির পরিবর্তনের ঘোষণা করে। প্রথমবারের মতো সৌদি নারীদের কো-পাইলট হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ইয়াসমিন আল মাইমানি ৫০ জনেরও বেশি প্রার্থীর সঙ্গে আবেদন করেন। অবশেষে তিনি ১১ জনের মধ্যে ছিলেন যাদের নির্বাচিত করা হয়েছিল এবং বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইয়াসমিন নেসমা এয়ারলাইন্সের ফার্স্ট অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান। এ বিমান সংস্থাটি সৌদি আরব ও মিসরের বিভিন্ন স্থানে ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। এর চার মাস পরই আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। তিনি পেয়ে যান বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের পাইলট হিসেবে ওড়ার অনুমতি।

২০১৯ সালের ৯ জুন নেসমা এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট সৌদি আরবের হেইল থেকে আল কাশিম এলাকায় নিয়ে যান ইয়াসমিন । ওই দিনই সৌদির ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করেন তিনি। তুবাক এলাকা থেকে আবার হেইলে ফেরেন ইয়াসমিন। আমেরিকায় ৩০০ ঘণ্টা বিমান ওড়ানোর রেকর্ডও গড়েন ইয়াসমিন।

তার এই অর্জন সৌদি আরবের সমাজে নারীদের ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গ সমতা অর্জনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়। ইয়াসমিন আল মাইমানি সৌদি নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছেন এবং তাদের নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর স্বপ্ন দেখার সাহস জোগাচ্ছেন। তার এই সাফল্য সৌদি আরবের প্রগতিশীল সামাজিক পরিবর্তনের একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

জাহ্নবী

শরণার্থী শিবিরে নারীদের জীবন

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৪, ১২:০৩ পিএম
আপডেট: ২৬ জুন ২০২৪, ১২:১০ পিএম
শরণার্থী শিবিরে নারীদের জীবন
রোহিঙ্গা শিবিরে শ্রেণিকক্ষে পড়ানো হচ্ছে। ছবি: ইউনিসেফ

রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে আছে কয়েক বছর হয়ে গেল। যেকোনো বিপর্যয়ে নারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে সময়ের সঙ্গে তাদের জীবনব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে। তারা এখন আগের চেয়ে অনেকটা ভালো আছেন।

বাংলাদেশে আসার আগে এসব নারী শিক্ষার সুযোগ পাননি বললেই চলে। বেশির ভাগ শরণার্থী এসেছিলেন একেবারে প্রান্তিক জীবন থেকে। এদিকে বিপুলসংখ্যক নারীর শিক্ষার ব্যবস্থা করাও কঠিন ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই প্রথমদিকে বাঙালিরা তাদের মৌলিক শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর মৌলিক শিক্ষাপ্রাপ্ত সেসব শরণার্থীর ওপর ভার দিয়েছেন অন্যদেরও যেন তারা যেটুকু শিক্ষালাভ করেছেন সেটুকু শিক্ষা দেন। শরণার্থী মেয়েরা অল্প বয়সেই বিয়ে করে সন্তানের মা হয়ে যান। তাদের যে পড়াশোনা করতে হবে, এই বোধটাই ছিল না। ধীরে ধীরে তাদের চিন্তাধারার পরিবর্তন হতে থাকে। এখন অনেক শরণার্থী মেয়ে পড়াশোনা করে থাকেন। ছেলেমেয়ে একই শ্রেণিকক্ষে বসা নিয়ে তাদের সংস্কৃতিগত আপত্তিও দেখা দেয়। তাই মেয়েদের জন্য আলাদা শ্রেণিকক্ষেরও ব্যবস্থা করা হয়।

শরণার্থী নারীরা বাংলাদেশে আসার আগে অনেক বিষয়ে সচেতন ছিলেন না। তারা স্বাস্থ্য, যৌনশিক্ষা, নারী অধিকার সব ব্যাপারেই অজ্ঞ ছিলেন। ফলে তাদের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিত, অনেক শিশু জন্ম দিতেন, এখনো দিচ্ছেন। তাদের ধীরে ধীরে এসব ব্যাপারে জানানো হয়। অনেকেই এখন সচেতন হয়েছেন।

নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য তাদের সেলাই শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। সেলাই মেশিন কিনে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া হাতের কাজের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারা নানা হস্তল্পের পণ্য তৈরি করে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এ ছাড়া ফসলি জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল, শাকসবজি ফলিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেও তারা অর্থ উপার্জন করে থাকেন। অনেকে টং দোকান দিয়েছেন। চা-বিস্কুট বিক্রি করে আয়ের সহজ পথ তৈরি করে নিয়েছেন তারা।

শরণার্থী নারীদের ঘন ঘন সন্তান প্রসবের দরুন তারা সন্তান লালনপালনেই এত ব্যস্ত থাকেন যে, আলাদা করে জীবনের আনুষঙ্গিক অনেক কিছু নিয়ে ভাববেন, সাংস্কৃতিক জ্ঞান অর্জন করতে চাইবেন, এই সুযোগটা নেই বললেই চলে। তারা নিজেদের ভেতরই দল তৈরি করে বিনোদনের বিভিন্ন পন্থা খুঁজে বের করেন। শুধু যেসব শরণার্থী মেয়ে স্কুলে যাতায়াত করে, তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি নাচগানও কিছুটা শেখানো হয়। মূলত পড়াশোনা করতে যেন তাদের বিরক্ত না লাগে, তাই পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে এসব করা হয়ে থাকে। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতির অন্ধকার দূর করা সম্ভব নয়। তাই শরণার্থী নারীদের বাড়তি মৌলিক সুবিধাদির লোভ দেখিয়ে হলেও শিক্ষা গ্রহণ নিশ্চিত করা হয়।

দীর্ঘদিন শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা এনজিওকর্মী জিনাত হাকিম খবরের কাগজকে বলেন, ‘শরণার্থী নারীরা যখন প্রথম এ দেশে আসেন, তখন তাদের অবস্থা খুব নাজুক ছিল। তবে বর্তমানে তারা বেশ ভালো অবস্থানে আছেন। তাদের সব মৌলিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে। আশা করি, ভবিষ্যতে তারা আরও সুন্দর জীবনযাপন করবেন।’

জাহ্নবী

নারীর শরীরে ডায়াবেটিসের ক্ষতিকর প্রভাব

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৪, ১২:০১ পিএম
আপডেট: ২৬ জুন ২০২৪, ১২:১০ পিএম
নারীর শরীরে ডায়াবেটিসের ক্ষতিকর প্রভাব
নিয়মিত ব্যায়াম করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। ছবি: এআই

বর্তমান সময়ে যেসব রোগ খুব সহজেই মানুষের শরীরে দানা বাঁধছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ডায়াবেটিস। তরুণ বয়সী থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষের এই রোগ দেখা যাচ্ছে। প্রাচীন ভারতে ডায়াবেটিসকে  মধুমেহ বা বহুমূত্র রোগ বলা হতো। মধু মানে মিষ্টি আর মেহ মানে প্রস্রাব। প্রস্রাবের সঙ্গে যেহেতু মধু জাতীয় মানে মিষ্টি জাতীয় জিনিস যাচ্ছে সে কারণে মধুমেহ বলত। ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাবের সঙ্গে সুগার যাওয়া, শরীর শুকিয়ে যাওয়া- এই তিনটি হয় ডায়াবেটিস হলে। পুরো নাম ডায়াবেটিস ম্যালাইটাস। আমরা শুধু ডায়াবেটিস বলি। ডায়াবেটিস হলে শরীরে ইনসুলিনের অভাব দেখা দেয়। ইনসুলিন কমে গেলে শরীরের অনেক ক্ষতি হয়। ডায়াবেটিসের ক্ষতিকর প্রভাব মাথা থেকে পা পর্যন্ত সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পড়ে। বেশি আক্রান্ত হয় চোখ, দাঁত, হৃদযন্ত্র ও কিডনি। ডায়াবেটিস একসঙ্গে দুই চোখকেই আক্রান্ত করে। নারীদের শরীরে ডায়াবেটিস মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

কথায় বলে, নারীর শরীরে সবসময়ই রোগ একটু মাথাচাড়া দেয় বেশি। ঠিক তেমনই ডায়াবেটিসও নারীর শরীরে একটু বেশি দানা বাঁধে। ডায়াবেটিসের কারণে নারীর শরীরে একে একে বিভিন্ন রোগব্যাধি দেখা দেয়। এই রোগ থেকে হার্টের অসুখ, কিডনির অসুখ, অন্ধত্ব, অবসাদ, ইউটিআইয়ের মতো সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হতে পারেন বলে গবেষণায় উঠে আসছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিসের কারণে নারীদের মৃত্যুঝুঁকিও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। আসলে ডায়াবেটিস নারীর সার্বিক স্বাস্থ্যে বিশাল প্রভাব ফেলে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও অতিরিক্ত ওজনই এ রোগের মূল কারণ। ডায়াবেটিস হলে যৌন চাহিদা কমে যাওয়া, ভ্যাজাইনাল ইচিং, বারবার মূত্রত্যাগ ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। যেকোনো বয়সীর মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে, নারীদের শরীরে এর প্রভাব কিন্তু তুলনামূলকভাবে বেশি।

গবেষণা বলছে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পুরুষদের তুলনায় নারীদের হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেশি। এমনকি বন্ধ্যাত্ব, গর্ভপাত, অপরিণত বাচ্চা, মেনোপজের সমস্যাসহ নারী স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে।

নারীর শরীরে ডায়াবেটিসের কারণে হার্টের সমস্যা ভীষণ বেড়ে যায়। বেশির ভাগ নারীই অল্প বয়সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। কার্ডিওভাসকুলার রোগই কাল হয়ে দাঁড়ায়।

৫০-এর নিচে যাদের বয়স তাদের এক ধরনের অ্যালার্জি জাতীয় রোগ সৃষ্টি হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে যায়। ইউরিনারি ইনফেকশন খুব স্বাভাবিক বিষয়। ইউরিনের সঙ্গেই হঠাৎ করে রক্ত দেখা দিলে শিগগিরই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। রক্ত জমাট বাঁধার প্রভাবে সমস্যা বেড়ে যায়। ফলত কিডনির সমস্যা দেখা দেওয়া খুব স্বাভাবিক। অন্ধত্ব ও মানসিক চাপ দুটিই এর প্রভাবে হতে পারে। অনিয়মিত ঋতুচক্র  হতে পারে। তাই রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ঠিক রাখতে হবে।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের ক্ষতিকর প্রভাব
অনেক সময় গর্ভাবস্থায় নারীর শরীরে ডায়াবেটিস দেখা দেয়। যা আবার বাচ্চা প্রসবের পরে সেরে যায়। এটাকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলা হয়। এটারও স্কিনিং করা দরকার। জটিলতা দেখা দিলে, সন্তান না হলে, মৃত সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তখনই এটা নজরে আসে। তাই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে গর্ভকালীন ২৪ সপ্তাহ বা তারপর ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করলে ভালো হয়। গর্ভের আগে ও গর্ভাবস্থায় এই পরীক্ষাটা করিয়ে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সচেতনতার অভাবে অনেকে এটা করেন না। বারডেম জেনারেল হাসপাতাল এবং ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারিয়া আফসানা এক গণমাধ্যমে বলেন, ‘সবার ক্ষেত্রে একই রকম ঘটনা ঘটে না। সাধারণভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, যাদের গর্ভকালীন ইনসুলিন লাগে না, শুধু খাবার বা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হয়ে যায় বা খুব অল্প ডোজের ইনসুলিন লাগে, সাধারণত সন্তান প্রসবের পর তারা স্বাভাবিক হয়ে যান। আর যাদের গর্ভাবস্থায় অনেক হাই ডোজের ইনসুলিন লাগে, তাদের সন্তান প্রসবের পরও ইনসুলিন নিতে হয়। তাদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার পরে পুরোপুরি ডায়াবেটিস হয়ে যায়।’

মায়ের ঝুঁকি প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘গর্ভপাত হতে পারে, যেকোনো সময় রক্তপাত শুরু হয়ে যেতে পারে, সন্তান প্রসবের সময় বাচ্চা আটকে যেতে পারে। ফলে নরমাল ডেলিভারি নাও হতে পারে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে। আর সন্তানের বিভিন্ন জন্মগত ত্রুটি হতে পারে। মায়ের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে বাচ্চা অনেক বড় হয়। ফলে প্রসবের সময় সমস্যা তৈরি হতে পারে। জন্মের পর শিশুর হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা লো ব্লাড সুগার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রোলাইট লবণের কম-বেশি হতে পারে।’

ডা. ফারিয়া আরও বলেন, ‘মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে বাচ্চা ডায়াবেটিস নিয়ে জন্মগ্রহণ করবে, তা নয়। তবে, ধরে নিন এক নারীর দুটি সন্তান। তার প্রথম গর্ভধারণের সময় গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ছিল না, আর দ্বিতীয়বার গর্ভধারণের সময় গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ছিল। তাহলে দ্বিতীয় সন্তানের ভবিষ্যতে বড় হয়ে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।’

জাহ্নবী

ইভ টিজিংকে ‘না’ বলুন

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৪, ১১:৫০ এএম
আপডেট: ১২ জুন ২০২৪, ১১:৫০ এএম
ইভ টিজিংকে ‘না’ বলুন

ইভ টিজিং আমাদের দেশে নতুন কোনো শব্দ না। কয়েক বছর আগে এই বিষয়টি আমাদের দেশে ভয়ংকরভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। অনেক মেয়ে হতাশা, ক্ষোভ, রাগ অথবা মানসিক অস্থিরতায় দিন যাপন করেছে। এখন সেই অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হলেও ইভ টিজিং যে একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে, তা কিন্তু নয়। শহর অঞ্চলে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও গ্রামে এখনো ইভ টিজিং চলছে। ইভ টিজিং নিয়ে লিখেছেন ফাতেমা ইয়াসমিন

আনিকা ইদানীং স্কুলে প্রায়ই অনুপস্থিত থাকে। বিষয়টি নজরে এলে স্কুলের শিক্ষিকা খোঁজ নিয়ে আসল ঘটনা জানতে পারেন। বাসা থেকে স্কুলের দূরত্ব খুব বেশি নয় বলে হেঁটেই সে প্রতিদিন স্কুলে যায়। পাড়ার মোড়ের এক চা দোকানদার প্রতিদিনই নানা ধরনের আজেবাজে কথা বলে! জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, কই তিনি তো তার কাজ করছেন, কিছু বলেননি। কিন্তু আনিকা ঠিকই বুঝতে পারে এগুলো তাকে উদ্দেশ্য করে বলা। বিষয়টি কীভাবে সমাধান করা যেতে পারে, তা আনিকা বুঝতেই পারছে না। আর সে হতাশাগ্রস্ত হয়ে লেখাপড়ায় মনোযোগ হারাচ্ছে। 

এটা তো গেল একধরনের ইভ টিজিং। কী কী বিষয়কে আমরা ইভ টিজিং বলতে পারি? ইভ টিজিং বলতে সাধারণত কোনো নারী বা কিশোরীকে তার স্বাভাবিক চলাফেরা বা কাজকর্ম করা অবস্থায় অশালীন কোনো মন্তব্য করা, ভয় দেখানো, তার নাম ধরে ডাকা এবং চিৎকার করা, বিকৃত নামে ডাকা, কোনো কিছু ছুঁড়ে দেওয়া, যোগ্যতা নিয়ে টিটকারী করা, তাকে নিয়ে অহেতুক হাস্যরস করা, রাস্তায় হাঁটতে বাধা দেওয়া, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করা, ইঙ্গিতপূর্ণ ইশারা দেওয়া, প্রেমে সাড়া না দিলে হুমকি দেওয়া ইত্যাদি ইভ টিজিংয়ের মধ্যে পড়ে।

আমাদের দেশে কিশোরী বয়সী মেয়েরাই মূলত ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়। তবে একদম কম বয়সী মেয়েদের ইভ টিজিংয়ের ঘটনাও শোনা যায়। এমনকি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ মধ্যবয়সী নারীরাও এখানে ইভ টিজিংয়ের শিকার হন। আর এই ইভ টিজিংটা করছে কারা? যুবক, যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৫, তাদের বিরুদ্ধেই ইভ টিজিংয়ের অভিযোগ বেশি। এই বয়সে অনেকেই বিপথে চলে যায়। পাড়ার সন্ত্রাসী বা মাস্তান হয়। তাছাড়া বস্তিতে বড় হওয়া তরুণদের মধ্যে এই ধরনের বাজে চিন্তা তৈরি হয়। মধ্য ও বৃদ্ধ বয়সের পুরুষও মেয়েদের নানাভাবে হয়রানি করছেন, তা আমরা হরহামেশাই দেখতে পাই।

আমাদের দেশে ইভ টিজিংয়ের পেছনের কারণ কী? বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার মহাসচিব অ্যাডভোকেট সিগমা হুদা খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের দেশে পারিবারিক ও নৈতিক শিক্ষার অভাব ইভ টিজিংয়ের অন্যতম কারণ। মেয়েদের হেয়প্রতিপন্ন করার একটা মানসিকতা এখনো আমাদের পরিবারগুলোয় দেখা যায়। পরিবারের ছেলেরা নারীকে যথাযথ সম্মান দেওয়ার বিষয়টি সঠিকভাবে শেখেনি। ব্যক্তিগত, সামাজিক অস্থিরতাও ইভ টিজিংকে উসকানি দেয়। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আমাদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যারা এ ধরনের অপরাধ করছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে দ্রুত। শাস্তি দিতে বিলম্ব হওয়া অনেক সময় অপরাধীদের সাহস বাড়িয়ে দেয়।’

ইভ টিজিং প্রতিরোধ
ইভ টিজিং বন্ধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবারের সদস্যও একে অপরকে সচেতন করতে পারেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষিকারা এ বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীর সঙ্গে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে সহযোগিতা করতে পারেন। রাস্তাঘাটে চলাচলকারী সাধারণ জনগণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিজ্ঞ আদালত, ভ্রাম্যমাণ আদালত, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ সব সচেতন মানুষ এ বিষয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেন।

ইভ টিজিংয়ের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ক্লাসরুমে ইভ টিজিং সম্পর্কে আলোচনা করতে এবং নেতিবাচক বিষয় তুলে ধরতে হবে। গণমাধ্যমে ইভ টিজিং উৎসাহিত হয় এ ধরনের বক্তব্য, বিজ্ঞাপন, নাটক কঠোরভাবে প্রচার না করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। ইভ টিজিংয়ের ঘটনা ঘটলে ভিকটিমের পাশে সবাইকে দাঁড়াতে হবে। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে ইভ টিজিং প্রতিরোধ কমিটি গঠন ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

ইভ টিজিং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আইন ও এর প্রতিকার সম্পর্কে অ্যাডভোকেট সেলিনা আক্তার খবরের কাগজকে বলেন, ‘নারী ও শিশুনির্যাতন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০১৮)-এর ১০ ধারা মোতাবেক, যদি কোনো ব্যক্তি যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো অঙ্গ দ্বারা কোনো নারীর অঙ্গ স্পর্শ করে বা শ্লীলতাহানি করে, তাহলে ওই ব্যক্তিকে ৩ থেকে ১০ বছরের মধ্যে যেকোনো মেয়াদের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে, অতিরিক্ত অর্থদণ্ড দিতে হবে। নতুন আইনের ৯ নম্বর অধ্যাদেশে বলা হয়েছে যে, যদি কারও ইচ্ছাকৃত অসম্মানজনক কাজ কোনো নারী বা শিশুর শালীনতা হানি করে তাকে ৫ থেকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। আর যদি কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করা হয়, তবে অপরাধীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। ধর্ষণে কোনো নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটলে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের সঙ্গে অতিরিক্ত অন্যূন ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ২৯৪ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি অন্যদের বিরক্তি সৃষ্টি করে কোনো প্রকাশ্য স্থানে কোনো অশ্লীল কার্য করে অথবা তার সন্নিকটে কোনো অশ্লীল গান, সংগীত বা পদাবলি গায়, আবৃত্তি করে বা উচ্চারণ করে, তাহলে সে ব্যক্তি তিন মাস পর্যন্ত যেকোনো ধরনের কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। দণ্ডবিধির ১৮৬০ সালের আইনে ৫০৯ ধারা অনুসারে যদি কোনো ব্যক্তি নারীকে বিব্রত করার উদ্দেশ্যে অশ্লীল কথা বলে কিংবা অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে, তবে সে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশে দুটি আইন রয়েছে। এর ৭৫ ধারায় বলা হয়েছে, সমাজে অশালীন বা উচ্ছৃঙ্খল আচরণের শাস্তি হিসেবে তিন মাস মেয়াদ পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে এবং ৭৬ ধারায় বলা হয়েছে, নারীকে উত্ত্যক্ত কিংবা অপমান করে এমন কাজ করলে তিনি এক বছর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদণ্ড অথবা ২ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

ইভ টিজিংয়ের শিকার হলে কী করবেন?
যদি কোনো নারী ইভ টিজিংয়ের শিকার হন, তাহলে ওই নারী সরাসরি থানায় গিয়ে ইভ টিজারের বিরুদ্ধে একটি মামলা করতে পারেন। যদি কোনো কারণে থানায় মামলা না করা যায়, তাহলে ওই নারী সরাসরি কোর্টে গিয়েও মামলা করতে পারেন। আর যদি থানা অথবা কোর্টে গিয়ে মামলা করা সম্ভব না হয়, তাহলে ৯৯৯-এ কল করেও পুলিশের সহায়তা নিতে পারেন।

জাহ্নবী